Saturday, 8 January 2022

স্বপ্নলোকের চাবি - পর্ব ৫৪

 

#স্বপ্নলোকের_চাবি_৫৪

“ভারতের দালালেরা – হুসিয়ার সাবধান।“

“খুঁজে খুঁজে দালাল ধর, সকাল বিকাল জবাই কর।“ 

স্লোগানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। মনে হচ্ছে আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দু’তিনজন মিলে এসব স্লোগান দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখলাম এখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভোরের আলো ফুটলেই তার কিছুটা আমার রুমের পুবদিকের জানালায় আছড়ে পড়ে। এখনো সূর্য উঠেনি। মনে হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের অতিউৎসাহী কর্মীরা ভোর হবার আগেই স্লোগানের গলা সাধছে আজকের হরতাল সফল করার জন্য। ফজরের নামাজ পড়েই রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার জন্য নেমে পড়বে।

কাল রাতে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছি। এত ভোরে এত হৈচৈ-এ মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি জানি এদেরকে আপাতত ভয় পাবার কিছু নেই। আমার রুমে ঢুকে আমাকে মেরে ফেলতে চাইলে এরা যে কোনো সময় তা করতে পারে। তার জন্য স্লোগান দেয়ার কোন দরকার নেই। কিন্তু এরা তা করবে না। এদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরক্ত করা, মানসিক যন্ত্রণা দেয়া। 

দু’বারের পর বন্ধ হয়ে গেছে স্লোগান। হয়তো টয়লেট করতে এসে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল, এখন লাইন পেয়ে গেছে। টয়লেট-বাথরুম থেকে সমানে শব্দ আসছে - কল থেকে পানি পড়ার শব্দ ছাপিয়ে অন্যান্য আনুসঙ্গিক ব্যক্তিগত স্বয়ম্ভুত শব্দাবলি। 

জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক দক্ষতা ঈর্ষনীয়। এই যে একটা ব্যক্তিমালিকানাধীন মেস – এটাও তারা নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যেসব রুমে থাকে – সেগুলিতে সব সময় তাদের মতাদর্শের ছেলেরাই থাকতে আসে। অথচ এই বিল্ডিং-এর মালিক খানসাহেব আওয়ামী লীগের সমর্থক, তাঁর বড় ছেলে যুবলীগের নেতা। এই বিল্ডিং-এ আগে নিচের তলার সবগুলি রুমে শিবিরের ছেলেরা থাকলেও উপরের তলায় শিবির খুব একটা ছিল না। এখন উপরের তলার রুমগুলিতেও অনেক শিবির ঢুকে পড়েছে। খানসাহেব নিয়মিত ভাড়া পেলেই খুশি। 

ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যাবার পর নিচের তলায় অনেকগুলি সিট খালি হয়েছিল। সেখানে যারা এসেছে তারা সবাই আগে যারা ছিল তাদের চেয়েও উগ্র। তাদের উপর কী নির্দেশ আছে জানি না, আমার দরজার কাছাকাছি এলেই তারা কোনো না কোনো মন্তব্য করবেই। গত ক’দিন থেকে চলছে “ভারতের দালাল” জাতীয় মন্তব্য। অথচ সামনাসামনি পড়লে এই ছেলেগুলির একটাও কোন কথা বলে না। আমার সাথে সরাসরি কোন কথাও হয় না, অথচ আমার সম্পর্কে যে ওদেরকে তথ্য দেয়া হয়েছে তা বোঝা যায়। মেজাজ খারাপ হলেও করার কিছু নেই। 

জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গোলাম আজমসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে সারাদেশে গণসংযোগ শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার সরকার জাহানারা ইমামসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চব্বিশ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করেছে। গণআদালতের রায় বাস্তবায়ন, জামাত-শিবির-ফ্রিডম পার্টিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আগামীকাল ২১ জুন সারাদেশে হরতাল ডেকেছে। 

এদিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আদলে জামায়াত আর ফ্রিডম পার্টি মিলে গঠন করেছে ‘ভারতীয় দালাল প্রতিরোধ কমিটি’। তারা আজ অর্থাৎ ২০ জুন হরতাল ডেকেছে সারাদেশে। কী নির্মম পরিহাস আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা গঠন করেছে ফ্রিডম পার্টি। এরশাদ তাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়েছে। আর এখন এই বিএনপির আমলে জামায়াত আর ফ্রিডম পার্টি মিলে দেশের যারাই স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে কথা বলছে – তাদের সবাইকে ভারতীয় দালাল আখ্যা দিচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দুদেরতো ডাকনামই হয়ে গেছে ‘ভারতের দালাল’। সেই কারণেই আমার রুমের সামনে এসে শিবিরের ছেলেদের স্লোগান পায়। 

চোখ বন্ধ করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু খুব একটা সুবিধা হলো না। এবার জুন মাসেই বৃষ্টি হচ্ছে খুব। খুব বেশি বৃষ্টি হলেই ইদানীং নতুন টেনশান শুরু হয় – কখন রুমে পানি ঢুকে যায়। প্রথমবার পানি ঢোকার পর আরো তিন বার পানি ঢুকেছে। 

সারাদিন কোথাও যাবো না ভেবেছিলাম। দুপুরের দিকে একবার রাস্তায় বের হয়ে হেঁটে এসেছি ফতেয়াবাদ পর্যন্ত। হরতাল সফল করার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র রাস্তায় নেমে গেছে সকাল থেকে। ওরা হাটহাজারি থেকে এদিকে ছরারকুল পর্যন্ত চলে এসেছে। ফতেয়াবাদে একটি মাদ্রাসা আছে। ওখানকার ছাত্র-শিক্ষক সবাই রাস্তায় নেমে গেছে। জাহানারা ইমামকে ‘জাহান্নামের ইমাম’ বলে গালি দেয়াকে তাদের অবশ্যকর্তব্য বলে মনে হচ্ছে। একটা স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীরা এমন প্রকাশ্যে হরতাল করছে এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। 

সরকারি ছত্রছায়ায় তারা যে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল সন্ধায়। খবরে শুনলাম ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশ ও অফিসে হামলা করেছে তারা। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোনোদিনও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। 

বিএনপি নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দেয়। প্রায়ই এমন কথা বলে যেন বঙ্গবন্ধু কিংবা আওয়ামীলীগ কিছুই না, তারাই দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু তারাই এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের রক্ষার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। হুমায়ূন আজাদ ঠিক কথাই বলেছেন – “একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।“

হুমায়ূন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ প্রকাশিত হয়েছে এবছরের বইমেলায়। আজ ওটা পড়লাম আবার। তাঁর সবগুলি উক্তির সাথে একমত না হলেও অনেকগুলি উক্তি আমার কাছে অত্যন্ত কালজয়ী বলে মনে হয়। যেমন “স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিণত করে।“, “সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।“ 

সৎ মানুষ যে নিঃসঙ্গ আর সুযোগ পেলেই সবাই এই নিঃসঙ্গ সৎ মানুষকে আক্রমণ করে তা আমি প্রামাণিকস্যারের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটতে দেখছি। ডিপার্টমেন্টে প্রামাণিকস্যার অনেকটাই কোণঠাসা। সোজাসাপ্টা সত্য কথা বলার জন্য তাঁর সামনে সবাই কেমন যেন টেনশানে থাকেন। রমজান মাসে একদিন তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম থিসিসের কাজে। প্রশস্ত বারান্দায় বসে স্যার তাঁর কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইয়ের পান্ডুলিপি টাইপ করতে করতে আমার সাথে কথা বলছিলেন। আমাকে চা আর পাঁপড় খেতে দেয়া হলে আমি সসংকোচে খাচ্ছি। এসময় শিবিরের চার-পাঁচজন ছেলে এসে স্যারের দরজায় খুব রুক্ষভাবে দাঁড়ালো। বারান্দায় গ্রিলের দরজা, বাইরে থেকেই সবকিছু দেখা যায়। তাদের কয়েকজনের দৃষ্টি আমার সামনে রাখা চা আর পাঁপড়ের দিকে। 

“কী জন্য এসেছো তোমরা?” – স্যার তাঁর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন তাদের।

ওদের নেতা গলার রগ ফুলিয়ে বেশ উচ্চস্বরে বললো, “এই রোজার সময় রোজা না রেখে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছেন – কারণটা কী? মুসলমান হিসেবে তো আপনার লজ্জা পাওয়া উচিত।“

“আমার কী করা উচিত আর না করা উচিত তা আমাকে বলার দায়িত্ব তো তোমাদের দেয়া হয়নি। এতই যদি রোজাদার হও, তাহলে তো তোমাদের এখন মসজিদে বসে এবাদত করার কথা। আমার বাসায় আসার তো কথা নয়।“ – স্যার উত্তেজনাহীন স্বাভাবিক গলায় বললেন।

“এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। বলে গেলাম।“ – একজন সিনিয়র প্রফেসরকে বাসায় এসে এভাবে প্রকাশ্যে ধমক দিচ্ছে কিছু ছাত্র! এতটা স্পর্ধা এদের হয় কী করে! সৎ মানুষরা নিঃসঙ্গ বলেই তো। সব সৎ মানুষ জোটবদ্ধ হতে পারলে অসৎদের এতটা স্পর্ধা কোনদিনই হতো না। 

আমার নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হচ্ছিল। রোজার সময় স্যারের বাসায় আর যাইনি। পরে শুনেছি ঈদের দিন স্যারের বাসায় শিবিরের ছেলেরা তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। স্যার প্রক্টর থেকে শুরু করে ভিসিপর্যন্ত সবাইকে ফোন করার পরেও তালা খোলার লোক এসেছে প্রায় ছয় ঘন্টা পর। সবাই পরোক্ষভাবে স্যারকেই দায়ী করেছেন এই ঘটনায়। 

প্রামাণিকস্যারকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি তাঁর নীতিনিষ্ঠতায়। এরজন্য আমাকেও অনেক কষ্ট পেতে হবে তা বুঝতে পারছি। স্যার ইতোমধ্যে সলিড স্টেট ফিজিক্সের একটা বই লিখেছেন। বইটির বাঁধানো পান্ডুলিপি আমি দেখেছি। ফিজিক্সের শিক্ষার্থীদের জন্য চমৎকার একটা টেক্সট বই। ইউনিভার্সিটি প্রেসের উচিত এই বই প্রকাশ করার। কিন্তু প্রামাণিকস্যার বিশ্ববিদ্যালয়প্রশাসনের প্রিয় ব্যক্তি নন। তাই তাঁর বই ছাপানো হচ্ছে না। এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁর “রিলিজিয়াস অ্যান্ড সায়েন্টিফিক ভিউজ অব দ্য ইউনিভার্স” বইটি প্রকাশ করার জন্য রাজি হয়েছিল। কিন্তু মৌলবাদীরা স্যারের সেই বিষয়ে সেমিনার ভন্ডুল করে দেয়ার পর এশিয়াটিক সোসাইটিও  পিছিয়ে গেছে। এতেও দমে না গিয়ে প্রামাণিকস্যার এখন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বই লিখছেন। এই বইটিও হয়তো কেউ প্রকাশ করতে চাইবে না। 

থ্রি-বডি সিস্টেমের উপর বেশ বড় একটা পেপার আছে স্যারের। স্যার ওটা আমাকে দিয়েছেন আমার থিসিসে কাজে লাগবে বলে। ওটা টাইপ করতে শুরু করেছি। যীশুর মাধ্যমে রূপকের কাছ থেকে একটি টাইপ-রাইটার ধার করে নিয়ে এসেছি। 

২১ জুন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির হরতালে জামায়াত-শিবির-ফ্রিডম পার্টি এবং অনেক জায়গায় বিএনপির ক্যাডাররাও আক্রমণ করেছে। আগেরদিন জামায়াত-ফ্রিডম পার্টির হরতাল সফল করার জন্য সরকারি বাহিনি তাদেরকে সহায়তা করেছে। অথচ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির হরতালের সময় পুলিশ নির্মূল কমিটির উপর চড়াও হয়েছে। হরতাল শেষে ঢাকার প্রেসক্লাবে যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন নির্মূল কমিটির নেতারা – তখন পুলিশ লাঠি গুলি টিয়ারগ্যাস ছুঁড়তে ছুঁড়তে প্রেসক্লাবে ঢুকে গেছে। সাংবাদিকদেরও সমানে পিটিয়েছে তারা। স্বাধীনতাবিরোধীদের এতটা ঔদ্ধত্য এর আগে এতটা দেখা যায়নি। ভীষণ হতাশা ঘিরে ধরছে চারপাশ। 

দিন চলে যাচ্ছে। নিজেকে যতটা সম্ভব গৃহবন্দী করে ফেলার চেষ্টা করছি কিছুদিন থেকে। খুব একটা সফল হতে পারছি না। ক্লাস এখনো শেষ হয়নি, অথচ ফাইনাল পরীক্ষার সেকেন্ড ডেট দেয়া হয়েছে। জুলাই মাসের প্রথম ডেটে পরীক্ষা হবার কোন সম্ভাবনা ছিল না বলে কেউ কোন আন্দোলনও করেনি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে। এবার সেপ্টেম্বরে ডেট দেয়া হয়েছে। এখন জুলাই। মাঝখানে একটি মাত্র মাস আছে। শুনছি এই ডেট পেছানোর জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরকম আন্দোলনের ফলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস খুব যে আন্দোলিত হয় তা নয়। আমার মনে হয় তারা বরং খুশিই হয় পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন চললে। কারণ আমাদের ব্যাচের পরীক্ষা নেয়ার জন্য এখনো তারা প্রস্তুত নয়। তারা প্রস্তুত থাকলে মনে হয় না আন্দোলন করে পরীক্ষা পেছানো যাবে।

আমাদের আগের ব্যাচের রেজাল্ট দেয়া হয়েছে মাত্র ক’দিন আগে। প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপের রেজাল্ট অবশ্য দেয়া হয়েছে এপ্রিলে। অজিতসহ তিনজন ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপ থেকে। শুভ্রা বসু ফার্স্ট, লিপিকা দত্ত সেকেন্ড এবং অজিত পোদ্দার থার্ড হয়েছে। অজিত থিসিস করা শুরু করেছিল বিকিরণস্যারের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু পরে থিসিস বাদ দিয়ে প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপে চলে যায়। অজিত তার ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া উপলক্ষে বেশ বড় একটা পার্টি দিয়েছিল। 

থিসিস গ্রুপের রেজাল্ট দিয়েছে মাত্র ক’দিন আগে। অনার্সে যারা ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল, তাদের অনেকেই মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পায়নি। আবার অনার্সে সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া কয়েকজন মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। সুব্রত বড়ুয়া ফার্স্ট এবং শায়লা আপা সেকেন্ড হয়েছে। কিন্তু এই রেজাল্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে রেজাল্ট পরিবর্তিত হয়ে শায়লা আপা ফার্স্ট হয়ে যায়। এদের রেজাল্ট দেখে আমার টেনশান বেড়ে যাচ্ছে। 

ডিপার্টমেন্টের স্যারদের অনেকেই এখন আমার নাম জানেন, রাস্তায় করিডোরে দেখা হলে চিনতে পারেন – এতে আমার খুশি হবার কথা। কিন্তু আমার চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল দুপুরে সোবহানস্যার আর মোবাশ্বেরস্যারকে টিচার্স-বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি একটু দূরত্ব রেখে চুপচাপ চলে যাচ্ছিলাম। সোবহানস্যার ডাকলেন। মোবাশ্বেরস্যারের সামনে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ছাত্রইউনিয়ন করো?”

আমি কোন ছাত্রসংগঠনের সদস্যপদ নিইনি। তবে মাঝে মাঝে ইস্যুভিত্তিক মিছিলে যাই। ক’দিন আগে ছাত্রইউনিয়ন অনেক সাহস করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ছোট্ট একটা মিছিল বের করেছিল। কিছু না বলে চুপ করে আছি দেখে স্যার অদ্ভুতভাবে হেসে বললেন, “মিছিলে দেখলাম তো, তাই জিজ্ঞেস করছি। সে যাই হোক, সেটা তোমার ব্যাপার। তবে শুনলাম তুমি নাকি আমার ফিজিক্যাল কোরান নিয়ে মন্তব্য করেছো?”

বুঝতে পারলাম আমার বারোটা বেজে গেছে। সোবহানস্যার ক্লাসে বলেছেন তিনি পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে কোরান শরিফ লিখছেন। ফিজিক্যাল কোরান। আমি স্যারকে কিছু বলিনি। ক্লাসে সহপাঠীদের কাছে শুধু প্রশ্ন করেছিলাম – কোরান শরিফ লেখা যায় কিনা। এই কথা এর মধ্যেই স্যারের কানে চলে গেছে! 

“তোমার কোন প্রশ্ন থাকলে আমার অফিসে এসো, তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো।“ সোবহানস্যার ভ্রূ-কুঁচকে অদ্ভুতভাবে হাসলেন। 

মোবাশ্বেরস্যার ঘোলাটে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। শুনেছি তিনি আমাদের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। আমাদের মোট ছয় শ নম্বরের মধ্যে তিন শ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা, বাকি তিন শ নম্বর নির্ভর করছে কমিটির মর্জির উপর। আমি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান আর পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান উভয়কেই চটিয়ে দিয়েছি নিজের অজান্তে। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts