শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শোচনীয় মৃত্যু ঘটেছে ৫
আগস্ট ২০২৪। কীভাবে কী হয়েছে তার নানারকম চুলচেরা বিশ্লেষণ আমরা পাচ্ছি এবং পেতেই থাকবো
দিনের পর দিন। রাজনৈতিক ইতিহাস বার বার পরিবর্তিত হয় সরকার বদল হবার সাথে সাথে। বিশেষ
করে বাংলাদেশে।
আওয়ামী লীগ ছাড়া দশ দিন আগেও যে দেশে অন্য কোন দলকে মাথা
তুলে দাঁড়াতে সক্ষম বলেও ভাবেনি কেউ – সেখানে এখন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার তোষামোদকারীদের
একজনও নেই।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, হাসিনা-সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি
যে অভিযোগ শোনা গেছে সেটা হলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ। সংবাদপত্রকে নাকি ইচ্ছে মতো
লিখতে দেয়া হতো না।
এখন তো সরকার বদল হয়েছে। এখন তো বলা হচ্ছে – মত প্রকাশের
স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে তো গলা খুলে বলার কথা বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের
ভক্তদের। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যখন পুড়িয়ে দেয়া হলো আগস্টের পাঁচ তারিখেই – কোনো সংবাদপত্র
সেভাবে প্রতিবাদ জানায়নি। যেসব পত্রিকা বিএনপির আমলেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান
দেখাতে ভয় পায়নি – তারাও এখন ভয়ে চুপসে গেছে। আজ ১৫ আগস্ট – শোক প্রকাশটাও শোভনভাবে
করেনি তারা।
আসলে আমরা এতটাই সুবিধাবাদী যে – সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবার
ভয়ে আমরা সবসময়েই ক্ষমতাসীনদের তোষামোদকারী।
প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলি আজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম
– বঙ্গবন্ধুর হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে কী সংবাদ করেছে।
জনকন্ঠ
শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন – জনকন্ঠের মতো এত তোষামোদ
সম্ভবত আর কোন পত্রিকা করেনি। অন্যান্য বছর এই দিনে যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে ভরিয়ে
দিতো - আজ জনকন্ঠ বঙ্গবন্ধুর কোন ছবি ছাপায়নি।
ষোল পৃষ্ঠার পত্রিকায় সামান্য এক ইঞ্চিও জায়গা হয়নি বঙ্গবন্ধুর একটা ছবির জন্য। প্রথম
পাতার অষ্টম কলামে খুবই দায়সারাভাবে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে “পনেরোই আগস্ট আজ” শিরোনামে।
কোন সম্পাদকীয়ও নয়, উপসম্পাদকীয়ও নয়। বরং শেষ পৃষ্ঠার উপরের
দিকে খালেদা জিয়ার রঙিন ছবি ছাপিয়ে সংবাদ করেছে “খালেদা জিয়ার জন্মদিন আজ”।
কালবেলা
শেখ হাসিনার কত কাছের পত্রিকা ছিল কালবেলা। কাল বদলে যাবার
সাথে সাথে ১৫ আগস্টে প্রথম পাতায় ঠাঁই হয়নি বঙ্গবন্ধুর। দ্বিতীয় পাতায় ছোট্ট একটি ছবির
সাথে ছোট্ট একটি প্রতিবেদন – “বঙ্গবন্ধুর ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ।”
খালেদা জিয়ার জন্মদিনের খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপিয়েছে তারা।
প্রথম আলো প্রথম পাতাতে ছোট্ট করে একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। একটি উপসম্পাদকীয়ও ছাপিয়েছে। প্রথম আলোকে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচক মনে করা হলেও আমার মনে হয়েছে প্রথম আলোই বঙ্গবন্ধুকে কিছুটা হলেও সম্মান জানিয়েছে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে।
কালের কন্ঠ
প্রথম পাতার ডানদিকে ছোট্ট একটা বক্স আইটেমে খবর করা হয়েছে – ‘ভিন্ন আবহে ১৫ আগস্ট’।
তৃতীয় পৃষ্ঠায় খালেদা জিয়ার হাসিখুশি ছবিসহ ৮০তম জন্মদিনের খবর।
দৈনিক বাংলা
দৈনিক বাংলা বরাবরই সরকারি মুখপাত্র ছিল। কিন্তু এবছর প্রথম পাতার প্রথম কোণায় এক টুকরো “আজ বঙ্গবন্ধুর ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী”।
প্রথম পাতায় ছোট্ট একটা ছবিসহ ছোট্ট প্রতিবেদন।
দ্বিতীয় পাতায় খালেদা জিয়ার জন্মদিনের খবর।
পূর্বকোণ
দৈনিক পূর্বকোণের প্রথম পাতার বাম পাশে ছোট্ট নিউজ।
প্রথম পাতায় খালেদা জিয়ার জন্মদিনের খবরও ছাপানো হয়েছে একেবারে
মাঝামাঝি জায়গায়।
আজাদী
প্রথম পৃষ্ঠায় ছোট্ট এক টুকরো খবর।
এর চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে ছাপানো হয়েছে খালেদা জিয়ার জন্মদিনের
খবর।
পূর্বদেশ
দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক আওয়ামী লীগের নেতা, চব্বিশের নির্বাচনে
স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। কিন্তু ১৫ আগস্টের পত্রিকার কোথাও বঙ্গবন্ধুর
কোন ছবি ছাপানো হয়নি। প্রথম পাতার নিচের দিকে একেবারে ছোট্ট একটি খবর।
বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা নিশ্চয় পত্রিকার সম্পাদকদের ডেকে বলে দেননি যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী
উপলক্ষে কোন লেখা প্রকাশ করা যাবে না, শ্রদ্ধা জানানো যাবে না। তবে পত্রিকার সম্পাদকরা
কী কারণে হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকে এতটা অবহেলা করতে শুরু করলেন?
=========
16.08.2024 10:34 PM
No comments:
Post a Comment