#স্বপ্নলোকের_চাবি_৫৮
আপেক্ষিক তত্ত্ব বোঝাতে গিয়ে স্বয়ং আইনস্টাইন নাকি বলেছিলেন, সুন্দরী মেয়ের সান্নিধ্যে ঘন্টাকে যে মিনিট বলে মনে হয়, আবার ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মিনিটকে যে ঘন্টা বলে মনে হয় – সেটাই হলো আপেক্ষিকতার সূত্রের সারমর্ম। ট্রেনের টিকেটের লাইনের উদাহরণ আইনস্টাইন দিয়েছিলেন বলে আমার মনে হয় না। অনেকে নিজেদের বানানো কথা বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে চালিয়ে দেন। এখানেও হয়তো সেরকম কিছু হয়েছে। সে যা-ই হোক, পরীক্ষার খাতায় এসব লিখলে আইনস্টাইন কয়েকটা নম্বর দিলেও দিতে পারতেন, কিন্তু আমাদের স্যাররা একাধিক শূন্য দেবেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। রিলেটিভিটি পড়েছিলাম অনার্সে। মাস্টার্সে সেই সাবজেক্ট নেই। অথচ এখন রিলেটিভিটির কথা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সময় স্বাভাবিকের চেয়েও দ্রুত চলে যাচ্ছে। নভেম্বর মাসের তিরিশ দিন ঠিক ঠিক তিরিশ দিনেই গেছে, অথচ মনে হচ্ছে তিন দিনে শেষ হয়ে গেছে নভেম্বর মাস। মাস্টার্সের চারটি তত্ত্বীয় পরীক্ষার তিনটি শেষ হয়ে গেছে। আট, উনিশ, আর ত্রিশ তারিখে পরীক্ষা ছিল। মাঝখানের দিনগুলি কীভাবে যে চলে গেছে গোনারও সময় পাইনি। এর আগের কোন পরীক্ষার সময় এতটা নিবিষ্ট হইনি। এবার যে পরিবর্তনটা হয়েছে তার জন্য কতটা মানসিক চাপ, আর কতটা যীশুর চাপ ঠিক আলাদা করে বলতে পারবো না। তবে একটা ঘোরের ভেতর দিয়ে কেটে যাচ্ছে সময়। এই ঘোর তৈরির পেছনে যীশুর হাত আছে অনেকখানি।
র্যাগ-ডের পর তেমন কোন লেখাপড়া ছাড়াই অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়িতে গিয়ে কাটিয়ে এসেছি অনেকদিন। অক্টোবরের শেষে একদিন হঠাৎ ব্যাগভর্তি বই-খাতা নিয়ে যীশু হাজির।
“কী রে, তুই হঠাৎ?” – আমি অবাক হয়ে, খুশি হয়ে প্রশ্ন করি।
“আমাদের বাসায় গেস্ট এসেছে। পড়া হচ্ছে না।“ – যীশু ব্যাগ থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বই বের করে খাটের উপর রাখতে রাখতে সংক্ষেপে উত্তর দিলো।
বুঝতে পারলাম। তাদের বাসায় অনেক গেস্ট এসেছে। পরীক্ষার সময় তার যতটুকু মনযোগ দরকার তা বাসায় দিতে পারছে না। তাই আমার রুমে চলে এসেছে। যাক্ গল্পসল্প করতে করতে আরাম্সে পরীক্ষা দেয়া যাবে ভেবে নড়েচড়ে বসতেই যীশু তর্জনি উঁচিয়ে বললো, “খবরদার, কোন ধরনের গল্পগুজব চলবে না।“
বলেই অন্য দেয়ালে লাগানো দ্বিতীয় টেবিলটা টেনে খাটের কাছে নিয়ে এসে বই খুলে পড়তে লাগলো। আজব তো! কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরীক্ষার তখনো আটদিন বাকি। তার সাথে আমার লাস্ট দেখা হয়েছে সেই র্যাগ ডে-র দিন। এই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জমে যাওয়া গল্পের ঝাঁপি একটুও না খুলে বই খুলে বসলো!
এক সপ্তাহের ভেতর রুমের পরিবেশটাই বদলে গেল। এত বছর ধরে যতগুলি পরীক্ষা দিয়েছি, ধরতে গেলে কোন ধরনের অতিরিক্ত চাপ ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু যীশুর মাত্রাতিরিক্ত সিরিয়াসনেস আমার উপরও এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করলো। আগে রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত দোতলার কোন রুমে কিংবা ছাদে টিভির সামনে কাটতো। এখন টিভি দেখা বাদ, হঠাৎ শহরে চলে যাওয়া বাদ, চৌধুরিহাটে বিপ্লবদের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা মারা বাদ। সপ্তাহখানেক বাদে কেমন যেন নেশাগ্রস্তের মতো লাগতে শুরু করলো। চোখের সামনে বইখাতা না থাকলে কেমন যেন খালি খালি লাগে।
যীশু সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষকের মতো সময়নিষ্ঠ। ঠিক দশটায় সে বিছানায় লম্বা হয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। শুয়ে শুয়ে রেডিওতে লো ভলিউমে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান শোনে। তারপর সাড়ে দশটায় চ্যানেল চেঞ্জ করে বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে এগারোটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়ে।
আমার এক ব্যান্ডের রেডিওতে ভয়েস অব আমেরিকা ধরে, কিন্তু বিবিসি ধরে না। যীশু যে ছোট্ট রেডিওটা নিয়ে এসেছে তার রেঞ্জ অনেক বেশি, সেখানে অসংখ্য ফ্রিকোয়েন্সির অসংখ্য চ্যানেল ধরে। বিবিসিতে সম্ভবত কয়েক মিনিট ইংরেজিও শেখায়। যীশুকে অনুরোধ করলে ভলিউম বাড়ায়। একদিন বিবিসির ইংরেজি শেখার আসরে শুনলাম – মাত্র দুইশ ইংরেজি শব্দ জানা থাকলেই নাকি ইংরেজিতে দরকারি সব কথাবার্তা বলা সম্ভব। অনেকগুলি ইংরেজি শব্দ নাকি না জানলেও চলে – যেমন চোখের পানির ইংরেজি টিয়ার্স – না জানলেও চলে। তার বদলে ওয়াটার অব দি আই বললেও হয়। বাংলার অশ্রু যদি আমরা চোখের পানি দিয়ে চালিয়ে নিতে পারি, ইংরেজিতেও নয় কেন?
নভেম্বরের চার তারিখ আমেরিকার নির্বাচন হলো। পাঁচ তারিখ রাতের সব খবরেই বিল ক্লিনটনের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার খবর। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে এক মেয়াদেই বিদায় নিতে হচ্ছে। বিশ্ব-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যীশুর কৌতূহলের অন্ত নেই। বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াতে যীশুকে খুব উত্তেজিত মনে হলো সেদিন।
এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে যীশু। কিন্তু আমার রাত জাগা অভ্যাস। আমি জেগে থাকি আরো অনেকক্ষণ। যীশু ভোর পাঁচটায় উঠে পড়ে। যথাসম্ভব নিশব্দে বাইরে গিয়ে বাথরুম ঘুরে এসে পড়তে বসে যায়। তার শব্দ ঢাকার চেষ্টার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমিও উঠে পড়ি। তাতে লাভ হয়। পরীক্ষার আগে কয়েকবার রিভিশান দেয়া হয়ে যায়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরীক্ষার আগের রাতে বিশ্বপরিস্থিতি জেনে মানসিক চঞ্চলতা বাড়িয়ে লাভ নেই বলে যীশু এগারোটার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ভয়েস অব আমেরিকা কিংবা বিবিসি কোনটাই শোনেনি। আমার ঘুম আসতে চাচ্ছিলো না। তবুও জোর করে ঘুমাতে গেলাম।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মনে হচ্ছে রুমের ভেতর কেউ যেন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এত বছরের একা থাকার অভ্যাস। যীশুর উপস্থিতি খেয়াল ছিল না। কেমন যেন ভয় লাগছিলো। হঠাৎ মনে পড়লো – রুমের দ্বিতীয় খাটে তো যীশু ঘুমাচ্ছে। কান্নার শব্দ সেদিক থেকেই আসছে। মাথা থেকে লেপ সরিয়ে চোখ খুলে দেখলাম অন্ধকারে মশারির ভেতর বসে আছে যীশু।
“কী হয়েছে যীশু?”
যীশু নিরুত্তর।
“কাঁদছিস কেন?”
এবারেও কোন উত্তর নেই। কেবল কান্নার শব্দ বাড়ছে।
হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পের সুইচটা টিপলাম। আলোয় দেখলাম যীশু গলায় বাঁধা মাফলারের ডগা দিয়ে চোখ মুছছে। টেবিলঘড়িতে রাত আড়াইটা। এই গহীন রাত্রিতে যীশুর শোকের কারণ কী?
সবার সামনে হাসা যায় সহজে, কিন্তু কাঁদা যায় না। কান্না ব্যাপারটা বেশি মাত্রায় ব্যক্তিগত। তাই তাকে যথাসম্ভব গোপন করার চেষ্টা করি আমরা। লাইট অফ করে দিলাম। কাঁদতে হলে অন্ধকারেই কাঁদুক।
“আমি বাসায় যাবো। বাসার জন্য পেট পুড়ছে।“
বলে কী যীশু! শিশুর মতো বাসায় যাবার জন্য কাঁদছে! রাত আড়াইটায় বাসায় যাবে? এখন যেতে চাইলে হেঁটে যেতে হবে। সকালেই পরীক্ষা, আর সে এখন বাসায় যাবে! আমি কোন কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম।
সকালে উঠে দেখলাম যীশু পড়তে বসে গেছে। রাতের কান্নাকাটির ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করলাম না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স পরীক্ষা হয়ে গেল যথাসময়ে। পরীক্ষা শেষে রুমে এসেই যীশু চলে গেল বাসায়।
এক রাত বাসায় কাটিয়ে পরদিন আবার চলে এলো। এভাবেই দ্রুত চলে গেলো তিনটি পরীক্ষা এবং নভেম্বর। পরীক্ষার মাঝখানের দিনগুলি রুমে বসে দ্রুতই চলে যায়। প্রদীপ নাথ হলে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। কোন কিছু আলোচনার দরকার হলে হল থেকে রুমে আসে। কাজ শেষ হবার সাথে সাথেই যীশু তাকে রুম থেকে বের করে দেয়। আগের মতো ঘণ্টার পর ঘন্টা গল্প করার সুযোগ হয় না। বিপ্লব গল্প করতে আসে যেদিন পরীক্ষা থাকে সেদিন বিকেলে পরীক্ষার পর যীশু শহরে চলে গেলে। পরীক্ষার পর ঐ এক সন্ধ্যাই আমার গল্প করার স্বাধীনতা। যীশুর এরকম খবরদারির উপাকারিতা হাতে হাতে টের পাচ্ছি। পরীক্ষাগুলি ভালো হচ্ছে। জানা জিনিস পরীক্ষার খাতায় ভুল লিখে আসা আমার জন্য খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। মাস্টার্সের পরীক্ষায় সেরকম কিছু ঘটছে না।
মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে যীশু আরো অনেকবার বাসায় চলে যাবো বলতে বলতে কেঁদেছে। ওটাও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
শেষ তত্ত্বীয় পরীক্ষা সলিড স্টেট ফিজিক্স ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে ছয় তারিখ পর্যন্ত একটানা পড়ে একবার রিভাইস দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ছয় তারিখ রাতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
অন্যদিনের মতো রেডিও নিয়ে শুয়ে পড়েছিল যীশু। হঠাৎ বৈদ্যুতিক শক খাবার মতো করে ছিটকে উঠে গেল বিছানা থেকে। কী হয়েছে? রেডিওর ভলিউম না বাড়িয়ে রেডিওটা নিয়ে এলো আমার টেবিলের কাছে। ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হচ্ছে ভারতের অযোধ্যায় উগ্র মৌলবাদী হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেছে। সাড়ে দশটায় বিবিসির খবরে আরো বিস্তারিত জানা গেল।
বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য ধর্মীয় উন্মাদনা তুলে ষোড়শ শতাব্দীর এই মসজিদের জায়গায় রামের জন্মভূমি ছিল বলে মসজিদটি ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলো অনেক বছর থেকে। ১৯৯০ সালেও একবার চেষ্টা করেছিল ভেঙে ফেলার। সেই সময় তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। কিন্তু মসজিদ ভেঙে ফেলেছে বলে গুজব রটিয়ে বাংলাদেশে তখন হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরের উপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছিল এরশাদের জাতীয় পার্টির উস্কানিতে। এরশাদ ক্ষমতায় থাকার জন্য এসব করিয়েছিলেন। এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে পারেননি এর পরেও। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন সবখানে।
এবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক, বিজেপির কর সেবক ইত্যাদি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রামের দোহাই দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ উগ্রবাদীকে একত্র করে মসজিদটি ভেঙে ফেলেছে। কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও কোন প্রতিরোধই করতে পারেননি।
যীশুর চোখেমুখে উৎকন্ঠা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো ঘটনাটি জানে না। কাল সকালে যখন সবগুলি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বিশাল হেডিং দিয়ে ছাপানো হবে – তখন জেনে যাবে। ভারতের যেসব উগ্র হিন্দুরা এসব কাজ করেছে – তাদের সাথে বাংলাদেশের হিন্দুদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তারপরও ওদের কাজের ফল ভোগ করতে হবে এদেরকে। বাংলাদেশের হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ানো হবে। এই সুযোগে চলবে জমিদখল, বাড়িদখল, লুটপাট আর মেয়েদের উপর অত্যাচার। বলা হয়ে থাকে ধর্ম মানুষকে উদার হতে শেখায়। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। ধর্মকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠছে – এটাই আমরা দেখি। সমস্ত ধর্মের উর্ধ্বে যে মানবতা সে মানবতার বাণী যাদের বিবেককে নাড়া দেয়, তাদের শক্তি খুবই কম।
সারারাত নির্ঘুম কাটলো। ঘুমের সাথে সাথে পড়ালেখাও শিকেয় উঠেছে। পরদিন সকাল আটটার মধ্যেই জেনে গেছে সবাই। বিল্ডিং-এর উপরে নিচে আমি আর যীশুছাড়া বাকি সবাই হিন্দুদের উপর আক্রোশে ফুঁসছে। আর আমরা দু’জন রুমের মধ্যে ভয়ে উৎকন্ঠায় কাঁপছি। কাল রাতেই দেশের বিভিন্ন মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারতীয় হাই কমিশনের অফিস, ইন্ডিয়ান এয়ার লাইনসের অফিসে আক্রমণ করা হয়েছে। সার্ক ক্রিকেট চলছে। বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলা ছিল। মীরপুর স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবার সাথে সাথে কয়েক শ মানুষ ভারতীয় খেলোয়াড়দের মেরে ফেলার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। বাংলাদেশের পুলিশ ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পেরেছে। খেলা পন্ড হয়ে গেছে। দু’দিন পরে সার্ক সম্মেলন হবার কথা ছিল। সেই সম্মেলনও বাঞ্চাল হয়ে গেছে।
আমার রুমের দরজায় ধুমধাম লাথি পড়েছে বেশ কয়েকটি। দরজা ভেঙে যেকোনো সময়েই রুমে ঢুকে আমাদের দু’জনকেই জবাই করে দিতে পারতো চাইলে। কিন্তু করেনি। দুপুরে তৌহিদ এসেছিল মোটরসাইকেল নিয়ে – আমাদের খবর নিতে। সে বললো দরকার হলে সে থাকবে আমাদের সাথে আমাদের নিরাপত্তা দিতে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক শ মানুষ মারা গেছে একদিনের মধ্যেই। ধর্মের নামে হানাহানি কি কখনো বন্ধ হবে না?
বিকেলে সাহস করে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে নন্দীর হাটের দিকে গিয়েছিলাম। রাস্তায় একটার পর একটা ভ্যানগাড়ি আসছে – শিশু আর নারীভর্তি সবগুলিতে। রাউজানের ওদিক থেকে পালিয়ে আসছে সবাই। শিশুরা কাঁদছে, নারীদের অসহায় শূন্য দৃষ্টি। পুরুষরা কোথায়? শোনা যাচ্ছে – রাউজানের ওদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির লোকরা নাকি রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়েছে। পুরুষদের পরনের কাপড় খুলে পরীক্ষা করা হচ্ছে তারা কোন্ ধর্মের। এরা ১৯৭১ সালে যা করেছিল – ১৯৯২ সালেও তা করছে। খুব অসহায় লাগছে।
No comments:
Post a Comment