Tuesday 24 September 2024

মাইকেল ফ্যারাডের জন্মদিনে

 


জনাব মাইকেল ফ্যারাডে,

আপনার জন্মদিনে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

১৭৯১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের নিউইংটন বাটস নামের এক অখ্যাত জায়গায় আপনি জন্মেছিলেন। কিন্তু আপনার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আপনি নিজে যখন বিখ্যাত হলেন, আপনার জন্মস্থানও বিখ্যাত হয়ে গেল।

“জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো” – এরকম আপ্তবাক্য আপনার ভাষাতেও ছিল। আপনি আপনার দরিদ্র কামার মা-বাবার ঘরে জন্ম নেয়াটাকে ভাগ্য বলে মেনে নিয়ে, স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করতে না পারার ব্যাপারটাকে বিধাতার ইচ্ছা বলে মনে করে চুপ করে বসে থাকেননি। নিজের চেষ্টায় আপনি বই পড়তে শিখেছিলেন। বই বাঁধাইয়ের দোকানের সামান্য কর্মচারী হিসেবে বই বাঁধাই করতে করতে যেসব বই হাতের কাছে পেয়েছিলেন, সব বই পড়ে ফেলেছিলেন। শুধু পড়া নয়, পড়তে পড়তে আপনি চিন্তা করতে শিখেছিলেন। গাণিতিক বিজ্ঞানে আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আপনি পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন।

সেই সময় আপনার দেশ ইংল্যান্ডে প্রকৃত মেধার মর্যাদা দেয়ার লোকের অভাব ছিল না (এবং এখনো নেই)। আপনার সাথে পরিচয় হয়েছিল সেই সময়ের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে। তিনি আপনার মেধা এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে আপনাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন রয়েল ইন্সটিটিউশানে গবেষণা করার। আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সেদিন।

আপনার হাত দিয়েই ধরতে গেলে পৃথিবীর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বিপ্লব ঘটে গেছে। ১৮৩১ সালে আপনি আবিষ্কার করেছেন তড়িতচুম্বক আবেশ। চুম্বক ক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুৎক্ষেত্র থেকে চুম্বকত্ব – এসব আপনারই আবিষ্কার। ১৮৩৩-৩৪ সালে আপনি আবিষ্কার করেছেন বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক – ইলেকট্রোলাইসিস বা তড়িৎবিশ্লেষণের নীতি। বর্তমানে আমরা যে গাণিতিক ক্ষেত্রতত্ত্বের ধারণা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি – সেই ক্ষেত্রতত্ত্বের – বিশেষ করে চৌম্বকক্ষেত্রের ধারণা আবিষ্কার করেছিলেন আপনি।

বৈদ্যুতিক মটর উদ্ভাবন করে পুরো পৃথিবীর কর্মপদ্ধতি আপনি বদলে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করে যান্ত্রিক গতি তৈরির পদ্ধতি যদি উদ্ভাবন আপনি না করতেন তাহলে সম্ভবত আমরা এখনো শারীরিক শক্তির উপরই নির্ভর করতাম। আপনার আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনের তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ।

আমরা বিজ্ঞানের অবদানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করি, কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানাই না। কিংবা জানালেও অন্য কাউকে জানাই। কিন্তু আপনি বিজ্ঞানী বলেই তাতে আপনার কিছু যায় আসে না।

হে মহান ফ্যারাডে, আপনার জন্মদিনে একজন সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

শুভ জন্মদিন হে মহাত্মন।


No comments:

Post a Comment

Latest Post

অলিভিয়া নিউটন-জন

  কাজের সুবাদে মাঝে মধ্যে যেতে হয় অস্টিন হাসপাতালে। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ সেখানে ক্লিনিক্যাল কাজকর্ম শেখে, আবার অনেকেই পাস কর...

Popular Posts