Thursday, 4 November 2021

মহামারির গাণিতিক সূত্র

 



করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে এপর্যন্ত আমাদের দিন কাটছে প্রচন্ড অনিশ্চয়তা, ভয় আর সংক্রমণ প্রতিরোধের যুদ্ধে। চীনের উহান থেকে শুরু হয়ে এই ভাইরাস ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সবগুলি মহাদেশে; এমনকি এন্টার্কটিকাতেও। ২০২০ সালে পৃথিবীর প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, প্রায় আঠারো লক্ষ মানুষ মারা গেছেন এই ভাইরাসের আক্রমণে। সারাপৃথিবীর লক্ষ লক্ষ চিকিৎসাকর্মী আক্রান্তদের চিকিৎসায় দিনরাত কাজ করছেন। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্প্রতি এই ভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগও শুরু হয়েছে। পৃথিবীর সবগুলি সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা, কতজন আরোগ্য লাভ করছেন, কতজন মৃত্যুবরণ করছেন। দেশভিত্তিক এবং অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যানও আমরা নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছি। এসব পরিসংখ্যানের লেখচিত্র (গ্রাফ) থেকে আমরা বুঝতে পারি সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি। বিজ্ঞানীরা প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত থেকে দাঁড় করিয়েছেন বিভিন্ন গাণিতিক মডেল – যেই মডেলগুলি থেকে প্রায়-সঠিকভাবে অনুমান করা যায় কোন্‌ দেশে, কোন্‌ অঞ্চলে এই মহামারীর ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি কী হতে পারে। ভ্যাকসিন ব্যবহার করলে মৃত্যুর হার কীভাবে কমানো যেতে পারে, চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে ভাইরাসের সংক্রমণ কীভাবে হ্রাস করানো যায় ইত্যাদির হিসেব পাওয়া যায় এসব মডেল থেকে।  কিন্তু এই গাণিতিক মডেলগুলির মূল উপাদান কী? কীভাবে নির্ণয় করা হয় এর প্যারামিটার? কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য এই গাণিতিক ভবিষ্যতবাণী? 

মহামারীর গতিপ্রকৃতির ভবিষ্যত বলে দেয়ার মডেল উদ্ভাবনে পদার্থবিজ্ঞানীরা ভূমিকা রেখে আসছেন কয়েক শ বছর আগে থেকে। সুইজারল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল বারনৌলি  গুটি বসন্তের বিস্তার রোধে ভ্যাকসিন কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে – তার বৈজ্ঞানিক মডেল উদ্ভাবন করেছিলেন ১৭৬০ সালে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মশার বংশবিস্তার রোধ এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে পারলে ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তার কত দ্রুত কমে যেতে পারে – তা হিসেব করার গাণিতিক মডেল উদ্ভাবন করেছিলেন ব্রিটিশ চিকিৎসাবিজ্ঞানী স্যার রোনাল্ড রস। বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারীর গতিপ্রকৃতির মডেল তৈরিতেও অনেক পদার্থবিজ্ঞানী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন – যেমন যুক্তরাজ্য সরকারের কোভিড-১৯ প্রতিরোধ টিমের উপদেষ্টা নিল ফারগুসন, ফ্রান্সের ডক্টর ভিট্টোরিয়া কলিজ্জা প্রমুখ। 

কিছু ম্যাট্রিক্স সমীকরণ দিয়ে কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীর সহজ গাণিতিক বর্ণনা দেয়া যায়। কিন্তু সমীকরণগুলির সমাধান করা অত সহজ নয়। কারণ সমীকরণে যেসব প্যারামিটার ব্যবহার করা হয় – সেসব প্যারামিটার স্থান, কাল ও পাত্রভেদে দ্রুত পরিবর্তনশীল। যে কোনো মহামারীর ক্ষেত্রেই প্রথমে লক্ষ্য করা হয় রোগ ছড়ানোর গতি কী রকম। অর্থাৎ একজনের কাছ থেকে কত দ্রুত অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সেটা নির্ভর করে রোগটা কতটা ছোঁয়াচে তার ওপর। এটা হিসেব করার জন্য প্রথমেই নির্ণয় করা হয় প্রজনন সংখ্যা বা রিপ্রোডাকটিভ নাম্বার (R0)। একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে যদি আরো তিন জন রোগাক্রান্ত হয়, তাহলে এই রোগের প্রজনন সংখ্যা ধরে নেয়া হয় ৩; অর্থাৎ R0 = ৩। এক্ষেত্রে সংক্রমণ ঠেকানোর কোন ব্যবস্থা যদি না নেয়া হয়, তাহলে একজনের কাছ থেকে তিনজন আক্রান্ত হবে, তিনজনের প্রত্যেকে আরো তিনজন করে নয়জনকে ছড়াবে। আবার সেই নয়জন আরো সাতাশ জনকে ছড়াবে, সেই সাতাশ জন আরো ৮১ জনকে ছড়াবে। এভাবে দ্রুত ছড়িয়ে যাবে এই রোগ। কোন রোগের প্রজনন সংখ্যা যত বেশি হবে, তত দ্রুত ছড়াবে এই রোগ।  যদি কোন রোগের প্রজনন সংখ্যা ১ এর কম হয়, তাহলে তাকে মহামারী বলা হয় না। 

কোন রোগের প্রজনন সংখ্যা সাধারণত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে: (১) আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিদিন কতজন মানুষের সংস্পর্শে কতবার আসেন, (২) প্রতিবার সংস্পর্শে আসার ফলে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটুকু, এবং (৩) সংক্রমণ ঘটার জন্য কতক্ষণ সময় লাগে। মহামারী নিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ্য থাকে প্রজনন সংখ্যা যথাসম্ভব কমিয়ে আনা। যে তিনটি বিষয়ের উপর প্রজনন সংখ্যা নির্ভরশীল, সেই তিনটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে প্রজনন সংখ্যাকে এক এর চেয়ে কম করে ফেলতে পারলেই মহামারী অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যেমন, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির সংস্পর্শ যদি বন্ধ করে দেয়া যায় তাহলে প্রজনন সংখ্যা একের চেয়ে বাড়বে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখলে (আইসোলেশান) দ্রুত ফল পাওয়া যায়। অনেকসময় রোগনির্ণয় করার আগেই রোগের বিস্তার ঘটতে থাকে। সেক্ষেত্রে মাস্ক পরলে এবং নিয়ম মেনে হাত ধুলে রোগীর সংস্পর্শে আসার ফলে রোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। রোগ সংক্রমণ ঘটতে কতক্ষণ সময় লাগবে সেটা নির্ভর করে ভাইরাসের প্রকৃতি এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। ভ্যাকসিন প্রয়োগে রোগ সংক্রমণ ঘটানোর সময়টা বিলম্বিত করা হয়, যাতে রোগ সংক্রমণ করার আগেই ভাইরাস তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। 

প্রাথমিক রোগী সনাক্ত করার পর তাঁর সংস্পর্শে কতজন এসেছিল তাদের প্রত্যেকের গতিবিধি সঠিকভাবে হিসেব করা গেলে প্রজনন সংখ্যা সঠিকভাবে হিসেব করা যায়। কিন্তু এই সংখ্যা থেকে মহামারীর ভবিষ্যত সম্পর্কে সবকিছু জানা সম্ভব নয়। কারণ এই সংখ্যা কোন ভাইরাস কতটা মারাত্মক সে সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা দিতে পারে না। যেমন সার্স ভাইরাস ও জল বসন্ত উভয় ক্ষেত্রেই প্রজনন সংখ্যা ৩ হতে পারে। কিন্তু সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা জলবসন্তে মৃত্যুর সম্ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি। আবার প্রজনন সংখ্যা রোগ সংক্রমণে কত সময় নেবে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারে না। যেমন আমরা জানি সংক্রমিত হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, কিন্তু এইচ-আই-ভি এইডস এর লক্ষণ দেখা দিতে অনেক বছর সময় লেগে যেতে পারে। প্রজনন সংখ্যা কোন সংক্রামক রোগের অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য নয়। অর্থাৎ কোন রোগের জন্য এই সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়। এটা নির্ভর করে যে অঞ্চলে রোগটা ছড়াচ্ছে সেই অঞ্চলের মানুষের বৈশিষ্ট্যের উপর। আমরা দেখতে পাচ্ছি – আমেরিকা বা ইউরোপের তুলনায় অনেক বেশি ঘনবসতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা, সামগ্রিক স্বাস্থ্য-চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি প্রায় একই রকম হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় কানাডায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বেশি। 

অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মহামারী নিয়ন্ত্রণে প্রজনন সংখ্যার হিসেব অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। চীনের উহানে যখন কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল ২০২০ এর শুরুতে, তখন সেখানে প্রজনন সংখ্যা ছিল ৫.৭। সামাজিক দূরত্ব এবং আইসোলেশানের মাধ্যমে এই সংখ্যাকে তারা দ্রুত কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখিয়েছিলেন যে তাদের কোভিড-১৯ এর প্রজনন সংখ্যা ২.২ থেকে কমিয়ে আনার জন্য কমপক্ষে ৬০% মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, মাস্ক পরতে হবে ইত্যাদি। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এই বৈজ্ঞানিক পরামর্শ কাজে লাগানো যায়নি। ফলে মহামারী সেখানে নিয়ন্ত্রিত হয়নি। 

প্রজনন সংখ্যার ভিত্তিতে মহামারীর বিস্তার ঘটতে কত সময় লাগবে তার একটা বৈজ্ঞানিক অনুমান করা সম্ভব। এই রোগ বৃদ্ধির হারও নির্ভর করে অনেকগুলি বিষয়ের উপর। যত বেশি পরীক্ষা করা হবে, তত বেশি রোগ নির্ণয় হবে এবং রোগ বৃদ্ধির হারও ততই গ্রহণযোগ্য হবে। যদি কোন দেশের সব মানুষকে এক সাথে পরীক্ষা করে দেখা যায় কত জনের মধ্যে রোগ সংক্রমণ হয়েছে – সেক্ষেত্রে রোগ বৃদ্ধির হার সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। কিন্তু বাস্তবে তা অসম্ভব। অনেক বিপুল জনসংখ্যার দেশেও দেখা গেছে অত্যন্ত কম সংখ্যক পরীক্ষা করা হয়েছে, ফলে রোগ বৃদ্ধির হারও অনেক কম পাওয়া গেছে। রোগ বৃদ্ধির হার (r)  জানা থাকলে কত সময়ের মধ্যে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে (T2) – তা গাণিতিকভাবে হিসেব করা যায় T2 = log(2)/r এই সূত্র থেকে। করোনা মহামারীর শুরুতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণের গড় হার ছিল ০.১ থেকে ০.৪। সে হিসেবে দুই-তিন দিনের মধ্যেই রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। 

কোন ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করার সাথে সাথে তার রোগের লক্ষণ দেখা যায় না। ভাইরাস প্রবেশ করার সময় অর্থাৎ সংক্রমণের সময় থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সময়টাকে ল্যাটেন্ট পিরিয়ড বা সুপ্ত কাল (TE) ধরা হয়। আর যে সময় পর্যন্ত শরীরে ভাইরাস কার্যকর থাকে তাকে ধরা হয় সংক্রামক কাল বা ইনফেকশাস পিরিয়ড (TI)। রোগ বৃদ্ধির হার (r) এবং সুপ্ত কাল (TE) ও সংক্রামক কাল (TI) এর সাথে প্রজনন সংখ্যার একটি সাধারণ গাণিতিক সম্পর্ক হলো R0 = (1 + rTE)(1 + rTI)। কোভিড-১৯ এর সুপ্তকাল ও সংক্রামক কাল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এর গড় প্রজনন সংখ্যা দুই থেকে তিন এর মধ্যে। 

কোন সংক্রামক রোগ কতটা মারাত্মক তা কীভাবে নির্ণয় করা হয়? তা মূলত নির্ণয় করা হয় এই রোগ হবার পর রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা কতটুকু তার উপর। কোন রোগ হলে যদি রোগীর বাঁচার কোন সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এই রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১০০%। কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক চলছে প্রতিদিন। কোন গাণিতিক সূত্র দিয়েই এই সম্ভাবনা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ সঠিক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করাও দুরুহ এবং মৃত্যুর কারণও অনেকসময় সঠিকভাবে প্রকাশ করা হয় না। তবে মহামারীতে মৃত্যুর সম্ভাবনা হিসেব করা হয় সাধারণত কতজন রোগী আক্রান্ত হলো এবং আক্রান্তদের মধ্য থেকে কতজন রোগী সুস্থ হয়ে গেলো এই অনুপাতের মাধ্যমে। ধরা যাক বাংলাদেশে এপর্যন্ত (৩১/১২/২০২০) কোভিড-১৯ রোগাক্রান্ত হয়েছেন ৫,১২,৪৯৬ জন। তাদের মধ্য থেকে মৃত্যবরণ করেছেন ৭,৫৩১ জন। তাহলে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ১.৪৬%। পৃথিবীতে এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮,২৪,১৪,৭১৪ জন, মারা গেছেন ১৭,৯৯,০৯৯ জন; গড় মৃত্যুর হার ২.১৮%। 

মহামারীর সময় গাণিতিক মডেলের দরকার হয় রোগ নিয়ন্ত্রণের সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করা জন্য। বৈজ্ঞানিক মডেলগুলির কার্যকারিতা নির্ভর করে সঠিক তথ্য ও উপাত্তের উপর। যেহেতু অনেক প্যারামিটারের উপর মডেলগুলি নির্ভর করে, সেহেতু কোন মডেলই ১০০% সঠিক ভবিষ্যতবাণী করতে পারে না। একইভাবে কোন মডেলকেই ১০০% ভুল বলে বর্জন করাও যায় না। 

সূত্র: ফিজিক্স টুডে (নভেম্বর ২০২০), ভাইরোলজি জার্নাল (অক্টোবর ২০২০)। 

_________________
বিজ্ঞানচিন্তা জানুয়ারি ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত



No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts