লেখক – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশক – অভিযান পাবলিশার্স, কলকাতা
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০১৯
প্রচ্ছদ – নিউটন
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের রহস্যোপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ পড়েছি অনেকটা রুদ্ধশ্বাসে। প্রায় একই রকমের আগ্রহ নিয়ে পড়লাম দ্বিতীয় আখ্যান।
ধারাবাহিক রহস্যোপন্যাসের প্রচলিত নিয়ম হলো এক কাহিনি শেষ হবার মধ্য দিয়ে নতুন কাহিনির বীজ রোপিত হয়। এখানেও সেরকমই হয়েছে। মুশকান জুবেরি গোয়েন্দা অফিসারের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন প্রথম কাহিনিতে। গোয়েন্দা নুরে ছফাকে মেরে ফেলার সমস্ত সুযোগ হাতে থাকা সত্ত্বেও মুশকান জুবেরি ছফাকে এমনভাবে এমন জায়গায় রেখে গিয়েছিল যে মনে হয়েছে ছফার প্রতি কেমন এক দুর্বলতা জমেছে মুশকানের মনে।
দ্বিতীয় কাহিনি - ধারাবাহিক দ্বিতীয় আখ্যান – ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’ শুরু হচ্ছে রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিয়ে।
“সহস্র কপালে লাল সূর্য! কালো মেঘপুঞ্জে চেপে বসেছে শ্বেতশুভ্র ফুলের মেঘ! সেই ফুলের গন্ধে ম-ম করছে চারপাশ।“ – তিনটি বাক্যের ভেতর কত সহজে ধরা হয়েছে উৎসবে হাজারো নারীর অংশগ্রহণ। গোয়েন্দা নুরে ছফা এদের ভেতর খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিন বছর আগে পালিয়ে যাওয়া মুশকান জুবেরিকে। রবীন্দ্রনাথের গানের ভেতর ভীড়ের ভেতর শত শত নারীর মুখের ভেতর যেই মুখটা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি – নিশ্চিন্ত নন – মুখটি বাস্তব নাকি একটি ভ্রম।
মুখবন্ধের উপক্রমণিকা শেষ হয় একটি ধাক্কার মধ্য দিয়ে। এখান থেকেই শুরু হয় নতুন আখ্যানের নতুন অধ্যায়। নতুন চরিত্র ডাক্তার লুবনা। অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দা – নুরে ছফা যাকে গুরু মানেন – সেই কে এস খানের নতুন বান্ধবী ডাক্তার লুবনা। মনে হয়েছিল লুবনার একটা বড় ভূমিকা থাকবে এই কাহিনিতে। লেখক অবশ্য সেটা তুলে রেখেছেন ভবিষ্যতের কোন এক সময়ের জন্য।
হঠাৎ-ই ঢাকার রাস্তায় ছফা দেখে ফেলেন মুশকানকে একটি দামী গাড়ির ভেতর। তিনি গাড়ির নম্বর দেখতে ভুলে যান। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় – কাহিনির বিস্তার ঘটাতে হয় এজন্য।
এই পর্বের কাহিনিজুড়ে সবচেয়ে যে চরিত্রটি বেশি বিস্তৃত হয় – তিনি আশেক মাহমুদ। প্রাইম মিনিস্টারের অফিসের জাঁদরেল পিএস আশেক মাহমুদ। প্রাইম মিনিস্টারের পিএস ব্যক্তিগত কাজের জন্যই কত প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, কত লম্বা তাঁর ক্ষমতা, কত বিচিত্র তাঁর চারিত্রিক স্খলন সব দেখা যায় আশেক মাহমুদের ভেতর। সরকারি গোয়েন্দা নুরে ছফা – আশেক মাহমুদের সরাসরি আদেশেই কাজ করতে থাকেন। যদিও পুরো কাজটিকে মনে হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে হচ্ছে।
আশেক মাহমুদের বড় বোন ক্যান্সারে মৃত্যুপথযাত্রী। তাঁর ছেলে নিখোঁজ হবার পরই মূলত মুশকান কাহিনি শুরু হয়েছিল। এবার জানা গেলো আশেক মাহমুদের এই বড় বোনের বান্ধবী ছিলেন মুশকান। কাহিনি বাড়তে থাকে – জট পাকাতে থাকে – এবং নতুন মোড় নিতে থাকে।
ছফার মনে হয় – মুশকান ভারতে আছেন। তিনি সেখানে যান। সেখানকার গোয়েন্দার সাহায্যে খুঁজে বের করেন – কলকাতাতেও মুশকানের কারণে নিখোঁজ হয়ে গেছে দু’জন যুবক – একজন ডাক্তার, অন্যজন শিল্পী। ডাক্তার আবার প্লাস্টিক সার্জন। তবে কি মুশকান চেহারা পাল্টে ফেলেছেন?
মুশকানকে সাহায্য করেছেন যে ডাক্তার – বাংলাদেশের তিনি আবার নতুন কাহিনির জোগান দেন। জানান – মুশকান আসলে মুশকানের মেয়ে। পাঠকের মনে বিভ্রম তৈরি করার উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়।
আরেকটি নতুন চরিত্র চলে আসে অনেক শাখা-কাহিনির মূল হয়ে – ডাক্তার আসকারের মেয়ে সুস্মিতা। এই সুস্মিতাই কি মুশকান?
রহস্য কাহিনির পুরোটা কখনো বলে দিতে নেই। আমিও বলবো না। পড়লেই জানা যাবে সুস্মিতা কে? কিংবা মুশকান কি আসলে মুশকান – নাকি মুশকানের মেয়ে!
কাহিনি একই গলিতে বারবার ঘুরপাক খেলেও পড়ার আগ্রহ নষ্ট হয় না। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে কাহিনির মেদ কিছুটা ঝরিয়ে ফেললে কাঠামো আরো মজবুত হতো।
মনে হচ্ছে মুশকান কাহিনির আরো একটি উপাখ্যান প্রকাশিত হবে শীঘ্রই।
No comments:
Post a Comment