Saturday, 1 March 2025

রিফাৎ আরার 'মেলবোর্নে দেশ বিদেশ' - পর্ব ১

 



 

আমার মেয়ে আমাকে ডাকছে তার আকুতি মা এসো, এসো একবার এসে দেখে যাও আমাকে আমি তোমায় কাছে পেতে চাই তোমার বুকে মুখ রেখে শান্তি পেতে চাই, যে শান্তি পৃথিবীতে মা ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না

          আমি বোঝাই, আমি তো জানি তোমরা ভাল আছ মা। ইচ্ছে তো করে পাখির মতো উড়ে তোমার কাছে চলে যাই। কিন্তু মন চাইলেও সবকিছু সবসময় করা যায় না যে। সংসারে শত কাজে পায়ে পায়ে বেড়ি। সেই বাঁধন খুলে জোর করে হয়তো যাওয়া যায়। কিন্তু দুর্ভাবনা নিয়ে কি আনন্দ করা যায়! গেলে তো যাব তোমাদের সাথে মিলতে, আনন্দ করতে। তার চেয়ে তুমি একবার এসো

          দুটি মেয়ে আমার। জীবনের পরম ধন। বড়জন ইঞ্জিনিয়ার, বুয়েট থেকে পাস করে ২০১১ সালে পি.আর নিয়ে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন প্রবাসী। ছোটজন চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি করছে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তার সাথেই আছি আমরা। কারণ তার কন্যাটিকে দেখাশোনা লালন-পালন আমাদেরকেই করতে হয়। মা-বাবার সময় নেই। একজন ভাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার জন্য যতটুকু পড়াশোনা দরকার তার চেয়ে বেশি তাদেরকে করতে হয়। কারণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে গেলে অনেক পড়াশোনার পরও অকৃতকার্যতা অনিবার্য। কোন্‌ দোষে যে তাদের স্যাররা এসব বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের ফেল করান জানি না। যে ছেলেটি বা মেয়েটি অনেক সাধনা করে অনেক প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে পাঁচবছর এমবিবিএস কোর্স, এক বছর ইন্টার্নশিপ করে ডাক্তার হয়। কেন তারা বছরের পর বছর স্যারদের কাছে ফেল করে যায় তার কারণ হয়তো শিক্ষকদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করলে জানা যাবে। আবার কোন কোন প্রফেসর এসব বুড়ো ছাত্রদের চেম্বারে অ্যাসিস্ট্যান্সি করিয়ে নিজে হাজার টাকা ভিজিট নিয়ে একটি টাকাও ছাত্রদের দেন না। কিন্তু ছাত্রটি জিম্মি। তার রেজাল্ট স্যারের সুদৃষ্টি-কুদৃষ্টি আর মন-মেজাজের ওপর নির্ভর করছে। সুতরাং পরিবারের শত সমস্যা রেখেও নির্দিষ্ট দিনে তাকে স্যারের চেম্বারে হাজির থাকতে হয়। এরপর থাকে পড়াশোনা, লাইব্রেরি ওয়ার্ক, গ্রুপ রিডিং, এবং সর্বোপরি চিকিৎসকদের পলিটিক্স। এতকিছুর মাঝেও কেউ যদি আন্তরিকভাবে লেখাপড়া করে স্পেশালিস্ট হতে চায় তবে তার পথ আরও কঠিন।

          বর্তমান বাংলাদেশে কোন পেশাতেই সততা নেই। আছে দলবাজি, দালালি, তোষামোদ ইত্যাদি যত হঠকারি কাজ। বাংলাদেশের ডাক্তারদের তথাকথিত সংগঠনগুলো এ বিষয়ে অন্য সকল পেশাকে ছাড়িয়ে গেছে। তবু কি দেশে ভাল ডাক্তার, ভাল শিক্ষক নেই? আছে। কিন্তু যারা আছে তারা কোণঠাসা। কারণ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর ভাষায় ভদ্রলোকেরা একা। তারা সংঘবদ্ধ হয় না, হতে জানে না। আমাদের সমাজের ভালমানুষদেরও সেই দশা। আর এটাতো সর্বজনবিদিত সত্য দুর্নীতির শক্তি অপরিসীম, সে প্রবল পরাক্রান্ত।

          সুতরাং মেয়েকে যখন ডাক্তার হতে সহযোগিতা করেছি এবং সেও জীবনসঙ্গী হিসেবে ডাক্তার বেছে নিয়েছে তখন তাদের সহযোগিতা আমাদের করতেই হবে। আর সন্তানের চাইতেও প্রাণাধিক প্রাণ নাতি-নাতনীর মায়া আসল থেকে সুদের মায়া বেশির মতো। তাই ছোট্ট নাতনীটির টানে আমি কোথাও যেতে পারি না। তার দাদী নিজের সংসারে ব্যস্ত। আমরা স্বামী-স্ত্রী যাযাবর। চিরদিন ভেবেছি মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই তাদেরকে সাপোর্ট দিতে হবে। সমাজের ভাল কাজে লাগার সামর্থ যখন নেই তখন নিজের কাজটা হলেও করি। সুতরাং বড় মেয়ে যতই ডাকাডাকি কান্নাকাটি করুক, আর আমি যতই খাঁচার পাখির মত পাখা ঝাপটাই যাওয়ার সুযোগ হয় না।  

          অবশেষে সেই সুযোগ এল। ছোট কন্যাটি দ্বিতীয় সন্তানের জন্মজনিত কারণে ছমাসের প্রসূতি ছুটি পেল। এবার তার এক কথা, আম্মু, এমন ছুটি তো আর পাবো না। এই সুযোগে আপনারা গিয়ে ঘুরে আসেন

          কিন্তু আমার মন দ্বিধা থরোথরো। নাতনী অথৈকে মাত্র স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। তার নানা আনা-নেয়া করে। তারপর আছে নবজাতক শিশুটি এবং সংসার সামলানো। কিন্তু মেয়ে আমার বরাভয় দিল, এত ভাবলে কিছুই হবে না। আপনি যান।

          হ্যাঁ, আমাকে তো যেতে হবে। যাবার জন্যে সেই কবে থেকে মনটা আকুলি-বিকুলি করছে। দুবছরেরও বেশি সময় আমি আমার মেয়েকে দেখি না। যদিও বিজ্ঞানের অপরিসীম অবদানে ফোনে আর স্কাইপে কথা বলা আর দেখাদেখি হয় বলে মন কিছুটা হলেও শান্ত থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝেই অবাধ্য মন কেবলই চায় প্রিয়তম কন্যাটিকে বুকে জড়িয়ে ধরি, চুমু খাই তার শিশুদের কপালে। তারা আমার বেঁচে থাকার সুখ। তাই বড়র কান্নাকাটি আর ছোটর জোরাজুরিতে অবশেষে সায় দিলাম যাবো।

          শুরু হল যাওয়ার প্রক্রিয়া। মেডিক্যাল টেস্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, টিকেট কনফার্ম ইত্যাদি। আমার পরমবন্ধু তথা পরমাত্মীয় শাহজাহান বেগম চৌধুরি আমার হয়ে সর্বত্র ছুটাছুটি শুরু করলেন। টিকেট কনফার্ম হল, সবকিছু হল। কিন্তু সামনে এসে দাঁড়াল এক বিরাট প্রশ্ন।

          দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বি এ এফ শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম-এ পুনর্মিলনী হবে। এবারই প্রথম। ছাব্বিশ বছর এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছি। জীবনের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটি এমনভাবে জড়িয়ে গেছে এটাকে বাদ দিলে আমার জীবনের যোগফলই শূন্য হয়ে যায়। চট্টগ্রাম শাহীন কলেজ আমার প্রাণের অংশ, আমার আত্মপরিচয়ের ভিত্তি। আমার পরম ভালবাসার তীর্থ। এবার ডাক এসেছে, সবার সাথে মিলতে হবে। সহকর্মীরা ফোন করছে, ছাত্রছাত্রীরা ফোন করছে, যারা ঢাকায় আছে তারা দেখা করতে আসছে। কতদিন পর কতজনের সাথে দেখা! কত প্রিয়মুখ জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেলছে। বলছে, যেতে হবে আপনাকে। কিন্তু ভিসা পাওয়ার পর আমার কন্যাটি এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে পারছে না।

          ফেব্রুয়ারি ২০১৬র ২২ তারিখ আমাদের যাবার দিন, আর চারদিন পর ২৬ তারিখ কলেজে পুনর্মিলনী। মাত্র চারটে দিন। অনায়াসে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমি মেয়ের কাছে যেতে পারি। ছাত্র-ছাত্রীরা ফোন করছে আর কটা দিন পরে যান না ম্যাডামকেউ কেউ বলছে, আপুকে বলেন না, আমাদের কথা ভেবে একটু কনসিডার করতেআমার মন খারাপ হয়ে যায়। সুদীর্ঘ ছাব্বিশ বছরে কত অসংখ্য ছেলে-মেয়েকে পড়িয়েছি। তাদের ভালবাসার দাবিও তো ফ্যালনা নয়। তাছাড়া আমার প্রাণের আবেগ আমাকে চুম্বকের মত টানছে শাহীন-এর প্রাঙ্গনে।

          হায় অভিমানিনী কন্যা। মাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতায় মায়ের আবেগ, দুর্বলতা বুঝেও নিজেকে সামলাতে পারছে না। পারলে সেই মুহূর্তে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অনেক দোটানা মনে। মেয়ের জন্য যেমন ব্যাকুলতা তেমনি শাহীনের সবার সাথে মিলবার জন্যে আকুলতা।

          নাহ্‌, মেয়ে আমাকে হারিয়ে দিল। ঠিক করলাম তার কাছেই যাব। শাহীনের অনেক আছে। আমার মতো একজন না হলেও কোন কিছু অপূর্ণ থাকবে না। কিন্তু মেয়ের আমার একদিনই দুস্তর মরু পারাবারসুতরাং তার কাছেই যাওয়া স্থির হল।

          ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর দুটোয় আমাদের ফ্লাইট। আমি আর মেয়ের বাবা। ভদ্রলোক কর্মসূত্রে এর আগেও কয়েকবার বিদেশে গিয়েছেন। আমার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। শুধু শাহজাহান ভাবীর তাড়ায় কিছুদিন আগে ডাক্তার দেখাতে পাঁচদিনের ব্যাংকক সফরে গিয়েছিলাম। সেটা রিহার্সাল হিসেবে ভাল কাজ দিয়েছে। কারণ দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে যে মানুষটির ওপর আমি সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেছি। বয়স এবং শারীরিক নানা সমস্যার কারণে তিনি চলাফেরায় এখন আর আগের মতো ক্ষিপ্র নন। আর আমি নিজে তো আক্ষরিক অর্থেই মেরুদন্ডভাঙা। দুবার পি-এল-আই-ডি অপারেশনের ফলে আমার চলাফেরা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়, হাঁটতে কষ্ট হয়।

          ২২ তারিখ কনিষ্ঠ জামাতা ফারুক আমাদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিল। নাতনী অথৈকে বেশ কিছুদিন থেকে কাউন্সেলিং করছিলাম, তুমি থাকো, আমি আগে দেখে আসি অস্ট্রেলিয়া কেমন। তারপর তোমাকে নিয়ে যাবহায় শিশু। সরল মনে নানীর মিথ্যা আশ্বাসে ভুলল। গাড়িতে পা দিতে যাচ্ছি, বললো, তুমি দেখে এসো, তারপর আমরা সবাই যাবসব মিথ্যা কি অপরাধ? জানি না। কিন্তু কখনও কখনও পরিস্থিতি সামাল দিতে এমন মিথ্যা না বলে উপায় থাকে না।

          ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এখন ভীষণ কড়াকড়ি। যাত্রী ছাড়া আর কাউকে বিমানবন্দর এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয় না। আগে দেখেছি একজন যদি বিদেশে যায় বা ফিরে আসে তার জন্য কমপক্ষে দশজন দর্শনার্থী অপেক্ষা করে। এখন সে সুযোগ নেই। কিন্তু লাগেজ বা প্রয়োজনীয় মালপত্র টেনে নেবার শারীরিক সামর্থ আমাদের দুজনের কারোরই নেই। তার ওপর সময়ের আগে ভিতরে ঢুকতে দেবে না। এদিকে বসারও কোন ব্যবস্থা নেই। পিঠে ব্যথার জন্য ফ্লোরে বসব সে সুযোগও নেই। শেষে একজন আনসার সদস্যের চেয়ারটা তাকে কিছু চা-পানি খাওয়ানোর শর্তে ধার নিলাম। কিন্তু আমার মিস্টার দাঁড়িয়েই থাকলেন। যদিও তিনি আমার চেয়ে দশাধিক বছরের বড়।

          একদল মেয়ে এসেছে। সবার পরনে একই পোশাক। বোঝা যাচ্ছে এরা মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে গৃহকর্মীর চাকরি নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েগুলোকে দেখে মায়া লাগছে। সংসার, মা-বাবা, ভাইবোন সবার জন্য একটু সুখের সংস্থান করতে দূর মরুর দেশে পাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু কতটুকু সফল হবে তারা? পত্রপত্রিকা আর সংবাদমাধ্যমে পড়ে শুনে এসব দেশে নারীগৃহকর্মী পাঠানো ব্যক্তিগতভাবে আমি সমর্থন করি না। কারণ পেট্রোডলারের কারণে একেতো ওরা আমাদের মানুষ মনে করে না, তার ওপর নারীদেহ তাদের কাছে পরম ভোগ্যবস্তু। সেক্ষেত্রে ধর্ম নেই, মানবতা নেই, আছে আদিম দাসপ্রথা। তবুও মনে মনে বলি তোমরা ভাল থেকো, নিরাপদে থেকো, মায়ের বুকে ফিরে এসো হে আমাদের সন্তানেরা। জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ দেশ তোমাদের জন্য কিছু করতে না পারলেও তোমাদের রেমিটেন্সে আমাদের অর্থনীতির সূচক বাড়বে। আমরা আনন্দিত হব, পরিসংখ্যানের তালিকায় উপরে উঠবো কিন্তু কেউ মনে রাখবে না তোমাদের তিলে তিলে পিষ্ট হওয়ার কথা, দুর্দশার কথা। তবু ভাল থেকো

          গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই কয়েকজন যুবক ঘিরে ধরল। হেল্‌প লাইনের লোক। তারা আমাদের বিমানে ওঠার সব ব্যবস্থা করে দেবে। আমরাও ভাবলাম যাক বাঁচা গেল। পিঠের বোঝা অন্যের কাঁধে তুলে দিয়ে একটু আরামে প্লেনে উঠতে পারব। তারা আটশো টাকা দাবি করল। এটা নাকি নির্ধারিত ফি। বোর্ডিং কার্ডের জন্য আমাদের নিয়ে গেল। তারপর তাদের আর দেখা নেই। আমাদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা ছিল টিকেটের সঙ্গেটিকেটেও লেখা ছিল। কিন্তু দলিল দস্তাবেজ যতই থাক বাস্তবে বসবার চেয়ারই পাচ্ছি না যে বসব, তারপরতো হুইল!

          সময়ের আগে লাউঞ্জে ঢুকা যাবে না। কী করি, কী করি। এমন সময় ত্রাতার ভূমিকায় এলেন কামাল ভাই। উনি বিমান বন্দরের একজন কর্মকর্তা। আমার ছোটভাই কমল তাকে ফোন করেছিল। সদাশয় এবং বিনয়ী এ মানুষটি আমাদেরকে তাঁর অফিসরুমে বসতে দিলেন এবং যে সৌজন্যমূলক আচরণ করলেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা প্রকাশ করলে কৃত্রিম মনে হয়। তাই তাঁর আন্তরিকতায় মনে মনে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম।

          এবার সময় হল ওড়ার। কিন্তু হেল্পলাইন কই? কোথায় সেই তিন যুবক? যারা ৮০০ টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে আমাদের নির্বিঘ্নে প্লেনে তুলে দেবার কথা দিয়েছিল। তারা কোন কাজই করলো না। উপরন্তু অফিস থেকে আটশো টাকা দাবি করল। আমরা অবাক। একটা লাগেজে হাত না দিয়েও শুধু আমরা হেল্প নেব এই সম্মতি দেয়ার জন্য তাদের এতগুলো টাকা দিতে হবে! শেষে কামালভাই রফা করে ৬০০ টাকায় মিটমাট করে দিলেন। কিন্তু এই হেল্পলাইনের ব্যাপারটাই আমার কাছে ধাপ্পাবাজি মনে হল।

          এবার প্লেনের কাছে লাউঞ্জে যাবো, কিন্তু বিমানে চড়ার জন্য চলন্ত চেয়ারের পাত্তা নেই। আমরা এয়ারলাইন্স কর্মকর্তাদের টিকেট দেখাই, তারা এই উছিলা সেই উছিলায় পাশ কাটান, কোন সদুত্তর দেন না। শেষে কামালভাই ছুটাছুটি করে আমার জন্য একটা হুইলচেয়ার জোগাড় করলেন। আর আমার গৃহকর্তা পিঠে ব্যাকপ্যাক নিয়ে হেঁটেই চললেন।

          কামালভাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম। লাউঞ্জে পৌঁছে চেয়ারচালককে বখশিস দিতে হলো পাঁচশো টাকা। এরা এমন জোরাজুরি করে যে না দিয়ে উপায় থাকে না। একজন হুইলচেয়ার চালক বলব না ঠেলক বলব যদি দুজন যাত্রীর কাছ থেকেও এরকম আদায় করে তাহলে দিনে তার উপরি আয় কত? অথচ ব্যাংকক এয়ারপোর্টে দেখেছিলাম ওরা এত প্রফেশনাল যে টিপ্‌স দেয়ার বা নেয়ার কথা তারা ভাবতেও পারে না কিংবা চাকরি হারাবার ভয়ে মুখে আনতে সাহসই করে না। 

          ব্যাংকক থেকে ফেরার সময় ঢাকা বিমানবন্দরে একটি মেয়ে আমার হুইলচেয়ার ঠেলছিল। মাঝখান থেকে বাটপারগোছের এক কর্মচারী এসে চেয়ার টেনে নিয়ে মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিল। মেয়েটা মনে হয় টেম্পরারি ছিল। সে প্রতিবাদ না করেই চেয়ারের হাতল ছেড়ে দিল আর এই লোক বখশিস (আসলে কি বখশিস? বখশিস তো খুশি হয়ে দেবার কথা) তিনশো টাকা নিল জবরদস্তি করে।

          প্লেনে উঠলাম। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স। থাই এয়ারওয়েজের প্রশস্ত বিমানে যে আরামদায়ক অনুভূতি হয়েছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে ঠিক ততটা মনে হল না। সিটের মাঝে গ্যাপ কম। ফলে সামনের জন চেয়ার পিছনে দিয়ে রিল্যাক্স করলে আমার নিঃশ্বাসের সমস্যা হচ্ছে। কারণ আমাদের সিটটা দেয়ালে পিঠ ঠেকানো।

          এবার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট, যেটাকে সবাই কে-এল বলে। প্লেনের আউটওয়েতে হুইলচেয়ার অপেক্ষমান। আমাদের মত অথর্ব লোকদের জন্য। কিন্তু আমার বুড়োটিকে দিল না। কারণ তিনি ইতোমধ্যে ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন। সুতরাং যে হাঁটতে পারে তাকে সাহায্য করবে কেন? আবার তাঁর কষ্ট। যদিও নিজ দোষে। যে ব্যাকপ্যাক নিয়ে হাঁটে তাকে কেন হুইলচেয়ার দেবে?

          এখানে দুঘন্টা যাত্রাবিরতি, তারপর দীর্ঘ উড়াল। ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া। এবারের প্লেনটি আগের চেয়ে উন্নতমানের। অকস্মাৎ একটা প্রশ্ন মনে এল। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যারা যায় তাদের মধ্যে কিছু ট্যুরিস্ট আর বেশিরভাগ রপ্তানি করা শ্রমিক। সেজন্যই কি ঢাকা থেকে কে-এল বিমানটি কিছুটা বিলো স্ট্যান্ডার্ড? কিন্তু কেন? তারা কি পয়সা কম দেয়? টিকেটে কি কনসেশান আছে? নাকি শুধু শ্রমিক বলেই এরকম পার্থক্য? সর্বত্রই শ্রেণিবৈষম্য? সাধারণকে তুচ্ছ করা?

          প্লেন আকাশে ওড়ার পরপরই রাতের কুয়ালালামপুর তার আলোকমালার সৌন্দর্য দিয়ে মন কেড়ে নিল। ওপর থেকেই দেখা যাচ্ছে রাস্তায় গাড়ির সারি। কাছে দূরে সর্বত্র আলোর মেলা, যেন জড়োয়া পরে সেজেছে রাতের কুয়ালালামপুর।

          কেন জানি রাতে ঘুমই এলো না। এবার বইমেলায় প্রকাশিত আমার ছোটভাই প্রদীপের জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনী বইটি সাথে ছিল। ওটাই পড়তে শুরু করলাম।

          ভোর হতেই আকাশে আবছা আলোর আভাস। জানালা দিয়ে তাকাতে মেঘ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না। আমরা চলেছি দক্ষিণে। কিন্তু আমি চোখ মেললুম আকাশেনা, জ্বলে উঠল না আলো। আলো ফোটার সময় হয়নি এখনও।

          কিছুক্ষণ পর লালচে মেঘ জানিয়ে দিল এবার দিনের পালা শুরু হল। সূর্যদেব দৃষ্টি ফিরিয়েছেন পুবে। পশ্চিমে তথা উত্তরগোলার্ধে এখন মধ্যরাত। সেখানে আমার প্রিয়জনেরা এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। আর দক্ষিণে যারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে তাদের সময় কাটতে চাইছে না। তারা পলে পলে পল গুণছে। ঠিক যেমন মাস্টারি জীবনে পরীক্ষার হলে ডিউটি দিতে গিয়ে মনে হত সময় যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ ডিউটি করার পর ঘড়ির দিকে তাকালে দেখতাম মাত্র পাঁচ মিনিট অতিক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত হয়ে লিখছে। অতিরিক্ত কাগজ সাইন করে দিতে গেলে যে সময় ব্যয় হচ্ছে তাতেও তারা অস্থির। একটা হলরুমের মধ্যে সময়ের এই প্রবহমান বৈপরীত্য আমার কাছে খুব অবাক লাগত। এখনও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন আর বাংলাদেশের ঢাকায় একই সময়ে দুরকম ভাবনা। অথচ পৃথিবী একটাই। সময়ও একই স্রোতে বহমান।

          সকাল হতেই মেঘের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে অস্ট্রেলিয়ার ভূখন্ড দেখতে পেলাম। কাল রাতের কুয়ায়ালালামপুরের সৌন্দর্যের রেশ এখনও চোখে লেগে আছে তাই সকাল বেলা এই মহাদেশটিকে প্রথম দেখায় ধূসরই মনে হল।

          ল্যান্ডিং-এর পর আবার হুইলচেয়ার সমস্যা। সমস্যা কিছুটা আমার সঙ্গীরও আছে। আগেও তিনি চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় ঢাকায় এয়ারপোর্ট স্টেশনে নামার থাকলে টঙ্গী স্টেশন থেকে ঝোলাঝালা কাঁধে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে টলতে থাকতেন। যতই বলি বয়স হয়েছে তোমার, কষ্ট হবে। তাছাড়া স্টেশনে তো গাড়ি থামবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। উল্টে রেগে কাঁই হয়ে যায়। বয়সকালে যদি এমন করত তাহলে এমন শিক্ষা দিতাম যে জন্মে ভুলত না। এখন বার্ধ্যক্যে আমিও পরম অসন্তোষে ক্ষমা করে দিই।

          যথারীতি হুইলচেয়ার উপস্থিত। কিন্তু আমাকে দিচ্ছে না। আমি মরিয়া হয়ে বোঝাতে চাচ্ছি, আই নিড এ হুইলচেয়ার। বিকজ আই অ্যাম আনঅ্যাবল টু ওয়াকআমার এসব জোড়াতালি দেয়া ইঞ্জিরির ওরা কি বুঝল জানি না। কিন্তু আমাকে হুইলচেয়ার দিলই না। আমার সামনে দিয়ে অন্যরা দিব্বি হুইলে চলে গেল। পরে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেছিলেন আমাদের সিট থেকে উঠে হেঁটে প্লেনের দরজা পর্যন্ত আসা ঠিক হয়নি। ওরা দেখেছে আমরা হাঁটতে পারি। কিন্তু দুপা হাঁটা আর দুকিলোমিটারের (কথার কথা কারণ আমি সঠিক পরিমাপ জানি না) বিমান বন্দর পার হয়ে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত যাওয়া কি এক কথা? শেষপর্যন্ত অল্পবয়সী একটি মেয়ে টিকেট চেক করে আমাদেরকে তার গাড়িতে তুলে নিল যে গাড়ি আবার লিফটে করে ওপরনিচ করে। তবু রক্ষা। সমস্যার কথা বলায় সে কনভেয়ার বেল্ট থেকে লাগেজ নামিয়ে দিল।

          এবার কাস্টমস। দঁড়ি দিয়ে সরু রাস্তা। তার মাঝখানে সারিবদ্ধ মানুষ ধীর লয়ে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। শেষ আর হয় না। শেষে পৌঁছালাম কুকুরপুলিশের কাছে। সে শরীর, ব্যাগ ইত্যাদির ঘ্রাণ নিয়ে গ্রিন সিগনাল দিলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

          বাইরে বেরোতেই দেখলাম কড়া রোদ। বেশ গরমমেলবোর্নের সকাল নটা বা তারও একটু বেশি। আমাদের দেখতে পেয়েই প্রদীপ এসে জড়িয়ে ধরে অভ্যর্থনা জানালো। আমার কন্যা-জামাতা তখনও এসে পৌঁছায়নি। তাদের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বাইরে তাকালাম। লোকজন খুব কম। তার চেয়ে গাড়ি বেশি। কেমন এক ধরনের নির্জনতা মন খারাপ করে দিল। এই মেলবোর্ন এত নির্জন! পৃথিবীর সেরা বাসযোগ্য শহরের তালিকায় যার স্থান গত পাঁচ বছর যাবৎ প্রথম।

          সকাল নটায় আমাদের ঢাকা শহরে হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার ঘটে যায়বাস, ট্যাক্সি, রিক্সা, প্রাইভেট কার, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি, ফুটপাত দখল করা দোকান কী নেই! আর এখানে খাঁ খাঁ রোদে সব নির্জন। গাড়ির হর্নের শব্দ নেই। লোকের চ্যাঁচামেচি নেই। সব চলছে যেন অদৃশ্য এক শৃঙ্খলায়।

          মেয়ে আসতেই আরেক দফা আনন্দ আলিঙ্গন। তার চোখে পানি মুখে হাসি। তার প্রতিজ্ঞা ছিল যে তার মা-বাবাকে একবার হলেও বেড়াতে নিয়ে আসবে। তার সেই ঐকান্তিক চেষ্টা আর অধ্যবসায় সফল হয়েছে। সুতরাং তার তো কান্না হাসির পালা।

          আমার দুটি মেয়ে। জনসংখ্যার ভারে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্লোগান ছিল ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্টআমরা সরকারি আদেশ পালন করেছি। মেয়েদের মেয়ে নয়, মানুষ হিসেবে বড় করার চেষ্টা করেছি এবং ছেলের জন্য কখনও আক্ষেপ করিনি। আমাদের দুটো মেয়ে আমাদের জীবনের পরম সম্পদমানুষ হিসেবে গড়ার চেষ্টা করেছি, ওরাও সে পথে চলার চেষ্টা করেছে। আমাদের জন্য তাদের গভীর ভালবাসা আমাদের জীবনকে নিবিড় প্রশান্তি দিয়েছে। তাই আমার ধারণা যাদের মেয়ে নেই তারা বড় দুর্ভাগা।

          পূর্বা-দিব্য (নাতনী-নাতি) এবং জামাতা রনি সবাইকে নিয়ে মিলনের প্রথম পর্ব শেষ হলে বাসার উদ্দেশে গাড়িতে উঠলাম। পূর্বা আমার প্রথম নাতনী সুতরাং প্রাণাধিক প্রিয়। সে আর আমি উঠলাম প্রদীপের গাড়িতে। অন্যরা রনির গাড়িতে। দেশে হলে একটা গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে উঠতাম। দুটো কোথায় পাব। কিন্তু এখানে সবার গাড়ি আছে এবং গাড়িতে পাঁচ জনের বেশি বসা যায় না। সাত বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য পিছনের সিটে আলাদা বেল্ট বাঁধা চেয়ার থাকে নিরাপত্তার জন্য।

          রাস্তা ধরে যাচ্ছি। বেলা কত হবে? এগারোটা নাকি বারোটা? আমার ঘড়ি এখনও বাংলাদেশ টাইমে। রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই। মাঝে মাঝে দুএকটা দেখা যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশও নেই। খর রৌদ্রে খাঁ খাঁ নির্জনতা। প্রদীপকে বললাম, এ কেমন শহর রে! যানজট নেই, বাসের কন্ডাক্টর বাসের গায়ে চাপড় দিয়ে ডাকছে না, আইয়েন আইয়েনপশ্চাৎদেশে ধাক্কা দিয়ে কাউকে নামিয়ে চ্যাংদোলা করে কাউকে ভিতরে ছুঁড়ে দিচ্ছে নাড্রাইভ করতে করতে ভাইটি আমার কানফাটা হাসি হাসল। এত নির্জন শহর দেখে মনে মনে হতাশ হলাম। এখানে তিন মাস কাটাবো কীভাবে? মধ্যদুপুরে এই ঘুমন্তপুরী আমার ভ্রমণের ক্লান্তি অপনোদন না করে বরং বাড়িয়ে দিল। কেবল একটাই সুখ প্রিয়জনদের কাছে পেয়েছি।

          আমার প্রিয় কন্যা রাকা আমার পূর্ণিমার চাঁদ। রাকারা থাকে উইন্ডহ্যাম ভিলেজ সিটি কাউন্সিলের টারনিট সাবার্বে। মহাসড়ক পেরিয়ে আবাসিক এলাকায় ঢুকতেই দেখলাম প্রায় সব বাড়ির গঠন এক রকম। বেশিরভাগ একতলা দুএকটি দোতলা বা ডুপ্লেক্স। বাড়ির সামনে নম্বর না থাকলে চেনা বড় মুশকিল। এ যেন রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশ এক ছাঁচে এক ছাপে গড়া। তবে ভাল লাগল সব বাড়ির সামনে বাগান এবং গাছপালা সুন্দর করে কাটা-ছাঁটা। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ হলেও সামার এখনও যায়নি। তাই পাতা আর ফুলের বাহার দৃষ্টিনন্দন, মন কাড়ানিয়া।

          টারনিটে আমার কন্যার ড্রিমহোম। ঘরে ঢুকতেই মন জুড়িয়ে গেল। অত্যন্ত সাজানো গোছানো সুন্দর বাড়ি আসলেই ড্রিমহোম। ব্যাকইয়ার্ড আরও সুন্দর। সবকিছু এত সাজানো গোছানো দেখে মনে মনে কন্যা-জামাতার রুচির প্রশংসা করলাম। যদিও বিদেশে সবার বাড়িঘরই এমন। তবুও বলতে দ্বিধা নেই প্রকৌশলবিদ্যায় লেখাপড়া করলেও ইন্টেরিয়র ডিজাইনে আমার কন্যাটির সহজাত কুশলতা আছে।

          অনেক আনন্দ অনেক হাসাহাসি হল। প্রদীপতো কথায় কথায় আকাশফাটানো হাসি দেয় আর তার উস্কানিদাতা হচ্ছে তার দুলাভাই সিরাজুল ইসলাম। সাহেব বলবো কি? আমিতো আমার সময়ের নারীদের মতো কখনও আমার জীবনসঙ্গীকে আমার সাহেব বলিনি। যদিও নামের শেষে এ সাহেবটা সম্মানার্থে যুক্ত। তাৎক্ষণিক এবং প্রাসঙ্গিক জোক্‌স বা চুটকি বলাতে তাঁর জুড়ি অন্তত আমি দেখিনি। তাই দাম্পত্য কলহও তেমন একটা জমেনি কখনও। কখনও রাগ করলেও হাসিয়ে দিয়েছে। মনে পড়ে সংসারের শুরুতে একবার চায়ের কাপ কিনে এনেছিলো যেগুলো আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। তো যা হয় রাগ করে কথা শোনাতে গেলাম। আমার মুখ দেখে সামনে উপস্থিত আমার ভাইকে বলল, একটা গল্প শোন

          আমি হা। এসেছি ঝগড়া করতে আর উনি বসলেন গল্প শোনাতে। গল্পটা এরকম এক রাজার শখ হলো তার জন্মদিনে সাতদিন ধুমধাম করে উৎসব হবে। নাচগান বাদ্য-বাজনা, খানাপিনা সব হবে। শুরু হলো অনুষ্ঠান। কতদেশ থেকে কত গায়ক-বাদক-নর্তক এল। অনুষ্ঠান শেষ হলে সমাপ্তি রাতে রাজা ঘোষণা দিলেন কাল প্রাতে প্রত্যেককে তার বাদ্যযন্ত্র পূর্ণ করে স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে বিদায় করবে। পরদিন ভোরে রাজা যখন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন তখন রাজকোষাগারের সামনে দিয়ে যাবার সময় ভীষণ গন্ডগোল শুনতে পেলেন। রাজা জানতে চাইলেন কী হয়েছে? কোষাধ্যক্ষ এসে জানালেন, রাজামশাই, আপনার হুকুম মতো স্বর্ণমুদ্রা নিতে ওরা রাজি হচ্ছে না।

          কারণ? রাজা জানতে চাইলেন।

          কারণ এতে ঢুলি ব্যাটা খুব খুশি, কিন্তু বাঁশিওয়ালা প্রতিবাদ করছে

          রাজার হুকুম অমান্য! অতএব রাজা কোষাধ্যক্ষকে আদেশ দিলেন, ওদের যার যার বাদ্যযন্ত্র তার তার পশ্চাৎদেশ দিয়ে ঢুকিয়ে দাওরাজার আদেশ শুনে এবার বাঁশিওয়ালা খুশি আর ঢুলী প্রমাদ গুণল।

          গল্প শুনে আমরা ভাইবোন হেসে গড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু এ গল্প কেন? তখন বললেন, আমি যখন চায়ের কাপগুলো এনেছি, তোমার পছন্দ হয়নি তখন আর কী করবে, আমার ... এমন মানুষের সাথে ঝগড়া করা যায়?  

          প্রদীপ বিয়ে করেনি। একটুখানি বিজ্ঞান আর অনেকখানি ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তার দুলাভাই সারাক্ষণই বিয়ের ব্যাপার নিয়ে তার পেছনে লেগে থাকে।

          জেটল্যাগ আর পায়ের ব্যথা নিয়ে কষ্ট পেলেও প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে সারাদিন আনন্দে কাটল।

 

*****

পর্ব ২-৫


No comments:

Post a Comment

Latest Post

বিশ্ব নারী দিবস ২০২৫

  এবছরও ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০২৫ সালের নারী দিবসের মূল স্লোগান – For All women and girls: Rights, Equality and Emp...

Popular Posts