দক্ষিণ গোলার্ধে
এক মাস কেটে গেলো। আক্ষরিক অর্থেই খুব ঠান্ডাভাবে দিন কাটছে এই নতুন দেশে এসে। আগস্ট
মাসের এই সময়ে বাংলাদেশে শ্রাবণ-ভাদ্রের তালপাকা গরম। আর এখানে হাঁড়কাঁপানো শীত। তার
উপর গোমড়ামুখো আকাশ থেকে যখন-তখন বৃষ্টি ঝরছে। তবে এই বৃষ্টিকে কিছুতেই ‘ঝরঝর বরিষে
বারিধারা’ বলা যাবে না। বাংলাদেশের বৃষ্টির সৌন্দর্য এখানে নেই।
জুন জুলাই আগস্ট
– এই তিন মাস এখানে অফিসিয়াল উইন্টার। অনেকে বলে মেলবোর্নে নাকি সারাবছরই উইন্টার থেকে
যায় – কোনো না কোনোভাবে। বাংলাদেশে শীতের যে আলাদা একটা আরাম আছে – এখানে সেই আরাম
নেই। অবশ্য তাসের দেশ-এ রবিঠাকুর আরামের অভ্যাসকে তুলোধোনা করেছেন। বলেছেন ‘ব্যাঙের
আরাম এঁদো কুয়োর মধ্যে।‘ কুয়োর ব্যাঙ হয়ে মোটামুটি আরামেই তো ছিলাম। কিন্তু সেই আরাম
ত্যাগ করে যখন নতুন দেশে এসেই পড়েছি – তখন আর আগের আরাম আশা করি কীভাবে। তাসের দেশের
রাজপুত্রের মতো আমিও যদি আশা করতে পারতাম -
“অচিন মনের
ভাষা,
শোনাবে অপূর্ব কোন্ আশা,
বোনাবে রঙিন সুতোয় দুঃখসুখের জাল,
বাজবে প্রাণে নতুন গানের তাল,
নতুন বেদনায় ফিরব কেঁদে হেসে।“
কিন্তু মনের
ভাষা বোঝা তো দূরের কথা, মুখের ভাষাই বুঝতে পারছি না এদের। মুখের মধ্যে মার্বেল নিয়ে
কথা বললে যেরকম শোনায় এদের উচ্চারণ আমার কাছে সেরকমই মনে হয়। পরিচিত শব্দগুলিও কেমন
যেন অদ্ভুত লাগে। “হোয়াডিউ ডু টু-ডাই” শুনে মনে হয়েছিল – এটা কী ধরনের প্রশ্ন? আমি
মরার জন্য কী করি? টুডে যে এখানে টু-ডাই তা আমি কোন ইংরেজিতে পাইনি। “হাউয়াইয়া” যে ‘হাউ আর ইউ’ তা বুঝতে আমার কয়েক সপ্তাহ লেগেছে।
তার উপর আছে ইংরেজি বাগধারা; এরা এত বেশি ব্যবহার করে কথার মধ্যে! সেদিন ম্যান্ডিকে
জিজ্ঞেস করছিলাম কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট-আউট কীভাবে নিতে হয়। আমাদের রুমে একটা কম্পিউটার
আছে, কিন্তু কোন প্রিন্টার নেই। জবাবে ম্যান্ডি বললো, “হ, ইট্স অ্যা পিস অব কেক।“
আমাদের ডিপার্টমেন্টে মাঝে মাঝে কেক-পেস্ট্রি-ডোনাট এসব খাওয়ানো হয়, বিশেষ করে সেমিনারের
আগে। আমি ভাবলাম ম্যান্ডি সেরকম কোন কেকের সন্ধান দিচ্ছে আমাকে। আমি সরল মনে জিজ্ঞেস
করলাম, “হোয়ার ইজ দ্য কেক?” আমার অবস্থা দেখে ম্যান্ডি হো হো করে হেসে উঠেছিল। তারপর
ইংরেজি বাগ্ধারা সম্পর্কে কিছুক্ষণ জ্ঞান বিতরণ করলো। শেখার মধ্যে লজ্জা থাকতে নেই
– বলা সহজ। কিন্তু লজ্জা ত্যাগ করে যেকোনো শিক্ষা যে কারো কাছে থেকে সহজভাবে নিতে পারার
মতো শক্তি অর্জন করা সহজ নয়। ম্যান্ডির সামনে কী যে লজ্জা লাগছিলো আমার। এত লজ্জা সংকোচ
নিয়ে কীভাবে আশা করি যে “বাজবে প্রাণে নতুন
গানের তাল?”
রুমের তালা
খোলার সময় দেখলাম কেনের অফিস বন্ধ। ইওরোপে গেছেন তিনি। সম্ভবত কোন কনফারেন্সে। আমাদের
রুমের আর কেউ এখনো আসেনি। ফিজিক্স বিল্ডিং-এর ছয় তলার এই ৬১২ নম্বর রুমে আমরা চারজন
বসি। ম্যান্ডি আর জিনেট পিএইচডি করছে, আমি রিসার্চ মাস্টার্স, আর ইমাজিন অনার্স। রুমের
চার কোণায় চারটি ডেস্ক। ভেতরের দেয়াল ঘেঁষে আরেকটা টেবিল, সেখানে বিশাল এক কম্পিউটার।
কম্পিউটারের আবার নামও আছে এখানে। এটার নাম হিগ্স। হিগ্স কী বস্তু এখনো জানি না।
এই কম্পিউটারটি নাকি আমাদের গ্রুপের – অর্থাৎ Theory Q বা কোয়ান্টাম থিওরি গ্রুপের। আমার সুপারভাইজার কেন্
অ্যামোস এই গ্রুপের হেড। গ্রুপের আরেকজন প্রফেসর হলেন লেস অ্যালেন। তাঁর সাথে পরিচয়
হয়েছে, কিন্তু তাঁর তত্ত্বাবধানে যারা গবেষণা করছে তাদের কারো সাথে এখনো পরিচয় হয়নি।
ম্যান্ডি কেনের ছাত্রী। সে হিসেবে আমার সতীর্থ। জিনেট আর ইমাজিন প্রফেসর হলেনবার্গের
ছাত্রী। প্রফেসর হলেনবার্গকে এখনো দেখিনি।
যাই হোক, এই
কম্পিউটারটি বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করেন কেনের পোস্ট-ডক্টরেট ফেলো পিটার ডর্টসম্যান।
ছোট-খাট সাইজের লম্বাচুলের এই মানুষটিকে দেখলে আঠারো-উনিশ বছরের ছেলে বলে মনে হয়। কিন্তু
তিনি পিএইচডি করেছেন ১৯৯২ সালে। তারপর গত ছয় বছর ধরে পোস্টডক্টরেট ফেলো হিসেবে গবেষণা
করছেন কেনের সাথে। অন্যদিন তিনি এতক্ষণে এসে কাজ শুরু করে দেন। আজ আসেননি। তিনিও কেনের
সাথে ইওরোপে গেছেন কিনা জানি না।
এই রুমের কম্পিউটারটা
আমি দিনের বেলায় ব্যবহার করি না। চার তলার কম্পিউটার রুমে তিরিশটা কম্পিউটার আছে ফিজিক্সের
গবেষকদের ব্যবহারের জন্য। সেখানেই চলে যাই যখন সময় পাই। আজ রুমে কেউ নেই বলে হিগ্স
কম্পিউটারে লগ ইন করলাম। এই কম্পিউটারের মাথামুন্ডু এখনো কিছুই ঠিকমতো বুঝি না। বই
দেখে দেখে কমান্ড দিয়ে হাতড়ে হাতড়ে এগোতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে আমার
কম্পিউটার ব্যবহারের ইতিহাস বিবেচনা করলে আমাকে কম্পিউটার-নিরক্ষর বলা চলে। সেই ইতিহাস
খুবই সংক্ষিপ্ত। আমার বন্ধু দেবাশিস আর মহিউদ্দিন কম্পিউটার শেখানোর স্কুল খুলে ফেলেছিল
আমি অনার্স পাস করার আগেই। যীশু, প্রদীপ, অজিত – এরা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেছে
অনার্স পরীক্ষা দিয়ে। কিন্তু আমি কোন আগ্রহই দেখাইনি। মাস্টার্সের থিসিস করার সময়
‘ওয়ার্ড পারফেক্ট’ শিখেছিলাম দেবাশিস আর মহিউদ্দিনের স্কুলে। তখনো মাউস আসেনি সেখানে।
কমান্ড মোডে ছোট্ট চৌদ্দ ইঞ্চি স্ক্রিনে টাইপ করতে শিখেছিলাম। কয়েক বছরের মধ্যেই সব
ভুলেও গিয়েছি। ততদিনে আমার আরেক বন্ধু অঞ্জন কম্পিউটার কোম্পানিতে জয়েন করে কিছুদিন
পর ইনফরমেশান টেকনোলজির ম্যানেজার হয়ে গিয়েছে। নিজেই একটা কম্পিউটার কোম্পানি খুলেছে
মোমিন রোডে। আমি সেখানে গিয়ে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে পাঠানোর জন্য ই-মেইল টাইপ করতাম
ওয়ার্ড পারফেক্টের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে। এখানে আসার আগে অঞ্জন আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে কীভাবে
ইমেইল করতে হয়। মোমিন রোডের মাথার বইয়ের দোকান কথাকলি থেকে “ইমেইল করার নিয়মকানুন”
নামে বাংলায় লেখা একটি বইও কিনে নিয়ে এসেছি। কিন্তু সেই বই কিংবা পূর্বজ্ঞানের কিছুই
এখানে কাজে লাগাতে পারছি না। কারণ এখানকার কম্পিউটারগুলির অপারেটিং সিস্টেম আমি আগে
কখনো দেখিনি। এখানে মাউস আছে। কিন্তু সামান্য পরিচয় ছিল যে উইন্ডোজের সাথে – আমার নাগালের
মধ্যে যে ক’টা কম্পিউটার আছে তাদের কোনটাতেই উইন্ডোজ নেই। ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম
সবগুলিতে। এই অপারেটিং সিস্টেম নাকি ফ্রি। বাংলাদেশে সবাই উইন্ডোজ ব্যবহার করে শুনে
সেদিন জিনেট প্রশ্ন করেছিল, “ফ্রি ও-এস ব্যবহার করে না! বাংলাদেশ কি অনেক ধনী দেশ নাকি?”
আমি কোন উত্তর দিইনি। কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম কী জিনিস সেটাই তো জানি না এখনো।
“হেই প্রাডিব,
ডু ইউ নো হোয়ার ইজ কেন্ টুডাই?”
ঘাড় ফিরিয়ে
দেখলাম ম্যান্ডি রুমে ঢুকে বৃষ্টি-ভেজা টকটকে লাল জ্যাকেট খুলে চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখছে।
কেন্ যে ইওরোপে গেছেন তা সম্ভবত ম্যান্ডি জানে না। ইংরেজি বাক্য গঠন করতে আমার অনেক
সময় লাগে। প্রক্রিয়াটি এখনো অনেক দীর্ঘ আমার কাছে। ইংরেজি প্রশ্ন শুনে মনে মনে সেটার
বাংলা অনুবাদ করার পর বুঝতে পারি। তারপর বাংলায় তার উত্তর তৈরি করে সেই উত্তরের ইংরেজি
অনুবাদ করার পর তা উচ্চারণ করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে শ্রোতার মনযোগ অন্যদিকে
চলে যেতে পারে। কিন্তু আজ দেখলাম ম্যান্ডি অপেক্ষা করছে আমার উত্তরের জন্য। জ্যাকেটের
পর এখন সে সোয়েটারটাও খুলতে শুরু করেছে। ইউনিভার্সিটির সবগুলো বিল্ডিং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
বলে রুমের ভেতর সোয়েটার-জ্যাকেট ছাড়াও থাকা যায়। আমি যে বাসায় থাকি – সেখানে রুম হিটিং-এর
কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কনকনে ঠান্ডায় কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকতে হয়। সেই তুলনায় ইউনিভার্সিটিতে
অনেক আরাম। তাই যতক্ষণ পারি আমি ইউনিভার্সিটিতেই থাকি। কিন্তু এখানেও আমাকে জ্যাকেট
পরে থাকতে হচ্ছে সারাক্ষণ। ম্যান্ডি যেরকম ভারী জ্যাকেট পরে এসেছে আমার জ্যাকেট সেরকম
নয়। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় হকার্স মার্কেট থেকে যে সেকেন্ড হ্যান্ড জ্যাকেট কিনেছিলাম
– আট বছর পরেও সেটা আমাকে উষ্ণতা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদেশের ছেলে-মেয়েদের মনে হচ্ছে
শীতের অনুভূতি কম।
“হোয়াট হ্যাপেন?
হোয়ার ইজ কেন্?”
ম্যান্ডি দুটো
আবরণ খুলে ফেলে এখন পাতলা একটা টি-শার্ট পরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি তার দিকে
নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছি। থতমত খেয়ে বললাম, “ইওরোপ, লাস্ট থার্স ডে।“
“লাকি বাস্টার্ড।“
শব্দ প্রয়োগের
এই স্বেচ্ছাচারিতা বুঝতেও ঝামেলা হয় আমার। ম্যান্ডি নিশ্চয় কেনের জন্ম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন
তুলছে না এখানে। তবে এখানে বাস্টার্ড বলার অর্থ কী? দরকারই বা কী? ম্যান্ডি এর পর যেসব
কথাবার্তা বললো তাতে বোঝা গেল – কেন্ প্রতি বছর শীতকালে ইওরোপে চলে যান। ওখানে এখন
গ্রীষ্মকাল। জার্মানি, ফ্রান্স, হাঙ্গেরিতে তাঁর গবেষক বন্ধুরা আছেন। তাঁদের আতিথ্য
গ্রহণ করেন। আর ওখানে যখন শীতকাল থাকে – তখন উনারা এখানে চলে আসেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্ম
উপভোগ করার জন্য। ম্যান্ডি কেনের এই সুযোগে ভীষণ ঈর্ষান্বিত। ম্যান্ডিকে দোষ দিয়ে লাভ
নেই। শুনে আমারও ঈর্ষা হচ্ছে।
“কেন্ যেহেতু
নেই, আমার আর এখানে থাকার দরকার নেই। আমি বাসায় চলে যাবো।“ কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার
সোয়েটার-জ্যাকেট পরে চলে গেলো ম্যান্ডি। সুপারভাইজার না থাকলে ফাঁকিবাজি তাহলে এরাও
করে?
দশটা থেকে প্রফেসর
লেস অ্যালেনের স্ক্যাটারিং থিওরির ক্লাসটা করতে হবে। ওটা মূলত অনার্সের কোর্স। এখানকার
অনার্সের সাথে আমাদের অনার্সের পার্থক্য আছে। আমরা তো ফার্স্ট ইয়ার থেকেই অনার্সের
ছাত্র। কিন্তু এখানে তিন বছর পড়ে বিএসসি পাস করার পর এক বছরে অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে
হয়। বিএসসিতে কমপক্ষে শতকরা পঁচাত্তর ভাগ নম্বর পেতে হয় অনার্সে ভর্তি হবার জন্য। এক
বছরের অনার্স কোর্সের প্রথম সেমিস্টার কোর্সওয়ার্ক। চারটি কোর্স নিতে হয়। পরের সেমিস্টার
থিসিস। অনার্স পাস করার পর সরাসরি পিএইচডি-তে ভর্তি হওয়া যায়। অনার্সে শতকরা আশি ভাগ
নম্বর পেলে ফার্স্ট ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস অনার্স থাকলে পিএইচডি করার জন্য স্কলারশিপ
পাওয়া যায়। এদেশের ছেলেমেয়েদের জন্য রিসার্চ-ডিগ্রি সম্পূর্ণ ফ্রি। ইন্টারন্যাশনাল
স্টুডেন্টরা যেখানে বছরে সতেরো-আঠারো হাজার ডলার টিউশন ফি দিয়ে পড়ছে, সেখানে এদেশের
ছেলেমেয়েদের জন্য তা সম্পূর্ণ ফ্রি। তবুও নাকি এদেশের ছেলেমেয়েরা পিএইচডি করতে আগ্রহী
হয় না তেমন। তা অবশ্য দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফিজিক্সে অনার্স করছে বিশ জনেরও কম। স্ক্যাটারিং
থিওরি ক্লাসে আছে মাত্র সাত জন। আমিসহ আট জন হয়েছি।
লেস অ্যালেনের
ক্লাস করতে গিয়ে আবার নতুন করে বুঝতে পারলাম যে অনার্স-মাস্টার্সে কোয়ান্টাম মেকানিক্স
পড়ার পরেও আমি তার কলকব্জা কিছুই বুঝতে পারিনি। অথচ এই বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলি
জটিল সমীকরণের সবকিছুই বুঝে।
ক্লাসে যে সাত-জন
আছে সবার বয়সই একুশ-বাইশের মধ্যে। এরা আঠারো বছরে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়, একুশে গ্রাজুয়েট,
বাইশে অনার্স, পঁচিশ-ছাব্বিশে পিএইচডি কমপ্লিট করে ফেলে যারা করতে চায়। তবে বেশিরভাগই
স্নাতক পাস করেই চাকরিতে ঢুকে যায়। একুশ-বাইশ বছরের তরুণ-তরুণীদের মাঝে একত্রিশ বছরের
নিজেকে খুবই বুড়ো মনে হয়। তবে লেখাপড়ার জন্য বয়সের যে কোন বাধা এদেশে নেই তা নিজের
চোখেই দেখতে পাচ্ছি। ফার্স্ট ইয়ার ফিজিক্সের ল্যাব-ক্লাস নিচ্ছি আমি এই সেমিস্টারে।
সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের একজন ছেলে আছে যার বয়স পঞ্চাশের কম নয়। আমি আগ্রহ নিয়ে
তার সাথে কথা বলেছি। এমবিএ পাস করে কর্পোরেট চাকরি করেছে অনেক বছর। এখন ইচ্ছে হয়েছে
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হয়েছে এবছর।
দরজায় টোকার
শব্দে দরজার দিকে তাকালাম। ম্যান্ডি রুমের দরজা খোলা রেখেই চলে গিয়েছে। এখন দরজার সামনে
বিশাল একটা ফোল্ডার নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন প্রফেসর লেস অ্যালেন।
“লেট্স গো
টু ক্লাস।“
“ইয়েস স্যার।“
“ওহ্ নট অ্যাগেইন।
নো স্যার প্লিজ।“
আমাদের দেশে
শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকার কথা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। আর এখানে আসার এক মাসের
মধ্যেই নাম ধরে ডাকার সংস্কৃতি আয়ত্ব হয়ে যাবে? লেসের অফিস এই ফ্লোরের একেবারে অন্য
মাথায়। তিনি সেখান থেকে হেঁটে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন ক্লাস করার জন্য। এ কোন্
দেশে এলাম?
No comments:
Post a Comment