Sunday, 5 January 2025

হায় সজনি - প্রেম বিরহের উপাখ্যান

 


সমরেশ মজুমদারের জীবনের শেষের দিকের উপন্যাস ‘হায় সজনি’ প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ এর ডিসেম্বরে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে একটানা পড়ে ফেলার মতো ছোট্ট উপন্যাস। উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিনী কিংবা সাতকাহনের সমরেশ মজুমদার – তাই প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। 

উপন্যাসের ঘটনার সময়কাল দীর্ঘ। শুরু হয়েছে সেই সময় থেকে যখন কলকাতার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছেলে-মেয়েতে মেলামেশা তো দূরের কথা – কথা বলাটাকেও দোষের বলে ধরা হতো। গল্পের নায়িকা মৃণালিনী বড়লোকের মেয়ে, গাড়িতে করে কলেজে যায়। সারাক্ষণ মা-মাসীর নজরদারিতে থাকে। এরমধ্যে হঠাৎ একদিন মৃণালিনীর ইচ্ছে হলো স্বাধীনভাবে বাসে চড়তে। বাসস্টপে ‘টু বি’ নম্বর বাসের জন্য দাঁড়ালে অমিত তাকে বাস স্টেশনে দেখেই নাটকীয় কায়দায় “টু বি অর নট টু বি” বলে একটা মনলোগ আউড়ে দেয়। 

সেই তিল থেকেই তাল। না, সরাসরি মৃণালিনী কিংবা অমিতের কথাও হয় না, মেলামেশার তো প্রশ্নই ওঠে না। মৃণালিনীর মাসী খোঁজখবর নিয়ে অমিতের হোস্টেলে হাজির হন গোয়েন্দার মতো। অমিতকেই ভার দেন মৃণালিনীর ওপর নজরদারি করার জন্য। 

সময় গড়ায়। মৃণালিনীর বিয়ে হয়ে যায়, আবার অকালে বিধবাও হয়ে যায় সে। অমিত গল্প লেখে। তার গল্প থেকে সিনেমা হয়। মৃণালিনী সিনেমায় অভিনয় করতে চায়, আবার একটি সিনেমায় অভিনয় করেই হারিয়ে যায়। 

বছরের পর বছর কেটে যায়। অমিত বিখ্যাত সাহিত্যিক হয়। কিন্তু তার মনের ভেতরে মৃণালিনীর জন্য একটা জায়গা রয়েই যায়। শেষ অধ্যায় শেষ হয় নাটকীয় বিরহের মধ্য দিয়ে। একটু বেশি নাটকীয়ই বলা যায়। 

উপন্যাসে সব উপাদানই আছে। সমরেশ মজুমদার অভিজ্ঞ বিখ্যাত লেখক। কোনো উপাদানের ঘাটতি রাখেননি। কিন্তু উপাদানগুলি কেমন যেন একটু ছাড়া ছাড়া খাপছাড়া রয়ে গেছে। হতে পারে প্রত্যাশার পরিমাণ বেশি ছিল বলেই কেমন যেন অতৃপ্তি রয়ে গেছে। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

প্রবীর মিত্র: বড় ভালো লোক ছিল এবং অন্যান্য

  অভিনেতা প্রবীর মিত্র মারা গেছেন ৫ জানুয়ারি ২০২৫। ১৯৪১ সালের ১৮ আগস্ট তাঁর জন্ম। সে হিসেবে তিরাশি বছর বয়সে জীবনাবসান কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা...

Popular Posts