#স্বপ্নলোকের_চাবি_৬৭ (শেষ পর্ব)
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য দরখাস্ত
করেছিলাম। কমনওয়েলথভুক্ত দেশে গিয়ে গবেষণা করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের এই বৃত্তিগুলি
থাকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হাতে। কমিশনের অফিস থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ
করে দরখাস্ত করেছিলাম। ঢাকায় মঞ্জুরি কমিশনের অফিসে স্কলারশিপের ইন্টারভিউ হলো। অনার্স
ও মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস থাকলেই দরখাস্ত করা যায় বলেই দরখাস্ত করেছিলাম। আগে যদি
জানতাম যে এই বৃত্তিগুলি অলিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যই সংরক্ষিত, তাহলে
দরখাস্তই করতাম না। তবে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হলো। দেখতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশনের হাতে কত ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ক্ষমতা থাকে।
ফেইলিওর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস – এই আপ্তবাক্য অনুসারে একের
পর এক নতুন পিলার গজাচ্ছে আমার। বুদ্ধিমান মানুষ ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বুঝে ফেলে
কোন্ বিষয় কীভাবে কাজ করে। আমার সেই ক্ষমতা নেই। তাই আমি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে
দেখে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যেসব বিদেশী বৃত্তির জন্য দরখাস্ত চাওয়া হয় – সেগুলিতে
দরখাস্ত করতে থাকি। কোনোটা থেকেই কোন সাড়া পাই না। কিন্তু একদিন হঠাৎ একটা টেলিগ্রাম
এলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। ভারত সরকারের বৃত্তির জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আমাকে
মনোনীত করা হয়েছে। মার্চের ১৮ তারিখের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মূল ফরম জমা দিতে
হবে। কিন্তু টেলিগ্রাম আমি পেয়েছি মার্চের ২৪ তারিখ। খামের উপর সিল দেখে বোঝা যাচ্ছে
পাঠানো হয়েছে ১৯ তারিখ। এরকম ঝামেলা কি শুধু আমার সাথে হয়, নাকি আরো অনেকের সাথে হয়?
কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় গেলাম। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মন্ত্রণালয়ে ঢুকে দেখতে পেলাম
– শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে দেয়ালে অনেক বিদেশী বৃত্তির নোটিশ ঝুলছে। এই সংরক্ষিত
এলাকায় যেখানে প্রবেশ করার জন্য বিশেষ অনুমতি লাগে, সেখানে এই বিজ্ঞপ্তিগুলি ঝুলিয়ে
রাখার কারণ কী? দেখলাম মন্ত্রণালয়ের পিয়ন, কেরানি সবাই হা করে আছে টাকার জন্য। দেরি
করে এসেছি এই কারণ দেখিয়ে একটা ফরমের জন্য তিন শ টাকা নগদ নিলো। মাত্র তিনশ টাকার জন্য
আমার পাওয়া বৃত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে! তাই অন্যায় জেনেও আমি তিন শ টাকা দিয়ে ফরম নিলাম।
রাত জেগে ফরম পূরণ করে, সমস্ত কাগজপত্র জোগাড় করে পরদিন ফরম জমা দিলাম। এরপর কত আশা
নিয়ে অপেক্ষা করে আছি – ফাইনাল রেজাল্ট আসবে। দুই সপ্তাহ পর ভারতীয় হাই কমিশন থেকে
চিঠি এলো – মন্ত্রণালয় থেকে আমার নাম পাঠানো হয়েছে, কিন্তু নির্ধারিত ফরমে আমার দরখাস্ত
পাঠানো হয়নি। অথচ এই দরখাস্ত আমি নিজে জমা দিয়ে এসেছি মন্ত্রণালয়ে।
চাইলেই চট্টগ্রাম থেকে যখন খুশি ঢাকায় চলে যাওয়া যায় না।
কলেজ থেকে ছুটি পাওয়া সহজ নয়। একদিনের ছুটির জন্যও ‘আকুল আবেদন’ করতে হয়। আবার গেলাম
মন্ত্রণালয়ে। তারা বললো – দরখাস্ত ভারতীয় হাই কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছে। গেলাম ভারতীয় হাই
কমিশনে। তারা জানালো – আমার দরখাস্ত তারা পায়নি। এখন উপায়? হাই কমিশনের একজন ‘দাসবাবু’
উপায় বাতলে দিলেন। আবার সমস্ত কাগজপত্র নতুন করে জোগাড় করে দরখাস্ত জমা দিলাম। এবার
নিশ্চয় হয়ে যাবে। কিন্তু দাসবাবুর মৎস্য শিকারের খুব শখ। তিনি জানতে চাইলেন তাঁকে চট্টগ্রামে
এনে তাঁর মৎস্য শিকারের শখ মেটাতে আমি কোন ভূমিকা রাখতে পারি কি না। তাঁর শখ মেটানো
আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমার সরকারি স্কলারশিপের ওখানেই ইতি।
চতুর্দশ বিসিএস ছিল শিক্ষা ক্যাডারের বিশেষ বিসিএস। ওই বিসিএস
আমরা দিতে পারিনি, কারণ আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষা হয়নি তখনো। এরপর আমাদের জন্য সুযোগ
এলো ষোড়শ বিসিএস। ওটাও শিক্ষা ক্যাডারের বিশেষ বিসিএস। আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে
আমার ওই বিসিএস হয়ে যাবে। মৌখিক পরীক্ষায় শুধুমাত্র পাসমার্ক পেলেও আমি মেধাতালিকায়
চলে আসবো এরকম আস্থা ছিল নিজের উপর। কিন্তু আস্থা আর বাস্তব এক জিনিস নয়। আমি ষোড়শ
বিসিএস ফেল করলাম। আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকলো। বছরখানেক পর সপ্তদশ বিসিএসও ফেল
করলাম। আত্মবিশ্বাস অবশিষ্ট যা ছিল তাও বাষ্প হয়ে উড়ে গেল।
কলেজে কাজে ব্যস্ত থাকি। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সাথে যতক্ষণ
থাকি – আনন্দেই থাকি। ক্লাসরুম আমার প্রিয় জায়গা, শিক্ষার্থীরা আমার প্রিয়জন। কিন্তু
তারপরও মনের ভেতর খচখচ করতে থাকে।
যতই অনুভূতি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি – কাছের মানুষগুলি ঠিকই
বুঝতে পারে। ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে বাবার মুখোমুখি হই। এই মানুষটির সাথে আমার এখন যতটা
পিতা-পুত্রের সম্পর্ক, তার চেয়েও বেশি বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তাঁর বয়স এখন পঁচাত্তর।
তাঁর নিজস্ব সংগ্রামের কথাগুলি এখন আমি বুঝতে পারি। তিনিও খুলে বসেন তাঁর অতীত দিনের
কথার ঝাঁপি।
আমার বাবার জীবন অনেকটা সাপ-লুড়ুর মতো। কতোবার তাঁর জীবনের
পাকা গুটি সাপে খেয়েছে। তিনি শীর্ষ থেকে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছেন, কিন্তু তিনি থেমে যাননি।
একটা কথার ভগ্নাংশ তিনি প্রায়ই বলেন – “মা ফলেষু কদাচন – কর্ম করে যাও, ফলের আশা করিও
না।” মূল কথাটি অবশ্য এরকম “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন” – অর্থাৎ মানুষের
অধিকার শুধু কর্মে, কর্মফলে নয়। তার মানে কী দাঁড়ালো? ফল যাই হোক, আমার চেষ্টা আমাকে করেই যেতে হবে।
নতুন করে চেষ্টা শুরু হলো। লালদীঘির পাড়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল
লাইব্রেরি। সেখানে রেফারেন্স সেকশানে কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিগুলির বিস্তারিত পরিচিতিসহ
রেফারেন্স বই আছে। সেখান থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ঠিকানা
জোগাড় করে উচ্চতর ডিগ্রিতে ভর্তির তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠাতে শুরু করলাম। প্রতিদিন কলেজ
থেকে আসার পর সারা বিকেল এখানেই কাটে। এরপর রাত জেগে চিঠি টাইপ করি। মুসলিম হলের পাশে
বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরির চার তলায় রেফারেন্স রুমে আছে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির লিস্ট।
ওখান থেকেও ঠিকানা জোগাড় হয়। পরবর্তী কয়েক মাস ধরে প্রায় কয়েক শ’ চিঠি পোস্ট করলাম
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ আরো কিছু দেশে – যেখানে ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা
হয়।
মাসখানেক পরে চিঠি আসতে শুরু করলো। বড় বড় খামের ভেতর বড় বড়
প্রস্পেক্টাস। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্পেক্টাসের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ভেঙে যাওয়া
স্বপ্নের নতুন চারা গজাতে শুরু করে। কিন্তু স্বপ্নের ডানা ছেটে দিতে হয়। কারণ ভর্তির
দরখাস্ত করার জন্য ফি আছে – পঞ্চাশ ডলার থেকে এক শ ডলার পর্যন্ত। ছিয়ানব্বই সালে আমেরিকান
ডলারের দাম ছিল প্রায় পঞ্চাশ টাকা। সেই হিসেবে আমার এক মাসের বেতন মাত্র এক শ ডলার।
দুইটা ইউনিভার্সিটিতে দরখাস্ত করতে গেলেই আমি ফতুর হয়ে যাবো। তাই কয়েক শ ইউনিভার্সিটিতে
চিঠি পাঠিয়ে প্রসপেক্টাস আনা গেলেও – ভর্তির দরখাস্ত করার ব্যাপারে খুব হিসেবী হয়ে
উঠতে হলো। প্রথমে দেখলাম ফি ছাড়া দরখাস্ত করা যায় কোন্ কোন্ ইউনিভার্সিটিতে। আমেরিকার
হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে দরখাস্ত করতে ফি লাগে না, কিন্তু টোফে্ল, জিআরই লাগে।
নতুন যন্ত্রণার নাম টোফেল, জিআরই। বইপত্র কিনে উল্টেপাল্টে
দেখে বুঝতে পারলাম – আমার ইংরেজির অবস্থা ভয়াবহ। অরিজিনাল বইপত্রের দামও অনেক। পরীক্ষার
ফিও ষাট-সত্তর ডলার। এই ডলারের চেক জোগাড় করতেও অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। আগ্রাবাদে সোনালী
ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখা থেকে অনেক কাগজপত্র জমা দিয়ে ডলারের চেক জোগাড় করতে হয়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপের জন্য দরখাস্ত করলাম।
দরখাস্ত করার জন্য কোন ফি লাগলো না বলে অনেক খুশি হয়েছি। তবে দরখাস্তে উল্লেখ করা আছে
আমার ইউনিভার্সিটি থেকে সরাসরি অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাতে হবে। এই অ্যাকাডেমিক
ট্রান্সক্রিপ্ট বস্তুটা যে কী জিনিস – কোন ধারণা নেই। আমাদেরকে মার্কশিট দেয়া হয়েছে,
সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট নামে কিছুই তো দেয়া হয়নি।
অথচ জানতে পেরেছি আন্তর্জাতিক সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট দেয়া
হয় – যেখানে কী কী সাবজেক্টে পরীক্ষা দিয়ে কত নম্বরের মধ্যে কত পেয়েছি, কী গ্রেডের
কী মান, গ্রেড কীভাবে দেয়া হয়, কত নম্বরের মধ্যে কত পেলে ফার্স্ট ক্লাস, ইত্যাদি সব
তথ্য থাকে সেই ট্রান্সক্রিপ্টে। ইউনিভার্সিটিগুলি ইউনিভার্সাল হবে এটাই স্বাভাবিক।
অথচ আমাদের ইউনিভার্সে অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টই নেই!
ইউনিভার্সিটিতে গেলাম। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে এই
টেবিল থেকে ওই টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর জানা গেল অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের
জন্য নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত করতে হবে। অনার্সের জন্য একটি দরখাস্ত, মাস্টার্সের জন্য
আরেকটি দরখাস্ত। দরখাস্তে আমি কোন্ পরীক্ষায় কত পেয়েছি তা লিখে দিতে হবে। সাথে আমার
মার্কশিটের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। প্রতিটি দরখাস্তের ফি দুইশ টাকা। সেই টাকা আবার
অগ্রণী ব্যাংকে জমা দিতে হবে। আমি কোন্ পরীক্ষায় কত পেয়েছি সেই রেকর্ড তো বিশ্ববিদ্যালয়েই
থাকার কথা। সেখান থেকে তথ্য নিয়েই তো ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করে দেয়ার কথা। কিন্তু না,
আমাকেই সব সরবরাহ করতে হবে। অফিসাররা সেই তথ্য মিলিয়ে দেখবেন ঠিক আছে কী না।
পুরো দুই দিন লাগলো ট্রান্সক্রিপ্ট রেডি হতে। পাতলা ফিনফিনে
কাগজে টাইপ করা হলো ট্রান্সক্রিপ্ট। টাইপ করার সময় বেশ কয়েকবার ভুল হলো। সাদা ফ্লুইড
দিয়ে সেই ভুল মোছা হলো। তার উপর আবার টাইপ করা হলো। এরকম ছন্নছাড়া ট্রান্সক্রিপ্ট যাবে
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। বলা হয়েছে ইউনিভার্সিটি থেকে সরাসরি পাঠাতে। সেজন্য পোস্টাল
স্টাম্পের খরচ নেয়া হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু আমাকে ট্রান্সক্রিপ্ট দুটো এবং একটা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ মারা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলা হলো – “আপনি পোস্ট করে দিয়েন কোথায় দিতে
হয়।“
“তাহলে পোস্টেজ বাবদ যে পঞ্চাশ টাকা নিলেন?”
“হে হে হে।“ মনে হলো এরকম হাস্যকর প্রশ্ন তিনি আর কখনো শোনেননি।
যাই হোক, অক্সফোর্ডে দরখাস্ত পাঠালাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে
অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠালাম। প্রামাণিকস্যারকে অনুরোধ করেছিলাম একটি রেফারেন্স
লেটারের জন্য। তিনি বলেছেন, নিয়ম মোতাবেক তিনি সরাসরি অক্সফোর্ডেই পাঠিয়ে দেবেন।
মাসখানেক পর অক্সফোর্ড থেকে চিঠি এলো। আই-ই-এল-টি-এস করতে
হবে। ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর কমপক্ষে সেভেন হতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বা আই-ই-এল-টি-এস
সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। ব্রিটিশ কাউন্সিলে খোঁজ নিলাম। চট্টগ্রামে তেমন কোন
তথ্য নেই। ব্রিটিশ কাউন্সিল ঢাকায় এই পরীক্ষার আয়োজন করে এবং সেখানে তথ্যও পাওয়া যায়।
তবে চট্টগ্রাম ব্রিটিশ কাউন্সিলের তরুণ লাইব্রেরিয়ান আনঅফিশিয়ালি জানালেন – আমি আগ্রহী
হলে মিসেস সুতপা বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। মিসেস বড়ুয়া আগে ব্রিটিশ কাউন্সিলে
কাজ করতেন। এখন নিজেই একটি ইংরেজি শেখানোর প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন রহমতগঞ্জে।
সুতপা ম্যাডামের সাথে দেখা করলাম। বেশ বড় প্রতিষ্ঠান তাঁর।
অনেক ছাত্রছাত্রী ইংরেজিতে কথা বলা শিখছে। আই-ই-এল-টি-এস কোর্সে আপাতত কোন স্টুডেন্ট
নেই। কারণ ওই পরীক্ষাটা এখনো খুব একটা পরিচিত হয়নি এখানে। এখনো সবাই টোফেলই করে। সুতপাম্যাডাম
আমাকে একাই পড়াবেন। এক ঘন্টা করে মোট দশটি ক্লাস নেবেন, প্রতি ক্লাস ছয় শ টাকা। তবে
ব্যান্ড স্কোরের কোন গ্যারান্টি তিনি দিতে পারবেন না। ভর্তি হয়ে গেলাম।
মাস খানেক পরে ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে
এলাম। ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর এলো সাড়ে ছয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিজেকশান লেটার এলো
কয়েক সপ্তাহ পর।
দেখলাম অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলিতে আই-ই-এল-টি-এস ব্যান্ড
স্কোর ছয় হলেই হয়। তাহলে তো অস্ট্রেলিয়ায় দরখাস্ত করতে হয়। কিন্তু দরখাস্তের ফি আছে
সেখানে। অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দাম আমেরিকান ডলারের চেয়ে কম। সাতানব্বইতে বাংলাদেশী টাকায়
অস্ট্রেলিয়ান ডলার ছিল সাতাশ টাকা। এএনজেড গ্রিনলেজ ব্যাংকে অস্ট্রেলিয়ান ডলার পাওয়া
যায়। আমার কলেজজীবনের বন্ধু সুরজিত কাজ করে সেখানে। তার সাহায্যে অস্ট্রেলিয়ান ডলার
জোগাড় হলো। দরখাস্ত করলাম কয়েকটি অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটিতে। এখানে অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
ইউনিভার্সিটি থেকে পাঠাতে হয় না, দরখাস্তের সাথে নিজেই পাঠানো যায়। ইউনিভার্সিটিতে
গিয়ে আবার ফরম ও টাকা জমা দিয়ে আরেক সেট ট্রান্সক্রিপ্ট নিয়ে এলাম। এবার ওগুলির ফটোকপি
দিয়ে কাজ চালালাম।
প্রথম অফারটা এলো ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি থেকে। শুধু ভর্তির
অফার, কোন স্কলারশিপ নেই। টিউশন ফি বছরে আঠারো হাজার ডলার। অত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করার
সামর্থ্য নেই। পরের অফার এলো ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ড থেকে। ওখানেও কোন স্কলারশিপ
নেই। তৃতীয় অফারটা এলো ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন থেকে। প্রথম চিঠিতে কোন স্কলারশিপ
নেই, কিন্তু বলা হলো স্কলারশিপের সিদ্ধান্ত কিছুদিন পরে জানানো হবে। এক মাস পর জানানো
হলো – আমাকে একটা রিসার্চ স্কলারশিপ দেয়া হচ্ছে।
তারপর অন্য দেশ, অন্য কাহিনি।
অবশেষে পুরো টা পড়লাম ভাল লেগেছে অনেক। আমার সামনে কৃষি ভর্তি পরিক্ষা। রাবি তে পজিশনে আছি বলে ওটা নিয়ে আর চিন্তা করছি না। রাবিতে পদার্থ বিজ্ঞান পেলে ওখানেই পড়বো,,,
ReplyDeleteআপনার মেইল দেওয়া যাবে স্যার,,
অনেক ধন্যবাদ সবগুলি পর্ব পড়ার জন্য। অবশ্যই মেইল দেয়া যাবে।
Deleteধন্যবাদ স্যার। আমার নাম ফয়সাল আজাদ ভূইয়া (মিথুন)। আমি নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছি। ২০২০ সালের অটোপাস ব্যাচ আমি।
Deleteআপনার মেইল এখানে পোস্ট করতে হবে না। আপনি বরং আমার মেইলে একটা ছোট মেইল পাঠিয়ে দিলেই হবে।
mail :mithun4901@gmail.com
আপনার মেইলের অপেক্ষায় থাকবো।
ধন্যবাদ স্যার।
ধন্যবাদ মিথুন। আমার ব্যক্তিগত ইমেইল pradipdeb2006@gmail.com
Delete