Sunday, 4 September 2022

রোজালিন ইয়ালো: নোবেলজয়ী চিকিৎসা-পদার্থবিজ্ঞানী

 




আমাদের শরীরের মতো এত জটিল স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আর একটিও নেই। শরীরের ছোটখাট সমস্যাগুলির সমাধান শরীর নিজে নিজেই করে ফেলে। অনেক সময় আমরা জানতেও পারি না শরীরের স্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদানের কী পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু যখনই শরীরের কোন সমস্যা শরীর নিজে নিজে ঠিক করে ফেলতে পারে না, তখন বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে শরীর সংকেত দিতে থাকে যে কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তখন দরকার হয় চিকিৎসার। বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়। রোগনির্ণয়ের জন্য বর্তমানে যেসব উন্নত বৈজ্ঞানিক রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার একটি হলো রেডিওইমিউনোএসে (radioimmunoassay) বা আর-আই-এ (RIA)। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের শরীরের রক্ত এবং অন্যান্য তরল পদার্থের মধ্য অন্য কোন পদার্থ ঢুকে গেলে – তা যত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিমাণেই হোক না কেন – তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে, খাবারের সাথে, এবং আরো বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে অনবরত ঢুকছে রোগজীবাণু, ভাইরাসছাড়াও আরো অসংখ্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। রক্ত এবং অন্যান্য তরলের সাথে মিশে গিয়ে এগুলি সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। আর-আই-এ পদ্ধতিতে এই উপাদানগুলির উপস্থিতি এবং পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। আর-আই-এ পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি নতুন দিগন্ত খুলে যায়। সম্ভব হয় শরীরের বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা মেপে দেখার। কোন ওষুধ রোগীর শরীরে কাজ করছে কী না, ভিটামিন শরীরের উপাদানের সাথে মিশতে পারছে কি না, কিংবা ভাইরাস আক্রান্ত হলে তা কোন্‌ মাত্রায় কতটুকু ক্ষতি করছে এবং তার প্রতিষেধক দিলে তা কার্যকর হচ্ছে কি না সবকিছুই মেপে দেখা সম্ভব হয়েছে এই আর-আই-এ উদ্ভাবনের ফলে। ওষুধের সঠিক মাত্রা নির্ধারণে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছে এই পদ্ধতি। ১৯৫৯ সালে এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন পদার্থবিজ্ঞানী রোজালিন ইয়ালো এবং ডাক্তার সোলোমন বারসন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য রোজালিন ইয়ালো পেয়েছেন ১৯৭৭ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার। অথচ কর্মজীবনের শুরুতে হতদরিদ্র মা-বাবার সন্তান রোজালিন একটি শিক্ষকতার চাকরি চেয়েও পাননি। কাজ শুরু করেছিলেন স্টেনোগ্রাফার হিসেবে। একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে রোজালিন হয়ে উঠেছেন বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা-পদার্থবিজ্ঞানী। 

ইহুদি মা-বাবার সন্তান রোজালিনের জন্ম নিউইয়র্ক শহরে ১৯২১ সালের ১৯ জুলাই। তাঁর মা-বাবা পূর্ব ইওরোপ থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন অভিবাসী হয়ে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছিলেন রোজালিনের মা-বাবা। বড় কোন স্বপ্ন দেখার সাহসও তাঁরা দিতে পারেননি তাঁদের সন্তানদের। নিজেরা বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারলে জীবনসংগ্রামে তারা হেরে যাবে না। 

আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশোনা করার অনেক স্কুল আছে। নিউইয়র্কের ব্রংকস-এর সাধারণ সরকারি স্কুলেই পড়াশোনা রোজালিনের। হাইস্কুলে রসায়নের প্রতি আকৃষ্ট হন রোজালিন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার জন্যও তাঁকে খুঁজতে হয়েছিল বিনাবেতনে পড়াশোনা কোথায় করা যায়। নিউইয়র্কের হান্টার কলেজ ছিল নিউইয়র্ক সিটির মিউনিসিপালিটি পরিচালিত বিনাবেতনে পড়ার কলেজ, যেখানে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়া হতো। হান্টার কলেজে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা করতে এসে রোজালিনের ভালো লেগে যায় পদার্থবিজ্ঞান। মেরি কুরির সন্তান ইভ কুরির লেখা মেরি কুরির জীবনী তখন প্রকাশিত হয়েছে। সেই বই পড়ে রোজালিন নিজেকে মেরি কুরির আদর্শে তৈরি করার অনুপ্রেরণা পেলেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের রমরমা তখন শুরু হয়ে গেছে। সেই সময় নিউক্লিয়ার ফিশানের জনক এনরিকো ফার্মির লেকচার শোনার সুযোগ হলো রোজালিনের। পদার্থবিজ্ঞান,  বিশেষ করে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি হলো রোজালিনের। মা-বাবা যতই বলুন যে একটা শিক্ষকতার চাকরি পেলেই চলবে, রোজালিন মনস্থির মনস্থির করে ফেলেছেন সুযোগ পেলে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাই করবেন জীবনে। ১৯৪১ সালে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান মেজর নিয়ে স্নাতক পাশ করলেন হান্টার কলেজ থেকে। 

কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা করতে গেলে তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাগবে, পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করতে হবে। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য বৃত্তি লাগবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলেন রোজালিন। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সরাসরি প্রত্যাখ্যানপত্র পেলেন তিনি। স্নাতকে এত ভালো রেজাল্ট করার পরও কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে না কেন জানতে গিয়ে উত্তর পেলেন – একে তো মেয়ে, তার উপর ইহুদি। শুধুমাত্র একারণেই তাঁর দরখাস্ত বাতিল করে দেয়া হচ্ছিল। 

তাঁর মা-বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে যদি কোনোভাবে লেখাপড়া শিখে কোনো একটা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পায় তাহলে কোনোরকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকতার জন্য দরখাস্ত করেও কোন ফল হলো না। অনেকে পরামর্শ দিলেন স্টেনোগ্রাফি শিখে নিলে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কেরানির চাকরি পাওয়া যেতে পারে। রোজালিন বাধ্য হয়ে তাই শুরু করলেন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর রুডলফ শোয়েনহেইমারের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও সান্তনা এই যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের অফিসে বসে কাজ করছেন। 

অবশেষে একটা সুযোগ এলো রোজালিনের জন্য। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, আমেরিকা যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। আমেরিকার ছেলেদের অনেকেই যুদ্ধে যোগ দেয়ার কারণে অনেক সিট খালি থেকে যাচ্ছিল। তখন শূন্যতা পূরণ করার জন্য মেয়েদেরকে সুযোগ দেয়া হয়। সেই সুযোগে ইলিনয় ইউনিভার্সিটির আরবানা-শ্যামপেইন ক্যাম্পাসে গ্রাজুয়েট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান রোজালিন। ১৯১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে রোজালিনের আগে আর কোন মেয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হয়নি সেখানে। রোজালিন ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম মেয়ে শিক্ষার্থী। একটা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপও পেয়েছিলেন তিনি। স্নাতক পর্যায়ের ফিজিক্সের ক্লাস নিতেন তিনি। তখন ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে। ফ্যাকাল্টির চারশ’র অধিক অধ্যাপক ও শিক্ষা-সহকারীর মধ্যে রোজালিনই ছিলেন একমাত্র মেয়ে। 

এখানে তাঁর সাথে পরিচয় হয় আরন ইয়ালোর সাথে। আরনও ছিলেন ইহুদি পরিবারের সন্তান। আরনের বাবা ছিলেন নিউইয়র্কের ইহুদি ধর্মযাজক। ১৯৪৩ সালে আরন ও রোজালিনের বিয়ে হয়। পরের চার বছরের মধ্যে তাঁদের দুই সন্তান – বেনজামিন ও ইলানার জন্ম হয়। অন্যান্য সব কাজের মতোই ঘরসংসারও খুব মনযোগ দিয়ে ভালোবেসে করতেন রোজালিন। 

১৯৪৫ সালে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি সম্পন্ন করেন রোজালিন। দুর্দান্ত ভালো রেজাল্ট করার পরও তিনি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কোথাও কোন চাকরি পেলেন না। অনেক দরখাস্ত ব্যর্থ হবার পর প্রথম কাজ শুরু করলেন নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল টেলিকমিউনিকেশান কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। তারপর হান্টার কলেজে যোগ দেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে। এরপর ব্রোংক্‌স এর ভ্যাটেরান্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ভিএ) হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের গবেষক হিসেবে ১৯৪৭ সালে। এখানেই তিনি গবেষণা শুরু করলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে রেডিও-আইসোটোপের ব্যবহার সম্পর্কে। 

চিকিৎসাবিজ্ঞানে রেডিও-আইসোটোপের ব্যবহার তখন মাত্র শুরু হয়েছে। রোজালিন দেখতে পাচ্ছেন নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিপুল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত। কিন্তু তাঁর একজন গবেষণা-সহযোগী দরকার যিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন। এই কাজের জন্য তিনি বেছে নেন ভিএ হাসপাতালে সদ্য যোগ দেয়া ইন্টার্নি ডাক্তার সোলোমন বারসনকে। ডাক্তার সোলোমন বারসনের সাথে রোজালিনের অচ্ছেদ্য গবেষণা-বন্ধন তৈরি হয়। পরবর্তী বিশ বছরেরও বেশি সময় তাঁরা একসাথে গবেষণা করেছেন। ১৯৭২ সালে ডাক্তার সোলোমন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। 

১৯৫০ এর দশকের শুরুতে রোজালিন ও সোলোমন রক্তে আয়োডিন ও এলবুমিনের বিপাক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন। রোগীর শরীরে রেডিও-আইসোটোপ সংযুক্ত রাসায়নিক (রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল) ইনজেকশানের মাধ্যমে প্রয়োগ করার পর রোগীর রক্তের তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সময়ের সাথে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা কীভাবে ক্রমশ কমে আসে। অতিদ্রুত কমে এলে বুঝতে হবে বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হচ্ছে, আর বিকিরণের হার যদি কম হয়, বুঝতে হবে বিপাক ধীরগতিতে হচ্ছে। 

ডায়াবেটিসের মূল কারণ যে ইনসুলিনের দ্রুত বিপাক – সেই ধারণা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মনে এলেও তখনো তা প্রমাণ করার উপায় জানা ছিল না। রোজালিন ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। তিনি ডায়াবেটিক রোগীর শরীরে রেডিও-আইসোটোপের বিকিরণের হার পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ইনসুলিনের বিপাকের হার অনেক বেশি। অর্থাৎ ডায়াবেটিক রোগীর শরীর থেকে ইনসুলিন দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনি এবার রোগীদের দুভাগে ভাগ করলেন। একভাগকে ইনসুলিন ইনজেকশান দেয়া হলো। অন্যভাগকে ইনসুলিন দেয়া হলো না। দেখা গেলো যাদেরকে ইতোমধ্যে ইনসুলিন দেয়া হয়েছে তাদের রক্তের ইনসুলিন বিপাকের হার, যাদেরকে আগে ইনসুলিন দেয়া হয়নি তাদের রক্তের ইনসুলিন বিপাকের হারের চেয়ে অনেক কম। তার মানে দাঁড়ালো শরীরে ইনসুলিন দেয়া হলে সেই ইনসুলিন রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা ইনসুলিনের বিপাক-প্রক্রিয়ার হার কমিয়ে দিয়ে শরীর থেকে ইনসুলিন ক্ষয়ের অস্বাভাবিক মাত্রাকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই আবিষ্কার একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। কিন্তু রোজালিন ও সোলোমন যখন তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দ্য জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন-এ প্রকাশের জন্য পাঠালেন, জার্নালের রিভিউয়াররা তা সরাসরি বাতিল করে দেন। এই প্রত্যাখ্যানে একটুও দমে গেলেন না রোজালিন। বরং আরো উৎসাহ নিয়ে আরো অনেক বিস্তারিত গবেষণা তিনি করলেন। সেখান থেকেই আবিষ্কার করলেন আর-আই-এ পদ্ধতি। সেই প্রত্যাখ্যানের চিঠি তিনি যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন সারাজীবন। বিশ বছর পর ১৯৭৭ সালে তিনি যখন তাঁর এই গবেষণার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেলেন, তাঁর নোবেল বক্তৃতায় তিনি সেই প্রত্যাখ্যানপত্র দেখিয়েছিলেন। 

রোজালিন শিক্ষাজীবনে রসায়ন পড়েছেন, নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি করেছেন, কিন্তু  জীববিজ্ঞানের কোন কোর্স করেননি। অথচ তিনি নিজে নিজে পড়াশোনা করে এত বেশি ফিজিওলজি এবং মেডিসিনের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে তাঁর সমসাময়িককালের কোন ডাক্তারেরও এত জ্ঞান ছিল না। 

নোবেলজয়ী রোজালিনের গবেষণাগারটি ছিল অত্যন্ত সাধারণ। শুরু করেছিলেন হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝাড়ু-বালতি ইত্যাদি পরিচ্ছন্নতা কাজের সরঞ্জাম রাখার একটা ছোট্ট ঘরকে গবেষণাগারে রূপান্তরের মাধ্যমে। পরবর্তীতে তার কিছুটা উন্নতি হলেও খুব দরকারি যন্ত্রপাতি ছাড়া আর কোন বাহুল্য সেখানে ছিল না। সেরকম রোজালিনও ছিলেন সারাজীবন সাদামাটা। নোবেল পুরষ্কার পাবার আগেও যা ছিলেন, পরেও তাঁর সহজ-সরল সাদামাটা জীবনযাপনের কোন পরিবর্তন হয়নি। সপ্তাহে সবাই যেখানে চল্লিশ ঘন্টার বেশি কাজ করেন না, রোজালিন সপ্তাহে আশি ঘন্টা কাজ করতেন। তাঁর ল্যাবের কাছেই ছোট্ট একটা বাড়িতে স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি থাকতেন। এত গবেষণার ফাঁকেও তিনি বাড়ির কাজ করতেন। প্রথম সন্তানের বয়স এক মাস হবার আগেই তিনি সন্তান কোলে নিয়ে ল্যাবের কাজে যোগ দিয়েছেন। দ্বিতীয় সন্তানের বেলাতেও তাই করেছেন। দুপুরে ল্যাব থেকে বের হয়ে বাসায় গিয়ে শিশু সন্তানদের জন্য খাবার তৈরি করে খাইয়ে আবার ল্যাবে এসেছেন। তিনি নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস করতেন। তিনি বলতেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে শুধুমাত্র একটাই পার্থক্য আছে – সেটা হলো নারী সন্তান জন্ম দিতে পারে, পুরুষ পারে না। এছাড়া অধিকারের ক্ষেত্রে আর কোন পার্থক্য থাকা উচিত নয়। 

১৯৯১ সালে সত্তর বছর বয়সে হাসপাতালের গবেষকের চাকরি থেকে অবসর নিতে হয় তাঁকে। তারপর বেঁচে ছিলেন আরো বিশ বছর। তখনো তাঁর পড়াশোনা, গবেষণা থেমে থাকেনি। ২০১১ সালের ৩০ মে তাঁর জীবনাবসান হয়। 


তথ্যসূত্র – সিমন গ্লিক, ন্যাচার, সংখ্যা ৪৭৪, ২০১১; সিয়াং ইয়ং ট্যান, সিঙ্গাপুর মেডিক্যাল জার্নাল, সংখ্যা ৬০, ২০১৯; নোবেল পুরষ্কার ওয়েবসাইট। 

___________
বিজ্ঞানচিন্তা জুলাই ২০২২ সংখ্যায় প্রকাশিত






3 comments:

  1. অসাধারণ। খুব ভাল লেগেছে পড়ে। অনেক অনেক অনুপ্রেরণা পাচ্ছি, পদার্থ বিজ্ঞানে পড়ার বিষয়ে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ। অগ্রজ বিজ্ঞানীরা কী করেছেন জানতে পারলে অনেক অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।

      Delete
  2. আমার এক বইয়ে কি আপনার লেখার কিছু অংশ যোগ করতে পারবো

    ReplyDelete

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts