নোবেল পুরষ্কার ২০২১: পদার্থবিজ্ঞান
আমরা একটি জটিল মহাবিশ্বে বাস করি। বিজ্ঞানীরা এই জটিলতার রহস্য উন্মোচনে কাজ করে যাচ্ছেন শত শত বছর ধরে। কিন্তু সেই জটিল রহস্যের খুব সামান্যই আমরা জানতে পেরেছি। দৈনন্দিন যেসব কাজ আমরা করতে অভ্যস্ত সেগুলি কত সহজেই আমরা করে ফেলি। কিন্তু সেই সহজ কাজও আসলে খুবই জটিল। ধরা যাক, হাত থেকে একটা কাচের গ্লাস ফ্লোরে পড়ে ভেঙে গেল। পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের সাহায্যে আমরা সহজেই হিসেব করতে পারি গ্লাসটি কত বেগে ফ্লোরে পড়েছে, ত্বরণ কত ছিল, কত বল প্রয়োগ করা হয়েছে ইত্যাদি। এখন আমরা যদি এই ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি করতে চাই, যদি একই উচ্চতা থেকে, একই বেগে, একই বলে, একই ত্বরণে আরেকটি গ্লাস ফ্লোরে ফেলি – সেই গ্লাসটাও ভাঙবে ঠিকই – কিন্তু হুবহু আগের মতো হবে না। ভাঙা কাচের সংখ্যা ভিন্ন হবে, টুকরোগুলি ভিন্ন আকৃতির হবে, ভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বে, এরকম অসংখ্য পার্থক্য থাকবে। তাই যেসব ঘটনার পূর্বাভাস আমরা শতকরা একশ ভাগ নিশ্চয়তার সাথে দিতে পারি, সেগুলি আসলে ঘটনাগুলির সরল রূপ। সম্পূর্ণ ঘটনার পূঙ্খানুপুঙ্খ পূর্বাভাস দেয়া অসম্ভব। কারণ ঘটনার অসংখ্য প্যারামিটারের যেকোনো একটিও যদি ভিন্ন হয়, পুরো ঘটনাই আলাদা আরেকটি ঘটনা হয়ে যায়। জটিল মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্রগুলির গতবিধির কিছুকিছু আমরা মোটামুটিভাবে বুঝতে পেরেছি। সে হিসেবে কিছুটা পূর্বাভাসও দিতে পারছি। যেমন সৌরজগতের গ্রহগুলির ভবিষ্যতের অবস্থান ইত্যাদি। কিন্তু সেই পূর্বাভাসের অনিশ্চয়তার পরিমাণও বেশ বড়।
প্রাকৃতিক জটিলতার একটি সহজ উদাহরণ হলো পৃথিবীর আবহাওয়া। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির সাথে সাথে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এখন অনেক সঠিকভাবে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু কতটুকু সূক্ষ্মভাবে সঠিক এসব পূর্বাভাস? কত লক্ষ লক্ষ প্যারামিটার হিসেব করতে হয় – যদি আমরা সঠিকভাবে মেঘের গতি, তাপমাত্রা, বাতাসের বেগ, দিক, আর্দ্রতা, এসব মাপতে চাই। খুব সামান্য কিছুর পরিবর্তনেই আবহাওয়া বদলে যেতে পারে। লক্ষ লক্ষ প্যারামিটারের জটিলতার সমাধান করার চেষ্টা করি আমরা সহজ বৈজ্ঞানিক মডেল তৈরি করার মাধ্যমে। এসব মডেলের উপর ভিত্তি করে আমরা জটিল ব্যাপারকে সহজে বোঝার চেষ্টা করি। পৃথিবীর জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে ঘটছে তা আমরা জানতে পারছি পৃথিবীর জলবায়ুর মডেলের উপর গবেষণার মাধ্যমে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবার জন্য যে এই পৃথিবীর মানুষ অনেকাংশে দায়ী সেই ব্যাপারটাও বৈজ্ঞানিক মডেলের উপর হিসেব করে বের করেছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জটিলতার গবেষণার জন্য এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।
এবছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তিনজন। পৃথিবীর জলবায়ুর প্রথম সার্থক বৈজ্ঞানিক মডেল তৈরি করেছেন যে দু’জন বিজ্ঞানী এবং তাঁদের সাথে আছেন একজন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী যিনি জটিলতার পদার্থবিজ্ঞানের একটি যুগান্তকারী সমাধান আবিষ্কার করেছেন।
২০২১ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন যৌথভাবে আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সুকুরু মানাবে, জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট অব মেটিওরলজির প্রফেসর ক্লাউস হাসেলমান, এবং ইতালির সাপিয়েনজা ইউনিভার্সিটি অব রোমের প্রফেসর জিওরজিও পারিসি।
এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার অন্যান্য বছরের চেয়ে তুলনায় কিছুটা আলাদা। কারণ নোবেল পুরষ্কারের গত ১২০ বছরের ইতিহাসে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গবেষণার জন্য কিংবা জটিলতার পদার্থবিজ্ঞানের জন্য এর আগে কাউকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়নি।
এবছর দুটো আলাদা বিষয়ে পুরষ্কার দেয়া হয়েছে, যদিও সূক্ষ্মভাবে বিষয়দুটো একটা বৃহত্তর জটিল কাঠামো-পদ্ধতির অংশ। পুরষ্কারের অর্ধেক অর্থ দেয়া হয়েছে প্রফেসর মানাবে এবং প্রফেসর হাসেলমানকে। তাঁরা পৃথিবীর জলবায়ুর ভৌত কাঠামোর কার্যকর মডেল তৈরিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন যার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির নির্ভরযোগ্য গাণিতিক পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হয়েছে।
পুরষ্কারের বাকি অর্ধেক অর্থ দেয়া হয়েছে প্রফেসর পারিসিকে। তিনি পদার্থের জটিল ভৌত কাঠামোর ভেতরের সুপ্ত প্যাটার্ন আবিষ্কার করেছেন – যার মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে যে সমস্ত সিস্টেম খুব বিশৃঙ্খল বলে মনে হয়, তাদের ভেতরও যে সুপ্ত শৃঙ্খলা আছে তা বোঝা যায়। তাঁর পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষুদ্রতম পরমাণু থেকে শুরু করে সৌরজগতের গ্রহগুলোর জটিল গতিবিধিও বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং গাণিতিকভাবে হিসেব করা যায়।
বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রথম সার্থক মডেল তৈরি করেছেন স্যুকুরো মানাবে। তাঁর জন্ম ১৯৩১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাপানের শিংগু প্রদেশে। তাঁর বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া সব জাপানেই। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে বিএ, ১৯৫৫ সালে এমএ, এবং ১৯৫৮ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি।
সেই সময় আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএস ওয়েদার ব্যুরো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। আমেরিকান আবহাওয়াবিদ (মেটিওরোলজিস্ট) জোসেফ স্মাগোরিনস্কির নেতৃত্বে কম্পিউটারের সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মডেল তৈরি করে গাণিতিক হিসেবনিকেশ করা শুরু হয়। সেই সময়ের কম্পিউটারের আকার ছিল বিশাল, কার্যক্ষমতা ছিল খুবই কম। সেই কাজের জন্য একদল তরুণ গবেষক নিয়োগ দেয়া হলো। জাপান থেকে আমেরিকায় এসে স্যুকুরো মানাবে যোগ দিলেন সেখানে জেনারেল সার্কুলেশান রিসার্চ সেকশানে ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে। তারপর আমেরিকাতেই রয়ে যান স্যুকুরো মানাবে। ১৯৭৫ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব পান।
ইউএস ওয়েদার ব্যুরো থেকে ১৯৬৩ সালে স্যুকুরো মানাবে সিনিয়র রিসার্চ মেটিওরোলজিস্ট হিসেবে যোগ দেন জিওফিজিক্যাল ফ্লুইড ডায়নামিক্স ল্যাবোরেটরিতে। ১৯৯৭ পর্যন্ত তিনি কাজ করেন সেখানে। এই ল্যাবে কাজ করার সময়েই তিনি পৃথিবীর জলবায়ুর প্রথম সার্থক মডেল তৈরি করেন।
পৃথিবীর জলবায়ুর মডেল তৈরির চেষ্টা চলছে অনেক বছর থেকে। প্রায় দু’শ বছর আগে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী জোসেফ ফুরিয়ার পৃথিবীর বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হওয়ার কারণ আবিষ্কার করেন। সূর্যের আলোর যে পরিমাণ বিকিরণ পৃথিবীতে আসে তার বেশিরভাগ ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে। আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে যে পরিমাণ বিকিরণ নির্গত হয় তা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে শোষিত হয়। ফলে বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হয়। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসে – সেই আলোর কম্পাঙ্ক বেশি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে তাপের আকারে যে বিকিরণ নির্গত হয় তার কম্পাঙ্ক কম, তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি। ফলে সেগুলি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে মহাশূন্যে চলে যেতে পারে না। এই ব্যাপারটাকে আমরা গ্রিনহাউজ ইফেক্ট বলছি। আপাতদৃষ্টিতে এই হিসেবটা সহজ মনে হলেও এখানে অনেকগুলি প্যারামিটার কাজ করে। তার সবগুলিকে হিসেবের আওতায় আনার জন্য বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য ইউএস ওয়েদার ব্যুরোতে আবহাওয়ার যে গাণিতিক মডেল তৈরি করা হলো – তাতে বাতাসের তাপমাত্রার পরিবর্তন, আর্দ্রতার পরিবর্তন, বাতাসের বেগ, মেঘ এসবের সাথে পৃথিবীর স্থলভাগ এবং জলভাগের মিথস্ক্রিয়া কীভাবে ঘটে তার বৈজ্ঞানিক হিসেব নিকেশ করার জন্য কিছু মডেল দাঁড় করানো হলো। কিন্তু সেই মডেল দিয়ে পরিসংখ্যানের হিসেবে সম্ভাবনার কথা বলা যায়, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যায় না।
বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের যে সরাসরি সম্পর্ক আছে তা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন সুইডিশ পদার্থবিজ্ঞানী সান্তে আরহেনিয়াস উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ১৯০৩ সালে তিনি রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। বাতাসের স্বাভাবিক উপাদানের মধ্যে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে শতকরা ৯৯ ভাগ, বাকি এক ভাগের মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে তাপ বের হয় তা শোষণ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটা কিন্তু খুবই দরকারি বিষয়। এটার কারণেই পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা না হলে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হতো মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই তাপমাত্রায় পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হতো না। বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস হিসেব করে দেখেছেন যে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যদি কমে গিয়ে অর্ধেক হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি কমে যেতে পারে – যার ফলে পৃথিবীতে আবার বরফযুগ নেমে আসতে পারে। কিন্তু কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে কী হবে? পৃথিবীর গড়তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। সামান্য বেড়ে গেলেই পৃথিবীর জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
তরুণ আবহাওয়াবিদ স্যুকুরো মানাবে জটিল বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার পরিবর্তন হিসেব করার জন্য একটি অত্যন্ত সরল মডেল তৈরি করলেন। তিনি ভূপৃষ্ঠ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার উঁচু একটি বায়ুস্তম্ভ ধরে নিলেন। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এই উচ্চতায় ওজোনস্তর। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যে তাপ বিকীর্ণ হয় তা এই স্তরেই শোষিত হয়ে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। স্যুকুরো মানাবে হিসেব করে দেখতে চাইলেন বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার কী পরিবর্তন ঘটে। সেই সময়ের কম্পিউটারের কয়েক শ ঘন্টা সময় লাগলো তাঁর মডেল দিয়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার পরিবর্তন হিসেব করতে। কিন্তু হিসেবে যা দেখা গেলো তা অত্যন্ত দরকারি একটি হিসেব। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যদি দ্বিগুণ হয়ে যায় – তাহলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি বেড়ে যাবে। ১৯৬৭ সালে মানাবে এই মডেল প্রকাশ করেন। এটা ছিল তাঁর একমাত্রিক মডেলের পরীক্ষা। পরবর্তী কয়েক বছরে তিনি তাঁর একমাত্রিক মডেলকে ত্রিমাত্রিক মডেলে রূপান্তরিত করে আরো অনেকগুলি পরীক্ষা করলেন। তাঁর ত্রিমাত্রিক মডেল প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে।
এরপর জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বৈজ্ঞানিক কারণ সন্ধানে সক্রিয় থেকেছেন বিজ্ঞানী মানাবে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় কাজ করার পর ৬৬ বছর বয়সে তিনি জাপানে ফিরে যান। ২০০৯ পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন জাপানে। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাপানের ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ-এর গ্লোবাল ওয়ার্মিং রিসার্চ প্রোগ্রামের পরিচালক। ২০০২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত জাপান ম্যারিন-আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অর্গানাইজেশানের কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন। গবেষণা-প্রতিষ্ঠানে তাঁর পূর্ণকালীন চাকরি হলেও তিনি যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পের সাথে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম ইন অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড ওশেনিক সায়েন্সের সিনিয়র মেটিওরোলজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন ২০০৫ সাল থেকে। এই নব্বই বছর বয়সেও তিনি সক্রিয়।
শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। এর কারণ বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বৃদ্ধি। স্যুকুরো মানাবের মডেল থেকে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইডের এই বৃদ্ধি কি প্রাকৃতিকভাবেই ঘটছে, নাকি এর জন্য পৃথিবীর মানুষ দায়ী? এই প্রশ্নে পৃথিবীর মানুষ বিভক্ত। বিশেষ করে রাজনীতিবিদরা মানতেই চাচ্ছেন না যে এর জন্য মানুষ দায়ী? কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে এরজন্য মানুষ দায়ী না প্রকৃতি? এই মোক্ষম প্রমাণটি করা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানী ক্লাউস হাসেলমানের মডেল থেকে। সেজন্যই হাসেলমানও এবার নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।
ক্লাউস হাসেলমানের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৫ অক্টোবর জার্মানির হামবুর্গে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তাঁর বাবা ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। কেমব্রিজ হায়ার স্কুল সার্টিফিকেট পাস করেছেন ইংল্যান্ড থেকেই। তারপর জার্মানিতে ফিরে এসে হামবুর্গে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন এক বছর। ১৯৫৫ সালে হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে গটিংগেন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব হামবুর্গের ইন্সটিটিউট অব নেভাল আর্কিটেকচারে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লা হোইয়ার ইন্সটিটিউট ফর জিওফিজিক্স অ্যান্ড প্লানেটারি ফিজিক্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে ফিরে আসেন জার্মানিতে। ১৯৬৪ সালে হামবুর্গ ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে তিনি হামবুর্গ ইউনিভার্সিটির থিওরেটিক্যাল জিওফিজিক্সের প্রফেসর এবং ইন্সটিটিউট অব জিওফিজিক্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন। ১৯৭৫ সালে ম্যাক্স-প্ল্যাংক ইন্সটিটিউট অব মেটিওরোলজি স্থাপিত হয়। ইন্সটিটিউটের প্রথম ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৮ সালে আতঁকে জার্মান ক্লাইমেট কম্পিউটার সেন্টারের সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর করা হয়। ১৯৯৯ সালে ৬৮ বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে এই নব্বই বছর বয়সেও তিনি ম্যাক্স প্ল্যাংক ইন্সটিটিউট অব মেটিওরলজির অবসরোত্তর প্রফেসর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯৮০ সালে প্রফেসর ক্লাউস হাসেলমান পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনে যে মানুষের ভূমিকা আছে তা প্রমাণ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন খুবই জটিল প্রক্রিয়ায় ঘটছে। স্থানীয় আবহাওয়ার প্যারামিটার আর বৈশ্বিক জলবায়ুর প্যারামিটার এক নয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর গাণিতিক প্রক্রিয়া ভীষণ জটিল এবং অনিশ্চয়তায় ভরা। আমাদের পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন সুষম নয়, কারণ মহাকাশ থেকে যে সৌরবিকিরণ পৃথিবীতে এসে পড়ে তা সব জায়গায় সমানভাবে পড়ে না। পৃথিবী নিজের অক্ষে প্রায় ২৪ ডিগ্রি কোণে ঝুঁকে আছে বলেই পৃথিবীতে জলবায়ুর পরিবর্তন, ঋতু-পরিবর্তন দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে বায়ুপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়। স্থলভাগের জলবায়ু আর জলভাগের জলবায়ুর মধ্যেও আছে ব্যাপক পার্থক্য। এই জটিল জলবায়ুর পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস একেবারে সঠিকভাবে দিতে হলে আমাদের জানতে হবে মহাবিশ্বের সবগুলি কণার সঠিক অবস্থান ও গতিবেগ। কিন্তু তা একেবারেই অসম্ভব।
প্রফেসর হাসেলমান দেখলেন আমাদের আবহাওয়ার একটি আদর্শ সাম্য অবস্থা ধরে নিয়ে তার পরিবর্তনকে যদি দ্রুত পরিবর্তনশীল গোলমাল বা নয়েজের সাথে তুলনা করা যায় – তাহলে একটা সমাধান পাওয়া যেতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানে আকাঙ্খিত তথ্যকে আমরা সিগনাল এবং অনাকাঙ্খিত তথ্যকে নয়েজ বা গোলমাল হিসেবে ধরে নিয়ে সিগনাল টু নয়েজ রেশিও বা তথ্য ও গোলমালের অনুপাত হিসেব করা হয়। তথ্যের চেয়ে গোলমাল বেশি হলে রেজাল্টের কোয়ালিটি খারাপ হয়। সেভাবে হিসেব করলে ধরা যায় – শান্ত আবহাওয়ার নয়েজ কম, ঝড়ো আবহাওয়ায় নয়েজ বেশি। এখন এই নয়েজের পরিমাণ এবং প্রভাব যদি হিসেব করা যায়, তাহলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। সেভাবে সমগ্র পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনও হিসেব করা সম্ভব।
এধরনের জটিল পদ্ধতির একটি সমাধান অনেক বছর আগে আইনস্টাইনও করেছিলেন – যার নাম ব্রাউনিয়ান গতি। কোন তরল পদার্থের উপর খালি চোখে দেখা যায় না এরকম ছোট ছোট পদার্থের কণা ভাসতে থাকলে কণাগুলোর গতি কোন নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাদের গতি হয় অত্যন্ত অনিয়মিত। আঠারো শতকে স্কটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী ব্রাউন এ গতি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন বলে এ গতির নাম দেয়া হয়েছে ব্রাউনিয়ান গতি। আইনস্টাইন প্রমাণ করেছিলেন যে এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের একভাগের সমান বা তার চেয়েও ছোট কণাগুলো তরল পদার্থে ওরকম বিশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করার কারণ হলো তাদের থার্মাল ডায়নামিক্স। বোলটজম্যানের সূত্র ব্যবহার করে আইনস্টাইন ব্রাউনিয়ান গতির গাণিতিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। হাসেলমান আবহাওয়ার উপাদানগুলিকে ব্রাউনিয়ান গতির মতো ধরে নিয়ে একটি স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেল দাঁড় করালেন। সেই মডেলটি চমৎকার কাজ করলো। তিনি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করলেন যে ভূপৃষ্ঠের জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন ঘটলেও সমুদ্রে সেই পরিবর্তন হয় অনেক ধীর প্রক্রিয়ায়। তাই মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেলেও – সমুদ্রের তাপমাত্রা সেই পরিমাণে বাড়তে কয়েক হাজার বছর লেগে যেতে পারে।
জলবায়ুর পরিবর্তনে মানুষের কি কোন ভূমিকা আছে? থাকলে কতটুকু আছে? প্রফেসর হাসেলমান তাঁর জলবায়ুর মডেলের সাহায্যে জলবায়ুর পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা হিসেব করে বের করলেন। প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির প্রভাবে তাপমাত্রার কতটুকু পরিবর্তন হয় তা হিসেব করলেন। আর মানুষের প্রভাব – যাকে তিনি নাম দিলেন ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ – তাও হিসেব করলেন। ১৮৫০ সালের মাঝামাঝি থেকে এপর্যন্ত মাত্র ১৭০ বছরে পৃথিবীর কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে ৪০ শতাংশ। এই পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রকৃতি গত লক্ষ বছরেও তৈরি করতে পারেনি। মানুষের জ্বালানি ব্যবহার এবং অন্যান্য কারণে এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে এক ডিগ্রি।
পৃথিবীর অনেক রাজনৈতিক নেতা বিজ্ঞানের এই সত্যকে মেনে নিতে চান না। এবারের নোবেল পুরষ্কার এমন একটা বিষয়ে এমন একটা সময়ে দেয়া হলো যে নেতারা হয়তো মেনে নিতে বাধ্য হবেন। ২০২১ সালে জলবায়ু পরিবর্তন কনফারেন্স হবে ৩১ অক্টোবর গ্লাসগোতে। সেখানে অবশ্যই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফলকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে মেনে নেয়া হবে।
এবার জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টার জটিলতা বিবেচনা করে – জটিলতার পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে সফল পদার্থবিজ্ঞানী জর্জিও পারিসিকে। পদার্থবিজ্ঞানের যেসব কাজকর্মকে আপাতদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হয়, সেগুলির মধ্যেও একটা সমন্বয়ের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন ইতালিয়ান তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি।
জর্জিও পারিসির জন্ম ১৯৪৮ সালের ৪ আগস্ট ইতালির রোমে। তাঁর পিতামহ এবং পিতা বংশানুক্রমিকভাবে ছিলেন নির্মাণশ্রমিক। তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে তাঁর মতো নির্মাণশ্রমিক না হয়ে ভালো কিছু করুক। অন্তত ইঞ্জিনিয়ার হোক। কিন্তু জর্জিও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চেয়েও বেশি ভালোবাসেন সায়েন্স ফিকশান। জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই পড়তে পড়তে তিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের দিকে ঝোঁকেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর, তিনি ১৯৭০ সালে সাপিয়েনজা ইউনিভার্সিটি অব রোম থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত তিনি ইতালির ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অব ফ্রাসকাটিতে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। এই ল্যাবরেটরিতে ১.১ গিগা-ইলেকট্রনভোল্ট শক্তির ইলেকট্রন সাইক্লোট্রন আছে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি অতিথি-বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণা করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ইওরোপের অনেক গবেষণাগারে। ১৯৮১ সালে তিনি প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব রোমে। ১৯৯২ পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। তারপর তিনি কোয়ান্টাম থিওরির প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন স্যাপিয়েনজা ইউনিভার্সিটি অব রোমে। বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সেও তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আছেন।
তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের জগতে প্রফেসর জর্জিও পারিসি একটি বিখ্যাত নাম। বিশেষ করে ইতালির বিজ্ঞান জগতের উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি হলেন ইতালির ষষ্ঠ নোবেলবিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণার ব্যাপ্তি বিশাল। বিশৃঙ্খলার পদার্থবিজ্ঞানে যূগান্তকারী তত্ত্ব আবিষ্কার ছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন পার্টিক্যাল ফিজিক্স ও স্টাটিস্টিক্যাল ফিজিক্সেও। ১৯৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে কোয়ার্ক ও গ্লুয়ন কীভাবে বিন্যস্ত থাকে। মৌলিক কণার মৌলিক গঠন বুঝতে সাহায্য করেছে প্রফেসর পারসির আবিষ্কার।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে তিনি যে গবেষণার ভিত্তি তৈরি করেন – সেটা বিশৃঙ্খলার পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় বলা চলে কিছুটা শৃঙ্খলা নিয়ে আসে। তাঁর ‘স্পিন-গ্লাস’ তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। বস্তুর ক্ষুদ্রতম জগত আপাতদৃষ্টিতে যতটুকু শৃঙ্খলা মেনে চলে বলে মনে করা হয়, আসলে ততটা নয়। ধরা যাক গ্যাসের কথা। তাপমাত্রা বাড়লে গ্যাসের অণুগুলি ছোটাছুটি করে বিশৃঙ্খলভাবে। তাপমাত্রা কমাতে থাকলে এদের গতি আস্তে আস্তে কমতে থাকে, এরা ক্রমে স্থির হয়। তাপমাত্রা আরো কমলে গ্যাস তরল হয়। একই পরিমাণ গ্যাস একইভাবে তাপমাত্রা কমালে ও বাড়ালে বিভিন্নবার বিভিন্নরকমের আণবিক-বিন্যাস দেখায়। তাহলে আর শৃঙ্খলা থাকলো কীভাবে?
প্রফেসর পারিসি খুব ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে দেখালেন যে কণাগুলি অনবরত দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে, হতাশ হয়ে পড়ে। কীভাবে? যদি কোন অবস্থায় একটি কণার স্পিন হয় উপরের দিকে, অন্যটির নিচের দিকে, তাহলে তৃতীয় কণার স্পিন কোন্ দিকে হবে – তা কীভাবে নির্ধারিত হয় – যদি কণাগুলি সব একই রকমের হয়? তৃতীয় কণার উপর প্রথম কিংবা দ্বিতীয় যে কোন একটার প্রভাব থাকতে পারে/ দুইটারও প্রভাব থাকলে তৃতীয় কণাটি কি ভিন্ন একটা দিক বেছে নিতে পারে? এই অবস্থাকে স্পিন ফ্রাস্ট্রেশান বা ঘূর্ণন-হতাশা বলা যেতে পারে। ১৯৭৯ সালে প্রফেসর পারিসি লোহা ও তামার একটি শংকরপদার্থের মধ্যে চৌম্বকক্ষেত্রের সাহায্যে লোহা ও তামার পরমাণুর স্পিন পরীক্ষা করে দেখেন চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে পরমাণু কোন্ দিকে ঘুরবে সে ব্যাপারে দ্বিধা দেখা দেয়। ফলে দেখা যায় একই পদার্থের পরমাণু হলেও একই চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে তারা ভিন্ন ভিন্ন দিকে ঘুরছে। এর কারণ কী? প্রফেসর পারিসি এই প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য উত্তর খুঁজে পেয়েছেন।
নোবেল কমিটি যদিও বলছেন প্রফেসর পারিসির গবেষণা এবং প্রফেসর মানাবে ও হাসেলমানের গবেষণার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আছে, কিন্তু সে ব্যাপারে জলবায়ু-বিজ্ঞানীদের বেশ সন্দেহ আছে। কারণ স্বয়ং প্রফেসর মানাবিই প্রফেসর পারিসির গবেষণার সাথে পরিচিত নন। সে যাই হোক, এবারের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেলপুরষ্কার নিসন্দেহে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে কাজ করার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে।
তথ্যসূত্র:
www.nobelprize.org, PNAS vol. 103 (21) 2006, Science 292: 641-642 (2001), Physics Today Special edition 2021.
No comments:
Post a Comment