সপ্তাহের সাতদিনই
আমার ক্যাম্পাসে কাটে। খুব সিরিয়াসলি পড়াশোনা করছি ভাবার কোন কারণ নেই। যে বাসায় সাবলেট
থাকি – সেখানে ছোট্ট একটা রুমের বাইরে বাথরুম ছাড়া আর কোথাও যাবার উপায় নেই। ডিপার্টমেন্টে
আমার রুমে যখন-তখন আসা যায়। ছুটির দিনে কেউ থাকে না – মনে হয় পুরো বিল্ডিং-টাই আমার।
কিন্তু একদম কেউ যে থাকে না তা নয়। রিসার্চ-স্টুডেন্টদের কেউ না কেউ থাকেই। তবে আমার
ফ্লোরে কাউকে তেমন দেখা যায় না ছুটির দিনে।
রোববার সকালে
মেলবোর্ন সেন্ট্রাল আর ভিক্টোরিয়া মার্কেটে একটা চক্কর দিয়ে ক্যাম্পাসের কাছাকাছি আসতেই
মনে হলো উৎসব চলছে সারা ক্যাম্পাস জুড়ে। গতকাল বিকেল থেকেই কিছু কিছু আয়োজন চোখে পড়েছিল।
কী হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারিনি। এখন দেখছি দলে দলে লোকজন আসছে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের
সবগুলি বিল্ডিং আজ খোলা। নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাস। এখানে ওখানে
বড় বড় ব্যানারে লেখা – ডিসকভারি ডে। আজ কি মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির জন্মদিন? ১৮৫৩ সালের
আজকের দিনেই কি এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল?
টিপটিপ বৃষ্টি
হচ্ছে। শীতকালে বৃষ্টি হওয়া মেলবোর্নের বৈশিষ্ট্য। এই বৃষ্টিকে এখানে কেউ পাত্তা দেয়
বলে মনে হয় না। অনেক প্রশ্ন আর ভেজা ছাতা মাথায় নিয়ে সোয়ান্সটন স্ট্রিট আর এলগিন স্ট্রিটের
কোণা দিয়ে ফিজিক্স বিল্ডিং-এ ঢুকলাম। আজ ছুটির দিনেও তালা খুলতে হলো না। ডিসকভারি ডে
উপলক্ষে সবকিছু খোলা।
বিল্ডিং-এর
ভেতরে বাইরের উৎসবের কোন রেশ নেই। লিফ্ট দিয়ে ছ’তলায় উঠে বুঝতে পারলাম কেউ আসেনি এখানে।
করিডোরের লাইট নেভানো। অন্যদিন দিনের বেলায়ও লাইট জ্বলে এখানে। রুমে ঢুকে আমার টেবিলের
দিকে তাকিয়ে একটু অপরাধবোধ হলো। বইপত্র যেগুলি এক সপ্তাহ আগে খুলেছিলাম – এখনো সেভাবেই
হা করে আছে।
ফাঁকিবাজি ব্যাপারটা
যে ছোঁয়াচে তা আবারো প্রমাণিত হলো। এই প্রমাণ সংগ্রহের জন্য দূরে যাবার দরকার নেই,
আমার নিজের দিকে তাকানোই যথেষ্ট। আমার সিনিয়র সহপাঠী ম্যান্ডি ক’দিন থেকে ডিপার্টমেন্টে
আসছে না। আর জিনেট সকালে এসে ডেস্কে ব্যাগ রেখে, কিছুক্ষণ টেবিলে রাখা ছোট ছোট খেলনাগাড়িগুলি
নিয়ে খেলাধূলা করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সারাদিন আর দেখা যায় না তাকে। এই ব্যাপারটাই
ছোঁয়াচে রোগের মতো আমাকেও ধরে ফেলেছে। কেন্ ইওরোপে যাবার পর দু’দিন যেতে না যেতেই
মনে হচ্ছে আমার পায়ে চাকা গজিয়ে গেছে। আমি কনকনে ঠান্ডাকে পাত্তা না দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি
মেলবোর্ন শহরের অলিতে গলিতে।
কেন্ ইওরোপে
যাবার পর ম্যান্ডি শুধু একদিন এসেছিল। তারপর কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। তার ডেস্কে
রাজ্যের কাগজপত্র, কোকের খালি ক্যান, একজোড়া জুতা। পড়ার টেবিলে এভাবে জুতা তুলে রাখতে
আর কাউকে দেখিনি। শুনেছি তার পিএইচডির তৃতীয় বর্ষ চলছে। তাহলে তো তার শীঘ্র থিসিস জমা
দেয়ার কথা। কিন্তু সে ব্যাপারে তার ভেতর কোন তাড়া দেখছি না।
জিনেটের সাথে
আমার যেদিন পরিচয় হলো – সেদিন সে দীর্ঘ ছুটি থেকে ফিরেছে। ডিপার্টমেন্টে সে খুবই পপুলার।
সে যতক্ষণ রুমে থাকে – সারাক্ষণ কেউ না কেউ আসে তার কাছে, আর হাহা-হিহি করে অনবরত কী
কী নিয়ে গল্প করতে থাকে। এদের উচ্চারণের বেশিরভাগই আমি বুঝতে পারি না। তারাও সেটা জানে,
সেজন্য রুমে আমার উপস্থিতিকে তারা মোটেও গ্রাহ্য করে না। জিনেট পিএইচডি শুরু করেছে
দু’বছর হয়ে গেল, অথচ এখনো নাকি কিছুই এগোয়নি তার প্রজেক্ট। কিন্তু তাতে তার কোন উদ্বেগ
আছে বলে মনে হচ্ছে না। ডেস্কে সে একা থাকলে খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলতে বসে। খেলনা গাড়ি
নিয়ে শিশুরা ছাড়া আর বড়রাও যে নিয়মিত খেলতে বসে এটাও আগে দেখিনি কখনো।
কেনের পোস্টডক্টরেট
ফেলো ডক্টর পিটার ডর্টসম্যানও গেছেন কেনের সাথে। এখন বেশিরভাগ সময়েই পুরো রুমটা আমার
নিজের দখলে থাকে। বিশাল কম্পিউটার পড়ে থাকে চোখের সামনে। কিন্তু আমার চোখ চলে যায় নিজের
টেবিল ছেড়ে কম্পিউটার-টেবিলের উপর দিয়ে জানালায়। এই জানালা দিয়ে ক্যাম্পাসের অনেকবিল্ডিং-এর
চূড়া দেখা যায়, আরো দেখা যায় মেলবোর্ন সেন্ট্রালের বিশাল গম্বুজ। এদিকে তাকালেই মনে
হয় এরা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
লেখাপড়া না
করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে মনের ভেতর একটু খচখচ করলেও – যাযাবর মন, ফাঁকিবাজ মন আমাকে
বোঝায় – ম্যান্ডি আর জিনেট কি পড়াশোনা করছে? তোমার সুপারভাইজার তো যাবার সময় কোন পড়া
দিয়ে যাননি যে বসে বসে পড়তে হবে। তাছাড়া নতুন জায়গায় এসে রুমে বসে থাকলে হবে? পথঘাট
চিনে নিতে হবে না?
পথঘাট চিনে
নেয়ার জন্য পথেঘাটে ঘুরে বেড়ালে অন্যদের কী হয় জানি না – আমার অদ্ভুত এক আনন্দ হয়।
সেটা চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা শহরেও যেমন হয়, এখানে মেলবোর্নেও হচ্ছে। যেটুকু জায়গা নিয়ে
মেলবোর্ন শহরের সিবিডি বা সেন্ট্রাল বিজনেজ ডিস্ট্রিক্ট, ম্যাপে দেখা যাচ্ছে তার চেয়েও
বেশি জায়গা নিয়ে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির পার্কভিল ক্যাম্পাস। একটা একটা করে এই ক্যাম্পাসের
সবগুলি রাস্তায় হাঁটছি, সবগুলি বিল্ডিং-এ ঢু মারতে শুরু করেছি। আজ সকালেও মেলবোর্ন
সেন্ট্রাল আর ভিক্টোরিয়া মার্কেটে ঘুরে এসেছি। ভিক্টোরিয়া মার্কেটে অবশ্য গিয়েছিলাম
কাজের খোঁজে। কাজ হয়নি।
ওখান থেকে আসার
সময় ভেবেছিলাম রুমে বসে কিছুক্ষণ লেখাপড়া করার চেষ্টা করবো। কিন্তু জানালায় দাঁড়িয়ে
দেখছি নিচে ক্যাম্পাসজুড়ে লোকজনের মেলা। দেখে আসা দরকার, কী হচ্ছে। যাবার আগে টেবিলের
বইগুলি কি বন্ধ করে যাবো?
“হ্যাই, ইউ
আর হিয়ার টুডে!”
খোলা দরজা দিয়ে
ঝড়ো হাওয়ার মতো রুমে ঢুকে পড়েছে ইভন। ইভন পার্টিক্যাল ফিজিক্সে পিএইচডি করছে প্রফেসর
রে ভলকাসের কাছে। প্রফেসর রে’র অফিস করিডোরের শুরুতে। লিফ্ট থেকে বের হলেই তাঁর সাথে
চোখাচোখি হয়ে যায়। তিনি গম্ভীর মানুষ, কখনো কথা বলেননি আমার সাথে, হাসেনওনি। কিন্তু
তাঁর ছাত্রী ইভন প্রচন্ড হাসিখুশি মানুষ। ইভন দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ক্লাস সিক্স-সেভেনের
বাচ্চার মতো ছোটখাট। চেহারায় চৈনিক ছাপ আছে। কিন্তু কথাবার্তায় খাঁটি অস্ট্রেলিয়ান।
আমার সাথে তার পরিচয় হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। ফার্স্ট ইয়ারের ফিজিক্স ল্যাবের ডেমনেস্ট্রেশনে
সে আমার পাশের ল্যাবে ছিল। সেখানে একটু করে হাই-হ্যালো হয়েছে। আমার একই ফ্লোরে কয়েকটা
রুম পরেই তার রুম। সেদিন বিকেলে সে হঠাৎ রুমে এসে আমাকে বললো, “এক থেকে বারোর মধ্যে
যে কোন একটি সংখ্যা বলো।“
“নয়।“
“যে কোনো একটা
সব্জির নাম বলো।“
“আলু।“
“তুমি একটা
জটিল মানুষ। সরল মানুষেরা সাত আর গাজর বলে।“
এ ধরনের আপাত-মনস্তাত্ত্বিক
প্রশ্ন আমরা কত শুনেছি আগে। সংখ্যা – সাত, ফুল – গোলাপ ইত্যাদি। ইভন কী কারণে আমার
মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা নিলো তা জানতে চাইনি। এরপর থেকে দেখা হলেই ইভন অনেক কথা বলে।
ইভনকে জিজ্ঞেস
করলাম, “কী হচ্ছে আজ ক্যাম্পাসে?”
“ডিসকভারি ডে।
স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য ইউনিভার্সিটিতে কী কী সাবজেক্ট পড়ানো হয়, ভর্তি হতে গেলে
কী কী সাবজেক্ট লাগে ইত্যাদি দেখানোর জন্য।“
মাথামুন্ডু
কিছুই বুঝলাম না। স্কুলের ছেলেমেয়েরা ইউনিভার্সিটির ভর্তি নিয়ে এখন কী কারণে মাথা ঘামাবে?
তাছাড়া ইউনিভার্সিটি তো হবে রহস্যময় জায়গা। সেখানে কী হয় – তা তারা জানবে কেন? কিন্তু
আমরা যেভাবে দেখেছি – সেভাবে তো এখানে হয় না। ইভনের কাছ থেকে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া
গেল।
অস্ট্রেলিয়ায়
স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা রাজ্যসরকারের অধীনে। অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি রাজ্য আর দুইটি
টেরিটরির শিক্ষাব্যবস্থা আলাদা-আলাদা। সিলেবাস এবং সাবজেক্টে মিল এবং অমিল দুটোই আছে।
বারো বছর স্কুল-শিক্ষার পর রাজ্যজুড়ে একটি পরীক্ষা হয় – যেটা আমাদের দেশের উচ্চ মাধ্যমিকের
সমতুল্য। এখানে অর্থাৎ ভিক্টোরিয়া রাজ্যে এই পরীক্ষার নাম ভিক্টোরিয়া সার্টিফিকেট অব
এডুকেশন বা ভিসিই। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ওটার নাম আমাদের মতোই – এইচএসসি। এই পরীক্ষায়
প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়।
ইভন কিছুক্ষণ
বকবক করার পর চলে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। একটু রোদের
আভাসও দেখা যাচ্ছে। তবে এই রোদে কোন উত্তাপ নেই। কিন্তু বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে তাতেই আমি
খুশি। বাইরে বের হলাম।
এখানে রাস্তাঘাট
এত ঝকঝকে পরিষ্কার রাখে কীভাবে সেটা যতটুকু আশ্চর্যের, তার চেয়েও অবাক হচ্ছি ক্যাম্পাসের
এতগুলি বিল্ডিং-এর সবগুলি ভেতরে-বাইরে এত ঝকঝকে কীভাবে আছে! কোথাও কোন দেয়ালে কোন স্লোগান
লেখা নেই। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ছাত্ররাজনীতি নেই? কোন পার্টি নেই? কোনো মিছিল-মিটিং-সমাবেশ
কিছুই দেখছি না ক্যাম্পাসে। অথচ বিশাল তিনতলা ভবন আছে – স্টুডেন্ট ইউনিয়ন হাউজ।
স্টুডেন্ট ইউনিয়নের
সর্বশেষ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে সেটা চাকসু – চিটাগং ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট
ইউনিয়ন। এখানেও আছে উমসু – ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। ইউনিয়ন হাউজের
দেয়ালে দেখলাম জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে – বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য। ইউনিয়নের নির্বাচন
হয় প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে। তার মানে সামনের মাসে নির্বাচন – অথচ কোন উত্তেজনা নেই কোথাও।
ছাত্র হিসেবে আমারো তো ভোটাধিকার আছে এখানে। কিন্তু এখনো তো কেউ ভোট চাইতে এলো না।
এখানে ভোট চায় কীভাবে? কীভাবে চলে নির্বাচনী প্রচারণা? মাথায় কত প্রশ্ন আসে দিচ্ছে
না কেউ জবাব তার – অবস্থা আমার।
লাঞ্চটাইম
– ইউনিয়ন হাউজ গমগম করছে। নিচের তলায় বিশাল এক ফুডকোর্ট – অনেকগুলি খাবারের দোকান।
চায়নিজ, মালয়শিয়ান, মেক্সিকান, ইন্ডিয়ান – কতো রকমের কতো দেশের যে খাবার। সবগুলি আউটলেটের
সামনে লম্বা লাইন। বেশিরভাগই স্কুলের ছেলে-মেয়েরা, সাথে তাদের মা-বাবা।
বিশ্ববিদ্যালয়
কীভাবে চলে তা দেখার সবচেয়ে বড় সুযোগ এই ডিসকভারি ডে-তে। নামটা যথার্থ হয়েছে। আজকেই
আবিষ্কার করা যাবে কোথায় কী হচ্ছে এখানে।
স্কুল পাস করার
পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দরখাস্তের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় সরকারিভাবে। ভিক্টোরিয়ান
টারিশিয়ারি এডমিশান সেন্টার বা ভিট্যাক রাজ্যের সবগুলি স্কুলে ভর্তির দরখাস্তের ফরম
পূরণ করার জন্য যা যা লাগে সব ব্যবস্থা করে দেয়। ভিসিই বা এইচএসসি পরীক্ষা হবার আগেই
পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অপশন দিয়ে ভর্তির দরখাস্ত পাঠিয়ে দিতে হয়। একজন শিক্ষার্থী
পছন্দের ক্রমানুসারে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের চয়েজ দিতে পারে। এখন কে কী পড়তে চায়,
কেন পড়তে চায়, কোথায় পড়বে, কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন্ বিভাগে কী কী সুবিধা এসব না
জেনে অপশন দেবে কীভাবে? সেজন্যই এসব জানানোর ব্যবস্থা হলো ডিসকভারি ডে।
রাজ্যের সবগুলি
বিশ্ববিদ্যালয় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে রবিবারগুলিতে এই আয়োজন করে। এমনভাবে তারিখ ঠিক
করা হয় যেন একদিনে একাধিক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসকভারি ডে না পড়ে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের
চোখে দেখে যায় তাদের ভালো লাগা, ভালো না লাগা। কোন্ সাবজেক্টে ভর্তি হতে গেলে কেমন
রেজাল্ট করতে হয়, কী কী সাবজেক্ট নিতে হয়। পাস করার পর কোথায় কোথায় চাকরির সুযোগ পেতে
পারে, কিংবা আরো উচ্চতর শিক্ষা নেবার কী কী সুযোগ আছে – সব তথ্য তারা সরাসরি একদিনেই
পেয়ে যায়।
পরীক্ষার আগে
ভর্তির দরখাস্ত পূরণ করার পর – পরীক্ষা শেষ হলে পছন্দের ক্রম পরিবর্তন করার একটি সুযোগ
দেয়া হয় – যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করে পছন্দের ক্রম
পরিবর্তন করতে পারে। এরপর এইচএসসির রেজাল্ট বের হলে সেই রেজাল্ট সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও
চলে যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দরখাস্ত এবং রেজাল্টের ভিত্তিতে অফার লেটার পাঠায় শিক্ষার্থীদের
কাছে। যারা ভালো তারা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার পায়। তখন তারা বেছে নেয় – কোথায়
ভর্তি হবে।
পুরো ব্যাপারটা
আমার জন্যও ভীষণ নতুন। আমিও ঘুরতে লাগলাম এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং-এ, এক ডিপার্টমেন্ট
থেকে অন্য ডিপার্টমেন্টে। মেডিসিন ফ্যাকাল্টিতে ভীড় সবচেয়ে বেশি। এমনিতেই মেলবোর্ন
ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং-এর দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার
এক নম্বর। এবছর ১৯৯৮ সালে সামগ্রিকভাবে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং
১৯। মেডিসিনে এই র্যাংক আরো সামনের দিকে। এখানে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন তাই অনেকের।
ভিসিইতে র্যাংক শতকরা নিরানব্বই এর উপরে না থাকলে মেডিসিনে ভর্তি হওয়া প্রায় অসম্ভব।
মেডিসিনে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এনাটমি মিউজিয়ামে শরীরের অলিগলি দেখে
এলাম। ফিজিওলজিতে দেখলাম ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে শরীরের এক একটি কোষের গঠন
এবং তাতে অনুজীব কীভাবে আক্রমণ করে। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে গেলাম। এদেশে মাঝারি
মানের রেজাল্ট নিয়েও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হওয়া যায় জেনে আমার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা।
কমার্সে ভর্তি হতে যত নম্বর লাগে, তার চেয়েও কম নম্বর লাগে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হতে।
উইলসন হলে প্রফেশনাল
ইনফরমেশান দেয়ার জন্য অনেকগুলি সরকারি এবং বহুজাতিক নিয়োগ সংস্থার কর্মকর্তারা এসেছেন
দরকারি তথ্য দিতে। আগামী বছরগুলিতে দেশের চাকরির বাজার কেমন হবে, কোম্পানিগুলি কোন্
কোন্ পোস্টে লোক নেবে, নিয়োগের জন্য কী কী বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে ইত্যাদি বলে দিচ্ছেন
যারা ভবিষ্যতে পাস করে বের হবে তাদেরকে। এবছর যারা ক্লাস ইলেভেনে আছে, দুবছর পর তারা
ইউনিভার্সিটিতে আসবে। পাস করে বের হতে আরো তিন-চার বছর। অর্থাৎ আগামী পাঁচ-ছয় বছর পর
কোন্ কোন্ পেশার চাহিদা বাড়বে, কতজন লোক দরকার হবে, কী কী স্কিল দরকার হবে – সব তথ্য
আগেভাগে জানা থাকলে পাস করার পর কাউকেই তো বেকার থাকতে হবে না। শুনলাম, যে সাবজেক্টের
কোন চাহিদা থাকে না, ইউনিভার্সিটিগুলি নাকি সেই সব সাবজেক্ট বন্ধ করে দেয়।
No comments:
Post a Comment