Tuesday, 16 May 2023

ন্যান্সি গ্রেস রোমান – মাদার অব হাবল

 




জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পর নাসার পরবর্তী বৃহৎ এবং উন্নততর স্পেস টেলিস্কোপ যা ২০২৭ সালে মহাকাশে প্রেরণ করা হবে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির খোঁজে – তার নাম রাখা হয়েছে ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ। ‘মাদার অব হাবল’ বা হাবলের মা হিসেবে পরিচিত ন্যান্সি রোমান ছিলেন নাসার প্রথম উচ্চপদস্থ নারী কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন নাসার অ্যাস্ট্রোনমি প্রোগ্রামের প্রথম পরিচালক। তাঁর নেতৃ্ত্বেই হাবল টেলিস্কোপ কল্পনা থেকে বাস্তবে পরিণত হয়। 


হাবল টেলিস্কোপের প্রাথমিক মডেল হাতে ন্যান্সি রোমান


ন্যান্সি রোমানের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৬মে আমেরিকার টেনেসি রাজ্যের ন্যাশভিলে। তাঁর বাবা ইরভিন রোমান ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী, এবং মা জর্জিয়া রোমান ছিলেন সঙ্গীত শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি ন্যান্সির আকর্ষণ জন্মানোর পেছনে তাঁর বাবার ভূমিকা স্পষ্ট। ন্যান্সি এগারো বছর বয়সেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী হবার লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন। এগারো বছর বয়সেই সহপাঠীদের নিয়ে অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাব গঠন করে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত বিজ্ঞানসভা করতো ন্যান্সি। ১৯৪৬ সালে পেনসিল্ভেনিয়ার সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে অ্যাস্ট্রোনমিতে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ন্যান্সি। এরপর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরেট ফেলো হিসেবে পরবর্তী ছয় বছর কাজ করেন উইসকনসিনের ইয়ার্কিজ অবজারভেটরিতে। এই সময় তিনি বাইনারি স্টার – এজি ড্রাকোনিস পর্যবেক্ষণ করেন এবং লক্ষ্য করেন যে এই নক্ষত্রের আগের পর্যবেক্ষণে যে বর্ণালী পাওয়া গিয়েছিল – সেই বর্ণালীর ধরন বদলে গেছে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে বাইনারি নক্ষত্রের ধর্মাবলী নিরূপণ অনেক নির্ভুল হয়েছে। 

১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত তিনি ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করার সময় রেডিও- অ্যাস্ট্রোনমি সংক্রান্ত কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি আমেরিকান মহাকাশসংস্থা নাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৯ সালের শুরুতে নাসায় যোগ দেন ন্যান্সি রোমান।  অ্যাস্ট্রোনমি প্রোগ্রামের প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে তিনি হলেন নাসার প্রথম নারী এক্সিকিউটিভ। পরবর্তীতে তিনি নাসার সোলার ফিজিক্স প্রোগ্রামের চিফ এবং রিলেটিভিটি প্রোগ্রামেরও চিফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। 


নাসায় চিফ ন্যান্সি রোমান


ইউএস কংগ্রেস থেকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের অনুমোদন আদায় করার কৃতিত্ব ন্যান্সি রোমানের। তাঁর হাত দিয়েই হাবল টেলিস্কোপ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সেজন্যই তাঁকে মাদার অব হাবল বিশেষণে সম্মানিত করা হয়। 

মহাকাশের কোন আবিষ্কারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেবেন – এই প্রশ্নের উত্তরে ন্যান্সি বলেছিলেন – ডার্ক এনার্জি। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের পর নাসার পরবর্তী বৃহৎ টেলিস্কোপের নাম দেয়া হয়েছে ন্যান্সি রোমান স্পেস টেলিস্কোপ যা মহাবিশ্বের ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির খোঁজ করবে। 


ন্যান্সি রোমান (২০১৫)


২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ন্যান্সি রোমান। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts