-----------------------------------
রিফাৎ আরা রচনাসমগ্র
উপন্যাস - অচেনা আপন ।। প্রকাশক - মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৫
___________________________________
৯
সুবর্ণগ্রামের চৌধুরী
বাড়িতে মহা হুলুস্থুল। দীঘির
পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা
বাড়ির দিকে ঢুকেছে তার দু'পাশে খুঁটি গেড়ে
টিউবলাইট লাগানো হয়েছে। আকাশে
যদিও শুক্লপক্ষের চাঁদের আলো কিন্তু
সে আলো তেমন প্রভাব
ফেলতে পারছে না। দীঘির
ঘাটে আলো। বাড়ির
চৌহদ্দী জুড়ে এমনকি কবরস্থানেও
যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই লাশের অপেক্ষায়, লাশ এসে পৌঁছালে
রাতের মধ্যে দাফন করা হবে।
এখন সন্ধ্যা ছ'টা বাজে। একটু
আগে মাগরেবের নামাজ শেষ হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর মসজিদের
মাইকে কোরান তেলাওয়াতের ফাঁকে
ফাঁকে জানাজায় শরীক হওয়ার
জন্য সবাইকে আহবান জানানো
হচ্ছে। বিশাল তিনতলা বাড়ির সামনে সামিয়ানা টানিয়ে লাইট দেয়া হয়েছে।
চেয়ার বিছানো।
লোকজন আসছে যাচ্ছে আলাপ করছে।
কেউ কেউ মোবাইলে ফোন করে জানতে চাইছে লাশের গাড়ী কতদূর এসেছে।
খাবারের আয়োজন করেছে তৌহিদা বানুর মামাশ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা।
ভ্যানে করে বড় বড় সসপ্যানে রান্না করা খাবার আসছে।
বাড়ির পুরনো কাজের লোক আনুমিয়া আর মোমিনের মা সবকিছু দেখাশোনা করছে।
জহিরের চাচাতো
ভাই হাবীব যে কিনা
তার অফিসের একজন কেরানিও, সে বড়ভাইয়ের
নির্দেশে তিনদিন আগেই এসে বাড়িঘর
সাফসুতরো করিয়েছে। টয়লেটের
হ্যান্ডশাওয়ার থেকে শুরু
করে সিলিন্ডারের গ্যাস
সবকিছু বার বার চেক করেছে। গত তিনদিনে
সে অন্তত দশ থেকে
পনেরবার বাথরুম পরিষ্কার করিয়েছে। বিছানা-সোফা বার বার ঝাড়া
হয়েছে। শহর থেকে
ছেলেমেয়েরা আসছে এদের অনেকেই
জীবনে গ্রাম দেখেনি। একটাই
সমস্যা পল্লীবিদ্যুতের কারণে
বার বার কারেন্ট যায়। তার জন্য জেনারেটর রাখা
হয়েছে। কিন্তু জেনারেটরে
তো রাস্তার বাতি বা গিজার
চালানো যাবে না। তাই সবকিছু
সুসম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা
করেও হাবীব টেনশানে ঘামছে। একই টেনশান খালাতো ভাই
তপনেরও।
এলাকার বৌ-ঝিয়েরা
ইতিমধ্যে অনেকে এসে গেছে। মানুষের স্বভাবই এই যে তারা
বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে
পারে না। অনেকে
বেলাবেলি দূর দূর গ্রাম
থেকেও এসেছে। সুতরাং
অন্দরমহলের এই অংশটায় বেশ একটা
কলরবের সৃষ্টি হয়েছে। পাশের
রুমে যেসব অল্পবয়সী মেয়েরা তেলাওয়াত করছে তারা পাঠ রেখে মাঝে মাঝে উৎকর্ণ হয়ে শুনতে চেষ্টা করছে মেয়েলী আলোচনা।
"জেডি বড় বালা
মানুষ আছিল।
আমাগোরে বহুত মায়া দয়া কইরত।"
"হ, আমরা
আশেপাশের তিনবাড়ির মানুষ তো হেগো
দুই বইনের কাছেই আদব-কায়দা
কাজকাম শিখছি। কোন বিপদে
পইড়া আইসলে ফিরাইত না। ছোটচাচীতো অল্পবয়সে দুনিয়া ছাইড়া
চইলা গেল। চাচা
মিয়াও বেশিদিন টিকল না। চাচীরে হারাইয়া তাইনে য্যান ডানাভাঙা পাখীর মত হইয়া
গেছিলেন। বাড়িতেও
থাকতেন না। কেবল
শীলা আপার লাইগ্যা ব্যস্ত
থাকতেন।"
‘শীলা’ নামটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মহিলাই একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়ে প্রশ্ন করল, "শীলা আফা আইব না? হেরতো খালা।"
"হে তো চাচামিয়া মরণের পর চল্লিশা কইরা যে গেল আর আসে নাই।"
"না, আরও দুই একবার আইছিল।
কিন্তুক থাকত না।
দিনে দিনেই আইসা কবর দেইখা দিনে দিনেই ফিরা যাইত।
এখন বহুত বছর আর আসে না।"
"আসব ক্যামনে। আসবার
পথ তো বড় মিয়ারা রাখে নাই।
মাইয়াডা অনেক কষ্ট নিয়া গেছে।
আহ-হা-রে।" অতি বয়োজ্যেষ্ঠ একজন বললেন।
"হ। আমারও মনে আছে চল্লিশার
পরের দিন চাচামিয়ার ঘরের
চাবি জেডিমার হাতে দিয়া
সে কি কান্দন। সে কান্দনে
মনে হয় এ বাড়ির
মানুষ শুধু না পাখ-পাখালি,
গাছ-গাছালিও কানছে।"
"আচ্ছা চাচী
শীলা আফাতো জেডিমারও বইনঝি
ছিল। তয় ওনার
পোলারা এমন কইরল, তানি কিছু কইলেন
না?" অপেক্ষাকৃত
কমবয়সী প্রবীণা একজন জানতে
চাইল।
"কি জানি
কইছে না কয় নাই আমরাতো
জানি না।" কথার প্যাঁচ যখন ঘোরালো পথে যাচ্ছে তখন হঠাৎ
করেই বিদ্যুৎ চলে গেল। আকস্মিক অন্ধকারে মৃতের বাড়িতে
দু'একজন ভয় পেয়ে
গেল। চারপাশে অশরীরী
আত্মার নিঃশব্দ চলাচলের অন্ধবিশ্বাসের
কারণে তারা আতঙ্কে হিম হয়ে গেল। পুরো বাড়ি জুড়ে যেন একটা
নৈঃশব্দ নেমে এলো। কিছুক্ষণের
মধ্যেই জেনারেটর চালু হতেই
আবার সবাই আলাপে সক্রিয়
হল। পাশের কক্ষ
থেকে আবার ভেসে এলো মিহি
সুরের তেলাওয়াত।
এশার আজান পড়ল। আজকে একটু দেরিতেই আযান
দেয়া হয়েছে। যাতে
মুসল্লীরা এসে নামায সেরে
জানাযা পড়তে পারে। হাবীব ঘড়ি দেখল। সাড়ে আটটা বাজে। আবার
ফোন করল,
"মিয়া বাই, আপনেরা কই?
জামে পড়ছেন নাকি? এত দেরি হইতাছে।"
"না জ্যাম-ট্যাম
না। গাড়ি নষ্ট। আম্মার গাড়ির ইঞ্জিন ডিসটার্ব
করতেছে। এখন আবার
মিস্ত্রি আনতে চৌদ্দগ্রাম গেছে
রফিক আর গাড়ির হেলপার। রফিক ফোন করে কইল বেশিরভাগ
দোকান বন্ধ।"
"মানুষজন তো এশার
নামাজ পইড়তে আইয়া গেছে। বেশি রাইত হইলে
না আবার চইলা
যায়।"
"না,
না যাইতে দিবি না। এইতো আমরা চৌদ্দগ্রামের কাছাকাছি। বেশি অইলে একঘন্টা" - বলেই ফোনটা কেটে দিলেন
জহির চৌধুরী। হাবীব
যতটা ভাবছে ততটা মোটেও
হবে না। ব্যবসায়ী
ও শিল্পপতি জহির চৌধুরীর মায়ের
জানাযা না পড়ে যত রাতই
হোক গ্রামের মানুষ যাবে
না।
****
১০
গাড়িটা
একটা গাছের তলায় আগে পিছে
আরো দশটা গাড়ি। চাঁদের
আলো আর গাছের ছায়া
মিলে একটা আলো আধাঁরি
রহস্যমত, তারই নিচে লাশবহনকারী
গাড়িটি; গাড়ির এয়ার কন্ডিশানের
একটানা গুঞ্জন।
নিজেদের পাজেরো গাড়িটার দরজা খুলে জহির দুই গাড়ি পরে মায়ের গাড়িটার দিকে এগোলেন।
তাঁকে নামতে দেখে পুরুষদের আরো কয়েকজন নেমে এল।
ভীষণ সিগারেটের পিপাসা পেয়েছে জহিরের কিন্তু সবার সামনে এভাবে একাজটা করা এখন দৃষ্টিকটু।
মোবাইলের বাটন চেপে সময় দেখলেন।
সাড়ে আটটার মত বাজে।
রফিকরা ফিরে এসে গাড়ি ঠিক করতে আরো
প্রায় আধঘন্টা সময় নিলেও সাড়ে ন'টার মধ্যে পৌঁছানো যাবে।
সম্প্রতি আমেরিকা থেকে বেড়াতে আসা তার স্ত্রীর চাচাতো ভাই
শিহাব জানতে চাইল, "বাড়িতে কদিন থাকবেন আপনারা? কী প্ল্যান? কুলখানি কি বড় করে করবেন?"
"নাহ, তিনদিনের বেশি তো থাকার উপায় নাই।
এদিকে কাজকর্ম আছে।
আপাতত ছোট করে কুলখানি করে চল্লিশাটাই বড় করে করার ইচ্ছা।"
"ওনারা কি আপনার
সাথে করবেন?"
"ওনারা?" হঠাৎ মুখ ফসকে প্রশ্ন
বেরিয়ে গেল জহিরের মুখ থেকে। তারপর বুঝতে পারলেন।
বললেন, "এখনও বুঝতে
পারছি না, তবে মনে হয় না। দশবছর আম্মা অসুস্থ হয়ে আমার
বাসায় ছিলেন। শরীফ
তো একবারের জন্যও আসেনি। হাসপাতালে নেবার পর এই প্রথম
হাসপাতালে গেল। আর তুমিতো
জানো ও আমাকে জেলে
পর্যন্ত ভরতে চেয়েছে, ওর সাথে
কীভাবে কাজ করব?"
হ্যাঁ শিহাব
সব জানে।
আমেরিকা যাওয়ার আগে এই ভগ্নিপতিটির সাথে সে কয়েকবার তার মামা মন্ত্রী সোবহান
সাহেবের কাছে গিয়েছিল ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদটা কোনভাবে মিটানো যায় কিনা দেখার জন্য। তবুও
জানতে চাওয়া। লৌকিকতা। এমন সময় রফিকরা এসে গেল। ইঞ্জিন ঠিক করার পর আবার চলতে
শুরু করল গাড়ির বহর। যাক্ নটার মধ্যে
পৌঁছানো যাবে। কিন্তু
ওরা কোথায়? কতদূরে আছে?
জানারও উপায় নেই। যোগাযোগের
এত মাধ্যম থেকেও তারা
পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন।
****
১১
শরীফের
ক্ষিদে পেয়েছে। স্ত্রী
আন্নাকে বলল খাবারের প্যাকেট
খুলতে। বাইরে যেখানে
সেখানে সে খায় না। তাই আসার
পথে গাড়ি থামিয়ে পিৎজা
হাট থেকে পিৎজা, কুপারস
থেকে পেস্ট্রি চকোলেট ইত্যাদি
প্রচুর নেয়া হয়েছে। আছে ড্রিংকস
এবং পানির বোতল।
আন্না পিছন
ফিরে হাত বাড়িয়ে বুয়ার
হাত থেকে পিৎজার প্যাকেট,
টিস্যু, পানির বোতল নিল। তারপর খুলে শরীফের দিকে
এগিয়ে দিল। "তোমরা
খাও না" পিৎজার
একটা বড় সাইজের টুকরো
তুলে নিতে নিতে সে বলল।
"আমার
খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি খাও।"
"তাহলে
বাচ্চাদের দাও।"
"ওদের
যখন ইচ্ছে খাবে। তুমি
খাও।"
"কেন ওরা এখন খাবে
না কেন? এই মালিহা
তোমরা পিৎজা পেস্ট্রি কোনটা
খাবে খাও।"
"না বাবা,
এখন খেতে ইচ্ছে করছে
না।"
"কেন ইচ্ছে
করছে না? খাও।" বেশ জোরেই
বলল শরীফ।
শরীফের
এই ব্যাপারটা আন্নার একদম অপছন্দ।
সবসময় সবার ওপর জোর খাটানো। নিজের
ইচ্ছা অনিচ্ছাই সব।
মেয়েটা বড় হয়ে উঠছে।
সে বাবার এই চাপিয়ে দেয়া পছন্দ করে না।
আর লোকটার খাওয়ার বহর দেখে কে বলবে আজই তার মা মরেছে।
আহারে দুর্ভাগা মা, সব থেকেও বেচারি বুকচাপা কষ্ট নিয়ে গেলেন।
ছেলেদের একসাথে করতে পারলেন না।
সম্পত্তি এমন এক বিষ যা আপনজনকেও শত্রু করে দেয়।
অভাবতো কারো নেই।
সবাই কোটি কোটি টাকার মালিক।
এরশাদ আমলে এক মন্ত্রীর সাথে চিনির ব্যবসা করে অল্পের জন্য ধরা খায়নি শরীফ।
ঢাকা শহরে নামে বেনামে তার কয়েকটা বিজনেস টাওয়ার আছে।
ব্যাংকে আন্নার নামেই কয়েক কোটি টাকা আছে।
কিন্তু তারপরও শরীফ কারওয়ান বাজারের জায়গাটার কথা ভুলতে পারে না।
পাঁচতারা হোটেল হায়াত রিজেন্সির উল্টা দিকে সোনার থালার মত জায়গা।
তিন ভাইয়ের নামে
কেনা হয়েছিল।
কিন্তু বড়ভাই জহির কীভাবে
যেন জায়গাটা শেষ পর্যন্ত একাই দখল করলেন।
তারপরই লাগল ভাইয়ে ভাইয়ে ধুন্দুমার।
জহিরভাই একসময় রাজনীতি করতেন।
মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর ছাত্ররাজনীতি করার কারণে দেশের মন্ত্রী-নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ভাল থাকায় তারিকভাই আর শরীফ সুবিধা করতে পারেনি।
শেষ পর্যন্ত তখনকার এক মন্ত্রীর বাসায় শাশুড়ীমাকে নিয়ে সালিশ বসেছিল।
কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।
তার আগেই জহিরভাই কাগজে কলমে দলিল করে জহির টাওয়ার তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।
সেই শত্রুতার শুরু। অথচ তাদের মূল ব্যবসা
জনশক্তি রপ্তানী যাকে লোকে
মুখে মুখে আদম ব্যাপারী
বলে সেই ব্যবসার উত্থান
ঘটে শরীফের হাত ধরে। শরীফ কোনদিন না বললেও
বিয়ের পর থেকে নানাভাবে
যা জেনেছে তাতে আন্না
জেনেছিল ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায়
ফেল করে মা-ভাইয়ের
বকা শুনে শরীফ তার খালাতো
বোন শীলার বাসায় গিয়ে
উঠেছিল। ছোটবেলা থেকে
পিঠাপিঠি ভাইবোনের
মত বড় হওয়ায় দুজনে
ভাবও ছিল। প্রায়
দেড় বছরের মত শীলার বাসায় থাকার সময় থাকা-খাওয়ার
খরচ না লাগলেও হাত খরচের
জন্য ডলার ব্যবসায় নেমেছিল
শরীফ। সেখানেই আকাশের
সাথে পরিচয়। আকাশের
সাথেই প্রথম ম্যানপাওয়ার এজেন্সির
লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু।
তখনই শীলা
আপারা বদলি হয়ে চট্টগ্রাম
চলে গিয়েছিল। আম্মা
তার ছেলেকে অনেক বুঝিয়ে
সুঝিয়ে বাসায় এনেছিলেন। জহির
ভাই তখনও তেমন কিছু
করতেন না। তারিক
ভাই চাকরি করতেন। পরে তিন ভাই একসাথে হয়ে ব্যবসা
শুরু করলেন। কাঁচাটাকার
ব্যবসায় রাতারাতি উঠতি ধনীতে
পরিণত হলেন। তখনই
তিনটা গাড়ি শরীফের।
এক বান্ধবীর বিয়েতে পরিচয় হল আন্নার সাথে।
অপরূপ সুন্দরী আন্নাকে শরীফ ভুলতে পারল না।
বান্ধবীকে দিয়ে আন্নাকে জন্মদিনের কার্ড, ফুল থেকে নানারকম উপহার পাঠাতে লাগল।
আন্না প্রথম প্রথম পাত্তা দিত না।
কারণ তার প্রফেসর বাবা কখনোই এ বিয়েতে
রাজি হবে না।
বাড়ি-গাড়ির চেয়েও শিক্ষা ও পদবীর
মর্যাদা তাঁর কাছে সবার আগে।
কিন্তু শিক্ষকের স্ত্রী হয়ে মা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন অভাব কী জিনিস।
মা একটুও বাধা দেননি।
তাই একদিন বেড়াতে গিয়ে যখন অনামিকাটা একরকম জোর করে টেনে নিয়ে দামি হিরার আংটিটা পরিয়ে দিল, সদ্য কলেজে পড়া আন্নারও তখন ঘোর লেগেছিল।
বাবার আপত্তি
টেকেনি। মায়ের এবং ভাই-বোনদের
ইচ্ছেতে বাবাকে সায় দিতে
হয়েছিল। তারপর সে কি ধুমধামের
বিয়ে। আজকালতো পয়সা
থাকলে বিয়ে মানে বলিউড
স্টাইল। কিন্তু সেই নব্বইয়ের
দশকের শুরুতে এরকম
এলাহী কান্ড ক'জন দেখেছে। সত্যি
বলতে কী আন্নার আত্মীয়স্বজনদেরও তাক লেগে গিয়েছিল।
"এই যে ম্যাডাম,
সেই তখন থেকে কী এতো চিন্তা করছো?"
"না কী
আর চিন্তা করবো। নিজের
অতীতই ভাবছিলাম।"
"কেন কোন আফসোস
আছে? কিসের বল।"
"আফসোসের কি শেষ আছে? আর জীবনের সবকিছু কি একশোভাগ পূরণ হয়? তোমারই কি হয়েছে? এই যে আম্মা মারা গেলেন তুমি কি তার জন্য কিছু করতে পেরেছ?"
"কীভাবে করব ঐ বড়চোরাইতো
আম্মাকে তার বাড়িতে বন্দী করে রাখল।"
"ছি! আজকের
দিনে অন্তত বড়ভাইকে এভাবে
না বললে। তাছাড়া
বাচ্চারা আছে।"
"বাচ্চারা ঠিকই
বোঝে। ওরা এখনকার
বাচ্চা। আর না বুঝলে
ওদের শত্রু কে তা আমি ওদের
বুঝিয়ে দেব।"
"ঠিক আছে। ঠিক আছে। আর এসব আলোচনার
দরকার নেই।"
"তুমিইতো বললে। কেবল আলগা দরদ। দয়াবতী
সাজতে চাও।"
আন্না চুপ করে থাকল। আর কথা বাড়ালে বড়ভাইকে
এমন বিশ্রীভাষায় গালিগালাজ করবে
যে কান পাতা
যাবে না। ভাগ্যিস
ছেলেমেয়ে দুটো কানে হেডফোন লাগিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। আন্না চাঁদের আলোতে বাইরে
তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করে কতদূর
এল। যদিও
এ পথ তার আপন হলেও অচেনা।
****
No comments:
Post a Comment