-----------------------------------
রিফাৎ আরা রচনাসমগ্র
উপন্যাস - অচেনা আপন ।। প্রকাশক - মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৫
___________________________________
৩৩
ধানমন্ডির একটি
রেস্তোরাঁয় বসে অপেক্ষা করছে
অভী। সবাইকে মেসেজ
পাঠিয়েছে আজ এখানে আসতে। সবাই ok করেছে। এখন বিকাল
চারটা। সাড়ে চারটা
থেকে পাঁচটার মধ্যে সবাই
এসে যাবে। তবে ঢাকা
শহরের যানজটে কে কখন এসে পৌঁছাতে
পারে তার কোন হদিস
নেই।
মোবাইলের মেসেজের
শব্দ হতে মেসেজ খুলে
দেখল অভী। “মহাখালী
যানজটে আধঘন্টারও বেশি জ্যামে
পড়ে আছি। কখন পৌঁছাব
জানি না”।
আরিয়ানা সেলফি
তুলে পাঠিয়েছে, (এসি চলছে
তবু গরমে ঘামছে) - "জ্যামে গাড়িতে বসে আছি,
feeling bore. অভীর হাসি
পেল- এত ছটফটে তার এই বোনটা।
আবার শব্দ- "ভাইয়া জ্যামে আটকে আছি বনানীতে। আমার জন্য ওয়েট করো প্লিজ। মালিহা।"
একদিনের পরিচয়ে
মালিহা সবাইকে এত আপন করে নিয়েছে
যেন এত দিন তাদের
অপেক্ষাতেই ছিল সে।
ছোটফুপ্পির দুই মেয়ে
বর্ণা, নীপাও আসবে। আসবে
অভীর মামাতো ভাই দীপ্ত।
সুবর্ণগ্রাম থেকে
ফিরে এসে ভীষণ অস্থিরতায়
ভুগছিল সে। ছোটবেলা
থেকেই অরিনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। কখনও নিজের বাড়ি কখনও
অরিনদের বাড়িতে খেলাধুলা, গল্প,
গানে মেতেছিল। বেড়াতে
যাওয়া হত একসাথে। বছর দুয়েক আগে জাহাঙ্গীর
নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ডস
ক্লাবের আয়োজনে পাখি দেখতে
গিয়েছিল সবাই মিলে। বাইনোকুলার
চোখে দিয়ে সবাই খুব মজা করছিল। শুধু অরিন একটা গাছের
নিচে একটা বাঁধানো শানের
ওপর বসেছিল। শেষ বিকেলের
কমলা রঙের রোদ ওর মুখে
এসে পড়েছিল। আপন মনে দূরের
দিকে তাকিয়ে ছিল সে।
ছবি তুলতে
তুলতে আচমকা তার দিকে
চোখ ফেরাতে নিজের ভিতরে
প্রচন্ড একটা তোলপাড় উঠেছিল। তার গোপন গভীর সত্তা
বলে উঠেছিল- এই মেয়েটিকে
আমি ভালবাসি। আশ্চর্য
এত কাছাকাছি থেকেও এতদিন
বুঝতে পারিনি! অরিন বুঝতেও
পারেনি অভীর ভালবাসার নৈবেদ্য
কখন তাকে অঞ্জলি দিয়েছে।
তারপর দুটো
বছর কেটে গেছে। অভী অস্থিরতায়
ভুগেছে। কতবার বলতে
চেয়েছে। কিন্তু কথা মুখের
কাছে এসে থমকে গেছে। অরিনের সাথে খুনসুটি বেড়েছে। কিন্তু তার ইশারা ইঙ্গিতে
আভাস পেয়ে চোখ দুটো
ঝিকিয়ে উঠলেও কখনো সেভাবে
সাড়া দেয়নি সে। হয়তো
সেই রাতটির জন্যই অপেক্ষা
করছিল। সে রাতের
পাগল করা জোছনা অরিনের
বুকের আগল খুলে দিয়েছিল। অপেক্ষার অবসানে জানিয়েছিল- ভালবাসি।
কিন্তু বাবার
আদুরে কন্যা অরিন বাবাকে
খুব ভয় পায়। বাবার
কথার বাইরে সে চলে না। না হলে এ লেভেল পাশ করেই বাবার
কথামতো তুই আমেরিকা যেতে
রাজি হয়ে গেলি। কেন রে? তোর কি এদেশে
এমন কেউ নাই যার কথা মনে হলে তোর বুকটা
খামচে ধরবে। কী পাষাণ,
কী পাষাণ। থাক বাবা
তবু শেষ পর্যন্ত সুবর্ণগ্রামের
সেই রাতে অভী কথাটা
বলার সুযোগ পেল।
"আমরা
এসে গেছি।"–
আরিয়ানার কন্ঠস্বরে অভীর মগ্নতা
ভাঙল।
"কী ব্যাপার একেবারে
ধ্যানী Buddah হয়ে গেছ দেখি। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম
তবু তুমি দেখছ না!"
অভী হাসল। উঠে দাঁড়িয়ে
বলল, "ওয়েলকাম প্লিজ। বাংলায় বললে- স্বাগতম, স্বাগতম।"
আরিয়ানা বাঁ হাত কোমরে
রেখে নিচু হয়ে ডান হাতে
Bow করল- "with pleasure sir" তার ভঙ্গিতে অভী-অরিন
হেসে উঠল।
একে একে সবাই
এসে পৌঁছালে ওরা সবাই
একটা বড় টেবিল ঘিরে
বসল। মালিহা ফুলের
তোড়া আর চকোলেট নিয়ে
এসেছে, বর্ণা খুব সুন্দর
একটা কেক।
অভী আগেই
পিৎজার অর্ডার দিয়ে রেখেছিল।
অরিন
বলল, "চাচী কেমন
আছে, মালিহা?"
"ভাল,
মা আর ইফতি আমার
সঙ্গে এসে উনিশ নম্বরে
আমার খালামনির বাসায় গেল।"
"চাচী জানে?"-
অরিন চোখ বড় করল।
"হ্যাঁ। আমি মাকে
বলেছি অভীভাইয়ার কথা।"
"আর কী
কী বলেছ বলোতো সোনামনি"- আরিয়ানার বলার ভঙ্গিতে
সবাই হেসে উঠল।
"আর কী
বলব, বলেছি অভী ভাইয়া
খুব ভাল আর আর অ-রি-ন" বলতে বলতে সে তোতলাতে
লাগল।
"তাকে ভালবাসে। তাইনা!" –এবার
বর্ণার কথায় সবাই ওর দিকে
তাকাল। সে কাঁধ
ঝাঁকিয়ে বিজ্ঞের মত বলল,
"ভালবাসার মধ্যে এত hide and seek
এর কী আছে বুঝিনা। আমি হলে তো চিৎকার
করে বলতাম- আমি অভীকে
ভালবাসি।"
অভী লাফিয়ে উঠল,
"দোহাই আমি তোকে
ভালবাসি না। আমার
ভালবাসার নাম- অরিন।"
"আরে আমি কি আমার
কথা বলেছি নাকি? আমি তো অরিনের
কথাটার fill in the gaps করেছি। তোমার
মত একটা সেকেন্ড হ্যান্ডকে
আমি কেন like করতে যাব। বোগাস।" তার ভাবভঙ্গিতে
মজা পেয়ে সবাই আবারও
হেসে উঠল।
মালিহা ফুলের
তোড়াটা অরিনের হাতে তুলে
দিল। এবার বর্ণা
বলল, "এসো এবার
কেক কেটে সেলিব্রেট করি। দুজনে একসাথে কাটবে কিন্তু।"
অভী আর অরিন
কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। বর্ণা কেক কাটার প্লাস্টিকের
ছুরিটা অরিনের হাতে দিল। অভী এতক্ষণে ফুলদানিতে রাখা
লাল গোলাপটা তুলে
অরিনের হাতে দিল।
এতক্ষণ চুপচাপ
অভীর ছোটবোন অমি গেয়ে
উঠল- "ভালবাসি, ভালবাসি
এই সুরে কে কাছে
দূরে বাজায় বাঁশি"-
সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে
কান পেতে শুনছে শুধু
অরিন চোখ তুলে তাকাতে
পারছে না। তার গাল দুটোতে
লালের আভা।
****
৩৪
সাবেরার
মাথাটা গরম হয়ে আছে। বুঝতে পারছে না প্রেশার
বাড়ল কিনা। ফোন করলে
ফ্যামিলি ডক্টর এসে চেক করে দিয়ে
যাবে। কিন্তু ইচ্ছা
করছে না। জহির
জানতে পারলে বার বার প্রশ্ন
করবে – "প্রেশার বাড়ার
কারণ কী? কোন অনিয়ম
হল কি না। যেন এমনি
এমনি কারো প্রেশার বাড়ে
না। আসল কারণ
কাল রাতে মোটেও ঘুম হয়নি
তার।"
কাল সন্ধ্যায় ভাবী
ফোন করেছিল। অভী তাকে
অরিনের সাথে সম্পর্কের কথা জানিয়েছে। কাল সন্ধ্যায় একটা রেস্তোরাঁয় ছেলেমেয়েরা সবাই
মিলে সেলিব্রেট করেছে। শরীফের
মেয়ে মালিহাও নাকি এসেছিল। অথচ তার মেয়ে দুটো
এত বজ্জাত তাকে কিছুই
বলেনি! অরিনটা এত নরমসরম
মেয়ে ছিল অভীর পাল্লায়
পড়ে সেটাও বখে গেছে। এখন বলছে আমেরিকা যাব না। এখানেই পড়াশোনা করব।
কী সাহস মেয়ের। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবার
পর এখন বলছে যাব না। না যা। তোর বাপ যখন ঘর থেকে
বের করে দেবে তখন মজা বুঝবি। মাঝখান থেকে আমি আমার
ভাইবোনকে হারাব। তোদের
গুষ্টিতো কেউ কারো
সাথে মিশে না।
এবার আমাকেও একা করে ছাড়বে।
ভাবী আবার বলেছে,
ভাইয়া নাকি ব্যাপারটা accept করেছে। ভাইয়ার
আবার এ্যাকসেপট করা আর না করা কি। ভাবী হ্যাঁ বললে হ্যাঁ,
না বললে না। ছেলেটাকে তো লাই দিয়ে
মাথায় তুলেছে। দুনিয়ায়
এত মেয়ে থাকতে আমার
মেয়ের দিকে চোখ পড়ল। হারামজাদা- মনে মনে গাল পাড়ল। তুই জানিস না তোর ফুপা
কি চিজ। সে কখনও
মানবে এসব। মাঝখান
থেকে তোদেরও কষ্ট আমারও
কষ্ট।
"এ্যাই
শোন তো।" জহিরের সম্বোধনে চমকে
উঠল সাবেরা।
"কী ব্যাপার?
এত চমকালে কেন? কোন কিছু
ভাবছিলে?
"না, কী
আর ভাবব। কী
বলতে এসেছ বলো।"
"বলছিলাম অরিন-আরিয়ানা
কোথায়। ওদের একজনকে
বলতো, আমার বাজেট আর গেস্টদের
লিস্টটা কম্পিউটারে ইন করে একটা
প্রিন্টআউট করে দিতে।"
"ওরাতো
ঘরে নেই।"
"অ,
কোথায় গেছে?"
"কি জানি
দুইবোন একসাথে কোথায় যেন গেল। বলল, তাদের বন্ধুদের গেট টুগেদার
আছে।"
"মাহিন
কোথায়?"
"ওর ঘরে গেমস
খেলছে।"
"ছেলেটা
গেমসের নেশা ছাড়তে পারল
না। আর কদিন
পরে তো হাইস্কুলে যাবে। এখন এসব বাদ দিতে
বলো।"
"তুমিই
বলো। আমি বললে তো শোনে না।"
"ঠিক আছে বলব। কিন্তু কদিন থেকে তুমি
যেন কোন একটা বিষয়
নিয়ে চিন্তিত। কি সেটা
জানতে পারি কি?"
সাবেরার বুকটা
ধক করে উঠল। তাড়াতাড়ি
বলে উঠল, "কই নাতো। কেন তোমার এরকম মনে হচ্ছে?"
"না অনেকদিন
ধরে দেখছি তো, তাই কিছুটা
বুঝি আর কি। মনে হচ্ছে
কোন সমস্যায় তুমি খুব বিচলিত। রাতেও এপাশ ওপাশ করো,
এর মানে ঘুম হচ্ছে
না।"
সাবেরা চুপ করে রইল। একটা ভয়ানক সত্যের মুখোমুখি
হতে হবে ভেবে তার বুকের
ধুকপুকানি বেড়ে গেল। মুখটা
ফ্যাকাশে হয়ে উঠল। জহির কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ
করলেন। সাবেরা সহজ সরল শান্তিপ্রিয়। আর শান্তিপ্রিয় বলেই এতগুলো
বছর শাশুড়িকে নিজের ঘরে রেখেছে। তত্ত্বাবধান করেছে। ছেলেমেয়ে
ঘরসংসার নিয়েই তার জীবন। ছেলেমেয়ে, কাজের মানুষ, ড্রাইভার
কারো সাথেই সে কঠিন
আচরণ করে না। কিন্তু
সুবর্ণগ্রাম থেকে আসার পর তাকে
অন্যরকম মনে হচ্ছে। চোখে
মুখে চিন্তার ছাপ।
"অরিন আমেরিকা
যাবে না শুনে কি
তুমি চিন্তিত? আরে সে তো ছেলে
মানুষ আমাদের ছেড়ে এতদূরে
যেতে কষ্ট হবে এটাতো
স্বাভাবিক। আমারও কি খারাপ
লাগছে না? সে জন্যে
তো বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া
যাবে না। তুমিও
এত কষ্ট পেয়ো না। যখনই খারাপ
লাগবে মেয়েকে দেখতে যাবে। আর আমিতো এমনিতেই যাই।"
সাবেরার গলার
ভেতর কথা থমকে আছে। মনে হচ্ছে ঠেলে সেগুলোকে
বের করে দিতে পারলে
বুকটা হালকা হত। কিন্তু
তাতে জহিরের যে প্রতিক্রিয়া
হবে সেটা ভাবতে গিয়ে
বুকটা আরো ভারি হয়ে শ্বাস
ফেলতে কষ্ট হচ্ছে।
"কী হল সাবেরা,
আমি এত কথা বলছি
তুমি এরকম থ মেরে
আছ কেন? কথা বলো।
"কী বলব?"
এতক্ষণে জহিরের দিকে তাকিয়ে
ধরা গলায় বলল সে। তার চোখ দুটো জল ভরা ছলছল।
"আরে এত মনখারাপ
করছ কেন? মেয়ে যেতে
এখনো তো মাসখানেক দেরি। এর মধ্যে এত কাজ। আম্মার খাওয়া করব। বিশাল
আয়োজন। আমার মাথা
খারাপ হয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে
তুমি যদি এভাবে মন খারাপ
করে থাকো তাহলে সামলাবো
কিভাবে।" বলতে
বলতে সাবেরার কোলের উপর রাখা
হাত দুটো ধরল জহির। স্ত্রীর মন বোঝার
চেষ্টা করল।
সাবেরা
নিজেকে শক্ত করল।
তাকে বলতেই হবে।
কোন দ্বন্দ্ব সে সহ্য করতে পারে না।
নিজের ভিতরেই কষ্ট হয়।
তার ওপর মেয়ের জন্য কষ্ট।
জহিরের দিকে তাকাল।
বলল, "বুঝতে
পারছ না তোমার মেয়ে কেন যাবে না?"
"এটা বোঝার কি আছে।
মেয়ে নিজেই বলেছে, সবাইকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
এটা সাময়িক, ছেলেমানুষী।"
"না ছেলেমানুষী নয়।
সে প্রেমে পড়েছে।"
"হোয়াট?" আকস্মিক ধাক্কায় স্ত্রীর হাত ছেড়ে উঠে বসে।
"এসব কী বলছ তুমি! কার সাথে প্রেম, কখন এসব ঘটল, আমাকে বলোনি কেন?"
"কখন বলব? আমিও জানতাম না।
সেদিন আমেরিকা যাবে না বলে তোমার ঘর থেকে বেরিয়ে এল সেদিন আমাকে বলেছে।"
"আমাকে তখনই বলনি কেন।
একটা জোর ধমক দিয়ে এসব প্রেম-ট্রেম ছাড়িয়ে দিতাম।
কিন্তু ছেলেটি কে? তাকেও একটা শিক্ষা দিতে হবে তো।"
সাবেরার বুকটা
আবার ধুকপুক করে উঠল। ছেলেটার নাম মুখে আনতে
কষ্ট হচ্ছে। তার ভয় হচ্ছে
নামটা বলার সাথে সাথেই
না তার বাপ-ভাইকে
অপমান করে বসে। মরা বাপের
অপমান সে সইতে পারবে
না। মেয়েটা যে কী ঝামেলে
পাকাল।
"বলো না ছেলেটা
কে?" একটু জোরেই প্রশ্ন
করল জহির।
দ্বিধান্বিত
কন্ঠে সাবেরা বলল, "অভী।"
"অভী-
অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের ছেলে
অভী!"
"হ্যাঁ।"
"এতো দেখছি
ঘরের শত্রু বিভীষণ। তোমার
লাই পেয়ে সে এতটা
দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে।"
"আমি কখন লাই দিলাম? এসব কী বলছ তুমি?"
"হ্যাঁ, ঠিকই বলছি।
ভাইয়ের ছেলে বলতে অজ্ঞান।
কিন্তু অরিনকে বলে দিও এটা অসম্ভব।
আমি আমার বন্ধু ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ডিরেক্টর মাহমুদ হকের ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে দেব বলে ঠিক করে রেখেছি।
ছেলে লন্ডনে এম-বি-এ করছে। এ
সম্পর্কটা আমার ব্যবসার জন্যেও জরুরী।"
"নিজের ব্যবসার স্বার্থোদ্ধারের জন্য তুমি মেয়ে বিয়ে দিতে চাও?" সাবেরার কথাগুলো আর্তচিৎকারের মতো শোনাল।
"হ্যাঁ, এতে দোষ কোথায়? তাছাড়া একঘরে বার বার সম্বন্ধ করার চাইতে আত্মীয়তাও বাড়ল।
শাখা প্রশাখা যত বেশি হবে সুযোগ সুবিধাও তত বেশি।"
"আমাকে
বিয়ে করার সময়ও কি একথা
ভেবেছিলে?"
"কিছুটা যে ভাবিনি
তা নয়। সমাজে
দাঁড়াতে গেলে ক্ষমতাবান অভিভাবকের
প্রয়োজন আছে।"
"বুঝলাম। জীবনের
ফাঁকিটা আজ আমার কাছে
ধরা পড়ল। এসব তোমার
মত হিসেবি মানুষের মাথাতেই
আসে। কিন্তু এটাও
তুমি জেনে রাখো মেয়ের
ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে
দিতে আমি দেব না। সে তুমি যতই হিসাব
কর।" সাবেরার
গলায় রাগ ঝরে পড়ল।
"তার মানে
এই, তুমি তোমার ভাইয়ের
ছেলেকে আশকারা দিয়েছ।"
"না এতদিন
দিইনি। জানতামও না। আজ থেকে দেব।"
"শোন সাবেরা
অযথা উত্তেজিত হয়ো না। তোমার ভাইয়ের কথা ভাবো-
বাবা মায়ের আদরে আদরে
তোমার বাবার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত
ব্যবসার কিছুই দেখেনি। হঠাৎ
তার মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়ল। তখন তার শ্বশুর কি তাকে
সাহায্য করেনি। আমিও তো করেছি। অথচ বউয়ের
চ্যালা হয়ে ছেলেটাকে ছেড়ে
দিয়েছে।"
"ছেড়ে
দিল কোথায়? সে তো ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।"
"ঐ আরকি
পড়াতো নাম মাত্র। গান করে গিটার
বাজায়। এসব কি কোন ভাল ছেলেকে
মানায়? এতদিন আমি কিছু
বলিনি। এখন আমি তোমাকে
জানিয়ে দিচ্ছি- যখন তখন ওকে এ বাড়িতে
আসতে মানা করে দাও।"
"তুমিই করো কাজটা,
নয়তো তোমার মেয়েকে বলো আমি কোনভাবেই
এ সম্পর্ক মেনে নেব না।"
"তুমিই বলো। মেয়ে কি আমার একার?"
"হ্যাঁ,
আমিও বলব। এখন ঝামেলায়
আছি। আম্মার কাজটা
শেষ হয়ে যাক। তারপর
আমি দেখব কিভাবে সে আমেরিকা
না যায়।"
সাবেরা চুপ করে রইল। সংসারে একটি ঝড় আসন্ন। ভাল লাগছে না। আয়নার
মতো তাকেও না মেয়েকে
চিরদিনের মত হারাতে হয়। আর বাবার বাড়ির সঙ্গে
সম্পর্ক। না সাবেরা
আর ভাবতে চায় না। তবে এই পরিণাম ঠেকাতে
হবে যে করেই হোক।
****
No comments:
Post a Comment