কলম্বো শহরে কোন রিকশা নেই। চীন জাপান হংকং-এও এখনো রিকশার চল রয়ে গেছে, অথচ
বুঝতে পারছি না শ্রীলংকা রিকশামুক্ত হয়ে গেল কীভাবে? পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এখানে সত্যি
সত্যিই পাবলিক। রাস্তার বাস সরকারি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে, বাসে-বাসে অহেতুক প্রাণনাশক
প্রতিযোগিতা এখানে নেই। বাসগুলির রঙ আর কারুকাজে উন্নত রুচিবোধের কোন চিহ্ন চোখে পড়লো
না। আমাদের বিআরটিসির বাসের মতো মাঝে মাঝে কয়েকটা টকটকে লাল রঙের বাস দেখা গেলেও বেশিরভাগ
বাসে আকাশী রঙের উপর ছোপছোপ আঁকুবুকি। বাসস্টপে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাস এলে
আর উঠতে পারলাম না। প্রচন্ড ভীড় তো আছেই, তাছাড়া বাসের রুটও ঠিকমতো জানা নেই। বাস কন্ডাক্টর
সিংহলী ভাষায় যেসব গন্তব্যের নাম ধরে ডাকাডাকি করছিলো সেসবের কোনটাই বুঝতে পারছিলাম
না।
রিকশা নেই। আমাদের সিএনজি ট্যাক্সির মতো ট্যাক্সি আছে অনেক।
সবুজ, নীল, লাল – ভিন্ন ভিন্ন রঙের ট্যাক্সি দেখলাম। বেশিরভাগই মিটারে চলে না, দরাদরি
করতে হয়। মাঝে মাঝে একটা দুটো মিটারের ট্যাক্সি চোখে পড়ে। গাইড বইতে বড় বড় অক্ষরে লেখা
আছে – মিটারের ট্যাক্সিতে উঠতে। ছুটির দিনের ব্যস্ততায় রাস্তায় খালি ট্যাক্সি পাওয়া
মুশকিল। রাস্তা পার হয়ে প্রেসিডেন্টের দপ্তরের সামনে এলাম। এখানে কোন গাড়ি থামতে দিচ্ছে
না রাস্তার পুলিশ। আরেকটু এগিয়ে খোলা মাঠের যেখানে বিশাল খ্রিস্টমাস ট্রি সাজানো হয়েছে
– সেখানে রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি ট্যাক্সি দাঁড়ানো। মিটার-ট্যাক্সি দেখে উঠে গেলাম।
“ওয়াটা ইয়ান্না উনা কোহেডা?” – লিকলিকে মাঝবয়সী ড্রাইভার
ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। একটি শব্দও বুঝতে পারলাম না। ইংরেজিতে বললাম, “বেইরা লেইক
নিয়ে যেতে পারবেন আমাকে?”
“বেইরা লেইক?”
“ইয়েস”
তাঁর মাথা এক পাশ থেকে অন্য পাশে নাড়ানো দেখে হতাশ হতে গিয়েই
মনে পড়লো – আমরা না-বোঝানোর জন্য যেভাবে মাথা নাড়ি, এরা তো হ্যাঁ বোঝানোর জন্যই সেভাবে
মাথা নাড়ে।
“হোয়ার ইন বেইরা লেইক?”
“ওল্ড টাউনের যে কোনো জায়গায়।“
ট্যাক্সি ছুটতে শুরু করলো। মিটারের দিকে চোখ পড়তেই মনে হলো
ওটা ট্যাক্সির চেয়েও জোরে চলছে। এক কিলোমিটার যাবার আগেই মিটারে আড়াই শ রুপি উঠে গেছে।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমেরিকান এমব্যাসি পার হয়ে ট্যাক্সি বাম দিকে মোড় নিলো। বেশ কয়েকটি
ছোটবড় রাস্তা পার হয়ে পুরনো জীর্নশীর্ণ দোকানপাটের অঞ্চলে প্রবেশ করতেই হ্রদের পানিতে
চোখ গেল। বললাম, এখানেই থামেন।
মাত্র সাত-আট মিনিটের ভ্রমণ। দূরত্ব খুব বেশি হলে চার কিলোমিটার
হবে। ট্যাক্সির মিটারে দেখাচ্ছে চারশ ত্রিশ রুপি। ট্যাক্সিভাড়া এখানে তুলনামূলকভাবে
বাংলাদেশের চেয়েও বেশি।
ওল্ড টাউন ক্যাফে |
শহরের ভেতর বেইরা হ্রদের এপার আর ওপারের মধ্যবর্তী দূরত্ব
এক কিলোমিটারও হবে না। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য সীমাহীন। এদিকের বাড়িঘর, দোকানপাট পুরনো
জীর্ণ। ওদিকে গড়ে উঠেছে ঝা চকচকে বহুতল আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক ভবন। ট্যাক্সি থেকে
যেখানে নেমেছি – সামনেই ওল্ড টাউন ক্যাফে। শনিবারের বিকেলে যেখানে শহুরে ক্যাফে জমজমাট
থাকার কথা, সেখানে এই ক্যাফের দরজা-জানালা বন্ধ। সাময়িক বন্ধ, না চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে
বোঝার উপায় নেই। আশেপাশের ঘরবাড়িগুলিরও দৈন্যদশা, দেখেই মনে হচ্ছে মন খারাপ করে কোনরকমে
ইনিচ্ছাসত্ত্বেও দাঁড়িয়ে আছে লেকের দিকে মুখ করে।
মাঝ-লেকের পানি আকাশের প্রতিচ্ছবিতে টলটলে নীল দেখালেও পাড়ের
কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি – লেকের পানি প্রচন্ড ময়লা। এই লেকের গভীরতা শুরু থেকেই
কম ছিল। শুরুটা তো আজকের নয়। কম করে হলেও এই হ্রদের বয়স পাঁচ শ বছর হয়েছে। পর্তুগিজরা
তখনকার রাজাদের হাত থেকে নিজেদের দুর্গ রক্ষা করার জন্য দুর্গের চারপাশে যে পরিখা খনন
করেছিল – সেটাই এই হ্রদ। পর্তুগিজ ইঞ্জিনিয়ার বেইরার নামে এই হ্রদ পরিচিত হয়ে ওঠে
– বেইরা লেইক নামে। এই হ্রদের চারপাশে গত পাঁচ শ বছর ধরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা।
কয়েকটি ছোট ছোট খাল এই হ্রদকে যুক্ত করেছে সাগরের সাথে। একসময় কলম্বো বন্দর থেকে জিনিসপত্র
নিয়ে যাওয়া হতো এই হ্রদের ভেতর দিয়ে নৌকা করে শহরের বিভিন্ন জায়গায়।
হ্রদের এপারের বাঁধানো রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রচন্ড
ময়লা, পাখিদের মলে সাদা হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কারোরই নজর নেই এদিকে। পর্যটকদের
কেউ আসেও না এখানে। আমি এদিকে এসেছি বিশেষ এক কারণে। সাত-আট বছর আগে আমার এক শ্রীলংকান
ছাত্রীর কাছে শুনেছিলাম এই হ্রদের পাড়ের ওল্ড টাউনের কথা। এখানের কোন এক বাড়িতে তারা
থাকতো ছোটবেলায়। দুই জমজ বোনের পর আরো একটা
ছোট্ট বোন ছিল তাদের। একদিন তাদের বাবা সেই ছোট্ট এক বছরের মেয়েটিকে বস্তায় ভরে ছুঁড়ে
ফেলে দিয়েছিল এই হ্রদে। তাদের মা যখন টের পায় – ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারপর
তাদের ব্যক্তিগত কাহিনি অনেক দুঃখের। তাদের মা তাদের দুইবোনকে নিয়ে বাবাকে ছেড়ে ঘর
ছেড়ে চলে গিয়েছিল ইন্ডিয়াতে। সেখান থেকে মেলবোর্নে। কলম্বোতে আসার পর সেই কাহিনি আবার
মনে পড়লো। তাই দেখতে আসা। গত পাঁচ শ বছর ধরে এরকম কত শত ঘটনার নিরব সাক্ষী এই হ্রদ।
বেইরা হ্রদের মন্দির |
গাছে গাছে অসংখ্য পাখি। ওপারে লোটাস টাওয়ার মাথা উঁচু করে
দাঁড়িয়ে আছে। তার ছায়া পড়েছে হ্রদের পানিতে। বেশ বড় একটি বৌদ্ধমন্দির গড়ে তোলা হয়েছে
হ্রদের পানির উপরেই। সারি সারি সোনালী বৌদ্ধমূর্তি সূর্যের আলোয় দ্যুতি ছড়াচ্ছে। এদিকে
কোনো কোলাহল নেই। ছোট ছোট রাস্তা -গাড়িশূন্য। হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছিলো।
এখান থেকে আমার হোটেল বেশ কাছে। হোটেলের কাছাকাছি পৌঁছে মনে
পড়লো বইয়ের দোকানের কথা। হোটেলের পেছন দিকের রাস্তায় একটি বইয়ের দোকান দেখেছিলাম সকালে
বের হবার সময়। তখন বন্ধ ছিল ওটা। দশটা থেকে খোলার কথা। হোটেলের সামনে দিয়ে হেঁটে আবার
গেলাম বইয়ের দোকানে। খোলা আছে।
বিজিতা ইয়াপা বুকশপের প্রবেশপথ |
দেয়ালে লাগানো খুবই সাদামাটা একটি সাইনবোর্ড – বিজিতা ইয়াপা
বুকশপ। অন্ধকার একটি একতলা বাড়ির ভেতর মোটামুটি আকারের একটি বইয়ের দোকান। কিন্তু এরা
শ্রীলংকার একটি প্রথম সারির প্রকাশক। শহরের বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন শহরে এদের শাখা
আছে। ভেতরে ইংরেজি বইয়ের বেশ ভালো সংগ্রহ আছে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম কিছুক্ষণ। এদের প্রকাশিত
বই আলাদা তাকে রাখা আছে। আমি খুঁজছিলাম শ্রীলংকান লেখকদের ইংরেজি বই। শ্রীলংকান সাহিত্য
আমি মোটেও পড়িনি। আগ্রহ আছে পড়ে দেখার। শ্রীলংকান লেখকদের লেখা বেশ কিছু উপন্যাস আর
থ্রিলার কিনলাম। এদের বেশিরভাগ বই পেপারব্যাক, হার্ডবাইন্ডিং খুব একটা নেই। খরচ কমানোর
জন্য হতে পারে এই ব্যবস্থা। তবে এদের বইয়ের দাম তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক
কম। প্রকাশকরা বলে থাকেন – বই বেশি বিক্রি হলে বইয়ের দাম কম রাখা যায়। কিন্তু এখানেও
যে বই প্রচুর বিক্রি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এত বড় দোকানে আমি ছাড়া আর মাত্র দুজন লোক
বই ঘাটাঘাটি করছে। দুজন বিক্রেতা আর একজন দারোয়ান ছাড়া আর কাউকেই তো দেখলাম না ঘন্টাখানেকের
মধ্যে।
বিজিতা ইয়াপা বুকশপের ভেতরে |
হোটেলে এসে অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নেওয়ার পর সারাদিনের ক্লান্তি
দূর হয়ে গেল। কিন্তু ক্ষুধা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। হোটেলের নয় তলায় একটি রেস্টুরেন্ট
আছে। এক্সপিডিয়ার কল্যাণে এই রেস্টুরেন্টে আমাকে শতকরা বিশ ভাগ মুল্যহ্রাসের একটি কুপন
দেয়া হয়েছে। কিন্তু খাবার পছন্দ না হলে মূল্যহ্রাস দিয়ে আমি করবো কী! হোটেলের ডিজিটাল
প্রযুক্তি বেশ ভালো। রুমের স্মার্ট টিভিতে রেস্টুরেন্টের মেন্যু দেখা যায়। সবকিছু বিদেশী
আইটেম। শ্রীলংকান রাইস অ্যান্ড কারি – ভাত-তরকারি এই হোটেলে নেই। বাইরেই যেতে হবে আবার।
দিনের আলো কমতে শুরু করেছে। আনন্দ কুমারাস্বামী গলি ধরে হাঁটতে
হাঁটতে লিবার্টি প্লাজায় এলাম। দিনের চেয়েও বেশি ব্যস্ততা এখন এখানে। লিবার্টি প্লাজা
শপিং মলের সামনের রাস্তায় সিনেমাহলের সামনে বেশ ভীড়। ইংরেজি সিনেমার বেশ কদর এখানে।
শাহরুখ খানের ‘ডাংকি’ সিনেমার পোস্টারও দেখা যাচ্ছে। এখনকার সব আধুনিক শপিং মলেই ফুডকোর্ট
থাকে। লিবার্টি প্লাজার বেইজমেন্টেও বেশ বড় ফুডকোর্ট। অনেকগুলি দোকান। শ্রীলংকান খাবার
খুঁজছিলাম। পেয়ে গেলাম একসাথে অনেকগুলি খাবারের দোকান। শ্রীলংকান খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে
খুবই কম। এক প্লেট ভাত, চার ধরনের সব্জি, এক টুকরো মাছ, আর কোমল পানীয় – সব মিলিয়ে
মাত্র পাঁচশ রুপি। এই চরম মুদ্রাস্ফীতির কালেও এত কম দামে খাবার বিক্রি করতে পারে কীভাবে?
সরকার কি কোন ভর্তুকি দিচ্ছে? জানি না।
শ্রীলংকার ঐতিহ্য ভাত-তরকারি |
আফটার ডিনার ওয়াক আ মাইল – করতে গিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলাম সমুদ্রের দিকে। রাস্তায় রাস্তায় আলোকসজ্জা। আমেরিকান দূতাবাসসহ শহরের বেশিরভাগ ভবন আলোয় ঝলমল করছে। ক্রিস্টমাস এখানে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে মনে হচ্ছে। গার্লে ফেইস গ্রিন এখন লোকে লোকারণ্য। অসংখ্য নারীপুরুষ নেমে পড়েছে সাগর পাড়ের এক চিলতে সৈকতে। হাঁটু পানিতে নেমেই কী আনন্দ তাদের। রাস্তায় উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে নৃত্য করছে একদল তরুণ-তরুণী। সবার একই রকম টী-শার্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে কোন কোম্পানি স্পন্সর করেছে তাদের প্রোগ্রাম। প্রেসিডেন্ট অফিসের পাশ দিয়ে লোটাস রোড ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। রাস্তাভর্তি গাড়ি। মনে হচ্ছে ট্রাফিকজ্যামে আটকে পড়েছে এদিকের পুরোটা শহর। এদিকে রাস্তার পাশেই হিলটন হোটেল। আরেকটু সামনে এগিয়ে সেক্রেটারিয়েট রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আরেকটি বৌদ্ধমন্দির। বিশালাকৃতির বুদ্ধমূর্তি রাস্তা থেকেই চোখে পড়ে।
হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছে। ফুটপাতে প্রচুর মানুষ। ম্যাক্ক্যালাম রোড ধরে কিছুদূর গিয়েই এক্সিবিশন সেন্টার। বাণিজ্যমেলা হচ্ছে সেখানে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচন্ড ভীড় সেখানে। বাণিজ্য আমাকে টানে না। এসব মেলার ভেতর আমি পারতপক্ষে ঢুকি না। কিন্তু মাইকে যে শ্রীলংকান গান বাজছে তা খুবই শ্রুতিমধুর। সংগীতের এই এক অদ্ভুত ক্ষমতা। সুর যদি মন ভরায়, ভাষা না বুঝলেও কিছু যায় আসে না।
একটু সামনে গিয়েই ক্যাসিনো। এখানে বড়লোকদের ভীড়। রাস্তার
ফুটপাত দখল হয়ে গেছে দামী দামী গাড়িতে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম নতুন নতুন গাড়ি করে
আসা লোভী নারী-পুরুষদের যারা সাড়ম্বরে জুয়া খেলতে আসছে।
ফোর্ট রেলওয়ে স্টেশন এদিকে কোথাও হবে জানি। কিন্তু মনে হচ্ছে
কোন একটা ভুল টার্ন নিয়ে অন্য রাস্তায় ঢুকে পড়েছি। স্টেশন খুঁজে বের করা দরকার। ক্যাসিনোর
এক গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম ট্রেন স্টেশন কোথায়। গার্ডটি সম্ভবত ইংরেজি বোঝেন, কিন্তু
বলতে পারেন না। ইশারা ইংগিতে যেটুকু দেখালেন তাতে বুঝলাম যেদিক থেকে এসেছি সেদিকে ফিরে
যেতে হবে কিছুদূর। তারপর রাস্তা পার হয়ে ডান দিকে চলে যেতে হবে।
মিনিট দশেক হাঁটার পর স্টেশনের আলো দেখতে পেলাম। যেদিক দিয়ে
এসেছি সেটা ফোর্ট স্টেশনের পেছনের দিক। ছোট্ট একটা পথ দিয়ে ওভারব্রিজে ওঠার রাস্তা।
ওভারব্রিজে উঠেই দেখতে পেলাম পাশাপাশি অনেকগুলি রেললাইন। প্লাটফরমের পর প্লাটফরম। ব্রিজ
পার হয়ে নামলাম স্টেশনের সামনে।
এই সেই কলম্বোর বিখ্যাত ফোর্ট রেলওয়ে স্টেশন। ব্রিটিশদের
হাতে তৈরি এই ট্রেন স্টেশন এখনো একইভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাদা রঙের খুবই পুরনো বিল্ডিং।
সারি সারি টিকেট কাউন্টার। আগামীকাল ক্যান্ডি যাবো, খোঁজ নেয়া যাক যদি কোন রিজার্ভ
টিকেট পাওয়া যায়। সতের নম্বর কাউন্টার হলো রিজার্ভেশন কাউন্টার। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার
পর দেখলাম বিভিন্ন গন্তব্যের অনেকগুলি কাউন্টার সেখানে। ক্যান্ডির কাউন্টারে দাঁড়িয়ে
কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ভেতরে সাদা প্যান্টশার্ট পরা রেলকর্মী জানালেন – কোনো রিজার্ভ
টিকেট নেই। কাল সকালে ট্রেন ছাড়ার ঘন্টাখানেক আগে এসে টিকেট কাটলে হবে।
“ক্যান্ডির ট্রেন কখন ছাড়বে?”
“ফার্স্ট ট্রেন ছয়টা পঞ্চাশ, এরপর আটটা, দশটা …”
মনে হচ্ছে ক্যান্ডির ট্রেন অনেকগুলি আছে। দেখা যাক সকালে
কী হয়।
রিজার্ভেশন রুম থেকে বের হবার সময় একজন মাঝবয়সী লোক ফিসফিস
করে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন, “ক্যান্ডি যাবার জন্য রিজার্ভ টিকেট আমি ব্যবস্থা করে
দিতে পারি।“
“কীভাবে?”
“আমার কাছে টিকেট আছে। আপনি আমেরিকান তো? মাত্র বিশ ডলার।“
লোকটি আমাকে আমেরিকান কী কারণে ভাবলেন জানি না। বললাম, “না
ভাই, আমার দরকার নেই।“
আমি দ্রুত হেঁটে তাকে কাটানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু তিনিও
বেশ দ্রুতই হাঁটতে শুরু করলেন আমার পাশাপাশি। হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করলেন, “কোন্
হোটেলে উঠেছেন?”
আমি কোন উত্তর না দিয়ে হাঁটার গতি আরেকটু বাড়ালাম। কাজ হলো
না। সে প্রায় গা ঘেঁষে জিজ্ঞেস করল, “মেয়ে লাগবে? বিউটিফুল শ্রীলংকান গার্লস?”
এরকম নোংরা দালালি এখানেও আছে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার
দিকে কীভাবে তাকিয়ে ছিলাম জানি না, সে অন্যদিকে চলে গেল। আমি ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো
একটি মিটার-ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম।
No comments:
Post a Comment