Saturday, 12 June 2021

আমাদের রশীদুন্নবী স্যার

 



রশিদুন্নবী স্যারের প্রথম ক্লাস আমরা পেয়েছিলাম সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর। তিনি আমাদের ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ম্যাগনেটিজম পড়াতেন। সেবছরই  তিনি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি একটা ক্লাসও মিস করতেন না।  থার্ড ইয়ারে প্রথম যেদিন ইলেকট্রোডায়নামিক্স ক্লাস নিলেন, মনে হলো স্বয়ং ম্যাক্সওয়েল আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন। বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের চেহারার সাথে কেমন যেন মিল ছিল রশিদুন্নবী স্যারের।  শ্বেত-শ্মশ্রুমন্ডিত দরবেশের মতো সুদর্শন রশিদুন্নবী স্যারের হাতের লেখা ছিল যেমন চমৎকার, তেমনি চমৎকার ছিল তাঁর বাচনভঙ্গি। এত সুন্দর করে হাসিমুখে ফিজিক্স বোঝাতেন যে মনের ভেতর এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জন্মে যেতো। ফাইনাল ইয়ারে আমরা কক্সবাজারে গিয়েছিলাম পিকনিক করতে। ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে রশিদুন্নবী স্যারও গিয়েছিলেন আমাদের সাথে। আমাদের হৈ চৈ ছেলেমানুষীতে অন্যান্য স্যার-ম্যাডামরা যখন মাঝে মাঝে ধমক দিয়েছেন, রশিদুন্নবী স্যার তখন সস্নেহে প্রশ্রয় দিয়েছেন আমাদের। পরের দিন সকালে ইউনিভার্সিটিতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল তাঁর। ভোর রাতে উঠে তিনি কক্সবাজার থেকে এসে মিটিং-এ অংশ নিয়েছিলেন। আমরা জানতেও পারিনি যে তিনি কত গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যেও আমাদের অনুরোধে আমাদের সাথে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালের পর স্যারের সাথে আমার আর দেখা হয়নি। কিন্তু স্যারকে ডিপার্টমেন্টে যতদিন দেখেছি – সবকিছুই মনে আছে এখনো। আমার মতো স্যারের অন্য সব ছাত্র-ছাত্রীরও মনে আছে নিশ্চয়। স্যার আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষকতো বেঁচে থাকেন তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের স্মৃতির ভেতর দিয়ে। সৈয়দ রশিদুন্নবী স্যারও আছেন, থাকবেন।

৭/১২/২০২০

No comments:

Post a Comment

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts