পরমাণুর
নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট প্রোটন আবিষ্কার করার পর আর্নেস্ট রাদারফোর্ড অনেকটাই
নিশ্চিত ছিলেন যে পরমাণুর ভেতর চার্জহীন একটি কণা অবশ্যই থাকতে হবে। ১৯২০ সালে রাদারফোর্ড
এই কণার নামও দিয়ে ফেলেছিলেন – নিউট্রন। কিন্তু নিউট্রন কিছুতেই সনাক্ত করা যাচ্ছিলো
না। কিন্তু রাদারফোর্ড এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি তাঁর ছাত্র জেমস চ্যাডউইককে একের
পর এক পরীক্ষণ চালিয়ে যেতে বললেন। অবশেষে ১৯৩২ সালে নিউট্রন শনাক্ত করা গেল, নিউট্রন
আবিষ্কৃত হলো। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন
জেমস চ্যাডউইক।
ব্রিটিশ
পদার্থবিজ্ঞানী জেমস চ্যাডউইকের জন্ম ১৮৯১ সালের ২০ অক্টোবর ম্যানচেস্টারে। ১৯১১ সালে
তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিক্সে অনার্স পাস করেন। সেই সময় রাদারফোর্ড
পরমাণুর নিউক্লিয়াস এবং প্রোটন আবিষ্কার করেছেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের বিভিন্ন গবেষণা-প্রকল্পে
কাজে লাগাচ্ছিলেন। জেমস চ্যাডউইক রাদারফোর্ডের তত্ত্বাবধানে গবেষণায় যোগ দিলেন। ১৯১৩
সালে তিনি মাস্টারডিগ্রি পাস করে এক্সিবিশান স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে গেলেন বিজ্ঞানী
হান্স গেইগারের কাছে তেজস্ক্রিয়তার গবেষণা করার জন্য। কিন্তু কিছুদিন পরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
শুরু হয়ে যায়। ইংল্যান্ড জার্মানির শত্রুপক্ষ। জার্মানির মাটিতে ব্রিটিশ নাগরিকদের
বন্দী করে রাখা হলো। চ্যাডউইক ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত জার্মানিতে বন্দী ছিলেন।
১৯১৯
সালে কেমব্রিজে ফিরে এলেন চ্যাডউইক। সেই সময় ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবের ডিরেক্টর হয়েছেন রাদারফোর্ড।
চ্যাডউইক যোগ দিলেন ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবে রাদারফোর্ডের গ্রুপে। ১৯২১ সালে চ্যাডউইক পিএইচডি
ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২২ সালে তিনি ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবের সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন।
প্রায়
এক যুগের নিরলস গবেষণার পর ১৯৩২ সালে নিউট্রন আবিষ্কৃত হলো। ১৯৩৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে
নোবেল পুরষ্কার পাবার পর চ্যাডউইক লিভারপুল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানের
দায়িত্ব নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে চ্যাডউইকের ডাক পড়ে আমেরিকায়। ম্যানহাটান
প্রজেক্টে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত
চ্যাডউইক আমেরিকায় পরমাণু বোমা তৈরির প্রজেক্টে কাজ করছিলেন। ১৯৪৫ সালে ব্রিটেনে ফেরার
পর তাঁকে নাইটহুড প্রদান করা হয়।
১৯৪৮
সালে চ্যাডউইক গবেষণা থেকে অবসর নিয়ে ম্যানচেস্টারের গলভিল অ্যান্ড কেইয়াস কলেজের মাস্টারের
প্রশাসনিক দায়িত্ব হাতে নেন। ১৯৫৮ পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করার পর তিনি সম্পূর্ণ
অবসরে চলে যান।
১৯৭৪
সালের ২৪ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
No comments:
Post a Comment