এখনো দুপুর হয়নি, অথচ মাথার উপর সূর্য গনগন করছে। প্রচন্ড রোদে ধাতব বৌদ্ধমূর্তি থেকে গরম বের হচ্ছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে এলাম গাছের নিচে। এখানে ছায়া আছে, কিন্তু বাতাসে আরামের পরশ নেই। গাছের ছায়ায় মানুষের ভীড়। ছুটির দিন, অনেকেই ফ্যামিলি আউটিং-এ বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে পার্কে। বত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তারা পাত্তাই দিচ্ছে না।
অসংখ্য বিদেশী ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। সার্কভুক্ত দেশগুলির নাগরিকদের আলাদা করে চেনা না গেলেও শ্বেতাঙ্গদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। শ্রীলংকান ট্যুরিজম গত এক বছরে তুঙ্গে উঠে গেছে। কোভিডের সময় প্রায় দুবছর পর্যটকশূন্য হয়ে তাদের অর্থনীতির অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন দ্রুত চাঙ্গা হয়ে গেছে সব। এই ২০২৩ সালেই শ্রীলংকার পর্যটন খাতে আয় বেড়ে গেছে শতকরা প্রায় আশি ভাগ। এক বছরে একশ আশি কোটি ডলার আয় হয়েছে তাদের শুধুমাত্র পর্যটন খাতে। তার প্রমাণ চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।
এদিকে ইট বিছানো পথে গাছের ছায়া পড়েছে। সামনেই রানি বিহারা মহাদেবীর মূর্তি। কী পাথর দিয়ে বানানো জানি না, কেমন যেন গোলাপী দেখাচ্ছে। তার সামনে দুজন স্বল্পবসনা অল্পবয়সী শ্বেতাঙ্গিনী দাঁড়িয়ে একজন স্থূলবপু মধ্যবয়সী শ্রীলংকান ট্যুর গাইডের ধারাবিবরণী শুনছে। আশেপাশে লোকের অভাব নেই। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অনেকেই। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আমিও শুনলাম গাইডের বর্ণনা। তার ইংরেজি উচ্চারণ চমৎকার। শ্রীলংকানদের ইংরেজির একটা আলাদা টান আছে যা ভারতীয়দের ইংরেজি উচ্চারণ থেকে আলাদা।
স্থানীয় শ্রীলংকানদের যে ব্যাপারটা ভালো লাগছে খুব – সেটা হলো পর্যটকদের সাথে তারা কোন ধরনের হ্যাংলামি করছে না। এই গরমে বিদেশী মেয়েদের পোশাক যতই শিথিল আর সংক্ষিপ্ত হোক না কেন, তাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে কেউ তাকিয়ে থাকছে না। পার্কে হকার আছে অনেক, কিন্তু কেউই কোন জিনিস কেনার জন্য বিরক্ত করছে না কাউকে।
বিহারা মহাদেবীর মূর্তি দেখে মনেই হয় না যে প্রাচীন শ্রীলংকার একজন রানি ছিলেন তিনি। অতিসাধারণ শাড়ি, খালি পা, বিষন্নমুখে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর চেহারার সাথে প্রচলিত বুদ্ধমূর্তির চেহারার ভীষণ মিল। যে বেদির উপর তিনি দাঁড়িয়ে আছেন – সেই বেদির পাথরে কয়েকটি ঢেউ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। হয়তো এভাবেই তিনি সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন এই দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব সৈকতে খ্রিস্টের জন্মের একশ ষাট বছর আগে। গাইড বলছিলেন - তাঁকে ঘিরে খুব চমকপ্রদ কাহিনি প্রচলিত আছে শ্রীলংকায়। কাহিনির শুরু কেলানিয়া রাজ্য থেকে।
কেলানিয়া রাজ্যের রাজা ছিলেন কেলানি টিসা। ধর্মপ্রাণ প্রজাবৎসল রাজা স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে সুখে রাজকার্য সম্পাদন করছিলেন। রাজার ছোটভাই উত্তিয়াও রাজপ্রাসাদে থাকতেন। উত্তিয়ার সাথে রানির একটি গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। একদিন রাজা জেনে যান এই সম্পর্কের কথা। রানি রাজাকে বলেন উত্তিয়াই জোর করেছেন। রাজা উত্তিয়াকে প্রাসাদ থেকে বের করে দেন। আদেশ দেন রাজ্য ছেড়ে চলে যাবার। উত্তিয়া তাই করেন। কিন্তু গোপনে রানির সাথে দেখা করার প্ল্যান করেন। কিন্তু প্রহরীদের চোখ এড়িয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করা অসম্ভব।
রাজাকে ধর্মতত্ত্ব শেখানোর জন্য রাজপ্রাসাদেই থাকতেন একজন জ্ঞানী ভিক্ষু। ভিক্ষুর সাথে থাকতেন আরো কয়েকজন শ্রমণ। প্রতিদিন সকালে তাঁরা রাজার ডাইনিং হলে ব্রেকফাস্ট করতেন। রাজা-রানি-রাজকন্যা নিজেদের হাতে তাঁদের পাতে খাবার তুলে দিতেন। প্রাসাদে থাকার সময় উত্তিয়াও এই ভিক্ষুর কাছে জ্ঞানলাভ করেছেন। ভিক্ষুর হাতের লেখা তিনি নকল করতে পারতেন। উত্তিয়া রাজার চোখ এড়িয়ে রানিকে একটি চিঠি দেয়ার পরিকল্পনা করলেন। তিনি ভিক্ষুর হাতের লেখা নকল করে রানিকে একটি চিঠি লিখলেন। নিজের একজন লোককে শ্রমণের পোশাক পরিয়ে তার হাতে চিঠিটি দিয়ে ভিক্ষুর দলে ভিড়িয়ে দিলেন সকালে রাজার ডাইনিং হলে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে যেন রানির হাতে চিঠিটি দিতে পারে।
পরিকল্পনা মতো শ্রমণবেশী লোকটি চিঠিটি রানির হাতে দিতে গিয়ে রাজার হাতে ধরা পড়ে। রাজা চিঠি খুলে দেখে ওটা ভিক্ষুর হাতের লেখা। বৌদ্ধসন্নাসী ভিক্ষু কি না রানিকে গোপনে দেখা করার জন্য লিখছে! এরপর যা হবার তাই হলো। ভিক্ষু যতই বলেন এই কাজ তার নয়, রাজা ততই রেগে যান। রাজরোষে পড়লে রক্ষা নেই কারো – সে এখনই হোক কিংবা খ্রিস্টের জন্মের শত বছর আগেই হোক। রাজা আদেশ দিলেন শ্রমণকে ফাঁসিতে চড়ানো হোক। যে রাজা এত বছর ধরে বৌদ্ধধর্মের অহিংসার শিক্ষা নিয়েছিলেন, তিনি আদেশ দিলেন তাঁর শিক্ষাগুরু ভিক্ষুকে একটা বড় পাত্রে ভরে গরম তেলে ভাজা হোক। তাই হলো। রাজপ্রাসাদের বাইরে অসংখ্য মানুষের সামনে বিশাল কড়াইতে তেল গরম করে সেই তেলে জীবন্ত ভিক্ষুকে ভাজা হলো। আর মানুষ – যুগে যুগে যা করে থাকেন – দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিংস্রতা উপভোগ করেন।
এরপর অলৌকিক ঘটনা ঘটলো। সমুদ্র ফুঁসে উঠলো। প্রচন্ড প্লাবনে ডুবে যেতে লাগলো নগর, রাজ্য, রাজপ্রাসাদ। সবাই বলতে লাগলো রাজা দুজন নিরপরাধকে শাস্তি দিয়েছেন – তাই সমুদ্র ক্ষেপে উঠেছে। এখন সমুদ্রকে শান্ত করতে হলে রাজাকে তার কোন আপনজনকে সমুদ্রে বিসর্জন দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথের দেবতার গ্রাসের অবস্থা। নিজে বাঁচলে বাপের নাম হিসেব করে রাজা তাঁর মেয়েকে একটি বড় ড্রামে ভরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন। সমুদ্র শান্ত হলো।
এদিকে সেই ড্রামটি ভাসতে ভাসতে শ্রীলংকার দক্ষিণ দিকে রাজা কাবান টিসার রাজ্যে গিয়ে ভিড়লো। পাত্র থেকে অপরূপা মেয়েকে বের হতে দেখে তাকে রাজার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। সব কথা শোনার পর সেই মেয়েটিকে রাজা বিয়ে করলেন। লংকা বিহারের কাছের সমুদ্রে পাওয়া গিয়েছিল বলে তাঁর নাম হলো রানি বিহারা মহাদেবী। এখন পার্কের এক কোণায় মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
সামনে ঘাসের লন পেরিয়ে পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় খোলা মঞ্চ। রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এখানে। তার ঠিক অন্যদিকে পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় কলম্বো পাবলিক লাইব্রেরি। তিন তলা পুরনো বিল্ডিং। শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত খোলা থাকলেও কার্ড ছাড়া ঢুকতে দেয় না লাইব্রেরিতে।
পাবলিক লাইব্রেরির সামনের রাস্তা গ্রিন পাথ পেরিয়ে শ্রীলংকা টেনিস এসোসিয়েশানের বিল্ডিং বামে রেখে একটু হাঁটলেই কলম্বো ন্যাশনাল মিউজিয়াম। বিশাল দোতলা ধবধবে সাদা বিল্ডিং দেখেই বোঝা যায় এটা ব্রিটিশ আমলের তৈরি বিল্ডিং। নিতান্ত বাধ্য না হলে গতানুগতিক মিউজিয়ামের ভেতরে ঢুকে পুরনো যুগের জিনিসপত্র দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না আমার। এখানেও ঢুকলাম না।
মিউজিয়ামের কাছেই ইউনিভার্সিটি অব ভিজুয়াল অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস। তার সামনে ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি। পাথরের দুটো সাদা সিংহ আর্ট গ্যালারির গেট পাহারা দিচ্ছে। ধরতে গেলে মানুষ-জন নেই এদিকে। আর্ট গ্যালারির কাছের রাস্তাটির নাম নিলুম পোকুনা ড্রাইভ। এখানেই তৈরি হয়েছে কলম্বোর সবচেয়ে আধুনিক থিয়েটার নিলুম পোকুনা থিয়েটার। নিলুম পোকুনা আক্ষরিক অনুবাদ হবে পদ্মপুকুর। পদ্মের পাপড়ির আকারে তৈরি হয়েছে এই থিয়েটারের বাইরের ধাতব কাঠামো। মহিন্দ রাজাপাকসে এই থিয়েটার তৈরি করান যখন তিনি শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০৫ থেকে ২০১৫)। শ্রীলংকার পারফর্মিং আর্ট অনেক সমৃদ্ধ। তাদের লোকসংস্কৃতির সাথে দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির কিছুটা মিল আছে বলে মনে হয়।
নিলুম পোকুনা ড্রাইভ মিশেছে যে বাঁকা চাঁদের মতো রাস্তায় – তার নাম অ্যালবার্ট ক্রিসেন্ট। বেশ চওড়া ব্যস্ত রাস্তা। এখান থেকে সোজা রাস্তা ইন্ডিপেন্ডেন্স এভেনিউ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। বাম পাশে বিশাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড। উঠতি ক্রিকেটাররা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলছে সেখানে। কোন দর্শক নেই। এদিকে দোকানপাট নেই বললেই চলে। মাঠ পেরোতেই ক্রিড়া কমপ্লেক্স। শ্রীলংকা বাংলাদেশের মতোই ক্রিকেটপ্রিয় জাতি। ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য অন্যান্য খেলার ফেডারেশানের অফিসগুলিও এখানে। ক্যারম ফেডারেশান দেখলাম। ক্যারম খেলার কি কোন টুর্নামেন্ট হয়?
ইন্ডিপেন্ডেন্স এভিনিউ আমাকে নিয়ে এলো ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে – শ্রীলংকার স্বাধীনতা চত্বর। স্বাধীনতার স্মারকস্তম্ভ সমৃদ্ধ একটি বড় ছাউনি আর তার সামনে ডি এস সেনানায়কের বিশাল মূর্তি। ডন স্টিফেন সেনানায়ক ছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রীলংকার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে শ্রীলংকার জাতির জনকও বলা হয়।
স্বাধীনতা চত্বরে দুজন নিরস্ত্র বৃদ্ধ প্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। বাইরে প্রখর রোদ হলেও এই চত্বরের মসৃণ পাথরের মেঝেতে আরামদায়ক ঠান্ডা। কিছুক্ষণ বসে জিরিয়ে নিলাম। এই চত্বরের নিচের তলায় অনেকটা ভূগর্ভে স্বাধীনতা জাদুঘর। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতে যেভাবে স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়েছে বছরের পর বছর ধরে, আন্দোলন হয়েছে কখনো সশস্ত্র, কখনো অহিংস – সেরকম কিছু সেই সময়ের সিলনে হয়েছে বলে শুনিনি কোনদিন। কেমন ছিল শ্রীলংকার স্বাধীনতার আন্দোলন জানার কৌতূহলে ঢুকলাম জাদুঘরের ভেতর।
জাদুঘরের প্রবেশপথ |
ছোট্ট একটা প্যাসেজ। দেয়ালের পাশে লাগানো একটি ছোট্ট টেবিল-চেয়ার। চেয়ারে কেউ নেই। টেবিলের সাথে একটি বড় পোস্টারে লেখা আছে স্বাধীনতা জাদুঘরে প্রবেশমূল্য। স্বদেশীদের জন্য দশ রুপি, আর বিদেশীদের জন্য পাঁচ শ রুপি। কিন্তু কাউকেই তো দেখছি না।
“হ্যালো, এনিবডি হিয়ার?”
কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। প্রচন্ড গরম। মিউজিয়ামের ভেতর – তা যদি হয় মাটির নিচে যেখানে বাতাস ঢোকে না – সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে তাপ নিয়ন্ত্রণের যে কোনো ব্যবস্থাই নেই তা স্পষ্ট। হয়তো সেকারণেই কেউ নেই। কিন্তু একজন গার্ড তো অন্তত থাকবে।
করিডোর ধরে আরেকটু ভেতরে ঢুকলাম। বাম পাশে একটি ছোট্ট রুমের জানালা দিয়ে দেখলাম টিকেট কাউন্টার লেখা কাউন্টারের টেবিলে পলিথিনের ব্যাগ থেকে ভাত খাচ্ছেন একজন লোক। লাঞ্চ টাইমে এসে বিরক্ত করছি ভেবে একটু সংকোচ হচ্ছে।
“জাদুঘর কি খোলা?”
তিনি মুখভর্তি ভাত নিয়ে গা-গোঁ করতে করতে কিছু একটা বললেন।
“একটু কি স্পষ্ট করে বলা যাবে যা বললেন?”
হাতের আঙুলে লেগে থাকা ঝোল্ভাত চাটতে চাটতে তিনি যা বললেন তার একটা শব্দও আমি বুঝতে পারলাম না।
“সরি, আই কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট ইউ সেইং”
লোকটি চেয়ার থেকে উঠে রুমের ভেতরের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। প্রচন্ড গরমে আমি দরদর করে ঘামছি। কাউন্টারের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম রুমের ভেতরে আরেকটি রুম আছে। একটু পর সেখান থেকে বের হয়ে এলো একটি কম বয়সী ছেলে।
“ফাইভ হান্ড্রেড রুপিজ” – গলার স্বর রুক্ষ।
আমি এক হাজার রুপির একটি নোট তার দিকে এগিয়ে দিলাম। সে নোটটি হাতে নিয়ে “ওকে, গো দিস ওয়ে” বলে করিডোরের অন্যদিকে হাত দেখালো। টিকেট আর পাঁচ শ টাকা ফেরত কোনটাই দেবার ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ বা ইচ্ছে নেই।
“আর পাঁচ শ রুপি ফেরত দেবেন না?”
মনে হলো নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বে পকেটে হাত দিয়ে এক তাড়া নোট বের করে একটা পাঁচ শ রুপির নোট ফেরত দিলো আমাকে।
“টিকেট?”
“লাগবে না।“
টাকা নিয়ে টিকেট না দেয়ার অর্থ হলো সেই টাকা সরকারের তহবিলে জমা না দিয়ে নিজের পকেটে ঢোকানো। এরকম ব্যাপারে তো সহায়তা করা যায় না।
“টিকেট ছাড়া আমি ঢুকবো না। আমি টিকেটের টাকা দিয়েছি, আমাকে টিকেট দিন।“
প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে কাউন্টারের জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে অন্যজনের উচ্ছিষ্ট পলিথিনের নিচ থেকে একটা কুঁচকে যাওয়া টিকেট আমার হাতে দিলো। টিকেটের গায়ে একটা থ্যাবড়ানো সিলমোহর দিয়ে লেখা ৫০০ রুপি। এগুলির কোন ধরনের অডিট কিংবা হিসেব হবার কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।
ভেতরে ঢুকে মনে হলো ইন্ডিয়ান রেস্তোরার গরম তন্দুরের ভেতর ঢুকলাম। টিমটিমে আলো জ্বলছে। কিন্তু বাম পাশের পুরো একটা হলঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেদিকে পাওয়ারকাট হয়ে আছে কতদিন হলো কে জানে। পাশের হলঘরে বেশ কিছু মানুষের আবক্ষ মূর্তি আর দেয়ালের খোপে খোপে কিছু সচিত্র তথ্যবিবরণী অত্যন্ত অনাকর্ষণীয় ভাবে রাখা। মাঝে মাঝে কয়েকটা স্ট্যান্ড ফ্যান আছে। কিন্তু একটাও চলছে না। একটির সুইচ অন করার সাথে সাথে এমন বিদঘুটে শব্দ শুরু করলো যে কয়েক সেকেন্ড পরেই তা বন্ধ করে দিতে হলো। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটা জাদুঘরের ব্যবস্থাপনা এত খারাপ কীভাবে হতে পারে!
জাদুঘরে ছবি তোলা অনুমোদিত |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের পক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজত্ব চালানো আর সম্ভব হচ্ছিলো না। ইন্ডিয়া স্বাধীনতার জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করলেও – তারা স্বাধীনতা পেয়েছে মূলত ইংল্যান্ডের সাথে দর কষাকষি করে। তাও পাকিস্তান ও ভারত দুটো আলাদা দেশ করে দিয়ে গেছে ইংরেজরা। সে তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণভাবেই স্বায়ত্বশাসন লাভ করে তখনকার সিলন ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ডমিনিয়ন অব সিলন হিসেবে ছিল এই দেশ ১৯৭২ সালের ২২মে পর্যন্ত। ১৯৭২ সালে এই দেশ ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট রিপাবলিক অব শ্রীলংকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এটুকু ইতিহাস জেনেই বের হয়ে আসতে হলো। ভেতরের গরম আর সহ্য হচ্ছিল না। বাইরে বের হয়ে বত্রিশ ডিগ্রির রোদেও মনে হলো – কী আরাম!
No comments:
Post a Comment