Saturday, 7 October 2023

নোবেল পুরষ্কার ২০২৩ – পদার্থবিজ্ঞান

 



২০২৩ সালের পদার্থবিজ্ঞান নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পিয়ের আগস্তিনি, ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট অব কোয়ান্টাম অপটিক্‌স এর ডিরেক্টর প্রফেসর ফেরেঙ্ক ক্রাউজ এবং সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অ্যান লুইলিয়ের। ইলেকট্রন ডায়নামিক্স গবেষণায় খুবই ক্ষুদ্র (অটোসেকেন্ড ১০^-১৮ সেকেন্ড) সময়ের জন্য আলোর স্পন্দন (পাল্‌স)  তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক্স, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে এই অতিক্ষুদ্র আলোর স্পন্দনের ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে।


অ্যান লুইলিয়ার



অ্যান লুইলিয়ার (Anne L’Huillier)-এর জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৬ আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিসে। প্যারিসের ইকোল নরমাল সুপেরিয়র থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএ পাস করার পর পিয়ের অ্যান্ড মেরি কুরি ইউনিভার্সিটি থেকে গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে ডাবল মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৮৬ সালে। তাঁর থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘মাল্টিফোটন অ্যান্ড মাল্টিইলেকট্রন আয়নাইজেশান’। উচ্চ তীব্রতার লেজার রশ্মি প্রয়োগে একাধিক ফোটন এবং ইলেকট্রনের আয়নাইজেশান সংক্রান্ত গবেষণা করেন তিনি তাঁর পিএইচডির সময় – যা পরবর্তীতে আরো গভীরে গিয়ে তাঁর নোবেল পুরষ্কারের পথ তৈরি করেছিল।
পিএইচডি করার পর তিনি সুইডেনের গুথেনবার্গের কালমার্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে পোস্টডক ফেলো হিসেবে যোগ দেন, এবং এর কিছুদিন পর আমেরিকার লস এঞ্জেলেস-এ ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান। তবে বেশিদিন ছিলেন না সেখানে। ইতোমধ্যে তিনি ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের অধীনে যে নয়টি গবেষণাকেন্দ্র আছে – তাদের অন্যতম কেন্দ্র স্যাকলে সেন্টারে গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে তিনি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে টাইটানিয়াম-স্যাফায়ার সলিড স্টেট লেজার সিস্টেমে কাজ করেন। ওটা ছিল ইওরোপের প্রথম ফেমটোসেকেন্ড পাল্‌স উৎপাদনক্ষম লেজার। ফেমটোসেকেন্ড হলো ১০-১৫ সেকেন্ড, অর্থাৎ এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের একভাগ সময়কে আরো দশ লক্ষ ভাগ করলে প্রতি ভাগ সময়ের সমান। ফেমটোসেকেন্ড পাল্‌স হলো ফেমটোসেকেন্ড স্থায়ী আলোর স্পন্দন। লেজারের সাহায্যে এরকম স্পন্দন তৈরি করা শুরু হয়েছিল ১৯৯০র দশকে। ১৯৯৪ সালে অ্যান পাকাপাকিভাবে প্যারিস থেকে সুইডেনে চলে যান লুন্ড ইউনিভার্সিটির লেকচারার হিসেবে। ১৯৯৭ সালেই তিনি লুন্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ২০০৪ সালে তিনি সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি নোবেল কমিটি ফর ফিজিক্সের সদস্য ছিলেন। সেই আট বছর তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়ার প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন।


ফেরেঙ্ক ক্রাউজ



ফেরেঙ্ক ক্রাউজের জন্ম ১৯৬২ সালের ১৭ মে হাঙ্গেরিতে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি হাঙ্গেরির ইউটভোস লোরান্ড ইউনিভার্সিটিতে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি এবং টেকনিক্যাল ইউইভার্সিটি অব বুদাপেস্ট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ভিয়েনায় চলে যান পিএইচডি করার জন্য। ১৯৯১ সালে তিনি ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক্সে পিএইচডি অর্জন করেন। এরপর মাত্র দুবছরের মধ্যেই তিনি ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ‘হ্যাবিলিটেশান’ সম্পন্ন করেন। এই হ্যাবিলিটেশান পদ্ধতিটি  ইওরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে গেলে অবশ্যই লাগে। শুধুমাত্র পিএইচডি সম্পন্ন করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত থেকে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসরুমে পড়ানো এবং গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন নিয়মিত বেতন-ভাতাও পাওয়া যায় না। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির কাছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। গবেষণার জন্য গবেষণা-বক্তৃতা দিতে হয় এবং প্রতিপক্ষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অনেক সময় পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লেগে যায় এসব সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে। অবশ্য এটা হয়ে গেলে তখন পূর্ণ অধ্যাপকের মর্যাদা পাওয়া যায়। ফেরেঙ্ক ক্রাউজ খুব কম সময়ের মধ্যে ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষক হয়ে গেলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ফুল প্রফেসর হয়ে গেলেন। ২০০০ সালে তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এডভান্সড লাইট সোর্সেস-এর ডিরেক্টর নিযুক্ত হলেন। এর তিন বছর পর ২০০৩ সালে তিনি জার্মানিতে ম্যাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট অব কোয়ান্টাম অপটিক্‌স এর ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি মিউনিখের লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটির এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্সেরও চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে আসছেন।


পিয়ের আগস্তিনি



১৯৪১ সালের ২৩ জুলাই ফ্রেন্স টিউনিসিয়ার টিউনিসে জন্ম পিয়ের আগস্তিনির। ১৯৫৯ সালে ফ্রান্সের প্রাইতানি ন্যাশনাল মিলিটারি স্কুল থেকে স্কুল পাস করে দক্ষিণ ফ্রান্সের এইক্স-মারসিলি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন। ১৯৬১ সালে ফিজিক্সে বিএড এবং ১৯৬২ সালে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি অপটিক্সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। আলট্রাভায়োলেট রশ্মির মাল্টিলেয়ার ডায়ইলেকট্রিক ফিল্টার নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেন আগস্তিনি। পিএইচডি করার পরের বছরই পিয়ের যোগ দেন ফ্রান্স এটমিক এনার্জি কমিশনের স্যাকলে সেন্টারে। সেখানেই তিনি গবেষণা করেছেন পরবর্তী চৌত্রিশ বছর। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত  অ্যান লুইলিয়ার এই গবেষণাকেন্দ্রে পিয়ের আগস্তিনির সহকর্মী ছিলেন। কিন্তু সেই সময় তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যৌথগবেষণা সেরকম হয়নি। তাঁরা যে একদিন নোবেল পুরষ্কার শেয়ার করবেন সেদিন কেউই ভাবতে পারেননি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পিয়ের আগস্তিনি নিউইয়র্কের ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করার পর ২০০৫ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন প্রফেসর হিসেবে। ২০১৮ সালে ৭৭ বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করার পর ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এবছর তিনি নোবেল পুরষ্কার পাবেন এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। অবশ্য এর আগে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার পেয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ফ্রেন্স একাডেমি অব সায়েন্সের গুস্তাভ রিবাউড প্রাইজ, ২০০৩ সালে গে-লুসাক-হামবোল্ট প্রাইজ, ২০০৭ সালে অপটিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার মেগার্স অ্যাওয়ার্ড ইন স্পেকট্রোস্কোপি।


No comments:

Post a Comment

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts