_____________________________
রিফাৎ আরা রচনাসমগ্র
গল্পগ্রন্থ - দহনের কাল। প্রকাশক - মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭
গল্প - দাম্পত্য
_________________________________________
দাম্পত্য
অ্যাই লুঙ্গিটা এভাবে মেলেছ
কেন? ধোয়া কাপড় মানুষ একটু নিংড়ে রোদে দেয় না। তুমি কি চাও
পানিতে আছাড় খেয়ে আমি হাত-পা ভাঙি। যত্তোসব - বলতে বলতে লুঙ্গিটা দড়ি
থেকে নামিয়ে দুহাতে মুচড়ে পানি ফেলে ঝেড়ে ঠিকঠাক মেলে দেয় রিংকু।
উফ ছুটির দিনেও যদি একটু আরামে বাসায় কাটানো
যায়। কেবল এটা এলোমেলো
করে রেখেছ কেন, ওটা ঠিক জায়গায় রাখনি কেন- অভিযোগ শুনতে
শুনতে কান পচে যায়।
রিমোট দিয়ে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দেয় সোহেল।
একমিনিটও হয়নি। চপ্পলজোড়া উলটো
করে হাতে ধরে সামনে এসে দাঁড়াল।
-অ্যাই তোমার
স্যান্ডেলের তলায় এত্তো ময়লা তুমি দ্যাখোনি?
-দেখে কি করব?
সোহেলের নির্বিকার উত্তর।
-বাজার থেকে এত্তো
ময়লা নিয়ে এসেছ পরিষ্কার করবে না!
-তুমি করো। জানো না স্বামীর পায়ের তলায়
স্ত্রীর বেহেশত। টিভি পর্দায় চোখ রেখেই বলে সোহেল। ইস রেসলিংটা জমে উঠেছে এসময়
যত্তো ঘ্যানর ঘ্যানর প্যানর প্যানর।
-শোন এসব বাজে কথার দিন শেষ হয়ে গেছে।
তোমার সংসারে আমি বাঁদী হয়ে আসিনি। আজ ধুয়ে দিচ্ছি। এরপর থেকে নিজে ধুয়ে নেবে বলে
রাখলাম।
-জো হুকুম মহারানী। আপনি এ সংসারের
একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী। আপনার কথার অন্যথা হয় কিভাবে। বলতে বলতে হাত জোড় করে মাথা
নিচু করল।
-জী। এরকমই করতে হবে।
-হ্যাঁ করব। করবইতো। বলতে বলতে স্ত্রীর
হাত ধরে হ্যাচকা টান দিতে আচমকা সোহেলের কোলে এসে পরে সে। সোহেল রিংকুর বুকের ভিতর
মুখ গুঁজে উম উম শব্দ করে আর রিংকু গুম গুম করে সোহেলের পিঠে কিল মারতে থাকে। এক
হাতে বউকে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে রিমোটে টিভি অফ করতে করতে বলে যা ব্যাটারা তোরা এখন
অফস্ক্রিন রেসলিং কর আমরা অনস্ক্রিন।
সারাদিনের ধোয়ামোছা শেষে গোসল করে এককাপ
চা নিয়ে টিভির সামনে বসল রিংকু। পত্রিকাটাও হাতে তুলে নিল। বিকেল গড়িয়ে গেলেও একটু
যদি অবসর পাওয়া যায়। আজ দুপুরে ভাতও খাওয়া হয়নি। সোহেল শুনলে বকুনি দেবে। দিলে
দিক। রিংকুর কি করার আছে।
একেতো বাড়িটা পুরনো তারপর কাভার্ডগুলো
কদিন পর পর পরিষ্কার না করলে তেলাপোকার বসতবাড়ি হয়ে যায়। শ্বশুরের আমলের বাড়ির
অংশটুকু পেয়েছে বলে রক্ষা। নয়তো বাড়িভাড়া দিতে দিতে আর ভাত খাওয়া লাগত না। ঢাকা
শহরে আজকাল বাড়িভাড়ার যে অবস্থা। পারলে প্রতিমাসে বাড়ে। তারপর আছে দ্রব্যমূল্য।
লাগামছাড়া এ দামের সাথে পাল্লা দিয়ে চাকরিজীবীদের নাভিশ্বাস অবস্থা। রিংকু ভাবে
এখনতো সংসারে মাত্র তারা দুজন। শ্বশুর শাশুড়ি অনেক আগেই গত হয়েছেন। বাচ্চা কাচ্চা
একটা হলে তখনতো আরো খরচ বাড়বে। তখন কিভাবে চলবে।
আমারতো মাস্টার্সটা বাকি। জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢিমে তালে হলেও একসময় পরীক্ষাটা হবে। তারপর আমিও কি চাকরি নেব।
কিন্তু বাচ্চা হলে কার কাছে রেখে যাব? কাজের বুয়াদের যা অবস্থা। নোংরা হাতে
বাচ্চাকে খাওয়াবে। ঠিকমত কাপড় কাচবে না। অপরিষ্কার
অপরিচ্ছন্ন বাচ্চা রেখে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, তারপর পত্রিকা আর টেলিভিশন
খুললেই দেখা যায় শিশু নির্যাতন আর অপহরনের খবর। না না বাচ্চা রেখে কিছুতেই চাকরি
করতে পারবে না সে।
টুং
টাং- দোরঘন্টিটা বেজে উঠল। এই রে। ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে ছটা বেজে গেল! সোহেল এসে
গেছে। ওর জন্য নাস্তা কিছু বানানো হয়নি। সারাদিন গেল ঘর ঝাড়তে ঝাড়তে। ধুর! একেকদিন
কিভাবে যেন চলে যায়।
ছুটে গিয়ে দরজা খুলল।
হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে শ্রী কানাই। কাঁধে
কম্পিউটার ব্যাগ আর দু হাতে দুটো পলিথিনের ঝোলা।
-কি আছে ওতে?
-আগে তো পথ ছাড়ো তারপর দ্যাখো বলতে দাও।
তাড়াতাড়ি পথ ছেড়ে দিল। সোহেল হাতের
ব্যাগ দুটো নিয়ে দক্ষিণের এক চিলতে বারান্দার দিকে। তারপর ব্যাগ দুটো রেখে উঠে
দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, তোমার জন্য সারপ্রাইজ এনেছি, প্রিয়া।
-হু, সারপ্রাইজ না কচু! সারাদিন
ঝেড়েঝুড়ে সব পরিষ্কার করলাম। টবগুলো পর্যন্ত। এখন সাহেব এলেন একগাদা মাটির টোবলা
নিয়ে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে। লাগবে না এত সারপ্রাইজ। হাতমুখ ধুয়ে চা খেতে আসো। আমি
রান্নাঘরে যাচ্ছি।
-হ্যাঁ। তুমি যাও। আমি ততক্ষণে
গাছগুলোকে দুটো টবে বসিয়ে আসি।
-সখের কমতি নেই। সারাদিন অফিস করে এসে
এখন আবার গাছ লাগাতে শুরু করলেন। বললে বলবে, তোমার জন্যেইতো ফুল ফোটাই।
-তুমি সারাদিন একলা কাটাও। ফুলগুলোর
দিকে তাকালে আমার কথা মনে পড়বে। আর গাছের সবুজ পাতারা তোমার মতোই সজীব, ওগুলো আমার।
-এসব মনভুলানো কথায় আমার দরকার নেই বলেই
দুমদাম পায়ে রান্নাঘরে দিকে পা বাড়াল রিংকু।
বৃহস্পতিবার বাসায় ফিরেই সোহেল জানাল
তার বন্ধু রাকিবের বাসায় পরদিন দুপুরে দাওয়াত।
-হঠাৎ দাওয়াত! আর কালকে দুপুরে দাওয়াত
আর আজকেই বলল।
-বলেছিল আরো আগে। আমারই মনে ছিল না। আজ
আবার ফোন করে রিমাইন্ডার দিল।
-কাল ছুটির দিন।কত্তো কাজ। বাজার করবে।
মাসের বাজার। তারপর আমাকে আবার রান্নাঘর পরিষ্কার করতে হবে।
-একদিন না করলে কি এমন আসে যায় ওতে। আর
তোমাকে এত বলি একটা ছুটাবুয়া রাখো। তোমারও কিছুটা আরাম হয়। লেখাপড়াতো করছই না।
মাস্টার্স পরীক্ষা তো শিকেয় উঠল। তারপর সবাই বলবে, বিয়ে হয়ে মেয়েটার লেখাপড়া হল
না। সব দোষ আমার ঘাড়ে পড়বে।
পরদিন দুপুরে দাওয়াত খেয়ে ট্যাক্সিতে
উঠতে উঠতেই রিংকু বলে উঠল- মা গো বাসাটা কি অপরিষ্কার। আর এত কিউট দুটো বাচ্চা দেখ
নাকে সিকনি গড়াচ্ছে। মুখে খাবার শুকিয়ে শক্ত হয়ে আছে দেখলেই কেমন লাগে। আর
রান্নাঘরটাতো এমন অপরিষ্কার দেখে আমার গা ঘিনঘিন করছিল।
-হু তাইতো দেখলাম। তুমি খেতেই পারনি।
-হ্যাঁ সত্যি। তুমি খেয়াল করেছ? আমি
সত্যিই খেতে পারছিলাম না। হাঁড়িপাতিলগুলো যদি দেখতে। কেনার পর সেই যে চুলোয়
চড়িয়েছে মনে হয় আর মাজাঘষা করেনি।
-সবারতো আর তোমার মতো মাজাঘষার বাতিক
নেই যে ওগুলো মেজে হাতে ঘা করবে।
-আমি বুঝি হাতে ঘা করি। এই দ্যাখোতো
বলেই হাত দুটো সোহেলের চোখের সামনে চোখে ধরল। নিটোল হাতদুটোতে চাঁপাকলি আঙুলগুলো
নেচে উঠল যেন।
সোহেল মুগ্ধ হল। সবাইতো আর একরকম হয় না।
ভাবি চাকরি করে।
-তাতে কি। দু দুটো ধুমসি বুয়া যে দেখলাম
ওগুলো কি করে।
থাক তো। এসব পরনিন্দা করে কি হবে? কাজের
বুয়াদের কাছে এতটা রেসপন্সিবিলিটি কি আশা করা যায়। ওদের কি সেই জ্ঞান আছে।
-আসলেই তাই। এবার রিংকু চুপ করে গেল।
বাসায় ঢুকেই কাপড় বদলে সোহেল গাছের
পরিচর্যায় লেগে গেল।
গাছের যত্ন সেরে রিংকুকে হাঁক দিল-
জম্পেশ করে দুকাপ চা বানাও। দুজনে বসে পান করব আর বসে বসে মুখচন্দ্রিমা দর্শন করব।
আজ একটু সময় পাওয়া গেছে যখন।
কথা শেষ না করতেই হঠাৎ বাথরুম থেকে
রিংকুর চিৎকার ভেসে এল। অ্যাই এসব কি?
সোহেল ছুটে গেল- কি হয়েছে?
-বাথরুমের এ কি অবস্থা করেছ?
-কি করেছি?
-কেন চোখের মাথা খেয়েছ? দেখতে পাচ্ছ না
মাটি আর বালি দিয়ে সারা বাথরুম নোংরা করে রেখেছ। আজ সকালেই কষ্ট করে পরিষ্কার
করলাম।
-সরো পরিষ্কার করে দিই।
-লাগবে না। ঝাঁজিয়ে উঠল। সব নষ্ট করে
এখন আহ্লাদ দেখাতে এসেছে।
-এভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলবে না রিংকু।
সবসময় এসব ভাল লাগে না।
-কি কি খোঁচা দিয়েছি আমি?
-কি দাওনি তাই বল। আমি অগোছালো এলোমেলো,
অফিস থেকে এসে কাপড় গুছিয়ে রাখি না। স্যান্ডেল ময়লা, সাবানে ফেনা তুলে সাবান
বিশ্রী করে রাখি। ভিজা টাওয়েল বিছানায় ফেলে রাখি- কোন বিষয়টা নিয়ে দোষ ধর না তুমি।
মানুষ বাসার চাকরের সাথেও এমন করে না। আর তুমি আমার বউ আমি ঘরে এলেই জান অতিষ্ঠ
করে দাও। শুধু আমার কেন সেদিন আমার বন্ধুর বাসা থেকে ফিরে ওদের সম্পর্কে যা তা
বলেছ। তুমি আসলে একটা স্টুপিড আমি আর তোমাকে সহ্য করব না।
-কি কি বললে তুমি। আমি স্টুপিড!
-হ্যাঁ বলেছি। তুমি একটা স্টুপিড,
স্টুপিড, স্টুপিড। আরও শুনতে চাও?
মুহূর্তে রিংকুর কন্ঠস্বরে যেন ধ্বস
নামল। না আর বলতে হবে না।
সোহেল থমকে তার মুখের
দিকে তাকাল। একটু থমকে গেল। রিংকুর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে সাদা দেখাচ্ছে।
-যাকগে। অনেক সহ্য করেছি। এত ঘ্যান
ঘ্যান প্যান প্যান আর সহ্য হয় না। অন্য কেউ হলে আরো আগে রিঅ্যাক্ট করতো।
যে আনন্দে সন্ধ্যেবেলাটা কাটার কথা ছিল
তার পরিবর্তে বিপদ এসে ভর করল দুজনের ভালবাসার নীড়টিতে। সোহেলের সময় কাটল টিভির
চ্যানেল সার্ফ করে আর রিংকু কাটালো বিছানায় উপুড় হয়ে। স্টুপিড শব্দটা তার কানে গরম
শীসা ঢেলে দিচ্ছে আর সেই শীসা হৃৎপিন্ডের ধমনীগুলোতে আগুন ঢেলে দিচ্ছে। বুকটা পুড়ে
যাচ্ছে। উহ। এত অপমান, এরপর সোহেলের চোখের দিকে কিভাবে তাকাবে সে।
অফিসে বসেই ম্যাসেজ পেল- আমি চলে এসেছি।
চাবি দোতলায় মেজভাবীর কাছে রেখে এসেছি।– স্টুপিড।
নিজের গালে আচ্ছাসে একটা চড় বসাতে ইচ্ছে
করল। কথার পিঠে কথা বলতে গিয়ে কি কুক্ষণে এত বাজে একটা শব্দ বেরিয়ে গেল তাও একবার
নয়, পরপর কয়েকবার। আমি একটা গর্দভ, পাষন্ড। মোবাইলটা আছড়ে ফেলতে ইচ্ছে করল।
-কিরে রিংকু তুই এলি আজ কদিন, সোহেল
একবারও এলো না।
-আমি আসতে মানা করেছি।
-কেন কি হয়েছে? ঝগড়া করেছিস?
-হু।
-ঝগড়াঝাটি, মান অভিমান সব সংসারে হয়।
আবার কেটেও যায় তাই বলে ওকে আসতে মানা করবি।
-না, মা এটা সেরকম নয়। তুমি বুঝবে না।
-ঠিক আছে তুমিই বোঝ। মা রাগ করে উঠে
গেলেন।
সোহেল বুঝতে পারে না তার কি যাওয়া উচিত।
রিংকু ফোন ধরে না। এস এম এস পাঠিয়েছিল যাওয়ার অনুমতি চেয়ে। কড়া ভাবে মানা করেছে।
শাশুড়ি ফোন করে বলেন, এসো।
সোহেলের ভয় করে। যে বদরাগী মেয়ে। আবার
না দরজা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে লোকের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হচ্ছে। সেদিন বড়ভাই
ডেকে জ্ঞিজ্ঞেস করলেন, কিরে রিংকু ওদের বাসা থেকে ফিরছে না যে।
তখনি ভাবি বলে বসলেন, সুখবর আছে নাকি
সোহেল?
তাহলেতো বেঁচে যেতাম মনে মনে বলল।
তারপর ভালমানুষের মত মুখ করে বলল,
মাস্টার্স দেবে তো তার জন্য কদিন বাবার বাড়িতে থাকছে।
কিন্তু সোহেলের নিজের যে কিভাবে দিন
কাটছে তা কেবল আল্লাই জানে।
ঘরের জিনিসপত্রে ময়লা
ছাতা পড়েছে। বাইরে খেতে খেতে পেটে জ্বলুনি ধরে যাচ্ছে। বুকের ভেতর হাহাকার। শূন্য
শয্যায় রাত কাটতে চায় না। শুধু গাছের নেশাটা আছে বলে বাসায় ফিরে কিছুটা সময় কাটে।
অনেক টাকা খরচ করে রিংকুকে না জানিয়ে কাঠগোলাপের একটা বনসাই কিনেছিল। ফুল ফুটিয়ে
চমকে দেবে বলে। লোকটা বলেছিল এ বছরই ফুল আসবে। গত কদিন ধরে দেখছে কুঁড়ি আসছে।
হায় রিংকু তুমি এত পাষাণ হলে। আজ তিন
মাস হতে চলল, আমি তোমাকে দেখি না। তোমার অপমানের ভয়ে আমি যাই না। কিন্তু আর না।
আমি আসবোই।
-রিংকু কাজটা কি ঠিক করছিস?
-কোন কাজটা মা?
-এই যে সোহেলকে এত কষ্ট দিচ্ছিস।
-আমি কষ্ট দিলাম কই। সেই তো আমাকে অপমান
করল।
রাগের মাথায় একটা বলেছে তাতেই এত। আর
তুই যে তোর সারাক্ষণ ধোয়ামোছা আর পরিষ্কারের বাতিকে ওর আরামটা হারাম করে দিচ্ছিলি
সেটা কিছু না! বিয়ে হয়েছে দেড়বছর হতে চলল, তুইই বল ছেলেটার কোন দোষ পেয়েছিস?
রিংকু চুপ করে থাকে। তার বুকের ভেতরও কি
কম কষ্ট। মানুষটার জন্য হাহাকার। সত্যিই তো। এটা সেটা নিয়ে সে কি কম ঝামেলা করত।
আর নিজের হাতে সাজান সংসারটা। না রিংকু আর ভাবতে চায় না। এখন নিজেকেই দোষী মনে হয়।
আসলেইতো সারাক্ষণ এত খিটিমিটি করলে
মানুষের কতক্ষণ মেজাজ ঠিক থাকে। এদিকে মা-বাবারও অস্বস্তি বোঝা যায়। বিয়ে হওয়া
মেয়ে এতদিন সংসার ছেড়ে আছে। আর দ্যাখো কেমন মানুষটা এতদিনে একবারও এল না। আমি না
রাগ করেছি তুমি কি ভাঙাবে না।
আরে মুখপুড়ি, ভাঙাবে কি ভাবে তুইই তো
তাকে আসতে মানা করেছিস। তুই, তুই, তুই। ফোন করলে ফোন ধরিস না। তার বুঝি মান অপমান
নেই। সব কেবল তোর। নিজের শতধিক দিতে থাকে রিংকু।
সকাল বেলায় ঘুম ভেঙে বারান্দায় গিয়ে
সোহেল দেখল বনসাইয়ে ফুল ফুটেছে। খয়েরি ডাঁটায় গাঢ় সাদা পাপড়ির বুকে হলুদ দাগ,
হালকা মিষ্টি গন্ধ।
দোরঘন্টি শুনেই রিংকু দরজা খুলতে গেল।
মা রান্নাঘরে বুয়াকে নিয়ে ব্যস্ত। মেহমান আসবে তাই ভাল মন্দ রান্না।
দরজা খুলতেই দেখল দুহাতে অনেকগুলো
প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে- শ্রী কানাই। অতর্কিতে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল।
-হ্যাঁ গো পাগল কানাই। ফিরিয়ে দেবে না
তো। ভয় পাচ্ছি।
-ঢং।
রিংকু দরজা থেকে ছুটে নিজের ঘরে চলে
গেল। বুকের এত উথাল পাতাল চেপে রাখবে কি করে।
রাতে বাসায় ফিরে দরজা খুলে রিংকু অবাক
হয়ে গেল। হাত ধরে টেনে সোহেল তাকে প্রতিটা রুম দেখাতে লাগল। দ্যাখোতো, তোমার
সংসারটা ঠিক আছে কি না। যদি না থাকে শাস্তি দিও কিন্তু আর যেতে দেব না। আরে এদিকে
এসো, চোখ বন্ধ করো- সোহেল নিজেই দুহাতে তার চোখ টিপে ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়। হাত সরিয়ে নিতেই রিংকু দেখল টবের বনসাইটা আলো করে ফুটে আছে কয়েকটি
কাঠগোলাপ।
বিস্ময়ে অভিভূত রিংকু বুঝতে পারে না একে
কি বলে ভালবাসা না দাম্পত্য।
No comments:
Post a Comment