২৩
হরতাল
আমার তথা আমাদের সবার
চাকরি জীবনের আরেক যন্ত্রণা ছিল হরতাল। এরশাদকে উৎখাত, তারপর ১৯৯১-৯৬, ১৯৯৬-২০০১,
২০০১-০৬, ২০০৬-১১ বাংলাদেশে কখনোই হরতালের রাজনীতি বন্ধ হয়নি। সেসময় এমন ছিল কেউ
একজন কোথাও দাঁড়িয়ে, ‘আগামী কাল
হরতাল’ বললেই
হরতাল হয়ে যেত।
যাই হোক, যেহেতু বিরোধীদল হরতাল ডাকে
তাই যখনই যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের কড়া হুকুম- অন্যদিন না এলেও তোমার প্রাপ্য
ছুটি নিতে পার, কিন্তু হরতালে আসবে না! তাহলে তুমি কি বিরোধীদলের চাকরি কর? সুতরাং
শোকজ খাও, আর চাকরি বাঁচাতে চাইলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মাতৃআজ্ঞা পালনের মত
সরকারী আজ্ঞা পালনে নদী সাঁতরে হলেও প্রতিষ্ঠানে হাজির হও।
আমি যখন বারোকোয়ার্টারে থাকতাম তখন ১৯৮৮
থেকেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিকে কর্তৃপক্ষ এতটা জোর দেয়নি।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ঘাঁটির ভিতরে এবং আশে-পাশের হওয়ায় ক্লাসে উপস্থিত থাকত।
কিন্তু কলেজের আশে-পাশের গুটিকয় ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকত। বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা
মিলিয়ে মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড়ালে গোলাম মহীউদ্দীন স্যার কমন সাবজেক্টের টিচার
হিসেবে আমাকে ক্লাসে পাঠাতেন।
আমার তখন মনে পড়ত বাংলায় পড়ি দেখে আমার
ভাইয়েরা আমাকে ঠাট্টা করে গল্প শোনাত- এক বাংলায় এমএ পাশ কোথাও চাকরি পায় না। হঠাৎ
একদিন সে চিড়িয়াখানার একটা বিজ্ঞাপন দেখল, সম্প্রতি চিড়িয়াখানার বাঘটি মারা গেছে,
এ ব্যাপারে যারা আগ্রহী তারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন। ঠিকানা... ইত্যাদি
ইত্যাদি। দীর্ঘদিনের বেকার লোকটা বিজ্ঞাপন পড়ে কোন কিছু বুঝতে না পেরে সিদ্ধান্ত
নিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করবে। সাক্ষাতে জানতে পারল, যে বাঘটি
মারা গেছে তার পরিবর্তে রাতারাতি নতুন বাঘ যোগাড় করা সম্ভব নয়। কিন্তু চিড়িয়াখানায়
দর্শক আসে এবং বিশেষত শিশুরা বাঘ দেখতে চায়। তাই আমরা বাঘের ছালটি রেখে দিয়েছি।
কোন ব্যক্তি আগ্রহী হলে ছালটি পরিয়ে তাকে বাঘ বানানো হবে।
বেকার লোকটি প্রশ্ন করল- তারপর? তারপর
আর কি – সকাল দশটা
থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সে বাঘের খাঁচায় কাটাবে, তারপর ছুটি। কিন্তু আমরা লোক
পাচ্ছি না। কেউই রাজি হয় না।
-আমি রাজি। আপনি আমাকে কাজটা দিন।
দেখবেন চিড়িয়াখানার দর্শক বেড়ে যাবে।
লোকটাকে বাঘের ছাল পরিয়ে খাঁচায় ঢুকিয়ে
দেয়া হল। বাঘের খেলা দেখতে চিড়িয়াখানায় দর্শক সমাগম বেড়ে গেল। শিশুরা দলে দলে আসতে
লাগল। কর্তৃপক্ষও খুশি। হঠাৎ একদিন আতিশয্যে ডিগবাজি খেতে গিয়ে বাঘবাবাজি পাশে
সিংহের খাঁচার রডের মাঝখানে আটকে গেল। আর যায় কোথা বাঘের গলা দিয়ে মানুষের ত্রাহি
চিৎকার শুরু হল কিন্তু গোঁ গোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হচ্ছে না। এমন সময় সিংহ মহারাজ
তার রাজকীয় চালে হালুম হুলুম করতে করতে বাঘের কানের কাছে এসে বলল, ভয় পাসনে, আমিও
বাংলায় এমএ পাশ।
ক্লাস নিতে নিতে আমি মনে মনে বলতাম আয়
তোরা দেখে যা বাংলায় এমএ পাশের চাকরির কি চাহিদা!
কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে তো চলতে পারে
না। তাছাড়া এটা প্রকারান্তরে গদিনশিন সরকারের বিরোধিতা হয়ে যায়। তাই নিয়ম করা হল
ম্যাডামরা আসমত আরা ম্যাডামের কোয়ার্টারে থাকবে আর স্যাররা ব্যাচেলর স্যারদের
কোয়ার্টারে অথবা নিজ দায়িত্বে শহর থেকে আসা যাওয়া করবে।
ম্যাডামরা এলে আমরা খুব মজা করতাম। সব
ম্যাডামদের বাসায় খাওয়া-দাওয়া, চা-নাস্তা হৈ-হুলুস্থুল আড্ডা।
এরশাদের পতনের আগে থেকে নব্বইয়ের দশক
শেষে একুশ শতাব্দূতে এসে আমাদের হরতাল জট আর গেল না। ১৯৯৪ এর ডিসেম্বরে যেদিন আমি
বাসা বদলাই সেদিনও অর্ধদিবস হরতাল ছিল। আমরা বাসা নিয়েছিলাম পাঁচলাইশে। আমি আর
হুসনা আপা এত বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলাম যে আমি চলে আসার কিছুদিন পর উনি পাঁচলাইশে ওনাদের
বাসায় চলে এলেন। পাপ্পু ততদিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অনার্স পড়ছে,
সম্ভবত বড় ছেলে রানাও।
এবার শুরু হল আমাদের হরতালে লেফট-রাইট।
এর আগে সংযুক্তা, আইভী এবং আরো স্যাররা অন্য কোন বাহন না পেয়ে কিছুদিন সদরঘাট এসে
সাম্পানে যাওয়া-আসা করত। একদিনতো সাম্পান ঘূর্ণিতে পড়ে ডুবে ডুবে তারপর কোনমতে
রক্ষা পেয়ে ওরা কলেজে এল। সবার কাপড় শরীর সব ভিজা। আমি তখনও কোয়ার্টারে ছিলাম।
আইভী আমার বাসায় গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে এসেছিল। আর সংযুক্তা চিরতপস্বিনী ঐ ভিজা
কাপড়ে এ্যাপ্রোন জড়িয়ে সারাদিন ক্লাস করেছিল।
টানা হরতালে আমি তখন উইংকমান্ডার (তখনো
স্কোয়াড্রন লীডার) আমজাদের বাসায় আমার ছোট মেয়ে দিঠিসহ থেকে যেতাম। কিন্তু দিনে
দিনে, বছরে বছরে হরতাল এত বিধ্বংসী হয়ে উঠল যে আমরা হরতালকারীদের অভিশাপ দিতে দিতে
কলেজে আসতাম। একবার নাসরীনের (শিক্ষিকা নাসরীন বানু) রিক্সায় জর্দার কৌটা মেরেছিল
সম্ভবত, বেচারী কিছুটা ব্যাথা পেলেও ভয় পেয়েছিল তার শতগুণ।
এরপর থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছিল-
আপনারা কিভাবে আসবেন সেটা আপনাদের বিষয়, কিন্তু রিস্ক নেবেন না।
কি হাস্যকর কথা-জলে নামব কিন্তু চুল
ভিজাব না। আর কর্তৃপক্ষকেই বা কি বলার আছে। এভাবে ৭২ ঘন্টা করে দিনের পর দিন হরতাল
দিলে তাঁরাই বা কি করবেন আর দেশই বা কিভাবে চলে। রাজনীতিকরাতো আর সাধারণ মানুষের
কল্যাণে হরতাল ডাকে না, তারা ডাকে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। এই হরতালে
যাতায়াতে এত বাহন বদল করতে হত- কখনো রিক্সা, কখনো টেম্পো, কখনো কলেজের
এমবারকেশান গেটে দাঁড়িয়ে থাকা- অনেক দুঃসহ সে স্মৃতি। শাহীন কলেজে
যাতায়াতের এই কষ্ট আমার স্মৃতিতে এত গভীর প্রভাব ফেলেছে যে, এখনো টেম্পোতে
কোন মহিলা যাত্রীকে বসা দেখলে আমার মনে হয় ওটা আমি।
২৪
শিক্ষক-অভিভাবক মতবিনিময়
সভা
সত্যি কথা বললে এই মতবিনিময়
সভাটা আমার কাছে কখনোই প্রয়োজনীয় ফলপ্রসূ মনে হয়নি। কারণ কমপক্ষে
আড়াই হাজার ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক ও শিক্ষকদের মতবিনিময় সভায় শিক্ষকদের জরুরি
ছুটি বাতিল করে হলেও উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হত। অন্যদিকে অভিভাবক বিশ থেকে ত্রিশজনও
উপস্থিত থাকতেন না। ঘাঁটির অভিভাবকের জন্য শাহীন কলেজের দ্বার ছিল অবারিত। অনেক এয়ারম্যান
টিফিন পিরিয়ডে বাচ্চাকে টিফিন দিয়ে যেতেন। মায়েরা কেউ কেউ ক্লাস চলাকালীন
সময়ে জানলা দিয়ে বাচ্চাকে টিফিন পৌঁছে দিতেন। এতে আমরা শিক্ষকরা
অসন্তুষ্ট হলেও তারা অপ্রতিভ হতেন না।
আর লেখাপড়ার সমস্যা হলে তো কথাই নেই। পরীক্ষার উত্তরপত্রে
বা ক্লাসটেস্টে আধ নম্বর, এক নম্বর বাড়ানোর জন্য তারা খরিদ্দার আর দোকানীর মত দেন-দরবার করতেন। এসব ঘটত বেশিরভাগ
নিচের ক্লাসে। সন্তান যত উপরের ক্লাসে উঠত ততই সে যেমন চালাক হত তেমনি মা-বাবারা তাদের
দুষ্টু বুদ্ধি এবং সিলেবাসের পাঠ্যবিষয় অনুধাবন করতে পারতেন না। এর ফলে প্যারেন্টস
ডে তে শিশুদের অভিভাবকরা যত আসতেন বড়দের অভিভাবক তত আসত না। আর কলেজের ছাত্রদের
যে চিঠি দেয়া হত দু-একজন সুবোধ বালক ছাড়া অন্যরা সেটা অভিভাবককে জানাত কিনা সন্দেহ।
প্যারেন্টস ডে বার্ষিক পাঠ্যসূচিতেই তারিখ
নির্ধারিত করে দেয়া হত। আবার BRD (Base
Routine Order)এ ছাপানো হত। কিন্তু যখন তখন
কলেজে ঢুকে শিক্ষকদের কমনরুমে বসেও যখন আলাপ করা যায় তখন শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি নষ্ট
করে তারা আসবে কেন। আমরা নিজেরাও লেখাপড়া করে এসেছি। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
শিক্ষকদের নিকট খোঁজ নিয়েও দেখেছি কিন্তু এরকম সময়-অসময়ে অভিভাবকদের
অবাধ প্রবেশ আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল না। থাকবে কেন? এতে প্রতিষ্ঠানের
ডিসিপ্লিনের যে ক্ষতি হয় তা আমি নিজে দেখেছি।
তবু মতবিনিময় সভার আগে অভিভাবকদের মতামত
চাওয়া হত, এজেন্ডা তৈরি করা হত। কিন্তু বিশাল RTS অডিটোরিয়ামে
স্টেজে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অর্থাৎ ঘাঁটি অধিনায়ক সচিব, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ।
স্টেজের ডান দিকে দরজা দিয়ে ঢুকলেই সেই সিটে
ম্যাডামরা অপর পাশে স্যাররা এবং কিছু পুরুষ অভিভাবক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসতেন। মাঝের সারিতে
মহিলা অভিভাবকরা বসতেন। পিয়ন থাকত সবার হাতে হ্যান্ডমাইক সরবরাহের জন্য। প্রথম যখন জয়েন
করেছিলাম তখন দেখতাম এয়ারম্যানরা কিছু আসতেন এবং শিক্ষকদের ত্রুটি বিচ্যুতি অক্ষরে
অক্ষরে তুলে ধরতেন। কিন্তু শিক্ষকদের কিছু বলার নিয়ম ছিল না। তারা কাঠগড়ার
আসামীর মত চুপ।
একবার ঘাঁটি অধিনায়ক শমসের আলী স্যার অভিভাবকদের
কড়াভাবে সাবধান করলেন অযথা বিষয় নিয়ে আলোচনা না করার জন্য। সভা ডাকা হয়
গঠনমূলক সমালোচনার জন্য আর আপনারা একতরফা শিক্ষকদের সমালোচনা করেন তাহলে শিশুরা কি
শিখবে। উনি একরকম তিরস্কারই করলেন। এরপর অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি কমে গেল। পরে শিক্ষকদের
কাছে বললাম, চলুন আমরা আবেদন জানাই আমাদেরও সুযোগ দিতে হবে। কারণ যে শিক্ষকের
বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করার বা জবাব দেয়ার অধিকার রাখেন। তখন আমরাও কথা
বলা শুরু করলাম। অনেক পরে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এটাকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ
শাখার জন্য পৃথক পৃথক দিন তারিখ ধার্য করা হয়েছিল।
মাধ্যমিক ও কলেজ শাখায় অভিভাবকের উপস্থিতি
ছিল অঙ্গুলিমেয়। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ হল পূর্ণ করার জন্য কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে
আসতেন। এ বিষয়টা আমার কাছে ততোটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কারণ কোন কোন
অভিভাবকের মাত্রাজ্ঞান থাকে না। তারা অনেক সময় শিক্ষক সম্পর্কে এমন অভিযোগ করেন যা
ছাত্রের সম্মুখে শিক্ষকের সম্মান ক্ষুন্ন হয়। আবার অনেক অভিভাবক কলেজ এবং
শিক্ষকদের অকুন্ঠ প্রশংসাও করতেন। কিন্তু কথায় আছে না এক পাত্র দুধে একফোঁটা
গোচনাই যথেষ্ট। এরকম দুর্মুখ দু-একজন থাকতেন যারা নিজের ছেলের দোষ না দেখে অন্যের
ছেলে মানে তার বন্ধু তাকে খারাপ করছে সেটা নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দিতেন।
ব্যক্তিগতভাবেও অনেক অভিভাবক শিক্ষকদের
কাছে ফোন করতেন। তারাও নিজের ছেলের খারাপ ফলাফল এবং অবাধ্য আচরণের জন্য ছেলের
বন্ধুকে দায়ী করতেন। যতই বলতাম ভাই আপনি আপনার ছেলেকে সামলান, তারা সেকথা কানেই
তুলতেন না। বরং আমাদের কান ঝালাপালা করে ফেলতেন।
আমি নিজেও অনেকসময় কিছু কিছু
ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কঠোর আচরণ করতাম। কারণ গোচনার মত দুষ্টু এবং অবাধ্য,
অমনোযোগী দু-একজন ছাত্রের জন্য পুরো ক্লাসেই পড়াশোনার ডিস্টার্ব হত। এখন এসব মনে
পড়লে নিজেই কষ্ট পাই। কেবলই মনে হয়, আহারে ওরাতো শিশু ছিল, ছিল দুরন্ত কিশোর-কিশোরী
এবং সদ্য তারুণ্যের স্পর্শে উচ্ছ্বসিত তরুণ-তরুণী। যদি সেসময়ে আমার স্নেহের হাতটা
ওদের মাথায় রাখতাম তাহলে হয়তো মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারত অনেককিছু।
শ্রেণিকক্ষের চেয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই
আমি সমবেত সমবয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের সামলাতেই একটু কঠোর হতাম। তবে রাগের ভান বা কান
ধরে শাস্তি দেয়ার বেশি কিছু করতাম না। কারণ আমার সহকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী সবাই
নিশ্চয় স্বীকার করবেন আমার কথাতেই কাজ হত বেশি এবং অনেকসময় উপস্থিতিই যথেষ্ট ছিল।
অনেক অভিভাবক (মহিলা) দিনের পর দিন আমাদের কমনরুমে এসে চেয়ার দখল করে বসে থাকতেন।
আমরা এ বিষয়ে অনেক সহিষ্ণু ছিলাম যদিও ন্যায়ত তাদের এবং আমাদের কারো ব্যবহারই সঠিক
ছিল না।
২৫
কলেজের ক্লাস টিচার
কলেজের
ক্লাস টিচার হওয়া আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। কারণ বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন
ইত্যাদি আবশ্যিক বিষয়গুলোর শিক্ষকদেরই কলেজে ক্লাসটিচার করা হত। এই আরেকটা কাজ
যেটা লাঠিয়ালগিরি করার চেয়ে কম নয়। হুমায়ুন আহমেদ তাঁর ‘অয়োময়’ নাটকে পাখি পালকের নাম দিয়েছিলেন ‘পাখাল’ আর আমি বলতাম আমরা
ছাত্র চরাই সুতরাং ‘ছাত্রাল’।
এই ছাত্রালগিরি করা আরেক হ্যাপার ব্যাপার ছিল।
বিশেষ করে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশিত হলে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী কোন
না কোন বিষয়ে অকৃতকার্য হত। নিয়ম ছিল অকৃতকার্য হলে অভিভাবককে আনতে হবে। তার বন্ড
নিয়ে প্রমোশন দেয়া হবে অথবা ২ বিষয়ের বেশি হলে পুনঃপরীক্ষা নেয়া হবে।
এই বয়সী ছেলেরা অভিভাবকদের কাছে ঘেঁষে
নাকি! তার ওপর আবার পরীক্ষায় ফেল। “মারের ওপর ওষুধ নেই”- অভিভাবক
অর্থাৎ পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কর্তা পিতা আগে উত্তম-মধ্যম দেবেন তারপর মাকে যা নয়
তা বলে তিরস্কার করবেন। “তোমার ছেলে,
তোমার ছেলে” বলে। আর
যদি ভাল করে কলার নেড়ে বন্ধু-স্বজন-সহকর্মীদের কাছে গল্প করবেন ‘আমার ছেলে’ বলে! ছেলেও একদিন বাবা
হবে সুতরাং উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কিছু গুণ তারা পাবে না? তাই দেখা যেত তারা
পরিচিত কাউকে, অথবা দরিদ্র ভিখিরিকেও পারলে ভাল পোশাক পরিয়ে বাবা সাজিয়ে নিয়ে আসত।
কলেজশুরুর দিকে কিছু দুষ্টু ছাত্র ভিখারীকে দশ-বিশ টাকা দিয়েও এগুলো করত। অবশ্য
ধরা পড়তেও দেরি হত না।
আমি ক্লাস টিচার থাকাকালীন একবার এক
ছাত্র বার্ষিক পরীক্ষায় এক ছাত্র তার বাবাকে নিয়ে এল শর্তসাপেক্ষে প্রমোশন হল।
দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় ফুফাকে নিয়ে এল, বলল, বাবা বিদেশে।
আমার হঠাৎ মনে হল এই ভদ্রলোক না গতবার
এসে বলেছিলেন, তিনি ওর বাবা।
আমি প্রশ্ন করতেই উনি অপ্রস্তুত হয়ে
আমতা আমতা করে বললেন, ঐ বাবাও যা ফুফাও তা!
উপস্থিত অধ্যক্ষ এবং আমি হেসে উঠলাম।
আরেকবার একটা ফোন এল অফিসে- একজন
অভিভাবক আমার সাথে কথা বলতে চান। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলল, স্লামালেকুম
ম্যাডাম, আমি অমুকের বড় ভাই। ইস্টার্ন রিফাইনারীতে আছি। সে আমার কাছে থাকে। ক্লাস
ঠিকমত করেতো ম্যাডাম। খারাপ করলে আমি বাবা-মাকে কি বলব।
আমি শুনে যাচ্ছি। বাকহারা। এই ছেলে বেশিরভাগ
সময় ক্লাসে আসে না এবং না আসার জন্য আমার অনুমতি নিয়েছে। কারণ সে আমাকে জানিয়েছে
তার বাবা নেই তাই তাকে চাকরি করে পড়তে হচ্ছে। সেজন্যে রেগুলার ক্লাস করা তার পক্ষে
সম্ভব হয় না। একথা শুনে কার মন নরম হবে না! আমি তাকে বলেছি, ঠিক
আছে যাই করো পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। এটা মাফ করা যাবে না। আর এখন কি শুনলাম!
যখন তার ভাইকে এটা বললাম, সে বেচারা হায়
হায় করে উঠল। একরকম আর্তনাদ। কি বলেন ম্যাডাম, আমার বাবা-মা বাড়িতে আছেন। ভাল
কলেজে পড়ানোর জন্য আমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছি।
কি আর বলব, এসব দুষ্টু ছেলের দল নিয়েই
আমাদের দিন কাটে। এতে ঝামেলাও আছে আবার একধরনের হাস্যরসও আছে।
তবে সবচেয়ে যে ঘটনাটি মনে হলে আমি আজও
অনুতপ্ত হই সেটা ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি একটি ঘটনা। টেস্ট পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা
অন্য বিষয়ে পাশ করেও যদি এক বিষয়ে দুই পেপার মিলিয়ে ৬০ পেত তাহলে তাকে পরীক্ষা
দেয়ার জন্য নির্বাচিত করা হলেও তার সেই নম্বরটি বাড়ানো হত না বা কোন গ্রেডমার্ক
দেয়া হত না। যাতে রিপোর্ট কার্ড দেখে সে এবং তার অভিভাবক এ ব্যাপারে বিশেষ যত্ন
নেয়। আমাদের কলেজে ক থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত যা ঘটত তার জন্য ঘাঁটি কর্তৃপক্ষের
অনুমোদন লাগত এবং টেবুলেশন শিটে তাদের স্বাক্ষরের কলাম থাকত।
আমরা এভাবে পাঠালাম। সেবার চেয়ারে
প্রশাসন ও ঘাঁটি অধিনায়ক কে ছিলেন মনে নেই। কিন্তু তারা এই ৬০ প্রাপ্তদের ফাইনালের
জন্য বাদ দিলেন অর্থাৎ নাম কেটে দিলেন।
আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি টেস্টের
পর ছেলেরা সাধারণত লেখাপড়ায় সিরিয়াস হত এবং ঐ তিন মাসের অনুশীলনে ভালভাবে উতরে
যেত। কিন্তু ওনারা সেটা জানেন না। ওনাদের কাছে ‘আপনা মরজি, আপনা খেয়ালই যথেষ্ট’। সুতরাং অধ্যক্ষ বা
শিক্ষকদের সাথে কোন আলোচনা না করেই তারা কাজটা করলেন অনেকটা তুঘলকী
স্টাইলে।
এখন আমরা কি করি। ছেলে মেয়েদের জন্য
যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি তাদের মুখ দেখাতেও লজ্জা লাগছে। ওরা আমাদের কাছে এসে বার
বার অনুরোধ করছে, না হয় আমাদের রি-টেস্ট নেন।
এভাবে কদিন যেতে তারা প্রতিবাদ জানাতে
শুরু করল। এমবারকেশন থেকে কলেজের রাস্তায় তারা মাটিতে শুয়ে রইল। ফলাফল? আরো খারাপ।
ওপরের আদেশে প্রভোস্টরা ওদের তাড়া করে যাকে ধরতে পারল তাকে নিয়ে ঘাঁটির সেলে
ঢুকাল। অবশেষে অভিভাবকসহ এসে চেষ্টা তদবিরে তাদের মুক্ত করা হল। এই ঘটনাটি মনে
পড়লে এখনো আমার অনুশোচনা হয়।
আমরা যখন লেখাপড়া করেছি তখন ছিল বই পড়ার
যুগ। আমরা সাজেশান বুঝতাম না, টেস্টপেপারেরও তেমন চল ছিল না। শুধু ইংরেজি Made Easy-র চল ছিল। তখনকার ছাত্রদের
কথা জানি না। মেয়েদের স্কুল কলেজে পড়ার ফলে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। অনেকটা ‘কুয়োর ব্যাঙ’। তার ওপর মাকে
ছেড়ে স্কুল জীবন ও হোস্টেল জীবন বেশিরভাগ কেটেছে স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে। অনেকটা ‘ফটিকের দশা’। ফটিক বেচারা
একে মাতৃবিচ্ছেদ তায় অন্যদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে টিকতে পারেনি। আমি কোনমতে টিকে
গেছি এবং ধাপে ধাপে কীভাবে যেন উতরেও গেছি।
ছোটবেলা থেকে গল্পের বই পড়া এবং মায়ের
মুখে নানা গল্প শুনে আমার মধ্যে গল্প-কবিতা লেখার ঝোঁক জন্ম নিয়েছিল আর
ফ্রিহ্যান্ড লেখার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল। আজো ভাবলে আমার নিজেরই অবাক লাগে কিভাবে
পাশ করে এলাম। আমাদের সময় নবম ও দশম শ্রেণীতে বেশ কটা ইংরেজি বই পাঠ্য ছিল। যেমন ‘গালিভার’স ট্রাভেল’-এর প্রথম অংশ, মর্ডান
এ্যাডভেঞ্চার, চিলড্রেন ইন হিস্ট্রি এবং পোয়েমস ফর দ্যা ইয়াং পিপল। পরীক্ষার আগে
আমি এর অনেকগুলোর বাংলা অনুবাদ পড়ে যেতাম কারণ ইংরেজিতে লেখা উত্তর মুখস্থ করা
সম্ভব নয়।
আমার প্রচন্ড দুর্বলতা ছিল অঙ্কে।
কিভাবে ঐকিক, চলিত, গড়, মিশ্র ইত্যাদি পাটিগণিতের অঙ্ক বুঝতাম, এলেজ্রেবা,
জ্যামিতিতে এত সামান্য জ্ঞান ছিল যে রেজাল্টের আগে বুক দুরু দুরু করত। তখন একটা
কথা প্রচলিত ছিল ‘টিটিএমপি’ অর্থাৎ টেনেটুনে
ম্যাট্রিক পাশ। জানি না কোন ম্যাজিক মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের
পরীক্ষাগুলোতে ২য় বিভাগ ও ২য় শ্রেণী অর্জন করেছি তা আজও আমার কাছে এক অপার বিস্ময়।
যখন মাস্টারি করতে এলাম তখন নোটের যুগ।
উচ্চমাধ্যমিকে বাংলা ১ম পত্রে অর্থাৎ সাহিত্য, গদ্য, উপন্যাস এবং ২য় পত্রে নাটকে
বড় প্রশ্নের মান ১৫ করে আর রচনা ২০ নম্বর। আর পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করতেন
অনেকটা পান্ডুলিপি লেখার ভিত্তিতে। যত বড় উত্তর লিখবে তত নম্বর। একেকটা ব্যাখ্যা
বা ভাব-সম্প্রসারণও আড়াই-তিন পৃষ্ঠা লিখেও ১০এ (মান নম্বর) ৫/৬ পাওয়া ভাগ্যের
ব্যাপার। সুতরাং আমরা স্রোতের অনুকূলে নৌকা ভাসাই। তবে আমি চেষ্টা করতাম বানান এবং
বাক্যগঠন যেন শুদ্ধ হয় এবং প্রশ্নোত্তর বিষয়ভিত্তিক হয়। এতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী
(কলেজের) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হত। এত ধানবাছা চালবাছার মত করে খাতা দেখলেতো ফেল
করবেই। আজ মনে হয় আরেকটু considerate হলেই বোধহয় ভাল
ছিল।
আমার ছোট মেয়ে ৯ম অথবা ১০ম শ্রেণীতে ভাবসম্প্রসারণে
‘বিদ্বান’ বানান ভুল করে
কয়েকবারই ‘বিদ্যান’ লিখেছিল। আমি তাকে ১০এ
সাড়ে তিন দিয়েছিলাম। সে জানতে চেয়েছিল, উত্তর শুদ্ধ
হলেও শুধু একটা বানানভুল করলে এত নাম্বার কাটা যাবে।
-আমি বলেছিলাম হ্যাঁ, কারণ এতে করে এই
বানানটি তোমার আর কখনো ভুল হবে না।
এ জবাবে সে সন্তুষ্ট হয়নি। অবশ্য নিজের
মেয়ে বলেই আরো বেশি কড়া ছিলাম। এখনো তাদের ধারণা তাদের মা “গ্রেট ডিক্টেটর”! ছাত্র-ছাত্রীরা কি তাই
ভাবে! জানি না।
তখন নোটের যুগ। স্যাররা প্রাইভেট পড়াতেন
এবং বড় বড় নোট দিতেন এবং ‘স’ আদ্যক্ষর নামের একজন
স্যার তখন চট্টগ্রাম শহরে বাংলা-ইংরেজি দুটোই প্রাইভেট পড়াতেন।
আমাদের ওপরও নির্দেশ ছিল নোট দেয়ার।
চেষ্টা করতাম সহজ ভাষায় লিখতে। কারণ আমি সহজ শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত। কিন্তু কোন
কোন ছাত্রের হয়ত দ্বিধা কাটত না।
একদিন এক ছাত্র আমাকে ক্লাসে প্রাগুক্ত
স্যারের নোট এনে দিল দেখার জন্য। এত কঠিন কঠিন শব্দচয়ন মনে হয় মাথায় ‘লোষ্ট্রাঘাত’ হচ্ছে। আমি বললাম শোন
তোমাদের একটা গল্প শোনাই। পুরো ক্লাস হৈ হৈ করে উঠল- কী ম্যাডাম বলেন বলেন। আমি
আমার গৃহকর্তার কাছে শোনা গল্পটি তাদের শোনালাম- এক পন্ডিত, অর্থাৎ যখন আমাদের
দেশে আধুনিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি তখন সাধারণত হিন্দু ছাত্ররা সংস্কৃত
পন্ডিতের টোলে আর মুসলিমরা মাদ্রাসায় আলেমদের কাছে তালিম নিত। তো এরকম এক পন্ডিত
তার শিষ্যদের সবসময় শুদ্ধ সংস্কৃত বা তৎসম শন্দ ব্যবহার করে কথা বলার জন্য
বেত্রাঘাত করতেন। একদিন পন্ডিত ডাব্বা হুঁকোয় তামাক টানছেন গুড় গুড় করে। আয়েশে চোখ
দুটি মুদ্রিত। এমন সময় তামাকের কলকে থেকে একটি অগ্নিকণা পন্ডিতের মুন্ডীত মস্তকের
পিছনে টিকিতে পড়ে জ্বলে উঠল।
তখন এক শিষ্য হাঁটু গেড়ে হাত জোড় করে
বলল, গুরুজী, গুরুজী তদীয় ত্রামকূটের কলিকা হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রভঞ্জন তাড়িত
হইয়া তদীয় মস্তকের পশ্চাতে টিকির উপর পতিত হইয়া টিকি প্রজ্জ্বলিত হইতেছে।
গুরুজী এতক্ষণ হাঁ করে শুনছিলেন, এবার
দ্রুত হস্ত তাড়নের দ্বারা টিকির অগ্নি নির্বাপন করতে করতে বললেন, হারামজাদা, এত
কথা না বলে, আমার টিকি পুড়ে যাচ্ছে বললে টিকিটা বাঁচত। কিন্তু ছাত্ররা কি বলবে।
তারাতো নাচার। শুদ্ধ তৎসম শব্দ ব্যবহার না করলে গুরুজী যে তাদের চরম শাস্তি দেন।
ক্লাসে হাসির হুল্লোড় পড়ে গেল। হাসতে
হাসতে কারো চোখে পানি। কেউ কেউ বাক্যগুলো আওড়ানোর চেষ্টা করছে। কেউ ব্যর্থ হয়ে
বলছে ম্যাডাম, আরেকবার বলেন।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, তোমাদের নোটগুলো
তো এরকম। শক্ত শক্ত শব্দ যেন মাথায় ইট-পাটকেল মারছে। এরচেয়ে সহজ ভাষায় লেখ। পাঠ্য
বিষয় চিন্তা কর। পড়ার ‘হৈমন্তী’ অথবা তার সময়ের সমাজ
ব্যবস্থা, নারীদের ওপর অত্যাচার, আবার ‘বিলাসী’তে দেখ
সমাজের জাতিভেদ ও বর্ণভেদ প্রথা। অথচ সে সময়েও বিলাসী কত সাহসী, প্রেমের জন্য সমাজ
সংসারকে তুচ্ছ করে তার মহৎ প্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেল। আবার মৃতুঞ্জয় –তার সাহসও কি কম? প্রবন্ধ
যদি ভাবো, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ দেখ কিভাবে
তাঁর ভাবনাগুলো আমাদের দৃষ্টি ও চেতনার উন্মীলন ঘটায়! ওরা শুনত। কিন্তু নোট মুখস্থ
করার পদ্ধতি ওদের চিন্তাশক্তিকে একরকম বিকল করে দিয়েছিল। তাই তখন নোট মুখস্থ আর
ভাল রেজাল্ট সিস্টেমের বিরুদ্ধে কজন যেতে পারে! পারলেও সিস্টেমের কাছে তারা পরাজিত
হয়। সেটা কিশোর-তরুণ মনের জন্য আরো কষ্টকর।
যখন ‘মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার’ রচনা আলোচনা করতাম তার
আগে ছাত্র-ছাত্রীদের দাঁড় করিয়ে শপথ করাতাম- আমি প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে কখনো মাদক
বা কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য স্পর্শ করব না।
তারা মুষ্টিবদ্ধ হাতে শপথ নিত। মাঝে
মাঝে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুষ্টুমি করতাম- মানা করতাম, তারপর কৌতুক শোনাতাম- এক
বাবা খুব সিগারেট খেতেন। এত নেশা যে ছাড়তে পারেন না। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক
ইতিমধ্যে তার শরীরে প্রকট হয়ে উঠেছে। তাই ভাবলেন, ছেলে যাতে এই নেশা না করে তাকে
ভয় ধরানোর জন্য ডাকলেন সিগারেট খাওয়াবেন বলে। তার ধারণা ছোট বয়সে এর তিক্ত স্বাদ
পেলে ভবিষ্যতে আর এ পথ মাড়াবে না। কিন্তু বাবার পীড়াপীড়িতে ছেলে অনেকক্ষণ অসম্মতি
জানিয়ে বললো, ‘বলছিতো এখন
খাব না। এই একটু আগে একটা খেয়ে এসেছি’।
ক্লাস শুদ্ধ হেসে গড়াগড়ি। আমি বললাম
আমিও এই বাবার মত আমার ছেলেদের পাঠ দিচ্ছি নাকি! দ্যাখো, সাবধান!
এরকম বিভিন্ন সময়ে ক্লাসে হাসি-গল্পে,
অথবা করুণ কাহিনী শোনাতাম। বলতাম বই পড়ো, নিজেকে গড়ো। দু-একজন ক্লাস শেষে পিছু
পিছু এসে বইয়ের নাম জানতে চাইত।
No comments:
Post a Comment