রাজকুমারী মঞ্জুকে খুব শক্তভাবে মানুষ করছেন রানিমা - যেন মঞ্জু রানির দায়িত্ব পালন করতে পারে। একটা সময় ছিল - ইংরেজ আমলে - যখন ইউরোপের মতো ভারতেও ছোট ছোট কিছু রাজা দেখা যেতো। সেরকমই কোন এস্টেটের রাজার মেয়ে মঞ্জু। তরুণী মঞ্জুর জন্য পড়াশোনা, হাঁটাহাঁটি, খাওয়া, ঘুম এমনকি পোশাকেরও বিধিনিষেধ আছে। শত শত বিধিনিষেধের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছিলো রাজকুমারি। সেই সময় তার সেলাই-দিদিমণির ভাই নির্মলের সাথে তার পরিচয়। নির্মল তাকে বদ্ধ ঘরের একমাত্র জানালাপথে নির্মল বাতাসের মতো জড়িয়ে রাখে - কথায়, গানে, এবং ক্রমে ভালোবাসায়। রাজবাড়িতে মঞ্জুর একমাত্র সমর্তক তার অধ্যাপক মামা। কিন্তু মামার বিদ্যা আছে - অর্থ নেই, তাই তাঁর কথার তেমন কোন দাম নেই। একসময় মঞ্জু সাহসী হয়ে ওঠে। ভালোবাসার সাহসে ভর করে সে নির্মলকে বিয়ে করার জন্য রাজবাড়ি ত্যাগ করে বের হয়ে আসে। বিয়ের সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু বিয়ের লগ্নের কয়েক ঘন্টা আগে নির্মল উধাও হয়ে যায়। মঞ্জু বাধ্য হয়ে, লগ্নভ্রষ্টা হয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসে মায়ের কাছে। মা মেয়ের চলে যাওয়া সহ্য করে নিয়েছিলেন। হাজার হোক মেয়ে তার ভালোবাসার কাছে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়ের অপমান সহ্য করতে পারেন না। স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন রানিমা। সেই অবস্থাতেও তিনি মেয়ের প্রেমিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না নির্মলকে। রানিমা মারা যাওয়ার পর সব সম্পদ এবং দায়িত্ব এসে পড়ে রাজকুমারি মঞ্জুর হাতে। মঞ্জুর মাথায় একটাই চিন্তা নির্মলকে খুঁজে বের করা। নির্মল তার সাথে প্রতারণা করেছে। নির্মলের চেয়েও নীচ কাউকে খুঁজে বের করে তাকে বিয়ে করে নির্মলের উপর প্রতিশোধ নেয়ার প্ল্যান করে সে। একজনকে পেয়েও যায়। সেই খবর নিজেই দিতে যায় তার সেলাইদিদিমণির বাড়িতে - যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল নির্মলের সাথে। নির্মলকে সেখানেই পেয়ে যায়। নির্মল বেশ স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডাভাবে বিদায় করার চেষ্টা করে মঞ্জুকে। প্রাথমিক ধাক্কার পর মঞ্জু বুঝতে পারে নির্মল অন্ধ হয়ে গেছে। তাই সে নিজেকে মঞ্জুর কাছ থেকে ইচ্ছে করে লুকিয়ে রেখেছিল যেন একজন অন্ধকে নিয়ে মঞ্জুর সমস্যা না হয়। ভালোবাসার সেই আদিরূপ - নিজে কষ্ট পেলেও যাকে ভালোবাসে তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা। তারপর মধুরেণ সমাপয়েৎ।
এই সিনেমার কাহিনি ও পরিচালনা সলিল সেনের। গান রাহুল দেব বর্মণের। কী চমৎকার সুর। আর অভিনয়? সেই সময় সিনেমায় অভিনয়ের স্বর্ণযুগ। উত্তমকুমার তনুজার জুটি সিনেমা কম করলেও যে ক'টা করেছিলেন প্রত্যেকটাই ছিল চমৎকার। তনুজার সংলাপ-প্রক্ষেপণ অনন্য।
আর গান? কী যে মিষ্টি! একটি নমুনা:
রাজকুমারী সিনেমাটি ইউটিউব থেকে দেখা যেতে পারে এখানে:
No comments:
Post a Comment