মানুষ যখন থেকে বুঝতে পেরেছে যে তাদের মগজে বুদ্ধি আছে এবং
বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে বুদ্ধির পরিমাণ এবং তীক্ষ্ণতা বাড়ানো যায় – তখন থেকেই
জানার চেষ্টা করছে বুদ্ধিমত্তা ব্যাপারটি আসলে কী। মানুষ গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করছে
– আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে এবং যান্ত্রিক মস্তিষ্ক বানিয়ে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে
চালানো যায় কীভাবে।
গত আড়াই হাজার বছর ধরে ক্রমাগত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা এবং
গবেষণা কাজে লাগিয়ে মানুষ তার জীবনযাপন আরামদায়ক ও নিরাপদ করার জন্য যা যা লাগে তার
প্রায় সবকিছুই উদ্ভাবন করে ফেলার পরও সন্তুষ্ট নয়। যন্ত্র চালানোর কাজটিও এখন যন্ত্রের
হাতে তুলে দিচ্ছে তারা।
যখন থেকে আমাদের আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে
গেছে তখন থেকেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা শুধুমাত্র
যে শারীরিক কাজের জন্য যন্ত্রনির্ভর হয়ে উঠছি তা নয়, মানসিক কাজ – যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ
প্রক্রিয়াতেও যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। মানুষ এখন যন্ত্রকে বুদ্ধিমান প্রাণির
মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তৈরি করে দিতে শুরু করেছে। আর যন্ত্র যখন বুদ্ধিমান
প্রাণির মতো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে তখন সেই বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারটি হয়ে দাঁড়াচ্ছে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা – বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
আমাদের মগজে স্নায়ুকোষগুলি যেমন প্রাকৃতিকভাবেই কাজ করতে
শুরু করে এবং অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত স্মৃতি জমা রেখে পরবর্তীতে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ
করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে – যন্ত্রের মধ্যেও সেরকম ক্ষমতা তৈরি
করার লক্ষ্যে আজ থেকে ৭৫ বছর আগে শুরু হয়েছে যন্ত্রকে শেখানোর প্রক্রিয়া – মেশিন লার্নিং।
যদিও সেই ১৯৫০-এর দশকের বিজ্ঞানীদের ধারণাও ছিল না যে কম্পিউটার এরকম সহজ হয়ে মানুষের
হাতে হাতে ঘুরবে – তবুও সেসময় তাত্ত্বিক গবেষণা শুরু করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা – কীভাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যন্ত্রের “মগজ” তৈরি করা যায়।
এখন এই একবিংশ শতাব্দীর সিকিভাগ অতিক্রান্ত হবার আগেই আমাদের
দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-এর দ্বারা। এখন
পৃথিবীতে আটশ কোটি মানুষের জন্য দুই হাজার কোটিরও বেশি স্মার্ট ডিভাইস চালু আছে। আগামী
বছরের মধ্যে এই সংখ্যা তিন হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৬৫ হেক্সাবাইট
(৪৬৫ মিলিয়ন টেরাবাইট) ডেটা তৈরি হচ্ছে এই যন্ত্রগুলি থেকে। এই বিপুল পরিমাণ ডেটা সংরক্ষণ
করে সেগুলি বিশ্লেষণ করার পর সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া মানুষের পক্ষে ক্রমেই অসম্ভব হয়ে
দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু মানুষের পক্ষে অসম্ভব কাজগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সামলাতে কাজে
লেগে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অসংখ্য যন্ত্র – যা এখন আমাদের যাতায়াতব্যবস্থা,
অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমন কি রাজনীতিও সামলাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কম্পিউটার কীভাবে এসব করছে? কীভাবে এক কম্পিউটার
আরেক কম্পিউটারের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, কীভাবে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত
হচ্ছে, কীভাবে ডেটা থেকে ছবি তৈরি করছে? কী সেই মৌলিক প্রযুক্তি – যার ফলে আর্টফিশিয়াল
ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং সম্ভব হচ্ছে? এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার
সেই প্রযুক্তিকে সম্মান দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-এর মতো দুনিয়া
বদলে দেওয়া প্রযুক্তির উদ্ভাবনে মৌলিক অবদান রেখেছেন এরকম দুজন বিজ্ঞানী – প্রিন্সটন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হপফিল্ড এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি হিনটনকে
২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।
|
জন হপফিল্ড |
জন জোসেফ হপফিল্ডের জন্ম ১৯৩৩ সালের ১৫ জুলাই আমেরিকার শিকাগো
শহরে। তাঁর বাবার নামও ছিল জন হপফিল্ড। সিনিয়র জন হপফিল্ডও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
পোলান্ড থেকে তিনি ছোটবেলাতেই চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের সন্তান
হবার সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল জন হপফিল্ডের। ১৯৫৪ সালে ফিজিক্স
মেজর নিয়ে তিনি পেনসিলভেনিয়ার সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে বিএ পাস করে কর্নেল ইউনিভার্সিটির
ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন ১৯৫৮ সালে। তাঁর পিএইচডির
গবেষণাক্ষেত্র ছিল সলিড স্টেট ফিজিক্স। তাঁর পিএইচডি থিসিসে তিনি একটি নতুন কোয়ান্টাম
মেকানিক্যাল তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন – যা পরবর্তীতে তাঁর নামে ‘হপফিল্ড ডাইইলেকট্রিক’
মডেল হিসেবে পরিচিতি পায়।
পিএইচডি অর্জনের পর ১৯৫৮ সালেই তিনি যোগ দেন বেল ল্যাবরেটরিতে।
সেখানে হিমোগ্লোবিনের গঠন আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করছিল যে গ্রুপ, সেই গ্রুপে তত্ত্বীয়
পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৬১ পর্যন্ত সেখানে কাজ করার সময় তিনি
জীববিজ্ঞানে – বিশেষ করে ফিজিওলজিতে পদার্থবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক প্রয়োগের সম্ভাবনা খুঁজে
পান। ১৯৬১ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে
যোগ দেন কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স পড়ানো ও গবেষণায়। ১৯৬৪ সালে তিনি চলে যান প্রিন্সটন
ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন।
প্রিন্সটনে তিনি কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের গবেষণার পাশাপাশি
শারীরবিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। কন্ডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের গবেষণায় অবদানের
জন্য ১৯৬৯ সালে তিনি ‘অলিভার বার্কলে পুরষ্কার’ পান।
জীববিজ্ঞান ও শারীরবিজ্ঞানের গবেষণার দিকে তাঁর আগ্রহ জন্মাতে
থাকে – শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যাবলি পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা
যায় দেখে। শরীরের কোষগুলি ক্রমাগত বিভাজিত হচ্ছে। কোষ বিভাজনের সময় কোষের ডিএনএ প্রথমে
ঠিক দ্বিগুণ হয়ে যায় – পরে দুই ভাগ হয়ে আলাদা দুটো কোষে পরিণত হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়
যদি কোন ত্রুটি থাকে তাহলে কোষ বিভাজনের ফলে ত্রুটিযুক্ত কোষের পরিমাণ বাড়তে থাকে
– ফলে শরীরে জিনগত ত্রুটি দেখা দেয়। জন হপফিল্ড এই ত্রুটি শনাক্তকরণের একটি প্রক্রিয়া
আবিষ্কার করেন – যার নাম দেন ‘কাইনেটিক প্রুফরিডিং’।
পদার্থবিজ্ঞান থেকে তাঁর গবেষণার আগ্রহ ক্রমেই সরে যাচ্ছিল
জীববিজ্ঞান ও রসায়নের দিকে, বিশেষ করে শারীরবিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নের দিকে। ১৯৮০ সালে
তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে চলে গেলেন ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির
(ক্যালটেক) কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি ডিপার্টমেন্টে। এখানেই ১৯৮২ সালে তিনি প্রকাশ করেন
তাঁর প্রথম নিউরোসায়েন্স গবেষণাপত্র ‘নিউরাল নেটওয়ার্ক্স অ্যান্ড ফিজিক্যাল সিস্টেমস
উইথ ইমারজেন্ট কালেক্টিভ কম্পিউটেশানাল অ্যাবিলিটিজ’। খুলে যায় কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র
তৈরির পথ। প্রিন্সটনে থাকতে তিনি জৈব অণুর মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদানের তত্ত্ব নিয়ে
ব্যাপক গবেষণা করেছেন। ক্যালটেকে এসে মস্তিষ্কের নিউরনের ভেতরও ইলেকট্রনিক তথ্য আদান-প্রদানের
অনুরূপ একটি কার্যকর তত্ত্ব তিনি দাঁড় করান – যা পরবর্তীতে তাঁর নামে বিখ্যাত হয় –
‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’ হিসেবে। ক্যালটেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্নায়ুতন্ত্রের সাথে
কম্পিউটারের যান্ত্রিক সমন্বয়ের পিএইচডি গবেষণার নতুন ক্ষেত্র।
১৯৯৭ সালে ক্যালটেক থেকে আবার ফিরে এলেন প্রিন্সটনে। এবার
মলিকিউলার বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর হিসেবে। মূল পিএইচডি গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানের
হলেও তিনি জীববিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বের ব্যাপক প্রায়োগিক ক্ষেত্র আবিষ্কার
করেছেন। প্রিন্সটন থেকে অবসর নেয়ার পরেও এখনো তিনি এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে প্রিন্সটন
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত আছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তিনি অনেকগুলি গবেষণা
পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০০১ সালে পেয়েছেন ডিরাক মেডেল, ২০০২ সালে হ্যারোল্ড পেন্ডার অ্যাওয়ার্ড,
২০০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড অব সায়েন্স, ২০১৯ সালে বেঞ্জামিন
ফ্রাঙ্কলিন মেডেল, ২০২২ সালে বোলটজম্যান মেডেল এবং এবছর ২০২৪ সালে পেলেন পদার্থবিজ্ঞানের
সর্বোচ্চ পুরষ্কার – নোবেল পুরষ্কার।
জন হপফিল্ডের উদ্ভাবিত ‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’ খুব দক্ষতার সাথে
কাজে লাগিয়ে মেশিন লার্নিং-এর পথ সুগম করে এবছর অন্য যে বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জেফরি হিনটন। জেফরি হিনটন ‘আর্টিফিশিয়াল
ইন্টেলিজেন্সের গডফাদার’ হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরষ্কার নোবেল
পুরষ্কার পেলেও মজার ব্যাপার হলো – তাঁর পদার্থবিজ্ঞানের কোন ডিগ্রি নেই।
|
জেফরি হিনটন |
জেফরি এভারেস্ট হিনটনের জন্ম ইংল্যান্ডের উইম্বলডনে ১৯৪৭
সালের ৬ ডিসেম্বর। তাঁর মধ্যনাম এভারেস্ট এসেছে তাঁর পূর্বপুরুষ জর্জ এভারেস্টের নাম
থেকে যাঁর নামে এভারেস্ট পর্বতের নাম দেয়া হয়েছে। ব্রিস্টলের ক্লিফটন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক
পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে জেফরি কেমব্রিজের কিংস কলেজে ভর্তি হলেন স্নাতক পর্যায়ের
পড়াশোনা করার জন্য। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ের প্রতিই আগ্রহ অনুভব করছিলেন না।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কয়েকটি গুচ্ছ বিষয় – ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি নিয়ে পড়লেন
কিছুদিন। ভালো লাগলো না। ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন শিলকলার ইতিহাসে। সেটাও ভালো লাগলো না।
কিছুদিন দর্শন শাস্ত্রের ক্লাস করলেন। তাও ভালো লাগলো না। শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে পরীক্ষণ
মনোবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করলেন ১৯৭০ সালে। এর আট বছর পর ১৯৭৭ সালে ইউনিভার্সিটি
অব এডিনবরা থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন। তাঁর থিসিসের
বিষয় ছিল ‘রিলাক্সেশান অ্যান্ড ইটস রোল ইন ভিশান’।
পিএইচডি করার পর জেফরি হিনটন কিছুদিন সাসেক্স ইউনিভার্সিটিতে
পোস্টডক্টরাল গবেষণা করলেন, ইংল্যান্ডের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের অ্যাপ্লাইড সাইকোলজি
বিভাগেও কাজ করলেন কিছুদিন। কিন্তু ইংল্যান্ডে গবেষণার ফান্ড না থাকাতে চাকরির উদ্দেশ্যে
তাঁকে আমেরিকায় পাড়ি দিতে হলো ১৯৮২ সালে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত তিনি কার্নেগি মেলন
ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণা করলেন। ১৯৮২ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে হপফিল্ড
নেটওয়ার্ক আবিষ্কার করেছেন প্রফেসর জন হপফিল্ড। জেফরি হিনটন এই আর্টিফিসিয়াল নিউরাল
নেটওয়ার্ক কাজে লাগালেন তাঁর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর গবেষণায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
বিপুল সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল। এই সম্ভাবনার সবটুকুকে সামরিক শক্তি অর্জনের কাজে লাগাতে
এর গবেষণায় অর্থায়ন করা শুরু করলো আমেরিকান সামরিক বাহিনি।
বিজ্ঞানকে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করার ব্যাপারকে ভীষণ নীতিবিরুদ্ধ
বলে বিশ্বাস করেন প্রফেসর হিনটন। তিনি দেখলেন আমেরিকায় থাকলে তাঁকে গবেষণার জন্য সামরিক
বাহিনীর অর্থপুষ্ট প্রজেক্টে কাজ করতে হবে। তাই তিনি আমেরিকা থেকে কানাডা চলে যাবার
সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে প্রফেসর
হিসেবে যোগ দিলেন। সেই থেকে এখনো তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত। পাশাপাশি
২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি গুগলের বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন গবেষক হিসেবে কাজ
করেছেন গুগলের ডিপ-লার্নিং প্রকল্পে – বিশেষ করে ইমেজ রিকগনিশান এবং ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ
প্রসেসিং ডেপেলপ করার কাজে। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন মানুষের চেয়েও ক্রমশ শক্তিমান হয়ে
উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং এখনো কঠোর আইন তৈরি হয়নি মেশিনের হাত থেকে মানুষের চিন্তার
স্বাধীনতা রক্ষার - ২০২৩ সালের মে মাসে তিনি গুগল থেকে পদত্যাগ করলেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
উত্থান যদিও তাঁর হাত ধরে হয়েছে, যদিও তিনি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গডফাদার’,
মেশিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও টেক্কা দিতে পারে বলে
সন্দেহ করছেন তিনি। তাঁর গবেষণার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি নোবেল পুরষ্কার পাবার পরেও তাঁর
নীতিগত অবস্থানের বদল হয়নি।
নোবেল পুরষ্কারের আগে আরো অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন প্রফেসর
হিন্টন। ২০০১ সালে পেয়েছেন রুমেলহার্ট প্রাইজ, ২০১৪ সালে পেয়েছেন ফ্র্যাংক রোজেনব্লাট
পুরষ্কার, ২০১৬ সালে পেয়েছেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল মেডেল, ২০১৮ সালে পেয়েছেন টুরিং
পুরষ্কার, ২০২১ সালে পেয়েছেন ডিকসন পুরষ্কার, ২০২২ সালে স্পেন সরকারের প্রিন্সেস অব
অ্যাস্ট্রিয়াস পুরষ্কার। রয়েল সোসাইটির ফেলো হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। ২০১৮ সালে পেয়েছেন
কানাডা সরকারের অর্ডার অব কানাডা পুরষ্কার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর পুরো ব্যাপারটাকেই
আমরা অনেকে কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদদের ব্যাপার বলে ধরে নিয়ে থাকি। তাই বিশুদ্ধ পদার্থবিজ্ঞানের
অনেকেই মনে করছেন এবারের পদার্থবিজ্ঞানের পুরষ্কারটিতে সরাসরি পদার্থবিজ্ঞানের অবদান
কম। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল কমিটি কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর বর্তমান পর্যায়ে আসার পেছনে যে মূল আবিষ্কার কাজ
করেছে তা যে মৌলিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়েছে তাকেই সম্মান করেছে।
একথা সত্য যে কম্পিউটার প্রযুক্তির এত অভাবনীয় উন্নতি না
হলে যন্ত্রের ভেতর চিন্তাশক্তি ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিনের
গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ফসল।
মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে পারবে এরকম কৃত্রিম যান্ত্রিক
মস্তিষ্ক তৈরির ইচ্ছে আরো অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। মস্তিষ্কের
নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো করে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটারের
জন্য। এটা করতে গিয়ে অনেকগুলি ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। ১৯৪০-এর দশকে কানাডার
স্নায়ুবিজ্ঞানী ডোনাল্ড হেব তত্ত্ব দিয়েছিলেন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে
কমিয়ে আমাদের শিখন ক্ষমতা বাড়ানো-কমানো যায়। এই তত্ত্বকে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কাজে
লাগিয়েছেন আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক বা কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে।
আমাদের স্নায়ুতন্ত্র যেমন নিউরন দ্বারা তৈরি, কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র
তৈরি হয় ইলেকট্রনিক নোডের মাধ্যমে। এই নোডগুলি একে অন্যের সাথে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে
সংযুক্ত থাকে। শেখার ক্ষেত্রে যেভাবে আমাদের স্নায়ুর সংযোগগুলির উদ্দীপনার হ্রাসবৃদ্ধি
ঘটে – কৃত্রিম নোডগুলির সংযোগকেও প্রয়োজনীয় ট্রেনিং – বা কোডের মাধ্যমে বাড়ানো কিংবা
কমানো যায়। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক যেভাবে নতুন কিছু শেখে এবং মনে রাখে, কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রও
সেভাবে নতুন কিছু শিখতে পারে এবং স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে।
তাত্ত্বিকভাবে এরকম সম্ভাবনা দেখলেও বিজ্ঞানীরা ১৯৮০র দশকের
আগপর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারেননি যে বাস্তবে এরকম কিছু ঘটবে। ১৯৮২ সালে জন হপফিল্ড যখন
তাঁর ‘হপফিল্ড নেটওয়ার্ক’ উদ্ভাবন করলেন – দেখা গেল কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্কের
নিউরনের মতোই কাজ করতে পারে। তিনি তাঁর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন তাঁর সলিড স্টেট ফিজিক্সের
জ্ঞান কাজে লাগিয়ে। চৌম্বকীয় পদার্থের পারমাণবিক ঘূর্ণন বা অ্যাটমিক স্পিন পদার্থের পরমাণুকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুম্বকে
পরিণত করতে পারে। একটি চুম্বকের ঘূর্ণন তার পার্শবর্তী চুম্বকের ঘূর্ণনকে প্রভাবিত
করে। এভাবে সঠিক সংযোগ (ট্রেনিং) এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক নোডের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ
করা যায়।
|
হপফিল্ড নেটওয়ার্ক |
হপফিল্ড নেটওয়ার্কে নির্দিষ্ট সংখ্যক নোড থাকে যারা একে অপরের
সাথে যুক্ত। নোডগুলির মধ্যে ইনপুট তথ্য হিসেবে একটি ছবি দেয়া হয় – যেখানে প্রতিটি নোড
একটি নির্দিষ্ট মান 0 অথবা 1 ধরে রাখতে পারে। এখানে তথ্য ধরে নেয়া যায় 0 যদি কালো হয়,1
হবে সাদা – যেভাবে বাইনারি পদ্ধতি কাজ করে। নেটওয়ার্কের সংযোগ তখন ঠিক করে নেয়া হয়
স্পিন-এনার্জির হিসেবের ভিত্তিতে। এখন আরেকটি প্যাটার্নের ছবি যদি এই নেটওয়ার্কে যোগ
করা হয় – তখন আগের ছবির তথ্যের সাথে এই নতুন প্যাটার্ন মিলিয়ে দেখে। যদি কোন একটা নোডের
মানে তারতম্য দেখা দেয় – তখন নোডের রং বদলে যায়। এভাবে নতুন প্যাটার্নটি পুরনো প্যাটার্নের
সাথে মিলিয়ে নেয়া যায়। এভাবে নেটওয়ার্কে অনেকগুলি ছবি একের পর এক ঢুকিয়ে সবগুলিকে একসাথে
রেখে দেয়া যায়। নেটওয়ার্কের সংযুক্ত স্মৃতি বা এসোসিয়েটেড মেমোরি হিসেবে কাজ করতে পারে
এই তথ্যগুলি। অসম্পূর্ণ তথ্য বা আংশিক তথ্য দিলেও এই নেটওয়ার্ক সংরক্ষিত স্মৃতি থেকে
পুরো তথ্য বের করে দিতে পারে।
একই রকম ছবির সাথে ছবির মিল খুঁজে বের করতে পারা আর ছবি চিনতে
পারার মধ্যে পার্থক্য আছে। শিশুরা যেভাবে নতুন জিনিস দেখতে দেখতে মনে রাখে এবং পরবর্তীতে
আবার দেখলে মনে করে বলতে পারে কোন্টা কী, সেই পদ্ধতিতে কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্রকে কি
শেখানোর ব্যবস্থা করা যায়? এই ভাবনা থেকে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফিজিক্সের তত্ত্ব কাজে
লাগিয়ে জেফরি হন্টন উদ্ভাবন করেছিলেন বোল্টজম্যান মেশিন।
জন হপফিল্ড যখন তাঁর নিউরাল নেটওয়ার্কের অ্যাসোসিয়েটেড মেমোরি
সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন, জেফরি হনটন সেই সময় ছিলেন কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে।
তিনি হপফিল্ড নেটওয়ার্কে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফিজিক্স প্রয়োগ করার কথা ভাবলেন। গ্যাসের
অণুগুলির প্রত্যেকটির ধর্ম যেমন আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা না করেও কিছু সামগ্রিক ধর্ম
পরীক্ষা করে গ্যাসের সামগ্রিক পরিবর্তন শনাক্ত করা যায় – যেমন গ্যাসের চাপ কিংবা তাপ;
সেরকম কোন সূত্র প্রয়োগ কি করা যায় নিউরাল নেটওয়ার্কের মেমোরির ক্ষেত্রে? স্ট্যাটিস্টিক্যাল
ফিজিক্সে বোল্টজম্যান সমীকরণ প্রয়োগ করে হিনটন একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে নাম
দিলেন ‘বোল্টজম্যান মেশিন’। ১৯৮৫ সালে এসংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো।
|
বোল্টজম্যান মেশিন |
বোল্টজম্যান মেশিন হলো মেশিন লার্নিং-এর একেবারে প্রাথমিক
মডেল। এতে শুরুতে দুই ধরনের নোড থাকে। এক ধরনের নোডে তথ্য দেয়া হয় – যাদেরকে বলা হয়
দৃশ্যমান নোড। অন্য ধরনের নোড একটি অদৃশ্য স্তর তৈরি করে। অদৃশ্য নোডগুলিও পুরো নেটওয়ার্কের
অংশ। দৃশ্যমান নোডগুলির মধ্যে যতভাবে সংযোগ ঘটানো সম্ভব সবগুলি একের পর এক স্মৃতিতে
জমা করে দেয়া হয়। কী কী সংযোগ সম্ভব নয়, তার একটা শিখিয়ে দিলে (স্মৃতিতে রেখে দিলে)
বাকি অসম্ভব সংযোগ গুলি এই মেশিন শিখে নিতে পারে। বোল্টজম্যান মেশিন হলো সম্ভাব্য সব
প্যাটার্ন খুঁজে বের করার নেটওয়ার্ক। আমরা যেমন পরিচিত কারো চেহারার সাথে অপরিচিত কোন
মানুষের চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য দেখলেও চিনতে পারি – সেভাবে হিনটনের নেটওয়ার্ক অনেকগুলি
প্যাটার্নের ভেতর থেকে সাদৃশ্য-অসাদৃশ্য খুঁজে বের করতে পারে।
সেই ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ তে যে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ও মেশিন
লার্নিং পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন প্রফেসর জন হপফিল্ড ও জেফরি হিনটন – তা বিপুল বিপ্লব
ঘটিয়ে দেয় ২০১০ সালের পর থেকে। এখন প্রতিদিন যে পরিমাণ ডেটা তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে থেকে
অনেক ডেটা ব্যবহার করা হচ্ছে মেশিন লার্নিং-এ। কম্পিউটারগুলি প্রতিদিনই অনেকগুণ শিক্ষিত
হচ্ছে আগেরদিনের চেয়ে। ১৯৮২ সালে হপফিল্ড তাঁর নেটওয়ার্কে মাত্র তিরিশটি নোড ব্যবহার
করেছিলেন। সবগুলি নোড একে অপরের সাথে সংযুক্ত হলে মোট ৪৩৫টি সংযোগ হয়। এই নোডগুলির
বিভিন্ন মান মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শ’র মতো প্যারামিটারের হিসেব রাখতে গিয়েই তাঁর সেই সময়ের
কম্পিউটার হাঁপিয়ে উঠেছিল। তিনি মাত্র একশটি নোডের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়েও
পারেননি কম্পিউটারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে। আজকের নিউরাল নেটওয়ার্কগুলি ট্রিলিয়ন
ট্রিলিয়ন প্যারামিটার সামাল দিচ্ছে।
২০০৬ সালে প্রফেসর হিনটন উদ্ভাবন করেছেন ডিপ লার্নিং ও ডিপ
বিলিফ নেটওয়ার্ক। বহুমাত্রিক নিউরাল নেটওয়ার্ক-কে প্রশিক্ষণ দিয়ে মেশিন-লার্নিং বহুগুণ
শক্তিশালী করার ব্যাপারে অবদান রেখেছেন বলেই প্রফেসর হিনটনকে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর
গডফাদার’ বলেন সবাই।
জন হপফিল্ড এবং জেফরি হিনটনের দেখানো পথ অনুসরণ করে এখন আমাদের
হাতে এসে গেছে চ্যাটজিপিটির মতো ট্রান্সফর্মার মডেল। এখন আমাদের প্রযুক্তির অনেকটাই
স্বয়ংক্রিয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিচ্ছে।
কিন্তু একই সাথে পরোক্ষভাবে আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ
করতেও শুরু করেছে। এখন একটা ম্যাসেজ টাইপ করতে গেলেও শব্দের জোগান দিচ্ছে মেশিন – আমরা
বেশিরভাগ সময় সেই শব্দগুলিই ব্যবহার করছি। কিন্তু অন্যদিকে যেসব গবেষণা আমাদের পক্ষে
মেশিনের সাহায্য ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়, যেমন মহাবিশ্বের আন্তনাক্ষত্রিক বিপুল আয়তনের
ডেটা বিশ্লেষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করে ফেলার দিকে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এবছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কার অদূর ভবিষ্যতে জীবপদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাকে
আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করলে মেশিন লার্নিং
অন্যমাত্রা পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তখন হয়তো আমরা ক্যান্সারের মতো রোগের সঠিক কারণ
খুঁজে বের করে তাকে প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হবো।
তথ্যসূত্র
১। www.nobelprize.org
২। মাইকেল নেগনেভিতস্কি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ গাইড
টু ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস, এডিসন-ওয়েসলি, ইংল্যান্ড ২০০৫।
৩। সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান, ২৫ জুন ২০২৪।
৪। ইথেম আলপ্যায়দিন, মেশিন লার্নিং, এম আই টি প্রেস, কেমব্রিজ,
২০২১।
৫। মার্গারেট বোডেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যা ভেরি
শর্ট ইন্ট্রোডাকশান, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৮।
============
বিজ্ঞানচিন্তা অক্টোবর ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত