স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা পদার্থবিজ্ঞান পড়েছেন তাঁরা সবাই জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী আর্নল্ড সামারফেল্ডের নাম শুনেছেন। পরমাণুর কোয়ান্টাম মডেলের শুরু হয়েছে বোর মডেলের মধ্য দিয়ে। শুরুতে পরমাণুর সব কক্ষপথকেই বৃত্তাকার বলে ধারণা করা হয়েছিল। সামারফেল্ড তখন মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর। তিনি গবেষণা করে ধারণা দিলেন যে ইলেকট্রনের কক্ষপথ বৃত্তাকার কিংবা উপবৃত্তাকার হতে পারে। এবং তিনি ইলেকট্রনের সাবশেল বা উপ-কক্ষপথের ধারণাও দেন। আর্নল্ড সামারফেল্ড ছিলেন ব্যতিক্রমী শিক্ষক। ইওরোপে – বিশেষ করে জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক অত্যন্ত ফরমাল। সেক্ষেত্রে আর্নল্ড সামারফেল্ড ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁর ছাত্রদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুব আন্তরিক। তিনি বন্ধুর মতো মিশতেন তাদের সাথে। ছাত্রদের যে কোন সমস্যায় তিনি এগিয়ে আসতেন। আইনস্টাইন তাঁর এই গুণটার তুলনা করেছেন – জ্ঞানের মাটিতে সোনা ফলানোর সাথে। ছাত্রদের মেধাবিকাশে সাধ্যাতীত চেষ্টা করতেন সামারফেল্ড। তাঁর গবেষণা-ছাত্রদের সবাই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। (তখনো ইওরোপে পদার্থবিজ্ঞানে ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল নগণ্য)। তাঁর চারজন ছাত্র নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন - কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ অনিশ্চয়তার নীতির জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৩২ সালে, পিটার ডিবাই মলিকিউলার স্ট্রাকচারের গবেষণায় রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৩৬ সালে, উল্ফগং পাউলি এক্সক্লুশান প্রিন্সিপালের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৪৫ সালে, হ্যান্স বেথে স্টেলার নিউক্লিওসিন্থেসিসের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৬৭ সালে। সামারফেল্ডের চার জন ছাত্র নোবেল পুরষ্কার লাভ করলেও – সামারফেল্ড নিজে নোবেল পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নোবেল পুরষ্কারের ইতিহাসে পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারের জন্য সামারফেল্ড সবচেয়ে বেশিবার মনোনয়ন পেয়েও নোবেল পুরষ্কার পাননি। ১৯১৭ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে তিনি ৮৪ বার মনোনয়ন পেয়েছিলেন নোবেল পুরষ্কারের জন্য। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি কর্মক্ষম ছিলেন। শেষের দিকে তিনি কানে শুনতেন না। ১৯৫১ সালে ৮২ বছর বয়সে রাস্তা পার হবার সময় চলন্ত ট্রাকের হর্নের শব্দ শুনতে পাননি তিনি। ট্রাকের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। সেই ধাক্কা আর সামলাতে পারেননি। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে মৃত্যু হয় এই মহান শিক্ষক, মহান বিজ্ঞানীর।
আজ সামারফেল্ডের জন্মদিন।
৫/১২/২০২০
No comments:
Post a Comment