#স্বপ্নলোকের_চাবি_৪৯
“প্রেমাঙ্কর, তুমি আইরিনকে দেখেছো?”
প্রেমাঙ্কর গভীর মনযোগ দিয়ে গ্যালারির ব্ল্যাকবোর্ডের উপর নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যানার লাগাচ্ছে। আমার প্রশ্নটা সে শুনতে পায়নি ভেবে এবার মিজানকে জিজ্ঞেস করলাম, “আইরিনকে দেখেছো মিজান?”
মিজান প্রেমাঙ্করকে সাহায্য করছিলো, ঘাড় না ফিরিয়েই উত্তর দিলো – “না, এখানে আসেনি।“ প্রেমাঙ্কর এবার ঘাড় ফিরিয়ে মুখে একটা ভিলেনি হাসি ফুটিয়ে বললো, “দ্যাখো আইরিনও ভেগেছে কি না। তোমার সাথে কবিতা পড়তে উঠলেই সবাই পালিয়ে যায়। আইরিন না এলে কিন্তু তোমাকে একাই সব করতে হবে।“
প্রেমাঙ্করের কথায় একটু উৎকন্ঠায় পড়ে গেলাম। একা সব করতে হবে সেজন্য নয়, একা একা পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন হয় না – সেজন্য।
আমার সাথে কবিতা পড়তে উঠলেই সবাই পালিয়ে যায় – প্রেমাঙ্করের এই কথাটার অনেকটাই সত্য। আমার জানা মতে এপর্যন্ত দু’জন পালিয়েছে, অজান্তে ক’জন জানি না।
আমাদের অনার্সের দীর্ঘ পাঁচ বছরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমরা দেখিনি। স্বয়ং আইনস্টাইন সঙ্গীতপিপাসু হতে পারেন, সত্যেন বসু উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ভক্ত হতে পারেন, কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্টে সঙ্গীতের কোন ছোঁয়া লাগতে দেখিনি গত পাঁচ বছরে। সেই সাংস্কৃতিক খরা আজ আমরা দূর করার ব্যবস্থা করছি। আমাদের ব্যাচের উদ্যোগে আজ ডিপার্টমেন্টের নবীনবরণ ও বিদায় সম্বর্ধনা।
সেই ১৯৮৬ সালে আমরা যখন ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছিলাম, আমাদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করেনি। জাতীয় ছাত্রসমাজের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে নবীনবরণ অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল, সাবিনা ইয়াসমিনসহ আরো অনেকে ক্যাম্পাসে আসবেন বলে প্রচার চালানো হচ্ছিলো। ঠিক সেইসময় শিবিরের সশস্ত্র উত্থান ঘটার পর সবকিছু বাঞ্চাল হয়ে গিয়েছিল। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেছে।
ধরতে গেলে ক্যাম্পাস এখনো অবরুদ্ধ। মুক্তকন্ঠে কথা বলা এখানে অসম্ভব, স্বাধীনভাবে কাজ করার তো প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু এর মধ্যেই কাজ করতে হবে যতটুকু পারা যায়। আমাদের আগের ব্যাচের মাস্টার্স পরীক্ষা হয়ে গেছে। তাদের বিদায় দিতে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে। আমাদের পরবর্তী চতুর্থ ব্যাচ ভর্তি হয়েছে। তাদের ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসও প্রায় শেষের পথে। তাদেরকে বরণ করে নিতে হবে।
করিৎকর্মা শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আমার ঠিক জানা নেই। কিন্তু আমার মতে - তড়িৎগতিতে কর্ম করিতে সক্ষম যাহারা – তাহারাই করিৎকর্মা। এরকম করিৎকর্মা আমাদের ক্লাসে অনেকেই আছে। নবীনবরণ আর বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত কর্মসম্পাদনে এগিয়ে এলো প্রেমাঙ্কর, মিজান, কবীর, শাকিল, দুলাল, আমানসহ অনেকে। প্রেমাঙ্কর আর দুলাল আমাকে চেপে ধরলো উপস্থাপনা করার জন্য। আমি অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যত ধরনের অজুহাত দাঁড় করানো সম্ভব করলাম, কিন্তু কোন কাজ হলো না।
দেখা গেলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করার শিল্পী ডিপার্টমেন্টে অনেক আছে। আমাদের পরের ব্যাচের অসীম চমৎকার গান করে। ফার্স্ট ইয়ারের মুক্তির গান শুনে আমার মনে হয়েছিল – মুক্তির একক সঙ্গীতানুষ্ঠান করলেই সবচেয়ে ভালো হতো। রিহার্সালের সময় প্রেমাঙ্করকে সেকথা বলেওছিলাম। সে আমাকে কড়া একটা ধমক দিয়ে বলেছিল, “তুমি তোমার কবিতা রেডি করো। আমি চাই অনেক কথোপকথন।“
কামরুল হাসান মঞ্জু পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথনের কবিতাগুলিকে দ্বৈতকন্ঠে নাটকীয়ভাবে আবৃত্তি করার পর থেকে নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। এখন যেকোনো কবিতার আসরেই দেখা যায় ছেলে-মেয়ে মিলে ‘কথোপকথন’ হচ্ছেই। প্রেমাঙ্কর সেটা আমাদের অনুষ্ঠানেও চায়। শুভঙ্করের লাইনগুলি বলতে আমার বেশ ভালই লাগছিল। কিন্তু সমস্যা হলো নন্দিনীকে নিয়ে। প্রেমাঙ্কর আর দুলাল, বিশেষ করে দৌলতুজ্জামান দুলালের কঠিন শর্ত – নন্দিনীকে হতে হবে সুন্দর। সুন্দরের তো কতোরকমের সংজ্ঞা আছে। কিন্তু তাদের কথা পরিষ্কার – কাব্যিক সৌন্দর্য নয়, আঙ্গিক সৌন্দর্যের প্রাধান্যই তারা দিচ্ছে। আমি বললাম, তোমরা তোমাদের পছন্দের নন্দিনী নিয়ে এসো, আমার কোন আপত্তি নেই।
“পপিকে পেলে খুব ভালো হতো।“
প্রেমাঙ্করের কথায় প্রায় আঁৎকে উঠলো অসীম। পপি অসীমদের ব্যাচের। রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে পপি ফার্স্ট ইয়ারে এবং সেকেন্ড ইয়ারে ফার্স্ট হয়েছে। থার্ড ইয়ারেও রেকর্ড করবে। পপির সৌন্দর্য ও মেধা পরস্পর সমানুপাতিক। কিন্তু সমস্যা হলো পপি ডিপার্টমেন্টের কোন ছেলের সাথে কথা বলে না। শ্রাবণী আর শিল্পী সারাক্ষণ পপির আশেপাশে থাকে। পপি এই দু’জন ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথেও কথা বলে কি না জানি না। অসীমের কাছ থেকে এসব তথ্য পাবার পর প্রেমাঙ্কর পপির আশা ত্যাগ করে বললো, ‘দেখি কী করা যায়।‘
পরদিন রিহার্সালে প্রেমাঙ্কর যে নন্দিনীকে নিয়ে এলো – তাকে দেখে মনে হলো ফিজিক্সে এত সুন্দর মানুষ আছে আগে দেখিনি কেন?
প্রাথমিক পরিচয়পর্ব শেষ করেই কবিতাপাঠের রিহার্সালে মন দিলাম। তার হাতে বই ধরিয়ে দিয়ে বললাম, এটা পড়ো।
- কাল তোমাকে ভেবেছি বহুবার
কালকে ছিল আমার জন্মদিন।
পরেছিলাম তোমারই দেওয়া হার।
র আর ড় বড্ড ঝামেলা করছে। বার হয়ে যাচ্ছে বাড়, হার হয়ে যাচ্ছে হাড়। নন্দিনী যদি বলে “পড়েছিলাম তোমাড়ই দেওয়া হাড়” – শুভঙ্কর তো ঝামেলায় পড়ে যাবে।
পরদিন নন্দিনী আর এলো না। প্রেমাঙ্কর বললো, “এতো শেখানোর কী আছে? হার বললো কি হাড় বললো তাতে কী আসে যায়? এখন আরেকটা নন্দিনী কোথায় পাই?”
যাই হোক, প্রেমাঙ্করের নেটওয়ার্ক বেশ শক্তিশালী। পরদিন আরেকজন নন্দিনীকে নিয়ে এলো। সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। মনে হলো কথোপকথনের নন্দিনীর চেয়েও রক্তকরবীর নন্দিনী হিসেবে বেশি মানায়।
আমি বেশ উৎসাহিত হয়ে গ্রুপ থিয়েটারে হায়দারভাইয়ের কাছ থেকে শেখা নাটকীয় ভঙ্গিতে বললাম, “এই যে এই কবিতাটা।
আমার আগে আর কাউকে ভালোবাসোনি তুমি?
কেন বাসবো না, অনেক।
প্রথম লাইনটা তুমি পড়ো, দ্বিতীয় লাইনটা আমি পড়ছি।“
সে বইটা নিয়ে অনেকক্ষণ লাইনটির দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো, “কালকে পড়ি ভাইয়া?”
“আজকে কী সমস্যা?”
“না, আজকে থাক।“
“আমাদের হাতে তো সময় নেই। ১৭ তারিখ অনুষ্ঠান।“
“আজকে আসি ভাইয়া।“ নন্দিনীর দ্রুত প্রস্থান।
পরদিন নন্দিনী আর এলো না। তাকে ক্লাসেও খুঁজে পাওয়া গেল না। শুধু সেদিন নয়, ১৭ তারিখ পর্যন্ত সে আর ক্লাসে আসেনি। প্রেমাঙ্কর কবিসুলভ চিন্তিত মুখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, তোমাকে দেখে সবাই পালিয়ে যাচ্ছে কেন বলতো?”
আমারও একই প্রশ্ন। নন্দিনীরা সব পালাচ্ছে কেন? নিশ্চয়ই আমি শুভঙ্কর হওয়ার যোগ্য নই। প্রেমাঙ্করকে বললাম – কথোপকথন বাদ দাও।
“না, কথোপকথন থাকবে। দরকার হলে আমি নন্দিনী হবো।“ – আমি আঁৎকে উঠলাম। আমাদের গ্রামের ক্লাবের নাটকে ছেলেরাই এখনো মেয়ে সেজে অভিনয় করে। কিন্তু এখানে প্রেমাঙ্কর শাড়ি পরে স্টেজে দাঁড়িয়ে বলবে “আমার আগে আর কাউকে ভালোবাসনি তুমি?” – ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। না, নন্দিনী এবার আমাদের বন্ধুদের ভেতর থেকেই খুঁজে নিতে হবে।
রিনাকে জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো, “ওসব প্যানপ্যানানিতে আমি নেই।“
লিপি বললো, “নন্দিনী আমি হতে পারি, কিন্তু তুই শুভঙ্কর হলে – নো ওয়ে!”
“কেন ভাই, দু’লাইন কবিতাই তো পড়বি।“
“নো ওয়ে, নট উইথ ইউ।“ – এই মেয়ে এত সুন্দর ইংরেজি বলে কেন?
রুমা, পারুল, বিউটি, হেনা, রেহানা, কেউই রাজি হলো না। শাহেদাকে অনুরোধ করলাম। সে জিভে কামড় দিয়ে বললো, নাউজুবিল্লাহ। দিলারা আর শফিক করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছিলো। দিলারাকে অনুরোধ করলাম। সে কিছু না বলে শফিকের দিকে তাকালো। শফিক আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছি।
প্রদীপ নাথ বললো, “ডল আপাকে রিকোয়েস্ট কর।“ এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
এতক্ষণ আইরিন ছিলো না। সে ক্লাসে ঢুকতেই তাকে গিয়ে ধরলাম। সব শুনে সে রাজি হয়ে গেল। এখন তিন-চারটি ছোট ছোট কবিতা মুখস্থ করতে হবে।
জোরেশোরে রিহার্সাল শুরু করলাম আইরিনের সাথে। কিন্তু প্রথম কবিতা পড়তে গিয়েই সে পড়লো, “আমি তোমার পান্টে পাদব?” এটা কী? আমি তোমার প্যান্টে পাদবো?” বলেই এমন জোরে হাসতে শুরু করলো যে তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল।
“প্যান্টে পাদব নয়, ওটা পান্থপাদপ। পান্থ মানে পথিক, আর পাদপ মানে হলো এক ধরনের গাছ যেগুলিতে পানি থাকে।“
“তুমি আমার অতিথ্শালা
হঠাৎ কেন মেঘ চেঁচালো
-দরজাটা কই, মস্ত তালা?
এসব কী কবিতা? মাথামুন্ডু তো কিছুই বুঝতে পারছি না।” – আইরিন চোখ বড় বড় করে ফেলে।
“ভাই রে, কবি অনেক চিন্তাভাবনা করে এগুলি লিখেছেন। কবির মুন্ডু আরেকদিন চিবুবো। আগে কবিতাগুলি মুখস্থ করে ফেলো। তোমার তো একবার পড়লেই মনে থাকে।“
আইরিন বেশ দ্রুতই মুখস্থ করে ফেলেছে কবিতাগুলি। কিন্তু আজ যদি সে না আসে – তাহলে নির্ঘাৎ প্রেমাঙ্করকেই বলতে হবে, “আমি তোমার প্যান্টে পাদব, থুড়ি পান্থপাদপ।“
না, একটু পরেই আইরিনকে দেখলাম সেজেগুজে গ্যালারিতে ঢুকছে। শাড়ি পরলেই মেয়েরা কেমন যেন বদলে যায়। আইরিন আমার দিকে এগিয়ে এসেই বললো, “তোমার পাঞ্জাবির এ অবস্থা কেন? ঝড়ে পড়েছিলে? কুঁচকে গেছে এখানে সেখানে? লন্ড্রি কি ছিল না খোলা? দরজাটা কই, মস্ত তালা?”
আমার পাঞ্জাবির আসলেই খারাপ অবস্থা। অবশ্য এরজন্য দায়ি আমি নই, অজিত। যে পাঞ্জাবি পরে আসার কথা ছিল সেটা লন্ড্রিতে দিয়েছিলাম। অজিত তার শার্টের সাথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছিল। সে যেতে যেতে লন্ড্রি বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে কুচকানো পাঞ্জাবি। কিন্তু মনে হচ্ছে আইরিনকে কবিতার ভূতে পেয়েছে। এটা ভালো কি খারাপ লক্ষণ বুঝতে পারছি না। অনুষ্ঠানের সময় সব গুলিয়ে না দিলেই হলো।
বেলা এগারোটায় আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু শুরু করতে দেরি হয়ে গেল। প্রধান অতিথি জামাল নজরুল ইসলামস্যার এগারোটা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে গ্যালারিতে ঢুকেছেন। তাঁকে আনতে যেতে হয়নি। কিন্তু আমাদের বিভাগীয় সভাপতি সোবহানস্যারকে অফিসে গিয়ে নিয়ে আসতে হলো। সায়েন্স ফ্যালাক্টির ডিন নুরুল ইসলামস্যারকেও ডেকে আনতে হলো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই প্রথম এরকম অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি। একটু ভয়ভয় লাগলেও কোন রকমে উৎরে গিয়েছি। রশীদুন্নবীস্যার বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে বিদায় নিয়েছেন কিছুদিন আগে। তাঁকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেয়া হলো। সোবহানস্যারকে বরণ করা হলো। নবীনদের প্রতিনিধি হিসেবে অনামিকা আর মইনুল হক মিয়াজীকে বরণ করা হলো। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এনায়েতভাই আর রতন নন্দী বক্তৃতা দিলেন। জামাল নজরুল ইসলামস্যার তাঁর বক্তৃতায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন। শিক্ষাঙ্গনে বিরাজিত ছাত্রসংগঠনগুলির মধ্যে বৈরিতার খবর তিনি জানেন। কিন্তু সহযোগিতা কীভাবে সম্ভব? শিবির কি সহযোগিতায় বিশ্বাস করে? জামাল নজরুল ইসলামস্যারের বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা আগে শুনেছি। এবার শুনলাম সমাজ ও দেশ সম্পর্কে কথা। তিনি বললেন, শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় কাজ পড়াশোনা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা ব্যাহত হলে প্রকৃত শিক্ষা হয় না। ছাত্রশিবির এসব কথা শুনলে জামাল নজরুল ইসলামস্যারকেও কি ছাড় দেবে?
বক্তৃতা পর্বের পর স্যাররা চলে গেলেন। এবার শুরু হলো আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমি আর আইরিনের কথোপথনের মাঝখানে গান। মুক্তির ‘বাঁকা চোখে বলো না, কথা বলো চোখে চোখ রেখে’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিলো এত ভালো গান কীভাবে গায়! অসীমের গলাটা অনেকটা মান্না দে’র মতো। খুব জমিয়ে গান বাজনা হলো। বেশ ভালোভাবেই শেষ হলো আমরা যা করতে চেয়েছিলাম।
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শায়লা আপা একটি কবিতা আবৃত্তি করবেন বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর নাম ঘোষণা করার পর তিনি বললেন তিনি আবৃত্তি করবেন না। কেমন যেন খটকা লাগলো। তাঁর মেজাজ হঠাৎ কী কারণে বিগড়ালো জানি না।
পরদিন ১৮ নভেম্বর, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনটি পালন করার কোন কর্মসূচি ছিল না। তবে দিনটিকে দুঃখজনকভাবে কালিমালিপ্ত করার সংবাদ পেলাম আমরা ফ্যাকাল্টিতে গিয়ে। ভাইস চ্যান্সেলর আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিনের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে শিবিরের ক্যাডাররা। ভিসির গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মাইক লাগিয়ে প্রকাশ্যে তাঁর জীবননাশের হুমকি দিয়েছে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররূপী কিছু রাজনৈতিক মস্তান। এর প্রতিবাদে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য চট্টগ্রামে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে নভেম্বরের ২১ তারিখ। এদিকে ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডেকেছে। ভাইস চ্যান্সেলরের পদত্যাগ ছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয় আর চলতে দেবে না।
আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তার জন্য আমি ভাইসচ্যান্সেলরের কাছে বিচার প্রার্থনা করবো ভেবেছিলাম। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর নিজেই আক্রান্ত তাঁর নিজের ক্যাম্পাসে। তিনি শুধু বলেছিলেন একাত্তরের পরাজিত দালালেরা নব্বইতে এসে বিপ্লবী সেজেছে। সেই একাত্তরের পরাজিত দালালদের হাতে তিনি আজ লাঞ্ছিত। একাত্তরের পরাজিত দালালেরা আজ একানব্বইতে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতার সরাসরি অংশীদার।
No comments:
Post a Comment