Sunday 5 May 2024

দ্য থিওরি অব এভরিথিং: সবকিছুর এক সুর - বাস্তবতা কত দূর

 


প্রাণিজগতে প্রজাতিগতভাবে সবচেয়ে অসন্তুষ্ট প্রজাতি হলো মানুষ। তারা কোনভাবেই তাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তাই সবসময় তারা তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চায়। আত্মসন্তুষ্টি যেকোনো সৃষ্টিশীলতার, আবিষ্কারের, উদ্ভাবনের মৃত্যু ডেকে আনে। মানুষ যদি সমষ্টিগতভাবে তাদের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতো – তাহলে তারা হয়তো এখনো প্রস্তরযুগেই রয়ে যেতো – পাথরের সাথে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করতো। যেমন সেই যুগের বন্য প্রাণিরা এখনো একইভাবে জীবনযাপন করছে। জীবনযাপনের গুণগত মানে, পদ্ধতিতে এবং ব্যবহারিকতায় মানুষের উত্তরপ্রজন্ম সবসময় তাদের পূর্বপ্রজন্মের চেয়ে এগিয়ে থাকছে – তাদের সামগ্রিক অসন্তুষ্টির কারণে। আর এই এগিয়ে থাকায় সারাক্ষণ সহযোগিতা করছে নতুন আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন। 

আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনে মগ্ন বিজ্ঞানীদের সবাই বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য সাধনেরই সাধনা করেন। সেই মূল উদ্দেশ্য হলো - জটিল রহস্যের সরলীকরণ। বিজ্ঞানের জটিল রহস্যের সরল সমাধান খুঁজে বের করতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। যেমন মনোবিজ্ঞানীরা শরীর ও মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ জটিল কাজকর্মের সাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় করতে পারলেই মনে করেন জটিল সমস্যা সরল হয়ে গেল। জীববিজ্ঞানীরা ওইসব কাজকর্ম কীভাবে ঘটে তা আরো সরলভাবে বোঝার চেষ্টা করেন জীবকোষের গঠন এবং কার্যপদ্ধতি বোঝার মাধ্যমে। রসায়নবিজ্ঞানীরা আরো একটু গভীরে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন কোষের রাসায়নিক গঠন ও মিথষ্ক্রিয়ার প্রক্রিয়া। রাসায়নিক বিক্রিয়ার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে পারলে তাঁদের কাজ সহজ হয়ে যায়। অণু ও পরমাণুর কাজকর্ম বুঝতে পারলেই তাঁদের হয়ে যায়। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানীরা কোথাও থামতে চান না। তাঁরা ঢুকে যান পরমাণুর অভ্যন্তরে, নিউক্লিয়াসেরও ভেতরে। 

বিজ্ঞানের জগতে পদার্থবিজ্ঞান হলো ভীষণ রকমের সাম্রাজ্যবাদী। তাঁরা মনে করেন মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ এবং শক্তি  এবং তাদের  মধ্যকার সমস্ত কাজকর্ম পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। মহাবিশ্বের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও যা ঘটবে তার সবকিছুই পদার্থবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। তাই পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপ্তি পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠন থেকে শুরু করে গ্যালাক্সি পর্যন্ত বিস্তৃত। যতই দিন যাচ্ছে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের বিস্তৃতি আরো বাড়ছে। একটি মাত্র দৃশ্যমান মহাবিশ্ব নিয়ে সন্তুষ্টি নেই সেখানে আর। আরো অসংখ্য অদৃশ্য কাল্পনিক মহাবিশ্বের তত্ত্বও আবিষ্কৃত হচ্ছে। এত তত্ত্বের মাঝেও পদার্থবিজ্ঞানীদের সার্বিক লক্ষ্য হলো এমন একটি তত্ত্বের যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সবকিছু সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে – যার নাম সবকিছুর তত্ত্ব বা থিওরি অব এভরিথিং।

তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানীরা মনে করেন থিওরি অব এভরিথিং (TOE) হবে পদার্থবিজ্ঞানের এমন একটি সর্বময় তত্ত্ব যে তত্ত্ব থেকে মহাবিশ্বের জন্ম কীভাবে হলো, কেন হলো, কীভাবে মহাবিশ্বের সবকিছু – কোয়ার্ক থেকে কসমস পর্যন্ত – কীভাবে কাজ করছে -  সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে। এখানে ‘সব’ বলতে একেবারে ঢালাওভাবে সবকিছু বোঝানো হবে, নাকি শুধুমাত্র মূল বিষয়গুলি বোঝানো হবে সে ব্যাপারে মতভেদ আছে। 

মতভেদ থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ পদার্থবিজ্ঞানীদের অনেক দাবি আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় ভুল কিংবা সঠিক প্রমাণ করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। যেমন আকাশে মেঘ কীভাবে তৈরি হয় তা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু যদি বলা হয় পদার্থবিজ্ঞানের সমীকরণ দিয়ে ছোট্ট একখন্ড মেঘের গাণিতিক মডেল তৈরি করতে যা একটা নির্দিষ্ট সময় পর আকাশে ঠিক ঠিক তৈরি হবে এবং আকার-আয়তন সবদিক দিয়ে মডেলের সাথে মিলে যাবে – পদার্থবিজ্ঞানের পক্ষে তা সঠিকভাবে করা সম্ভব হবে না। কারণ সেখানে এত বেশি পরিবর্তনশীল সূচক ব্যবহার করতে হবে যা অনেকগুলি সুপারকম্পিউটারের মাধ্যমেও সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। 

এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন একটি কাচের গ্লাস যদি হাত থেকে ফেলে দেয়া হয় – তা মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে মেঝেতে পড়ে যাবে সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। কিন্তু মেঝেতে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে কি না তা আগে থেকে বলে দিতে হলে জানতে হবে আরো অনেক কিছু – যেমন মেঝে কী দিয়ে তৈরি, গ্লাসটি কত ভারী, কত দূর থেকে কত বেগে ফেলা হয়েছে, আছাড় দেয়া হয়েছে নাকি এমনিতেই ফেলে দেয়া হয়েছে, গ্লাসের কাচের গাঠনিক উপাদান থেকে শুরু করে অসংখ্য প্যারামিটার। সবগুলি প্যারামিটার হিসেব করে বলা সম্ভব – গ্লাসটি ভাঙবে। গ্লাস ভাঙার পর কাচের ঠিক কতগুলি টুকরো হবে – তা কি সঠিকভাবে বলা সম্ভব? টুকরো গুলির আকার, আয়তন কীরকম হবে তা কি বলা সম্ভব? 

তাই সবকিছুর তত্ত্ব থেকে সমস্ত ডিটেলস বলা যাবে এরকম আশা কেউ করছেন না। কিন্তু আশা করা হচ্ছে এই তত্ত্ব থেকে ব্যাখ্যা করা যাবে মহাবিশ্বের সবগুলি প্রাকৃতিক বলের উৎস, শক্তির হিসেব, মহাবিশ্বের সূচনা কীভাবে হয়েছে, সমাপ্তি কীভাবে হবে। 

সবকিছুর তত্ত্ব বলতে আসলে কী তত্ত্ব বোঝানো হচ্ছে? কী হবে এই তত্ত্ব আবিষ্কৃত হলে? আর আবিষ্কৃত না হলেই বা কী অসুবিধা? এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমাদের দেখা দরকার এরকম তত্ত্বের ধারণা পদার্থবিজ্ঞানীদের মনে এলো কীভাবে। 

পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিক দার্শনিক লুসিপাস ও ডেমোক্রিটাসের অ্যাটমিজম বা পরমাণুতা তত্ত্ব ছিল প্রথম সবকিছুর তত্ত্ব। এই তত্ত্ব দিয়ে তাঁরা বোঝাতে চেয়েছিলেন পরমাণু দিয়েই মহাবিশ্বের সবকিছু তৈরি। পরবর্তী হাজার বছর ধরে এই ধারণা টিকে ছিল যে পরমাণু অবিভাজ্য। 

পরমাণুতা তত্ত্বকে সবকিছুর তত্ত্ব বলার কারণ কী ছিল? কারণ ছিল এই যে – সেই সময়ে যেকোনো বস্তুই কী দিয়ে তৈরি হয়েছে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর হতো – পরমাণু দিয়ে। আর বস্তুর অভ্যন্তরীণ কাজকর্মকেও ব্যাখ্যা করা হতো পরমাণুর সাথে পরমাণুর মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে। ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু থাকলেও সব পদার্থের মৌলিক উপাদান মনে করা হতো পরমাণুকে। সেহিসেবে সেই সময়ের সবকিছুর তত্ত্বের মূলে ছিল পদার্থের মৌলিক উপাদান। 

পরের কয়েক শতকের মধ্যেই পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। আবিষ্কৃত হতে থাকে ন্যাচারাল ফোর্স বা প্রাকৃতিক বলগুলি। 

১৬৮৭ সালে প্রকাশিত হয় নিউটনের ল অব গ্রাভিটি বা মহাকর্ষ বলের সূত্র। প্রাকৃতিক বলগুলির মধ্যে এই বলের কথাই প্রথম জানা যায় আইজাক নিউটনের আবিষ্কারের মাধ্যমে। মহাকর্ষ বল অত্যন্ত দুর্বল বল। কিন্তু এই দুর্বল বলই মহাবিশ্বের সব বস্তুকে একে অপরের সাথে অদৃশ্যভাবে টেনে ধরে রেখেছে। মহাকর্ষ বল আকর্ষণ বল। মহাবিশ্বের সবখানেই এর প্রভাব আছে। মহাকর্ষের তত্ত্ব অনুসারে – দুটো বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল বস্তুদুটোর ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং বস্তু দুটোর পারস্পরিক দূরত্বের বর্গের বিপরীত অনুপাতিক। বস্তু যত বড় হবে, এবং ভর যত বেশি হবে তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বলের পরিমাণ তত বেড়ে যাবে। আবার তারা যত বেশি কাছাকাছি থাকবে, বলের পরিমাণও তত বেড়ে যাবে। দূরত্ব যদি দ্বিগুণ বেড়ে যায়, বলের পরিমাণ চার গুণ কমে যাবে। মহাকর্ষ বলের তত্ত্ব অনুযায়ী কোন বস্তুই অন্য কোন বস্তুকে বিকর্ষণ করে না। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বস্তুর মধ্যে কীভাবে আকর্ষণ বল কাজ করে তার হিসেব দেয়, কিন্তু কেন আকর্ষণ করে তার কোন ব্যাখ্যা দেয় না। তবে মহাকর্ষ বলের আকর্ষণেই যে মহাবিশ্বের উপগ্রহ-গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি সব একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তার মোটামুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। 

১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে ইওরোপের অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা আলাদা আলাদা ভাবে  বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব সম্পর্কে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিদ্যুৎ ও চুম্বকের অনেক ধর্ম আবিষ্কার করেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে দরকারি আবিষ্কার ছিল – গতিশীল বৈদ্যুতিক চার্জের ফলে চুম্বকত্বের সৃষ্টি হয়, আর গতিশীল চুম্বক বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি করতে পারে। ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান ওরস্টেড ১৮২০ সালে নিশ্চিত হন যে বিদ্যুৎ ও চুম্বকের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। তিনি সেই সম্পর্কের নাম দেন ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম বা তড়িৎচুম্বকত্ব। 

১৮৩১ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে পরীক্ষাগারে প্রমাণ করেন যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ থেকে চুম্বকত্ব উৎপন্ন হয়, আবার চুম্বকক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়। এর চৌদ্দ বছর পর ফ্যারাডে আরো আবিষ্কার করেন যে বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্বের সাথে আলোরও নিবিড় সম্পর্ক আছে। 

এরপর ১৮৬১ সালে স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল সঠিকভাবে ধারণা দিলেন- যদি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের পরিবর্তন ঘটে তাহলে চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। আবার যদি চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন ঘটে, তাহলে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। আরো সোজাভাবে বললে বলা যায় - বিদ্যুৎ থেকে চুম্বকত্ব পাওয়া যায়, চুম্বকত্ব থেকে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ। বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র এবং চৌম্বকক্ষেত্র পরস্পর লম্বভাবে থাকে সবসময়। ম্যাক্সওয়েল গাণিতিকভাবে হিসেব করে দেখান যে শূন্যস্থানে আলোর বেগ সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার। পরবর্তীতে আমরা দেখেছি যে আলো তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের দৃশ্যমান অংশ। কিন্তু বিশাল অদৃশ্য অংশে রয়েছে কম শক্তিসম্পন্ন বেতারতরঙ্গ, অবলোহিত রশ্মি বা ইনফ্রারেড রে, মাইক্রোওয়েভ, এবং বেশি শক্তিসম্পন্ন আলট্রাভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মি, এক্স-রে, গামা-রে ইত্যাদি। বিংশ শতাব্দী এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তিতে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের ব্যাপক ব্যবহার আমরা দেখছি ভূমি থেকে মহাকাশ, মোবাইল ফোন থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞান - সবখানে। 

ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব থেকে পাওয়া গেল দ্বিতীয় প্রাকৃতিক বল – তড়িৎচুম্বক বল। তড়িৎচুম্বক বল মহাকর্ষ বলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। গাণিতিকভাবে মহাকর্ষ বলের সাথে খুব সাদৃশ্য আছে তড়িৎচুম্বক বলের। দুটো চার্জের মধ্যে তড়িৎচুম্বক বলের পরিমাণ চার্জ দুটোর পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের বিপরীত অনুপাতিক। মহাকর্ষ বলের মতোই এই বলের তীব্রতা বাড়ে যদি চার্জের পরিমাণ বাড়ে। চার্জের মধ্যবর্তী দূরত্ব দ্বিগুণ বেড়ে গেলে বলের পরিমাণ চার গুণ কমে যায়। তবে মহাকর্ষ বলের সাথে তড়িৎচুম্বক বলের গুণগত যে পার্থক্য আছে সেটা হলো – এই বল আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ দুটোই হতে পারে। যদি চার্জদুটো একই ধর্মের হয় (দুটোই ধ্বনাত্মক বা দুটোই ঋণাত্মক) তড়িৎচুম্বক বল হবে বিকর্ষণ বল। কিন্তু যদি চার্জদুটো বিপরীত ধর্মের হয় (একটি ধ্বনাত্মক, অন্যটি ঋণাত্মক), তখন বল হবে আকর্ষণ বল। এর ফলে বড় বড় বস্তুর ক্ষেত্রে আকর্ষণ বল ও বিকর্ষণ বল পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তাই বড় বস্তুর মধ্যে তড়িৎচুম্বক বল ততটা কার্যকর থাকে না। কিন্তু অণু ও পরমাণুর মধ্যে এই বল খুবই সক্রিয়। সব ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ও জৈবরাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ ঘটে তড়িৎচুম্বক বলের প্রভাবে।

১৮৯৫ সালে এক্স-রে, ১৮৯৬ সালে রেডিও অ্যাকটিভিটি এবং ১৮৯৭ সালে ইলেকট্রন আবিষ্কৃত হবার পর পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা জন্মে যে পদার্থবিজ্ঞানের সবকিছুর তত্ত্ব পাওয়া হয়ে গেছে, মহাকর্ষ ও তড়িৎচুম্বক তত্ত্ব দিয়েই সবকিছু ব্যাখ্যা করে ফেলা যাবে। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশান ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর এক বক্তৃতায় লর্ড কেলভিন তো বলেই ফেলেছিলেন, “পদার্থবিজ্ঞানে আবিষ্কার করার মতো এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন বাকি আছে শুধু পুঙ্খানুপূঙ্খ পরিমাপ।“ 

কিন্তু লর্ড কেলভিনের কথা ভুল প্রমাণিত হতে দেরি হলো না। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারের পালে হাওয়া লাগে। একদিকে ম্যাক্স প্ল্যাংকের হাত ধরে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যাত্রা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে একের পর এক চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে বদলে দিয়েছেন পুরো মহাবিশ্বের ধারণা। আবিষ্কৃত হয়েছে স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শক্তির সাথে ভর ও আলোর গতির সম্পর্ক। 

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব আবিষ্কারের ফলে মহাকর্ষ তত্ত্বে ভর এবং দূরত্ব দুটোতেই সমস্যা হয়ে গেল। নিউটনের তত্ত্ব অনুসারে বস্তুর গতির সাথে ভরের কোন পরিবর্তন ঘটে না, কিন্তু আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুসারে গতির পরিবর্তনের সাথে ভরের পরিবর্তন ঘটে। আবার নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বে বস্তুর মধ্যবর্তী যে দূরত্বের ব্যাপার আছে – সেই দূরত্ব মাপার কোন ফ্রেম অব রেফারেন্স নির্দিষ্ট করা নেই। কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে এই দূরত্ব রেফারেন্স ফ্রেমের উপর নির্ভরশীল। ধীরগতির বস্তুর ক্ষেত্রে দূরত্বের এই পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়, কিন্তু প্রচন্ড গতিশীল গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে মহাকর্ষ বল হিসেব করতে হলে দূরত্ব মাপার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগ করতে হবে। 

আইনস্টাইন দেখলেন নিউটনের মহাকর্ষ বলের তত্ত্ব সংস্করণ করার দরকার। পরবর্তী দশ বছর ধরে গবেষণা করে ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন প্রকাশ করলেন আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব যা মূলত আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে মহাকর্ষ বল স্থান-কালের উপর ভরের প্রভাবে যে বক্রতা তৈরি হয় তার উপর নির্ভর করে। ধরতে গেলে জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি পদার্থবিজ্ঞানকে জ্যামিতিতে পরিণত করে ফেলেছে। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির সার্থক প্রমাণ জ্যোতির্বিজ্ঞানে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছেই। তার ব্যবহারিক প্রমাণ – বর্তমানের সবগুলি স্যাটেলাইট, জিপিএস ন্যাভিগেশান ইত্যাদি। 

স্পেশাল ও জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি আবিষ্কারের পর আইনস্টাইন প্রাকৃতিক বলের তত্ত্বগুলিকে একীভূত করে একটি সমন্বিত তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করে গেছেন তাঁর বাকি জীবন। কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখেননি। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আইনস্টাইন সফল হতে পারেননি – কারণ তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন না। তাছাড়া মহাকর্ষ তত্ত্বে অর্থপূর্ণভাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রয়োগ করা এখনো সহজ নয়। 

পরমাণুর নিউক্লিয়াস, প্রোটন ও নিউট্রন আবিষ্কারের পর রেডিওঅ্যাকটিভিটির তত্ত্ব থেকে আরো দুটো প্রাকৃতিক বল আবিষ্কৃত হলো – দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং সবল নিউক্লিয়ার বল। দুর্বল নিউক্লিয়ার বল রেডিওঅ্যাকটিভিটির জন্য দায়ী। এই বলের ফলেই মহাবিশ্বের শুরুতে নক্ষত্রগুলিতে বিভিন্ন মৌল তৈরি হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা সাধারণত এই বল অনুভব করি না। 

প্রকৃতির চতুর্থ বল সবল নিউক্লিয়ার বল। নিউক্লিয়াসের ভেতর প্রোটন ও নিউট্রনগুলিকে শক্তভাবে ধরে রাখে এই বল। চারটি প্রাকৃতিক বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বল হলো সবল নিউক্লিয়ার বল। নিউক্লিয়াসের বাইরে এই বল অনুভূত হয় না। সবল নিউক্লিয়ার বল প্রচন্ড আকর্ষণ বল।

আইনস্টাইনসহ তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানীদের আরো অনেকে এই চারটি প্রাকৃতিক বলকে একীভূত করে একটি গ্রান্ড ইউনিফাইড থিওরি বা সমন্বিত তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন। মহাকর্ষ বল ছাড়া বাকি তিনটি বল অত্যন্ত ক্ষুদ্র পারমাণবিক স্কেলের বস্তুর (পরমাণু, ইলেকট্রন, প্রোটন, কোয়ার্ক) উপর প্রযোজ্য। অণু পরমাণুর কাজকর্ম সঠিকভাবে বুঝতে হলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রয়োগ করেই বুঝতে হবে। তাই তড়িতচুম্বক বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল, সবল নিউক্লিয়ার বল সবগুলিরই কোয়ান্টাম মেকানিক্সে রূপান্তরিত করা দরকার। 

আবার মহাকর্ষ বল গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সির মতো বড় বড় বস্তুর উপর প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে তার কোয়ান্টাম মেকানিক্সে রূপান্তরিত করার দরকার নেই। কিন্তু আমরা যদি আদি মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে চাই – তাহলে সিঙ্গুলারিটি থেকে শুরু করতে হবে। সেই সময় সবকিছুই ছিল মাইক্রোস্কোপিক। তাই মহাকর্ষ তত্ত্বকেও কোয়ান্টাম তত্ত্বে রূপান্তর না করলে হবে না। 

নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব হোক, কিংবা আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির মহাকর্ষ তত্ত্ব হোক – দুটোই ক্লাসিক্যাল থিওরি। এদের কোনটিকেই কোয়ান্টাম তত্ত্বে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। কারণ কোয়ান্টাম তত্ত্বে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি কাজ করে। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটিতে অনিশ্চয়তার নীতি প্রয়োগ করলে তার ফলাফল বাস্তবসম্মত হবে না। যেমন তখন ব্ল্যাকহোল পুরোপুরি ব্ল্যাক হবে না, শূন্যস্থানও পুরোপুরি শূন্য হবে না। 

সবকিছুর তত্ত্ব পেতে হলে প্রকৃতির সবগুলি বলকে সমন্বিত করতে হবে। সেটা করতে হলে চারটি বলেরই কোয়ান্টাম রূপান্তর ঘটাতে হবে। এই তত্ত্বগুলির কোয়ান্টাম রূপকে বলা হয় – কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি। বাংলায় কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বও বলে থাকেন অনেকে। কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরিতে বস্তুকণা বা ভর বিনিময় কণা হলো ফার্মিয়ন (ইলেকট্রন ও কোয়ার্ক), এবং ফার্মিয়নগুলির মধ্যে বল বিনিময় কণা হলো বোসন (ফোটন)। 

তড়িৎচুম্বক বলের কোয়ান্টাম রূপান্তর সম্ভব হয়েছে রিচার্ড ফাইনম্যানের কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিক্স আবিষ্কারের মাধ্যমে। 

কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি প্রয়োগ করে তড়িৎচুম্বক বল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের সমন্বয় ঘটিয়েছেন প্রফেসর আবদুস সালাম, স্টিভেন ওয়াইনবার্গ এবং শেলডন গ্ল্যাসো। 

দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও তড়িৎচৌম্বক বল মূলত একই রকম। কিন্তু তাদেরকে ভিন্ন মনে হয় কারণ দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের বিনিময় কণার ভর আছে, কিন্তু তড়িৎচৌম্বক বলের বিনিময় কণার ভর নেই। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই বল বিনিময় কণা হলো বোসন। তড়িৎচৌম্বক বলের ক্ষেত্রে বিনিময় কণা ফোটন যার স্থির ভর শূন্য। ফোটন আলোর বেগে চলে। দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের ক্ষেত্রে বিনিময় কণার ভর আছে। ফলে এই বোসনগুলোর বেগ দূরত্বের সাথে বদলে যায়। 

দুর্বল নিউক্লিয়ার মিথষ্ক্রিয়ায় চার্জের পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ চার্জহীন নিউট্রন ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন বা ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনে পরিণত হয়। ফলে যে কারেন্ট পাওয়া যায় তাকে চার্জড কারেন্ট বলা যায়। অন্যদিকে তড়িৎচৌম্বক বলের ক্ষেত্রে চার্জের কোন পরিবর্তন ঘটে না। ফলে এক্ষেত্রে যে কারেন্ট পাওয়া যায় তাকে নিউট্রাল কারেন্ট বলা যায়। 

ওয়াইনবার্গ ও সালামের তত্ত্ব প্রমাণ করে যে দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও তড়িৎচৌম্বক বলের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হলো বিনিময় কণা বোসনের ভরে। তড়িৎচৌম্বক বলের ক্ষেত্রে বিনিময় কণা ফোটন ভরহীন, কিন্তু দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের ক্ষেত্রে বিনিময় কণা বোসনের (W) ভর প্রোটনের ভরের প্রায় একশ' গুণ। দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের বোসনকে এ কারণে ভারী ফোটনও বলা হয়। 

আবদুস সালাম ও স্টিভেন ওয়াইনবার্গ ধারণা দেন যে দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের ক্ষেত্রে নিউট্রাল কারেন্ট ও চার্জড-কারেন্ট দুটোই পাওয়া যেতে পারে। দুটো মিথষ্ক্রিয়ার বল বিনিময় কণাগুলোকে একই পরিবারভুক্ত করে নাম দেয়া হয় W+, W- এবং Z0 বোসন। +, - এবং ০ যথাক্রমে ধনাত্মক, ঋণাত্মক এবং নিউট্রাল চার্জড বোসন বোঝায়। তিনটাকে এক সাথে ইন্টারমিডিয়েট ভেক্টর বোসন বলা হয়। এই ভেক্টর বোসনগুলো নিউক্লিয়াসের ভেতরে খুবই ভারী। আর সেখানেই দুর্বল মিথষ্ক্রিয়া ঘটে। নিউক্লিয়াসের বাইরে ঘটে তড়িৎচুম্বক মিথষ্ক্রিয়া। 

১৯৭৩ সালে সার্নের পরীক্ষাগারে নিউক্লিয়াস ও নিউট্রিনোর মিথষ্ক্রিয়া ঘটিয়ে কোন ধরনের চার্জ বিনিময় ছাড়াই দুর্বল নিউক্লিয়ার মিথষ্ক্রিয়া ঘটানো সম্ভব হলো। নিউট্রাল কারেন্টের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলো। ফার্মি ল্যাবেও একই ধরনের রেজাল্ট পাওয়া গেলো। ১৯৭৮ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রন এক্সিলারেটরে (SLAC) ইলেট্রন ও ডিউটেরনের মিথষ্ক্রিয়া ঘটিয়েও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং তড়িৎচালক বলের সমন্বয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলো। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৯ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় বিজ্ঞানী আবদুস সালাম, স্টিভেন ওয়াইনবার্গ ও শেলডন গ্ল্যাশোকে।

তড়িৎচুম্বক বল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল একীভূত করা সম্ভব দেখে সমন্বিত তত্ত্বের বিজ্ঞানীরা আরো উৎসাহিত হয়ে উঠলেন বাকি বলগুলিকেও একত্রিত করে ফেলার ব্যাপারে। সবল নিউক্লিয়ার বলের কোয়ান্টাম প্রক্রিয়া সামলানোর জন্য আবিষ্কৃত হলো কোয়ান্টাম ক্রোমোডায়নামিক্স। নিউক্লিয়াসের ভেতরের প্রোটন ও নিউট্রনকেও ততদিনে ভেঙে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কৃত হয়েছে আরো ক্ষুদ্র মৌলিক কণা কোয়ার্ক। কোয়ার্কের প্রকৃতি অনুযায়ী তাদেরকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে – আপ কোয়ার্ক, ডাউন কোয়ার্ক, টপ কোয়ার্ক, বটম কোয়ার্ক, চার্ম কোয়ার্ক ও স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক। দুটো আপ কোয়ার্ক আর একটি ডাউন কোয়ার্ক মিলে হয় একটি প্রোটন, আবার দুটো ডাউন কোয়ার্ক আর একটি আপ কোয়ার্ক মিলে হয় একটি নিউট্রন। নিউক্লিয়াসের ভেতর কোয়ার্কগুলি পরস্পরের কাছ থেকে যত দূরে যায় তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বল বাড়ে। সে কারণেই প্রকৃতিতে বিচ্ছিন্ন কোন কোয়ার্ক পাওয়া যায় না। 

মৌলিক কণার স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস বোসনের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড মডেল সম্পূর্ণতা পেয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে মহাবিশ্বের সবকিছুর ভর তৈরি হয়েছে ছয়টি কোয়ার্ক ও ছয়টি লেপটন কণার (ইলেকট্রন, ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউয়ন, মিউয়ন নিউট্রিনো, টাউ এবং টাউ নিউট্রিনো) সমন্বয়ে। এদের মধ্যে মাত্র চারটি কণা (আপ কোয়ার্ক, ডাউন কোয়ার্ক, ইলেকট্রন ও ইলেকট্রন নিউট্রিনো) হলো সব পদার্থের মূল উপাদান। পারমাণবিক স্কেলে বল নিয়ন্ত্রিত হয় বল বিনিময়কারী বোসন কণার (Z, W, ফোটন, গ্লুয়ন এবং হিগস) মাধ্যমে। 

স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মৌলিক কণাগুলির তত্ত্ব পরমাণু ও নিউক্লিয়ার স্কেলের কাজকর্মকে সমন্বিতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারলেও বড় স্কেলের মহাকর্ষকে কিছুতেই একত্রিত করতে পারছে না। কারণ মহাকর্ষ বলের সার্থক কোয়ান্টাম রূপান্তর করা যাচ্ছে না। 

১৯৭৬ সালে বিজ্ঞানীরা একটি সম্ভাবনা দেখলেন। গ্রাভিটি থিওরি সামলানোর জন্য এই সম্ভাবনার নাম দেয়া হলো সুপারগ্রাভিটি। এটি মূলত আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির সাথে কিছু তাত্ত্বিক কোয়ান্টাম কণার সমন্বিত রূপ। গ্রাভিটির সাথে সুপার কথাটি যোগ করা হয়েছে মূলত সুপারসিমেট্রির ধারণা থেকে। পদার্থবিজ্ঞানে সিমেট্রি বা সাম্যতার ব্যাপারটা খুবই ব্যবহার করা হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গাণিতিক প্রয়োজনে। স্থান-কাল ও কোয়ান্টাম স্টেট  উল্টে দিলেও যদি কোন সিস্টেম একই থাকে – তাকে সিমেট্রিক্যাল সিস্টেম বলা হয়। যেমন একটি সুষম বৃত্ত। সুপারসিমেট্রির ধারণাটি আরেকটু জটিল। সুপারসিমেট্রি তত্ত্ব অনুসারে যে কোন কণারই একটি ভরবাহী অংশ থাকবে, এবং একই সাথে আরেকটি বলবাহী অংশ থাকবে। অর্থাৎ একটি কোয়ার্ক যদি স্বাভাবিকভাবে ভর বহন করে তার একই রকমের একটি সহযোগী কণা থাকবে যেটা বল বহন করবে। অন্যদিকে একটি ফোটন স্বাভাবিকভাবে বল বহন করে। সুপারসিমেট্রিতে ফোটনের আরেকটি সহযোগী ফোটন থাকবে যেগুলি ভর বহন করবে। পুরো সিস্টেমের গাণিতিক প্রক্রিয়া শেষ হবার পর অবশ্য এই কাল্পনিক কণাগুলির ভর ও বলবাহী অংশগুলি সমন্বিতভাবে একটি ধনাত্মক হলে অন্যটি ঋণাত্মক হয়ে বাতিল হয়ে যাচ্ছে। 

সুপারগ্রাভিটি তত্ত্বে ধারণা করা হচ্ছে মহাকর্ষ বল বহনকারী কণা হবে ‘গ্রাভিটন’ যার স্পিন সংখ্যা ২। এটি একটি সুপারসিমেট্রিক কণা। স্পিন-২ কণার স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা হতে পারে ৫টি (2s + 1 = 2 x 2 +1 = 5)। অর্থাৎ গ্রাভিটনের সাথে আরো চারটি কাল্পনিক কণা যোগ করা যাবে যাদের স্পিন সংখ্যা ৩/২, ১, ১/২, এবং ০। স্পিন সংখ্যা ০, ১, এবং ২ সম্পন্ন কণাগুলির শক্তি হবে ধনাত্মক। স্পিন সংখ্যা ৩/২ এবং ১/২ সম্পন্ন কণাগুলির শক্তি হবে ঋণাত্মক। এভাবে অসীম সম্ভাবনার শেষ পর্যন্ত যোগফল হবে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তির কাটাকাটি। কিন্তু এই কাল্পনিক কণার অসীম সম্ভাবনা সিরিজের হিসেব করতে শক্তিশালী কম্পিউটারেরও সময় লেগে যেতে পারে বছরের পর বছর। আর হিসেবে ভুল হলে তো কথাই নেই – সবকিছু আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। তাই সুপারগ্রাভিটি বা সুপারসিমেট্রি (SUSY) গাণিতিকভাবে সফল হলেও খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়। লার্জ হার্ড্রন কোলাইডারে এখনো সুপারসিমেট্রির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি ক্লাসিক্যাল থিওরি। এটাকে কোয়ান্টামে রূপান্তর ঘটানোর জন্য বিজ্ঞানীরা আরেকটি ভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে অগ্রসর হলেন। আমরা জানি মহাকর্ষ বল মহাবিশ্বের সবখানে আছে, এবং তা নিরবিচ্ছিন্ন। কিন্তু কোয়ান্টাম সিস্টেম হলো বিচ্ছিন্ন সিস্টেম। বিজ্ঞানীরা চিন্তা করলেন লুপ কোয়ান্টাম গ্রাভিটির – যেখানে স্পেস-টাইম হবে কোয়ান্টাইজড – অর্থাৎ ছোট ছোট লুপ বা স্পিন নেটওয়ার্কে বিভক্ত। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে যেভাবে গুচ্ছ গুচ্ছ শক্তিস্তরের হিসেব করা হয় – সেভাবে গ্রাভিটিকেও গুচ্ছ গুচ্ছ লুপ গ্রাভিটি ধরে হিসেব করা হবে। যার ফলে দ্বিমাত্রিক এরিয়া কোয়ান্টাইজেশান বা ত্রিমাত্রিক ভল্যুম কোয়ান্টাইজেশানও করা যাবে। কিন্তু লুপ কোয়ান্টাম গ্রাভিটি কোন সিঙ্গুলারিটি সমর্থন করে না। অর্থাৎ লুপ কোয়ান্টাম গ্রাভিটির মাধ্যমে মহাবিশ্বের সূচনা কীভাবে হয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলে এটি সবকিছুর তত্ত্বের পুরোপুরি দাবিদার হতে পারবে না। 

এসময় ভিন্ন ধারণার একটি তত্ত্বের প্রবর্তন করেন বিজ্ঞানীরা – যার নাম স্ট্রিং থিওরি। সুপারগ্রাভিটি তত্ত্বের চেয়েও বেশি সম্ভাবনাময় তত্ত্ব হলো স্ট্রিং থিওরি। কারণ স্ট্রিং থিওরি অনুসারে মহাবিশ্বের সবকিছুই তৈরি হয়েছে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকারের সূতা বা স্ট্রিং থেকে। পার্টিক্যাল ফিজিক্সের স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুযায়ী যেখানে মৌলিক কণা – ইলেকট্রন, কোয়ার্ক ইত্যাদি কণা আকারে রয়েছে, সেখানে স্ট্রিং থিওরি বলছে ইলেকট্রন কিংবা কোয়ার্ক পদার্থের শেষ কথা নয়। বরং এগুলিও তৈরি হয়েছে আরো ক্ষুদ্র তরঙ্গ আকারের স্ট্রিং থেকে। স্ট্রিং তত্ত্ব প্রচলিত যে কোনো তত্ত্বের চেয়ে জটিল – কারণ এটি প্রচলিত স্পেস-টাইমের চার মাত্রিক ভুবনের বদলে দশ মাত্রিক ভুবনে কাজ করে। 

ত্রিমাত্রিক ভুবনে বাস করে দশ মাত্রিক ভুবন কল্পনা করা আমাদের জন্য সহজ নয়। কিন্তু ইলেকট্রন কোয়ার্কের চেয়েও ছোট স্কেলে স্পেস-টাইম এমনভাবে একট মাত্রার সাথে অন্যমাত্রা ভাঁজ হয়ে থাকে যে সেখানে দশ মাত্রা থাকতেই পারে। গাণিতিক প্রয়োজনেই স্ট্রিং তত্ত্বে দশ মাত্রিক ভুবনের ধারণা নেয়া হয়েছে। প্রচলিত তিন মাত্রিক ভুবনের প্রত্যেকটি মাত্রাকে তিন মাত্রিক ধরে তাদের সাথে সময়ের মাত্রা যোগ করে দশ মাত্রিক ভুবন। 

স্ট্রিং তত্ত্বের বিজ্ঞানীরা গাণিতিকভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে এই তত্ত্ব সবকিছুর সমন্বিত তত্ত্ব হিসেবে অত্যন্ত সফল এবং কার্যকর। কিন্তু বিভিন্ন গবেষকদল বিভিন্ন গণিত ব্যবহার করে স্ট্রিং তত্ত্বের আরো অনেকগুলি রূপ আবিষ্কার করে ফেললেন। দেখা গেলো বহুমাত্রিক ভুবন অসংখ্য রূপে একের ভেতর অন্যটি ভাঁজ হয়ে থাকতে পারে। সকল কাজের একটি মাত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে দেখা গেলো স্ট্রিং থিওরি একীভূত হবার বদলে বিভক্তি ডেকে আনলো। 

১৯৯৪ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা কিছুটা একমত হলেন যে স্ট্রিং থিওরির যে পাঁচটি প্রধান রূপ তারা প্রত্যেকেই আসলে প্রচলিত চতুর্মাত্রিক ভুবনকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। সবগুলি স্ট্রিং থিওরির সমন্বয়ে তৈরি হলো স্ট্রিং তত্ত্বের বর্ধিত সংস্করণ এম-থিওরি। স্টিফেন হকিং তাঁর গ্রান্ড ডিজাইন বইতে লিখেছেন, “সম্ভবত কেউ জানে না এম-থিওরির এম মানে কী। হতে পারে ‘মাস্টার’, ‘মিরাকল’, ‘মিস্ট্রি’ – কিংবা সবগুলিই।“ তবে জন গ্রিবিন ব্যাখ্যা করেছেন এই এম-থিওরির এম এসেছেন ‘মেমব্রেন’ থেকে। স্ট্রিং বা সুতার বদলে মেমব্রেন বা ঝিল্লি। ধারণা করা হচ্ছে এম-থিওরি মহাবিশ্বের সবকিছু ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। এম-থিওরির কাজ করার জন্য দরকার হয় এগারো মাত্রিক ভুবনের। বলা হচ্ছে দশ মাত্রিক স্ট্রিং থিওরিতে একটি মাত্রা বাদ পড়ে গিয়েছিল। 

সকল কাজের তত্ত্বের একটি শক্তিশালী দাবিদার এম-থিওরি। যদিও এর কোন বাস্তব প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি, কিন্তু গাণিতিকভাবে এম-থিওরি এক মাত্রিক কণা, দ্বিমাত্রিক ঝিল্লি, ত্রিমাত্রিক বস্তু সবকিছুরই কাজকর্ম ব্যাখ্যা করতে পারে। এম-থিওরি গাণিতিকভাবে এতটাই শক্তিশালী যে এটি কোটি কোটি কোটি নতুন মহাবিশ্বের সম্ভাবনার ধারণাকে সমর্থন করে। একটি মহাবিশ্বের সবকিছুকে একটিমাত্র তত্ত্বে প্রকাশ করার জন্য যে থিওরি অব এভরিথিং খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, এম-থিওরি যদি সেই তত্ত্ব হয়, তাহলে এম-থিওরি তো নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে – যা হলো আরো অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব। তাহলে এটি সবকিছুর তত্ত্ব হিসেবে কতটুকু সফল হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়। 

এখন প্রশ্ন হলো সবকিছুর তত্ত্ব কেন লাগবে আমাদের? পদার্থবিজ্ঞান ছাড়া বিজ্ঞানের অন্য কোন শাখার এ নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে কেন দরকার এই তত্ত্বের? 

আইনস্টাইন তাঁর জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে যে তত্ত্বের সন্ধান করেছেন সেটা ছিল – গ্রান্ড ইউনিফিকেশান থিওরি। তিনি আশা করেছিলেন মহাবিশ্বের সবকিছুর ভেতর একটা গাণিতিক যোগসূত্র খুঁজে বের করার। তিনি সফল হননি। তাতে পদার্থবিজ্ঞানের কোন ক্ষতি হয়নি।

এরপর তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানীরা গ্রান্ড ইউনিফিকেশানের চেয়েও উচ্চাকাঙ্খী একটি তত্ত্বের পেছনে ছুটলেন যেটা থেকে মহাবিশ্বের সব মৌলিক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। এই তত্ত্বকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে যেসব বিজ্ঞানীদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্টিফেন হকিং।  ১৯৮১ সালে লুকাসিয়ান প্রফেসরের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম লেকচারে স্টিফেন হকিং আশা প্রকাশ করেছিলেন পরবর্তী বিশ বছরের মধ্যে সবকিছুর তত্ত্ব (TOE) আবিষ্কৃত হয়ে যাবে। এরপর তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানীদের হাতে আসলে আর কোন কাজ থাকবে না করার। স্টিফেন হকিং তাঁর ব্রিফ হিস্টি অব টাইম বই শেষ করেছিলেন এভাবে: একটি সম্পূর্ণ তত্ত্ব যদি  আমরা আবিষ্কার করতে পারি, সেই তত্ত্ব শুধুমাত্র গুটিকতক বিজ্ঞানীদের কাছে নয়, সবারই বোধগম্য হবে। তখন আমরা সবাই, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাধারণ মানুষ সবাই আলোচনা করতে পারবো কেন এবং কীভাবে আমরা এবং আমাদের মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে। 

স্টিফেন হকিংয়ের জীবনসঙ্গিনী জেন হকিং এর অসাধারণ স্মৃতিকথা “মিউজিক টু মুভ দ্য স্টারস: এ লাইফ উইথ স্টিফেন” অবলম্বনে জেমস মার্শ যখন সিনেমা তৈরি করেন, অনেক ভেবেচিন্তে তার নাম দেন স্টিফেন হকিং-এরই একটি জনপ্রিয় বইয়ের নামানুসারে ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় – কারণ এই সিনেমা স্বয়ং স্টিফেন হকিং এর জীবনের প্রতিফলন। ‘থিওরি অব এভরিথিং’ বইটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া স্টিফেন হকিং-এর সাতটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান বক্তৃতার সংকলন। এই বক্তৃতামালা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে ‘দ্য কেমব্রিজ লেকচার’ নামে। পরে ২০০৫ সালে ‘থিওরি অব এভরিথিং’ নামে বইটি প্রকাশিত হয়। বইয়ের সপ্তম ও শেষ অধ্যায়ের শিরোনাম ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। এর পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে স্টিফেন হকিং লিওনার্ড ম্লোডিনাউয়ের সাথে যৌথভাবে প্রকাশ করেন আরেকটি জনপ্রিয় বই ‘দ্য গ্রান্ড ডিজাইন’। এই বইতেও ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ শিরোনামে একটি অধ্যায় আছে। সবকিছুর তত্ত্বকেই স্টিফেন হকিং মনে করেছিলেন মহাবিশ্বের গ্রান্ড ডিজাইন। 

কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের একটিমাত্র তত্ত্ব দিয়েই মহাবিশ্বের সমস্ত রহস্যের সমাধান করে ফেলা যাবে – এ ব্যাপারে স্টিফেন হকিং-এর যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। ২০০২ সালে স্টিফেন হকিং তাঁর “গোডেল অ্যান্ড দ্য এন্ড অব ফিজিক্স” লেকচারে বলেছিলেন, অনেকেই হতাশ হবেন যদি একটি পরম তত্ত্ব খুঁজে না পাওয়া যায় যার মাধ্যমে সবকিছুই ব্যাখ্যা করা যায়। “আমিও তাদের দলে ছিলাম, কিন্তু আমি আমার মত পাল্টে ফেলেছি। আমি এখন এই ভেবে খুশি যে আমাদের খোঁজার পালা কখনোই সাঙ্গ হবে না। ফলে সবসময়েই আমাদের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টাটা রয়ে যাবে।“


তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থ

১। মোয়াতাজ এইচ ইমাম সম্পাদিত ‘আর উই দেয়ার ইয়েট? দ্য সার্চ ফর এ থিওরি অব এভরিথিং’, বেন্থাম সায়েন্স পাবলিশার্স, ২০১১। 

২। জেমস আর জনসন, ‘ডাজ এ থিওরি অব এভরিথিং এক্সিস্ট?’, ফিলোসফি অ্যান্ড কসমোলজি, সংখ্যা ২৬, ২০২১।

৩। স্টিফেন হকিং ও লিওনার্ড ম্লোডিনাউ, দ্য গ্রান্ড ডিজাইন, ব্যান্টাম বুক্‌স, লন্ডন, ২০১০।

৪। স্টিফেন হকিং, দ্য থিওরি অব এভরিথিং, ফিনিক্স বুক্‌স, ক্যালিফোর্নিয়া, ২০০৫।

৫। জন গ্রিবিন, ইন সার্চ অব সুপারস্ট্রিংস, দ্বিতীয় সংস্করণ, আইকন বুক্‌স, লন্ডন, ২০০৭।

৬। পি সি ডাব্লিউ ড্যাভিস ও জে ব্রাউন সম্পাদিত, সুপারস্ট্রিংস এ থিওরি অব এভরিথিং? ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যান্টো সংস্করণ, ভিক্টোরিয়া, ১৯৯২।

৭। এ থিওরি অব এভরিথিং? ন্যাচার, সংখ্যা ৪৩৩, জানুয়ারি ২০০৫।

৮। ডন লিংকন, আইনস্টাইনস আনফিনিশড ড্রিম: প্র্যাকটিক্যাল প্রোগ্রেস টুওয়ার্ডস এ থিওরি অব এভরিথিং, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০২৩।

৯। ব্রায়ান গ্রিন, দি এলিগ্যান্ট ইউনিভার্স, ভিন্টেজ বুক্‌স, নিউ ইয়র্ক, ২০০৩। 

১০। মিশিও কাকু, দ্য গড ইকুয়েশান: দ্য কোয়েস্ট ফর এ থিওরি অব এভরিথিং, ডাবলডে, নিউইয়র্ক, ২০২১। 

______________
বিজ্ঞানচিন্তা ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত











No comments:

Post a Comment

Latest Post

Wonder-filled Solar System – Part VII

  Uranus and Neptune have oceans of heated water but no land at all. There is a small presence of ammonia and methane gas, which, under extr...

Popular Posts