Friday, 24 December 2021

স্বপ্নলোকের চাবি - পর্ব ৫১

 


#স্বপ্নলোকের_চাবি_৫১

প্রচন্ড গতিশীল এই মহাবিশ্বে স্থবিরতার কোন স্থান নেই। ক্ষুদ্র পরমাণু থেকে শুরু করে বিশাল গ্যালাক্সি – সবকিছু ছুটছে তো ছুটছেই। এই চিরকালীন প্রচন্ড গতির কিছুই টের পাই না। কেন পাই না তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্বে আছে। থার্ড ইয়ারে সেই তত্ত্ব পড়েছিলাম, পড়ে পরীক্ষাও দিয়েছিলাম। তারপর সব ভুলে গেছি। মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে অনার্স পাস করে বসে আছি। ধরতে গেলে ১৯৯১ সালের পুরোটাই চলে গেছে স্থবিরতার মধ্য দিয়ে। 

প্রচন্ড ঝড়ের পরেও মানুষ নতুন করে বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখে। বিএনপি সরকার জামায়াত শিবিরের মন রক্ষা করার জন্য তাদের পছন্দের ভিসি নিয়োগ দিয়েছে গত ডিসেম্বরে। ভেবেছিলাম নতুন ভিসি জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই সবকিছু ঠিক করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গতি ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। কিন্তু পুরো জানুয়ারি চলে গেল – নতুন স্থবিরতায়। এখন জামায়াত-শিবির চুপ। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো – সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যও চুপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যকলাপে এখন অদ্ভুত স্থবিরতা। নিউটনের গতিবিদ্যার প্রথম সূত্র অনুযায়ী সেই স্থবিরতা ছড়িয়ে পড়েছে শরীরে, মনে, বোধে, এমনকি স্বপ্নেও। 
অতি সামান্য পরিমাণে হলেও মস্তিষ্কের কোষে কোষে স্বপ্ন জমতে শুরু করেছিল। মধ্যবিত্ত মানসিকতার মধ্যম-মানের স্বপ্ন - একটু ভালো রকমের পাস, একটু ভালো রকমের কর্মসংস্থান, একটুখানি স্বপ্নপূরণের স্বপ্ন। 

কিন্তু দিনের পর দিন বসে থাকতে থাকতে জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো মনে হয় -  
“স্বপ্নের ধ্বনিরা এসে বলে যায় – স্থবিরতা সবচেয়ে ভালো;
নিস্তব্ধ শীতের রাতে দীপ জ্বেলে
অথবা নিভায়ে দীপ বিছানায় শুয়ে
স্থবিরের চোখে যেন জমে ওঠে অন্য কোন বিকেলের আলো।“ 

মাঝে মাঝে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে গিয়ে ঘুরে আসি। কেমন যেন নিষ্প্রাণ সবই। কী হচ্ছে কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই। নতুন কোন ঝড়ের পূর্বাভাসও নেই। হলগুলির সবগুলি যারা দখল করে আছে – তাদের আমীর গোলাম আযম প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তাদের উল্লাস এখন আকাশছোঁয়া। 

বাংলাদেশের রাজনীতি কোন্‌দিকে মোড় নিচ্ছে তা বোঝার জন্য খুব বেশি বিচক্ষণ না হলেও চলে। বর্তমান সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকারের বিশেষ স্নেহ আছে। তাদের আর লাগে কী!

বিশ্বরাজনীতির দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে ঠান্ডাযুদ্ধ চলছিল – তা আর কিছু না হোক, এক ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রেখে আসছিল সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। কিন্তু সেই ঠান্ডাযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন হেরে গেছে আমেরিকার কাছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার বর্ষপূর্তিও হলো। এবছর ফেব্রুয়ারির এক তারিখ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন আমেরিকায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সাথে দেখা করে গদগদ হয়ে বলে এসেছেন – ঠান্ডাযুদ্ধ শেষ। তার মানে এখন আমেরিকাই পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতি!

বিল্ডিং-এ আমি এখন অনেকটাই একা। অজিত চলে গেছে তার পরীক্ষার পর। কোরবানিগঞ্জের একটা মেসে গিয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে শহরে গিয়ে তার ওখানে ঘুরে আসি। কিন্তু তাকে রাত দশটার আগে খুব একটা পাওয়া যায় না। তার সারাদিন কাটে টিউশনি আর চাকরির সন্ধানে। 

মুকিতভাই সিলেট থেকে বছরখানেক পরে একবার এসে আবার চলে গেছেন। নতুন অনেকে এসেছে – তাদের সাথে খুব একটা ভাব হয়নি। পড়াশোনা একদম কিছুই হচ্ছে না তা বলবো না, তবে যে গতিতে হচ্ছে তা খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। কেমন যেন লক্ষ্যহীন, স্বপ্নহীন স্থবির সময় যাচ্ছে। 

এর মধ্যেই কিছু আশা-জাগানিয়া ঘটনা ঘটে। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম ও তার সহযোগীদের বিচারের ডাক দিয়েছেন শহীদজননী জাহানারা ইমাম। তাঁর নেতৃত্বে.১৫ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আমাদের ক্যাম্পাস স্থবির হয়ে থাকলেও সারাদেশের জেলাশহরগুলিতে মানুষ জাগতে শুরু করেছে। স্থবিরতা কাটিয়ে পড়ার বই ঠেলে রেখে ছুটলাম এই জাগরণের অংশ হতে। 

মিউনিসিপ্যালটি স্কুলের সামনের রাস্তার ঐপাড়ে যেখানে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস, সেই বিল্ডিং-এই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রাম অফিস খোলা হয়েছে। একটা অন্যরকম উদ্দীপনায় কাজ শুরু হলো। সেখানে দেখা হয় সমমনা বন্ধুবান্ধবদের সাথে। বিশুর সাথে প্রায়ই দেখা হয়। মেশিনের মতো কাজ করতে পারে সে। ক’দিন আগে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেছে তার জীবনে। সে হাসতে হাসতে বলছিলো, “আমি এবার পরীক্ষা দেয়ার আগেই পাস করে ফেলেছি।“ 

গতবছর সে ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে। পেপারে তার রোলনম্বর না দেখে শুরুতে প্রচন্ড হতাশ হয়ে পড়েছিল। তারপর প্রকৃত বিপ্লবীর মতো আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে এবছর আবার পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম ফিল আপ করেছে। পরীক্ষার আগে কলেজে গিয়ে প্রবেশপত্র নিয়েছে। তারপর কৌতূহল বশত গতবারের মার্কশিটটা তুলে দেখলো সে গতবারই পাস করেছে। পত্রিকাওয়ালারা ভুল করে তার রোলনম্বর ছাপায়নি। গত দেড় বছর ধরে সে জানতোই না যে সে বিএ পাস। 

জামায়াত-বিএনপি শুরুতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বকে মোটেও পাত্তা দেয়নি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছে ইচ্ছেমতো। কিন্তু যখন দেখলো অতিদ্রুত সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধা-পরিবার এবং প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলি একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে একতাবদ্ধ হচ্ছে – তারা নড়েচড়ে বসলো। 

মার্চের শুরু থেকেই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। মার্চের এক তারিখ ঢাকার সমাবেশে জাহানারা ইমাম বলেছেন, “গোলাম আযমের বিচার করা আমাদের জন্য ফরজ কাজ।“ মার্চের তিন তারিখ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিশাল জনসভায় বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, “বাংলার মাটিতে গোলাম আযমসহ একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচার হবেই।“ 
জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গণ-আদালতে গোলাম আযমের বিচার হবে। সারাদেশে একটা অন্যধরনের উদ্দীপনা জেগে উঠেছে। যে রাজাকার-আলবদররা রাষ্ট্রীয় মদদে এতদিন বুক-ফুলিয়ে হাঁটছিলো – তাদের ফোলানো বুক যে চুপসে গেছে তা নয় – তবে মনে হচ্ছে তারা এবার কিছুটা হলেও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। 

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে শেখ হাসিনাসহ শতাধিক সংসদসদস্য গোলাম আযমের বিচারের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে ছাত্রদল ছাত্রলীগের উপর চড়াও হতে শুরু করেছে। যদিও আমাদের ক্যাম্পাসে সেরকম কিছু হয়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল গুলি করে ছাত্রলীগের একজনকে মেরে ফেলেছে। ছাত্রশিবির এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তান্ডব চালাচ্ছে। সেখানে ছাত্রঐক্যের মিছিলে পুলিশ আর শিবির একজোট হয়ে হামলা করে একজন ছাত্রকে মেরে ফেলেছে। ছাত্রশিবির কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। 

প্রায়ই শহরের মিছিল-সমাবেশে যাই। অনেক রাতে মেসে ফেরার সময় একটু ভয় ভয় করে, কিন্তু খুব একটা পাত্তা দিই না। মাঝে মাঝে অনেক বেশি রাত হয়ে গেলে অজিতের মেসে চলে যাই। 
মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে রমজান শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু রমজানের মধ্যেও গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে সমাবেশগুলিতে মানুষের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখলে মনে হয় – একাত্তরে এরকম মানুষগুলি জেগেছিল বলেই স্বাধীনতা এসেছে। আজ স্বাধীনতার একুশ বছর পর আবার জেগেছে মানুষ। এবার কিছু একটা হবেই। 

কিন্তু বিএনপি সরকার এবং জামায়াতে ইসলামীর সাঙ্গপাঙ্গরা অর্থাৎ একাত্তরের ঘাতক-দালালেরা বসে নেই। গণ-আদালত সফল করার জন্য প্রকাশ্যে কর্মসুচী চলছে, সমাবেশ চলছে। আর গণ-আদালত বাঞ্চাল করার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র করছে সরকার এবং জামায়াত-শিবির। 

সরকার এখানে রাজনৈতিক কূটনীতি শুরু করেছে। মন্ত্রীপরিষদের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কারণ-দর্শাও নোটিশ জারি করেছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হবার এত বছর পরেও কেন তিনি তাঁর নিজের দেশ পাকিস্তানে ফিরে যাননি এবং পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও কীভাবে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আমীর হলেন ইত্যাদি প্রশ্ন আছে নোটিশে। কিন্তু ওটা করার আসল উদ্দেশ্য হলো গণ-আদালত বাঞ্চাল করা। মন্ত্রীপরিষদ গণ-আদালতের উদ্যোক্তাদের প্রতিও শোকজ নোটিশ জারি করেছে। 

চব্বিশে মার্চ গোলাম আযমকে লোকদেখানো গ্রেফতার করে সরকারি নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হলো। সবাই বুঝে গেল সরকারের উদ্দেশ্য। পঁচিশে মার্চ রাতে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছিলাম। আমাদেরকে বলা হলো খুবই সাবধানে থাকতে। যে কোনো সময় পুলিশের ট্রাক এসে তুলে নিয়ে যেতে পারে। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষদের উপর নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। বিরানব্বইর পঁচিশে মার্চে বাংলাদেশের পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হবে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে যারা শহীদমিনারের সমাবেশে এসেছে তাদের! না, শেষপর্যন্ত পুলিশ কিছু করেনি। 

কিন্তু ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণ-আদালতের জন্য কোন মঞ্চ তৈরি করতে দেয়নি। ২৬শে মার্চ সকাল থেকে সেখানে কী হচ্ছে জানার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে বসেছিলাম। টিভিতে সারাদিন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান দেখিয়েছে। কিন্তু একবারও গণ-আদালতের কোন খবর বলেনি। অদ্ভুত যন্ত্র এই বাংলাদেশ টেলিভিশন – আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের মতো যখন যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে – তারই আজ্ঞা বহন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় অথচ বঙ্গবন্ধুর নাম একবারও উচ্চারিত হয় না। টেলিভিশনে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ নাটক প্রচারিত হয় – সেই নাটকের মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয় না। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নাম নেয়া হয় না। কী ভয়ানক জ্ঞানপাপীরা এসব অনুষ্ঠান বানান – হয়তো বানাতে বাধ্য হন। 

অবশ্য বাধ্য হয়েই করছে এটাও বা কীভাবে বলি? পাকিস্তানপ্রীতি এখনো বাংলাদেশের অনেকের ভেতর আছে। এই তো ২৫শে মার্চ তারিখেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এতে খুশি হয়ে পাকিস্তানের পক্ষে আনন্দ মিছিল বের করেছে বাংলাদেশের অনেক জায়গায়। 

সরকারি প্রচারমাধ্যমের কোথাও গণ-আদালতের খবর প্রচার করা হয়নি। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছুটি। তাই ২৭ মার্চ সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটলো। সংবাদপত্রের মালিক এবং সম্পাদকেরা চমৎকার একটি কাজ করলেন। সাতাশে মার্চ সংবাদপত্র প্রকাশ করলেন। 

২৭ মার্চ সকালেই পেপারের হেডলাইন – গণ-আদালতে গোলাম আযমের ফাঁসির রায়। ২৬শে মার্চ সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ কোন মঞ্চ তৈরি করতে দেয়নি। তাদের উপর আদেশ ছিল যেকোনো ভাবে গণ-আদালত বাঞ্চাল করতে হবে। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। একাত্তরের সাতই মার্চের স্মৃতিস্তম্ভের পাশে চারটি ট্রাক পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে তৈরি করা হয় এজলাস মঞ্চ। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ গণ-আদালত-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে জাহানারা ইমাম একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযমের ফাঁসির রায় পড়ে শোনান। বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই রায়কে জনতার বিজয় বলে অভিহিত করেন। 

প্রচন্ড উৎসাহ-উত্তেজনা নিয়ে গণ-আদালত সংক্রান্ত সব খবর পড়ে ফেললাম। গণ-আদালতের বিচার – প্রতীকী বিচার, রায় প্রতীকী রায়। এতে মনের জোর হয়তো বাড়ে, মানসিক সান্ত্বনা হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে কি গোলাম আযমের বিচার সম্ভব হবে কোনদিন? এই বাংলায় কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব? চারপাশে জামায়াত-শিবিররা যেভাবে আস্ফালন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যে দেশের রেডিও-টেলিভিশনে এখনো বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয় না, যেখানে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা মন্ত্রী হয়, সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে? আমাদের সম্ভবত এই গণ-আদালত করেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। 

কিন্তু বিএনপি সরকার সেটাও করতে দেবে না। দু’দিন পরেই জাহানারা ইমামসহ গণ-আদালতের উদ্যোক্তাদের প্রধান চব্বিশ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলো। তাঁদের অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতা। 

হায় রে আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র – যারা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা চায়নি তারা আজ দেশপ্রেমিক, আর যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা এসেছে – তাদেরকে আজ বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী!

No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts