Wednesday, 24 November 2021

ভ্যান ডার ভাল্‌স - নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী

 




পদার্থের কঠিন, তরল এবং বায়বীয় অবস্থার প্রধান কারণ যে তাপমাত্রা এবং চাপ – তা আমরা এখন খুব সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারি। তাপমাত্রা বাড়াতে থাকলে কঠিন পদার্থ গলে গিয়ে তরলে পরিণত হয়। তাপমাত্রা আরো বাড়াতে থাকলে তরল পদার্থ বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয়। তরল ও গ্যাসের আয়তন, চাপ ও তাপমাত্রার সমন্বয়ক দ্বিমাত্রিক সমীকরণ যিনি আবিষ্কার করেছেন - ইংরেজি থেকে সরাসরি বাংলায় উচ্চারণে আমরা তাঁকে বলি ভ্যান-ডার-ওয়ালস। নেদারল্যান্ডে জন্ম নেয়া এই পদার্থবিজ্ঞানীর পুরো নাম ইওহানেস ডিডেরিক ভ্যান ডার ভাল্‌স (Johannes Diderik van der Waals)। ১৯১০ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। অথচ এই বিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। তাঁর যাকিছু আবিষ্কার – সবই তাঁর নিজস্ব। স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানীর জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি।

১৮৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের লেইডেনে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা-মা ইয়াকুবাস ও এলিজাবেথ ছিলেন নিতান্তই সাধারণ মানুষ। অভিজাত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা তখন উচ্চশিক্ষার জন্য ক্লাসিক্যাল ভাষা ল্যাটিন ও গ্রিক শিখতো। কিন্তু ইওহানেস ল্যাটিন কিংবা গ্রিক – কোনটাই শিখেননি। ফলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি।

নিজের ডাচ ভাষায় যতদূর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়া যায় – সেটা হলো মাধ্যমিকের সমতুল্য। সেটুকু পাস করার পর তিনি ১৮৬৪ সালে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু ল্যাটিন কিংবা গ্রিক ভাষার কোনটাই জানেন না বলে – তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়নি। ১৮৬৬ সালে তিনি লেইডেন থেকে হ্যাগে গিয়ে অন্য একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর তিনি একটি মাধ্যমিক স্কুলের পরিচালক বা হেডমাস্টার হয়েছিলেন।

মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হয়েছেন বলে কি নিজে নিজে বিজ্ঞানচর্চা করতে পারবেন না? তিনি নিজে নিজে পদার্থবিজ্ঞান পড়তে শুরু করলেন। আবিষ্কার করলেন গ্যাস ও তরলের মধ্যবর্তী আয়তন ও তাপমাত্রার সম্পর্ক। তিনি আবিষ্কার করলেন যে গ্যাসকে ঠান্ডা করলে তা তরলে পরিণত হয়। ‘ইকুয়েশান অব স্টেট’ থিসিসে তিনি গ্যাসের সমীকরণের আদ্যোপান্ত লিখলেন।

১৮৭৩ সালে নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষা জানার শর্তটি তুলে নেয়া হয়। ভ্যান-ডার-ভালস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন এবং তাঁর থিসিসটি দাখিল করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর থিসিসের ভিত্তিতে তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি দিলো।

ভ্যান-ডার-ভাল্‌স এর গবেষণার ভূয়সী প্রশংসা করলেন ম্যাক্সওয়েল। ডাচ ভাষায় লেখা বলে তাঁর পেপার তখনকার বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের অনেকেই পড়তে পারেননি। তখন জার্মান ও ল্যাটিনে অনুবাদ করে প্রকাশ করতে হয়েছে তাঁর পেপার। অচিরেই তিনি বিশ্ববিজ্ঞানীদের সারিতে নিজের আসন পোক্ত করে ফেলেন।

১৮৭৬ সালে নেদারল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা আইন অনেক উদার করা হয়। প্রাচীন পদ্ধতির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে আধুনিক পদ্ধতির বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। আর্মস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় সেভাবে রূপান্তরিত বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৭৭ সালে ভ্যান-ডার-ভাল্‌স সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম প্রফেসর নিযুক্ত হলেন। ১৯০৭ সালে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।

১৯১০ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান।

১৯২৩ সালের ৮ মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।


No comments:

Post a Comment

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts