দীর্ঘ কঠিন ভর্তিপরীক্ষায় পাস করে একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
জীবন শুরু করেছিল আফসানা করিম রাচি। মার্কেটিং বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের ছাত্রী রাচি। ক্লাস
শুরু হয়েছে মাত্র মাসখানেক আগে। কিন্তু নিজের ক্যাম্পাসেই ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রচন্ড
ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে সে। মাথায় আর মুখে গুরুতর আঘাত পেয়ে প্রাণ হারায় সে। গত
১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ক্যাম্পাসে কলাভবনের রাস্তার
একপাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময়েই রাচিকে ধাক্কা দেয় ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাস্তায় ছিটকে
পড়ে গুরুতর আঘাতের ফলে মৃত্যু ঘটে রাচির। তার সাথে মৃত্যু ঘটে অনেকগুলি স্বপ্নের, অনেকগুলি
বিশ্বাসের।
এধরনের মৃত্যুকে কি নিছক দুর্ঘটনা বলা যায়? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
ক্যাম্পাসের ভেতর অনিয়ন্ত্রিত গতিতে যানবাহন চলে কীভাবে?
এধরনের ঘটনা যে এই প্রথম ঘটেছে তা নয়। এর আগেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
রাস্তায় যানবাহনের ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। কিন্তু নামকাওয়াস্তে কিছু
প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া – দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ ধরনের ঘটনা কি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য? পৃথিবীর যেকোনো সভ্য
দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি সবগুলি রাস্তার গাড়ি চলাচলের গতিবেগ অত্যন্ত সীমিত
রাখার জন্য কড়া আইন রয়েছে। আইন ভঙ্গকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
ক্যাম্পাসের ভেতর বেশিরভাগ রাস্তায় যানচলাচলের গতিবেগ এবং গতিপথ দুটোই অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত
থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা আইনে থাকলেও কেউই তা মানতে চান না।
আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো – আমাদের ভেতর কেমন যেন একটা অস্থির
গোঁয়ার্তুমি বেড়েই চলেছে। যে রিকশাচালক বেপরোয়া গতিতে রাচিকে ধাক্কা দিয়েছে – সে রিকশা
থামায়নি। সেই রিকশায় যে আরোহী ছিল – সেও থামেনি। একজন মানুষ বাঁচলো কি মরলো তাতে কিছুই
তাদের আসে যায় না। সামান্যতম মানবিক বোধটুকুও যখন মাথা থেকে চলে যায় – পৃথিবীর কোন
আইন দিয়েই এধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয় না। তখন ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার
থাকে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি হাঁটাচলার ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুর
জন্যও ভাগ্যের উপর নির্ভর করতে হয় – তাহলে তো তাকে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলার কোন মানে
হয় না। আর যদি আমরা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠানই বলি – তাহলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব
কি ঠিকমতো পালিত হচ্ছে? রাচির মৃত্যু কি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলিকে অপরাধী করে দেয় না?
_________________
২১ নভেম্বর ২০২৪
No comments:
Post a Comment