Saturday, 12 June 2021

ভদ্র বৌ এবং দজ্জাল শাশুড়ির গল্প


শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতার চোখ সম্পর্কে তেমন কোন অভিযোগ কড়া সমালোচকদের পক্ষ থেকেও আসেনি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একচক্ষুবিশিষ্ট ছিল – এমন বদনামও তাঁকে দেয়া যায় না। তিনি তাঁর মজলিশী গল্পে একবার এক দজ্জাল শাশুড়ি ও শাশুড়ির ভদ্র বৌ-এর কাহিনি বলেছিলেন। 

সংক্ষেপে সেই কাহিনি এরকম:  

শরৎচন্দ্র তখন থাকতেন বাজে-শিবপুরে। তাঁর পাশের বাড়িতে থাকেন তিনজন মানুষ – একজন ভদ্রলোক, তার মা এবং তার স্ত্রী। ভদ্রলোকটি যথার্থই ভদ্রলোক, তার স্ত্রী ভীষণ লক্ষ্মী-ভদ্রমেয়ে। কিন্তু এই লক্ষ্মী মেয়ের বৃদ্ধা শাশুড়িটি ভীষণ দজ্জাল। তিনি দিনরাত সকাল সন্ধ্যে সমানে তার ছেলের বৌকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন। পাড়া-প্রতিবেশীরা সবাই শুনতে পান শাশুড়ির সেই গালাগালি। সবাই বিরক্ত এই শাশুড়ির উপর। কিন্তু এত গালাগালি শোনার পরেও সেই বৌটি কখনো একটা শব্দও করে না শাশুড়ির মুখের উপর। এমন ভদ্র বৌ-য়ের জন্য পাড়াপ্রতিবেশীর মায়াই হয়। 

একদিন সকালে শরৎচন্দ্রের ঘুম ভাঙলো পাশের বাড়ির শাশুড়ির চিল চিৎকারে। কী কর্কশ সেই গলা! কী জঘন্য গালাগালির ভাষা, শুনলে কানে আঙুল দিতে হয়। কিন্তু যার উদ্দেশ্যে গালাগালি দেয়া হচ্ছে – সেই বউটি একটা শব্দও করছে না। 

শরৎচন্দ্র শাশুড়িকে থামানোর জন্য তাঁর বাড়ির সীমানা-প্রাচীরের উপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে দেখলেন এক আশ্চর্য দৃশ্য। দাওয়ায় বসে আছেন বুড়ি শাশুড়ি। উঠোন ঝাঁট দিচ্ছে যুবতী বউ। ঝাঁট দিতে দিতে মাঝে মাঝেই বউটি ঝাঁটা তুলে শাশুড়ির মুখের কাছে এসে ঝাঁটা নেড়ে অঙ্গভঙ্গি করে নীরবে ঝাঁটাপেটা করবে বলে শাসাচ্ছে, আর তাই দেখে বুড়ি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সরবে গালাগাল দিচ্ছে। 

তাই অনেকেই বলে থাকেন - নীরবতা আর ভদ্রতা সমার্থক নাও হতে পারে।

২৩ এপ্রিল ২০২১

No comments:

Post a Comment

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts