Friday, 22 July 2022

জোসেলিন বেল

 


১৯৬৭ সালে এই আইরিশ তরুণীর বয়স ছিল মাত্র চব্বিশ বছর। তরুণীর নাম জোসেলিন বেল। ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো থেকে ফিজিক্সে বিএসসি পাস করে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসর অ্যান্টনি হিউইশের তত্ত্বাবধানে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে পিএইচডি গবেষণার মাঝামাঝি সময় তখন জোসেলিনের। ফিজিক্সের একটি আলাদা শাখা হিসেবে তখনো সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি অ্যাস্ট্রোফিজিক্স। রেডিও অ্যাস্ট্রোনমার অ্যান্টনি হিউইশ তখনো তেমন প্রভাবশালী কেউ নন।

 গবেষণার বেশিরভাগ কাজ একেবারে গোড়া থেকেই করতে হচ্ছিল জোসেলিনকে। অনেক খেটেখুটে একটি রেডিওটেলিস্কোপ বানিয়েছেন জোসেলিন। তার জন্য একশ মাইলের বেশি লম্বা তামার তার জুড়তে হয়েছে নিজের হাতে কেম্ব্রিজের কাছে মাঠের মধ্যে। সেই যন্ত্র দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জেগে চালিয়েছেন। মহাকাশ থেকে ভেসে আসা ডাটা বিশ্লেষণ করেছেন হাতে আঁকা গ্রাফ পেপারের মধ্যে। যেগুলি একটির পর একটি জুড়লে কয়েক মাইল লম্বা হবে। লক্ষ লক্ষ ডাটা বিশ্লেষণ করে জোসেলিন দেখলেন মহাকাশের বিশেষ অঞ্চল থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অস্বাভাবিক সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষণ করে জোসেলিন নিশ্চিত হলেন যে এই সিগনাল আসছে আমাদের সৌরজগতের বাইরের মহাকাশ থেকে। আবিষ্কৃত হলো পালসার। 

পরপর চারটি পালসার আবিষ্কৃত হলো জোসেলিনের হাত দিয়ে। অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের নতুন দিগন্ত খুলে গেল। তরুণী জোসেলিন এই আবিষ্কারের ফলাফল প্রকাশ করলেন, থিসিস লিখলেন, পিএইচডি ডিগ্রি পেলেন। কিন্তু ঠিক ওইটুকুই। এর সাত বছর পর ১৯৭৪ সালে যখন পালসার আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হলো, জোসেলিনের নামও উল্লেখ করা হলো না। পুরষ্কারটি দেয়া হলো জোসেলিনের থিসিস সুপারভাইজার অ্যান্টনি হিউইশকে। শুধুমাত্র কমবয়সী একটি মেয়ে বলেই কি আবিষ্কারের কৃতিত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল জোসেলিনকে? ঠিক তাই। 

জোসেলিন যদি সেখানেই থেমে যেতেন - তাহলে হয়তো তাঁর কথা কেউ মনেও রাখতো না আজ। জোসেলিন সেখানে থেমে থাকেননি। তিনি আরো অনেক বেশি পরিশ্রম করে অনবরত গবেষণার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বার বার। নোবেল পুরষ্কার ছাড়া বিজ্ঞানের গবেষণার অন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার আছে তিনি তার সবগুলিই পেয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলির ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়েদের বিজ্ঞান গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার কাজে তিনি এই ৮১ বছর বয়সেও তারুণ্যের শক্তিতে নিবেদিত। 

প্রফেসর জোসেলিন বেলকে কয়েকবার দেখার এবং তার সেমিনারে অংশ নেয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। একটি মানুষের মধ্যে কী বিপুল পরিমাণ শক্তি থাকলে তিনি বলতে পারেন, "আমি নোবেল পুরষ্কার পাইনি তো কী হয়েছে, আমার আবিষ্কৃত পালসার তো পেয়েছে!" 

ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স ফাউন্ডেশান ২০১৮ সালে তাঁকে তিরিশ লক্ষ ডলার অর্থমূল্যের 'স্পেশাল ব্রেকথ্রু প্রাইজ' দিলে তিনি পুরো টাকাটাই দিয়ে দিয়েছেন মেয়েদেরকে গবেষণাবৃত্তি দেয়ার জন্য। 

১৯৪৩ সালের ১৫ জুলাই নর্থ আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে জন্মেছিলেন জোসেলিন। জন্মদিনে সকল বিজ্ঞানপ্রেমীর পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা। কামনা করছি তাঁর কর্মময় জীবন আরো দীর্ঘ হোক।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts