সবকিছু গোছগাছ করে রুম থেকে যখন বের হলাম, তখন মাত্র সোয়া
পাঁচটা বাজে। রেলস্টেশনে যেতে আধঘন্টার বেশি লাগবে না। ট্রেনের অগ্রিম টিকেট পেলে আরো
পরে গেলেও চলতো। টিকেটের অনিশ্চয়তার কারণেই এত ভোরে বের হতে হচ্ছে।
লিফ্টের জন্য দাঁড়াতে হলো বেশ কিছুক্ষণ। তিনটি লিফ্টের
দুটো পুরোপুরি বন্ধ। অন্যটি সম্ভবত নিচের তলায় আটকে আছে। নইলে চব্বিশ তলা পর্যন্ত উঠে
আসতে এত সময় নেয়ার কথা নয়। করিডোরে টিমটিমে লাল আলো জ্বলছে। কোন সাড়াশব্দ নেই। দূরের
জানালায় আছড়ে পড়ছে রাতের নিয়ন বাতির প্রতিফলন।
পরিবেশের মৌনতার কারণে লিফ্ট থামার টুং শব্দটাকেও হঠাৎ অনেক
জোরালো মনে হলো। সাত তলায় লিফ্ট থেকে বের হয়ে রিসিপশানে কাউকে দেখতে পেলাম না। রিসিপশানে
চব্বিশ ঘন্টা লোক থাকে। এখন কোথায় গেল সবাই? ট্রলিব্যাগটা টেনে নিয়ে রিসিপশানের কাছে
এসে দেখলাম ডেস্কের পেছনে ফ্লোরের লাল কার্পেটে পাশাপাশি বসে মোবাইলে রিল দেখছে দুজন
ছেলে।
“হ্যালো, এক্সকিউজ মি”
ধড়পড় করে উঠে দাঁড়ালো দুজনই। লিকলিকে লম্বাটা দ্রুত এগিয়ে
এলো রিসিপশানের ডেস্কে। তার লাল টি-শার্টে লাগানো ট্যাগে লেখা “ট্রেইনি”।
“গুড মর্নিং স্যার। ওয়েলকাম টু চিনামন রেড।“
“আমি আসলে চেক আউট করছি।“
কি-কার্ডটা নিয়ে কম্পিউটার চেক করে “ওকে স্যার” বলার জন্য
অনেকক্ষণ সময় নিলো ছেলেটি। মনে হচ্ছে সে খুবই স্লো লার্নার।
“এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য কি গাড়ি লাগবে স্যার?”
“না, এয়ারপোর্টে যাবার জন্য লাগবে না। তবে রেলস্টেশনে যাবার
জন্য একটি ট্যাক্সি লাগবে।“
“নিচের গার্ডরা ট্যাক্সি ডেকে দেবে স্যার।“
নিচে নেমে এলাম। বাইরে এখনো অন্ধকার। একজন নাইটগার্ড দরজার
সামনে টুলে বসে ছিল। আমাকে বের হতে দেখে ছুটে এলো। বললাম, “রেলস্টেশনে যাবার জন্য একটি
মিটারড-ট্যাক্সি কোথায় পাবো?”
“এক মিনিট দাঁড়ান স্যার, আমি ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসছি।“
– ঝরঝরে ইংরেজিতে কথাগুলি বলেই অন্ধকার রাস্তার দিকে ছুটে চলে গেল তরুণ নাইটগার্ড।
তার ইংরেজি উচ্চারণ রিসেপশানের ছেলেটির চেয়েও ভালো।
রাতে সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছে। হোটেলের সামনের রাস্তা ভেজা। মিনিটখানেকও
লাগলো না, একটা লাল ট্যাক্সি নিয়ে হাজির হলো নাইটগার্ড। এখানে এই তিন চাকার ট্যাক্সিগুলি
সম্ভবত সিএনজিতে চলে না। শ্রীলংকায় গ্যাসের সংকট আছে। গাড়িতে দেয়ার মতো গ্যাস তাদের
আছে কি না জানি না। পেট্রোলের দাম বাড়ার কারণেই এখানে ট্যাক্সিভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি।
ট্যাক্সিওয়ালা ইংরেজি ভালো বোঝে না। ফোর্ট রেলস্টেশন – এই
দুটো শব্দ ছাড়া আমার আর কোন কথা বুঝতে পারলো বলে মনে হলো না। তাতে আমার কোন অসুবিধা
নেই।
যে পথে ট্যাক্সি চলছে সেই পথ আমার চেনা হয়ে গেছে মাত্র একদিনেই।
গলির ভেতরের রাস্তায় গাড়ির ভীড় নেই। কিন্তু গার্লে রোডে ওঠার পর দেখা গেলো এই ভোরেও
রাস্তায় অনেক গাড়ি।
কাল রাতে আমি যে পথে ফোর্ট স্টেশনে গিয়েছিলাম এখন বুঝতে পারছি
ওটা অনেক ঘুরপথ ছিল। প্রেসিডেন্ট অফিসের সামনের গোলচত্বর থেকে লোটাস রোড ধরে একটু এসে
বামে মোড নিলে অনেক কাছে হয় স্টেশন। মিনিট দশেক লাগলো স্টেশনে পৌঁছাতে।
কাল রাতে দেখে গিয়েছিলাম চার নম্বর কাউন্টার থেকে কাটতে হবে
টিকেট। কাউন্টারে লাইনে আমার আগে মাত্র দু’জন মানুষ। তারা বের হয়ে যেতেই কাউন্টারে
মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ক্যান আই গেট অ্যা টিকেট ফর ক্যান্ডি প্লিজ!”
“গো টু কাউন্টার সেভেন্টিন। রিজার্ভ টিকেট পাওয়া যাচ্ছে সেখানে।“
“কাল রাতে যে বলেছিল রিজার্ভ টিকেট নেই!”
“আজ স্পেশাল ট্রেন দেয়া হয়েছে। গো ফাস্ট।“
সতেরো নম্বর কাউন্টার আমি গতকাল চিনে গিয়েছিলাম। সেই রিজার্ভেশান
রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখি লোকে গিজগিজ করছে সেখানে। ক্যান্ডির কাউন্টারের লাইন এঁকেবেঁকে
কোথায় চলে গেছে তা খুঁজে বের করতে বেশ কিছুক্ষণ লাগলো। তবে ভীড় হলেও যেটা দেখে ভালো
লাগলো – সেটা হলো মানুষের ভদ্র ব্যবহার। কোথাও কোন ধাক্কাধাক্কি নেই, লাইনের মাঝখানে
ঢুকে যাওয়া নেই। চিৎকার-চেঁচামেচিও নেই। এখন মনে হচ্ছে আরো ভোরে আসা উচিত ছিল।
যাত্রীদের বেশিরভাগই শ্রীলংকান। আজ সম্ভবত কোন বিশেষ দিন।
যাত্রীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। তাদের অনেকেরই পরনে সাদা পোশাক। মনে হচ্ছে কোন
উৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছে সবাই।
বিশ-পঁচিশ মিনিট লাগলো কাউন্টারে পৌঁছাতে। কলম্বো থেকে ক্যান্ডির সেকেন্ড ক্লাস রিজার্ভ টিকেটের দাম এক হাজার রুপি। এই ট্রেনে কোন ফার্স্ট ক্লাস নেই। পাসপোর্ট দেখাতে হলো না, তবে পাসপোর্টের নম্বর বলতে হলো টিকেট এন্ট্রি করার জন্য। কম্পিউটার প্রিন্টেড টিকেটের সাইজটা বেশ বড়। যেসব তথ্য টিকেটে প্রিন্ট করা আছে সেগুলি এর চারভাগের এক ভাগ কাগজেই হয়ে যেতো। অনায়াসেই এই টিকেটের ক্ষেত্রফল শতকরা পচাত্তর ভাগ কমিয়ে ফেলা যেতো। তাতে লক্ষ লক্ষ রিম কাগজ বেচে যেতো, আর টিকেটও আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন হতো।
পাঁচ নম্বর প্লাটফরম থেকে ট্রেন ছাড়বে সাতটায়। প্লাটফরমে
ঢুকলাম। শ্রীলংকার ব্যস্ততম রেলস্টেশন এই ফোর্ট স্টেশন। এখনো সবকিছু সেই ব্রিটিশ আমলেই
রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে, কেবল আধুনিক ডিজিটাল ডিসপ্লেগুলি ছাড়া।
ট্রেন এখনো প্লাটফরমে আসেনি। সম্ভবত অন্য কোন স্টেশন থেকে
এখানে আসবে। প্লাটফরমের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখতে বেশ ভালোই
লাগছে। দেশের সাধারণ মানুষ সম্পর্কে অনেক ধারণা পাওয়া যায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণ
করলে।
প্লাটফরম ভরে উঠতে শুরু করেছে মানুষের আনাগোনায়। বেশ কিছু
বিদেশী পর্যটক দেখা যাচ্ছে এখন। এদের হয়তো আগেই টিকেট করা ছিল, অথবা এদের স্থানীয় ট্যুর
এজেন্টরা সবকিছু ব্যবস্থা করে রেখেছে। তাদের কয়েকজনের সাথে স্থানীয় ট্যুর গাইড দেখা
যাচ্ছে অনবরত কথা বলছে।
ফোর্ট স্টেশন থেকে কাছেই লোটাস টাওয়ার |
প্লাটফরম থেকে পূর্বদিকে তাকালে সরাসরি চোখে পড়ে লোটাস টাওয়ার।
তার কয়েকটা ছবি তোলার চেষ্টা করছি – এমন সময় একজন চাপদাড়িওয়ালা মোটাসোটা লোক কাছে এসে
জিজ্ঞেস করলেন, “ইন্ডিয়ান?”
“নো। আই …”
“ডোন্ট টেল মি, লেট মি গেস…” – আমাকে বাধা দিয়ে লোকটি বেশ
মজা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললেন। আমি লোকটির দিকে ভালো করে তাকালাম। ছোট ছোট চোখ বেশ লাল,
মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমাননি। ডান হাতের কবজিতে বেশ বড় একটা জটিল উল্কি – সিংহলি ভাষায়
কিছু লেখা আছে সেখানে।
“ইউ আর বাংলাদেশি, রাইট?”
“রাইট।“
“হা হা” – খুশিতে জোরে চিৎকার করে উঠলেন তিনি।
“ইউ লাইক ক্রিকেট?”
“ইয়েস।“
“সাকিব আল হাসানকে আমি খুব পছন্দ করি। শুনেছি সে নাকি এমপি
হচ্ছে?”
লোকটি যে সাম্প্রতিক খবরাখবরও রাখেন তা বুঝতে পারছি। কিন্তু
ঠিক বুঝতে পারছি না এত কথা তিনি বলছেন কেন।
“আমি খেলাধূলা গানবাজনা মৌজমস্তি খুব পছন্দ করি। আমার এক
ভাই থাকে কানাডায়, আরেক ভাই থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। তারা আমাকে এত টাকা পাঠায় যে আমি খরচ
করে শেষ করতে পারি না। কাল সারারাত আমি ক্যাসিনোতে ছিলাম। এখনো বাসায় যাইনি। বাসায়
গিয়ে কী করবো? বাসায় তো কেউ নেই। আমার বউ চলে গেছে।“
এখন লোকটিকে মাতাল বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনো তার নেশা
কাটেনি। কিন্তু নেশা করার কারণ কি বউ চলে যাওয়া? নাকি নেশা করে বলেই বউ চলে গেছে? তার
কাহিনি আরো জানার ইচ্ছে হচ্ছে, আবার অস্বস্তিও হচ্ছে। মাতাল সামলানোর অভিজ্ঞতা আমার
খুব কম।
“হাউ লং উইল ইউ বি ইন কলম্বো? তোমার যা কিছু লাগে আমাকে ফোন
করবা, আমি ব্যবস্থা করবো।“
“আমি তো ক্যান্ডি চলে যাচ্ছি।“
“ক্যান্ডি থেকে ফোন করবা।“ বলে সামনের দিকে চলে যেতে গিয়ে
আবার ফিরে এলেন।
“ডু ইউ নো, হাউ ওল্ড আই অ্যাম?”
“না, জানি না।“
“আন্দাজ করে বলো, কত বয়স আমার?”
বয়স্ক মানুষ নিজেকে নিজের বয়সের চেয়ে কম বয়সী লাগছে বললে
খুশি হয়। এই মানুষটির কাচাপাঁকা দাড়িতে ভর্তি গোলাকার মুখ আর স্ফীত ভুঁড়ি দেখে মনে
হচ্ছে বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। তবুও খুশি করার জন্য বললাম, চল্লিশ!
শুনে হঠাৎ প্রচন্ড রেগে গেলেন তিনি। ধমক দিয়ে চিৎকার করে
উঠলেন, “চল্লিশ! চল্লিশ মনে হচ্ছে আমাকে! চল্লিশ মনে হচ্ছে আমাকে!!”
তার চিৎকার শুনে আশেপাশে লোক জমে যাচ্ছে। প্লাটফরমের একেবারে
অন্য মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে এতক্ষণ এদিকে তেমন কেউ আসেনি। আমার কৌতূহল ছাপিয়ে এবার
অস্বস্তি লাগতে শুরু করেছে। অন্যদিকে চলে যাবার জন্য পা বাড়ানোর আগেই দেখলাম মানুষের
ভিড় ঠেলে একজন সাদা ইউনিফর্ম পরা রেলকর্মী এসে সিংহলি ভাষায় কিছু বলতে বলতে লোকটির
বাহু ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করলো আরো সামনের দিকে – যেদিকে রেলওয়ে কোয়ার্টার। লোকটি
যেতে যেতেও পিছন ফিরে ইংরেজিতে চিৎকার করে বলছে, “আমি সাকিব আল হাসানের চেয়েও ছোট।“
লোকটি কি মাতাল, নাকি উন্মাদ ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে মনের
কোথাও যে সমস্যা আছে তা নিশ্চিত।
“সরি, হি শাউটেড অ্যাট ইউ!” কাছে দাঁড়ানো এক তরুণ বললো। তার
দিকে তাকালে সে আবার বললো, “ডোন্ট মাইন্ড, অ্যা? হি ইজ নট এ ব্যাড পারসন।“
“তুমি চেনো তাকে?”
“হ্যাঁ, সে রেলওয়েতে চাকরি করে। মাঝে মাঝে মাতাল হয়ে উল্টাপাল্টা
কথা বলে।“
লোকটি মাতাল হয়ে বেশি কথা বলেছে সত্য, কিন্তু উল্টাপাল্টা
কথা কিছুই বলেনি। আমি একটু হেসে প্রসঙ্গ পাল্টালাম, “সেকেন্ড ক্লাস রিজার্ভ বগি কোথায়
থামবে বলতে পারো?”
“প্লাটফরমের মাঝামাঝি যেতে হবে।“
এবার একটু দ্রুত পা ফেলে চলে হাঁটতে শুরু করলাম অন্যদিকে
– প্লাটফরমের মাঝামাঝি পৌঁছানোর জন্য।
সাতটা বাজার দশ মিনিট আগে ট্রেন প্লাটফরমে ঢুকতে শুরু করার
সাথে সাথে প্রচন্ড ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেল। মাত্র চারটি বগি হলো রিজার্ভ। বাকি ছয় সাতটি
বগি তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির অসংরক্ষিত আসনের বগি। সেখানে ঠাসাঠাসি করে যে আগে উঠতে
পারে সে সিট পেলেও পেতে পারে।
ট্রেন থামার পর কোন ধরনের তাড়াহুড়ো ছাড়াই উঠে গেলাম ডি বগিতে।
ট্রেনের বগিগুলি বাংলাদেশের ট্রেনের বগির মতোই। সেকেন্ড ক্লাস বগিও মনে হলো আমাদের
ফার্স্ট ক্লাস বগির মতো। পরিচ্ছন্ন, সিটগুলিও আরামদায়ক। দুপাশে দুটো করে সিট। আমার
সিট জানালার পাশে নয়। পাশের জন এখনো আসেনি। আমি আমার সিটে বসে আশেপাশে তাকাচ্ছি।
আমাদের কম্পার্টমেন্টে এখনো অনেক সিট খালি। সম্ভবত সামনের
স্টেশন থেকে উঠবে। স্পেশাল ট্রেন হওয়াতে এই রিজার্ভ টিকেটগুলি আগে ছাড়া হয়নি। হলে তো
কাল রাতেই কিনতে পারতাম। আমার সারির প্রথম দিকে একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবার উঠেছে। মা-বাবা
আর দুজন কিশোরী কন্যা তাদের। এধরনের ট্রেনে উঠতে পেরে তারা যে প্রচন্ড খুশি তা বোঝা
যাচ্ছে তাদের ছটফটানি দেখে।
ট্রেন সাতটায় ছাড়ার কথা। আর দুমিনিট বাকি সাতটা বাজার। পাশের
সিটে কেউ আসছে না দেখে ভালোই লাগছে। ট্রেনে জানালার পাশে বসে বাইরে দৃশ্য দেখতে দেখতে
যাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে – সেটা অনেকদিন পর পেতে যাচ্ছি আজ।
ঠিক সাতটায় ট্রেন চলতে শুরু করলো। নিজের সিট থেকে সরে জানালার
সিটে গিয়ে বসলাম। সামনের সিট এসে পড়েছে জানালার মাঝামাঝি। ফলে দৃশ্য পুরোপুরি উপভোগ
করা যাচ্ছে না। প্লাটফরম পার হয়ে ট্রেন এখন শহর অতিক্রম করছে। সামনের দুটো সিটও খালি।
সেখানে গিয়ে বসবো কি না ভাবছি, এমন সময় সামনের দিকের বগি থেকে বেশ কয়েকজন এই বগিতে
এসে বসতে শুরু করলো।
“হিয়ার আর উই। দিস থ্রি”
চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম – নীল জিন্স আর সাদা টি-শার্ট পরা
অনেক লম্বা চুলের এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার সিটের সামনে। তার সঙ্গী দুজন ছেলে হাতে
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ট্রেনের দুলুনি সামলে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। বড় দুটো সুটকেস লাগেজ
র্যাকে তুলে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে একজন এসে মেয়েটিকে বললো আমার সামনের সিটের জানালার
দিকে বসতে। এবার মেয়েটির মুখ দেখা গেল। স্বাভাবিক শ্রীলংকান, চেহারায় আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই। ছেলেটির মুখে সযত্নে
রক্ষিত দাড়িগোঁফ – অনেকটা অ্যানিমেল-এর রনবীর কাপুরের মতো। তারা পাশাপাশি সিটে বসার
পর তৃতীয় জনকে দেখে বেশ চমকে উঠলাম। গতকাল দুপুরে গার্লে ফেস গ্রিনের সামনের রাস্তার
ফুটপাতে যে বড়লোক ছেলেটির সাথে কথা হয়েছিল। তার সাথে আবার দেখা হবে ভাবিনি।
আমাকে দেখে সে চিনতে পারবে না ভেবেছিলাম। কিন্তু চিনতে পারলো।
বললো, “ইউ এগেইন? গোয়িং ক্যান্ডি? আমিও ক্যান্ডি যাচ্ছি আমার বন্ধুদের সাথে। দে আর
ফ্রম অস্ট্রেলিয়া।“
No comments:
Post a Comment