Thursday, 15 June 2023

হ্যাপি বার্থডে পিটার হিগ্‌স

 



“গুড আফটারনুন প্রফেসর”

“গুড আফটারনুন” 

এডিনবরার ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় পরিচিত অপরিচিত অনেকেই হাই হ্যালো করে তাঁকে। 

অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। ঘ্যাঁচ করে একটি গাড়ি থামলো ফুটপাত ঘেঁষে। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে এলেন এক মধ্যবয়সী মহিলা। 

প্রফেসরের পথ আগলে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “কনগ্র্যাচুলেশান্‌স প্রফেসর হিগ্‌স”। 

চুরাশি বছর বয়সেও প্রফেসর হিগ্‌সের স্মৃতিশক্তি অটুট। তিনি চিনতে পারলেন মহিলাকে। একসময় এই মহিলা তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন। প্রফেসর হিগ্‌স অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হোয়াট্‌স দ্য নিউজ?”

“আপনি জানেন না? আপনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। আমার মেয়ে নিউজ শুনে  আজ সকালেই আমাকে বলেছে। আশ্চর্য! আপনি জানেন না! নোবেল একাডেমি আপনাকে ফোন করেনি?”


প্রফেসর হিগ্‌স কিছুটা বিব্রতভাবে বললেন, “আমার তো সেলফোন নেই। বাসার ফোন হয়তো খেয়াল করিনি। থ্যাংক ইউ, এনিওয়ে।“

মহিলাকে বিদায় দিয়ে শান্তভাবেই হেঁটে বাসায় এলেন প্রফেসর পিটার হিগ্‌স। টিভির সংবাদ থেকে নিশ্চিন্ত হলেন যে তিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। 

৪৯ বছর আগে ১৯৬৪ সালে তিনি পেপার লিখেছিলেন নতুন ধরনের মৌলিক ভারী বোসন কণা থাকার সম্ভাবনার ব্যাপারে। প্রায় একই সময়ে ফ্রান্সের ফ্রাঁসোয়া ইংলার্ট এবং রবার্ট ব্রাউটও একই সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন আলাদা পেপারে। তারপর বছরের পর বছর কেটে গেছে সেই বোসন কণার সন্ধানে। তত্ত্বীয়ভাবে পদার্থবিজ্ঞানীরা সবাই একমত হয়ে এই বোসন কণার নাম দিয়েছেন হিগ্‌স বোসন। এতে কিছুটা বিব্রত হলেও মেনে নিয়েছেন প্রফেসর পিটার হিগ্‌স। মনে মনে হয়তো খুশিও হয়েছেন। কিন্তু ১৯৯৩ সালে নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী লিওন লেডারম্যান যখন ‘দ্য গড পার্টিক্যাল’ নামে বই লিখলেন – হিগ্‌স বোসনের আরেকটি নাম হয়ে গেল গড পার্টিক্যাল। এই নামে প্রচন্ড আপত্তি ছিল ঈশ্বরে অবিশ্বাসী প্রফেসর হিগ্‌স-এর। প্রফেসর লেডারম্যানও এই কণার নাম গড পার্টিক্যাল রাখতে চাননি – বলেছিলেন গডড্যাম পার্টিক্যাল। কিন্তু ঈশ্বরের নামে বাণিজ্য সবচেয়ে লাভজনক বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের লোভেই লেডারম্যানের বইয়ের নাম প্রকাশক ‘গড পার্টিক্যাল’ রেখেছিলেন – যেখানে ব্যবসাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। বইটি ঈশ্বরের নামে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। গড পার্টিক্যাল সম্পর্কে অনেকেই তেমন কিছু না জেনেই এই কণাকে ঈশ্বরের প্রদত্ত কণা বলে প্রচার করতে শুরু করলো। এই ব্যাপারটিতে ভীষণ বিরক্ত হয়েছেন প্রফেসর হিগ্‌স। বিরক্তির মাত্রা চরমে উঠেছে যখন কণাটি পরীক্ষাগারে শনাক্ত হবার পর সব ধর্মের লোকজনই তাদের ধর্মগ্রন্থে এই কণার উল্লেখ আছে বলে দাবি করে তাঁর কাছে শত শত চিঠি পাঠাতে শুরু করলো।

হিগ্‌স বোসন খুঁজে পেতে তিন যুগ সময় লেগেছে বিজ্ঞানীদের। ২০১২ সালের ৪ জুলাই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের কণাবিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিলেন যে হিগ্‌স বোসন পাওয়া গেছে। প্রফেসর হিগ্‌স সেই ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর চোখ ভিজে উঠেছিল সেদিন। 

তারপর আরো এক বছর কেটে গেছে। হিগ্‌স বোসন আবিষ্কারের তত্ত্বের জন্য প্রফেসর পিটার হিগ্‌স যে নোবেল পুরষ্কার পাবেন তা অনেকেই অনুমান করেছিলেন। কেবল পিটার হিগ্‌স নিজেই খেয়াল রাখেননি কখন ২০১৩ সালের নোবেল পুরষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। 

১৯২৯ সালের ২৯মে নিউক্যাসেলে জন্ম হয়েছিল প্রফেসর পিটার হিগ্‌স এর। আজ তাঁর ৯৪তম জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন প্রফেসর হিগ্‌স। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts