২
পরের শনিবার ২৮ ফেব্রুয়ারি
আমরা সাউথ মোরাং সাবার্বে প্রদীপের বাসায় গেলাম। এবার মেলবোর্ন ভাল লাগতে শুরু করেছে। কারণ এত সুন্দর রাস্তা, রাস্তার দুপাশে গাছপালা, ভবন সবকিছু
সাজানো গোছানো নয়নাভিরাম। রাস্তায় কোন
ট্রাফিক পুলিশ নেই অথচ কেউ কাউকে ওভারটেক করছে না। বরং সাইড দিলে হাত তুলে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। আকাশের রঙ নীল, মেঘের রঙ সাদা। এত সুন্দর আকাশ বহুদিন দেখিনি। সেই কোন বালিকা বেলায় গ্রামে দেখেছি শরতের আকাশ।
টারনিট এলাকাটা সমতল। সাউথ
মোরাং কিছুটা হিলি যাকে পাহাড়ি না বলে টিলা বলা যায় এমন উঁচুনিচু। এটি টারনিটের
চেয়ে পুরনো আবাসিক এলাকা, গাছপালাও বেশি। বাড়িঘরগুলোও কিছুটা উঁচুনিচুতে।
আমি প্রদীপকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মোরাং মুণ্ডারা এগুলো মনে হচ্ছে আদি নামেই আছে।
প্রত্যাবাসিত ইংরেজদের ইংরেজি নাম নয়’। তারও ধারণা তাই।
রোববার সকালে আমরা গেলাম আর-এম-আই-টি ইউনিভার্সিটিতে। এটাই
প্রদীপের কর্মস্থল। এখানে মেডিক্যাল ফিজিক্স পড়ায় সে।
ছুটির দিন। বিশাল ক্যাম্পাস শুনশান। প্রদীপ তার কার্ড পাঞ্চ
করতেই দরজা খুলে গেল। সে আমাদের দেখাতে লাগল কোথায় স্টুডেন্টরা বসে, আবার কোথায়
ছাত্র-শিক্ষক এক সাথে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, কফি খায়। এসব দেখে আট
তলায় তার নিজের রুমে গেলাম। এরপর ল্যাবে। রেডিওবায়োলজির গবেষণা করে সে। ক্যান্সার
আক্রান্ত মানুষের শরীরের সুস্থ কোষ বা সেলের কত কম ক্ষতি করে রেডিওথেরাপি দেয়া যায়
এটাই তার এখনকার গবেষণা।
ঘুরতে ঘুরতে দেখা হলো তার এক সহকর্মীর সাথে। বয়স্ক মহিলা,
কিন্তু ছুটির দিনেও নিজের কাজ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। প্রদীপ বলল, ‘দিদিভাই, এখানে এটাই সবচেয়ে পজেটিভ দিক। তোমার কাজ তুমি
করবে, পেছন থেকে কেউ ধাক্কাতে আসবে না। বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো নয়ই।
প্রত্যেকেই নিজ দায়িত্বে কাজ করে যাচ্ছে।
আর-এম-আই-টি ইউনিভার্সিটির বিশাল ক্যাম্পাস। প্রদীপ জানালো এই
বান্দুরা ক্যাম্পাস ছাড়াও মেলবোর্ন সিটিতে আরো তিনটি ক্যাম্পাস আছে তাদের। এই
ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে বান্দুরা ইস্ট ক্যাম্পাস নামে আরো একটি ক্যাম্পাস আছে।
শিক্ষা তো বটেই আধুনিক স্থাপত্যরীতির জন্যেও ক্যাম্পাসের বিল্ডিংগুলোর সুনাম আছে।
নিজে লেখাপড়ায় ফাঁকিবাজ এবং
পিছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থী হলেও শিক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনের প্রতি
আমার বেশ খানিকটা দুর্বলতা আছে। জ্ঞান অর্জনে অলসতা থাকলেও জ্ঞানের প্রতি গভীর
আকর্ষণ অনুভব করি। তাই যে কোন বিদ্যাপীঠ আমার কাছে তীর্থক্ষেত্রের মতো।
মানুষের স্বভাব এমন – যখন অন্যের ভালোটা দ্যাখে তখন নিজের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতার প্রতিতুলনা
আপনাআপনি মনে এসে যায়। বিশাল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় দাঁড়িয়ে আমার দেশের
শিক্ষাঙ্গনের কথা মনে হল। একটু ঈর্ষাও হল। আহারে! আমাদের যদি এমন থাকত।
ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখা হলে আমরা বাসার দিকে রওনা দিলাম। এবার
বান্দুরা পার্কের ভিতর দিয়ে আস্তে আস্তে গাড়ি চালিয়ে প্রদীপ আমাদের দেখাতে দেখাতে
নিয়ে চললো। বিশাল বড় পার্ক। উঁচুনিচু। মেলবোর্নের বেশিরভাগ পার্ক বা দর্শনীয় স্থান
অসমতল। যেতে যেতে দেখলাম ছুটির দিন এবং সুন্দর আবহাওয়া বলে অনেকেই পার্কে বারবিকিউ
করছে। বারবিকিউ এখানে খুব জনপ্রিয়। শিশুরা দোলনায় দুলছে। বল ইত্যাদি খেলনা নিয়ে
লোফালুফি করছে, স্বাধীনভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে। শিশু থেকে বয়স্ক সবার অবয়বেই একটা
স্বতস্ফূর্ত আনন্দের বিভা। জায়গায় জায়গায় পানিপানের জন্য কল বসানো আছে। রোগজীবাণু
শরীরে প্রবেশ করল কি না সে ভয় বা দুশ্চিন্তা নেই।
আর প্রকৃতি ডাকলে? অনেক আগে আমাদের একজন কবি প্রয়াত আবু
কায়সারের একটি কবিতায় পড়েছিলাম, “আমি প্যান্টের বোতাম খুলে যত্রতত্র করব পেশাব”। এটা যে কত চূড়ান্ত নোংরা কাজ
আমরাও তখন ভাবিনি, কবিও ভাবেননি। বোতামের যুগ পেরিয়ে জিপার যুগে এলেও এখনও
বাংলাদেশের পুরুষরা যত্রতত্রই পেশাব করে থাকেন। এটা শুধু যথেচ্ছাচার নয়, মূত্রখানা
পায়খানার অভাব এর বড় কারণ। আমাদের রাজধানী ঢাকা শহরেই এই সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ
এখানে যে কোন জায়গাতেই শৌচাগার এবং বিশ্রামের জন্য কাঠের বা লোহার হেলান চেয়ার
আছে। হাঁটতে হাঁটতে অথবা প্রকৃতি নিরীক্ষণের আনন্দ পাওয়ার জন্য বা দুদন্ড
বিশ্রামের জন্য সুবন্দোবস্তের অভাব নেই।
এটা ঠিক এটা একটা বিশাল মহাদেশ। ব্রিটিশ রাজ এদেশের
আদিবাসীদের সেঁকো বিষ দিয়ে এবং আরো নানাভাবে হত্যা নির্যাতন করে বিলুপ্ত করেছে।
তারপর নিজেদের লোক এবং নিজেদের নিয়মে গড়েছে। আজকে যারা খাঁটি অস্ট্রেলিয়ান বা অজি
তারা মূলত ইংরেজের বংশধর আর ভূমি অধিকারীরা এখন অ্যাবরিজিন বা আদিবাসী। এটাও এক
ধরনের মহাভারতের পাশা খেলার মতো। অস্ট্রেলিয়া স্বাধীন গণতান্ত্রিক এবং ওয়েলফেয়ার
স্টেট হলেও এখনও তারা ব্রিটেনের রানিকেই তাদের অনারারি প্রধান মনে করে। তাঁর
জন্মদিনে ছুটি উপভোগ করে।
যাক, আমি ইতিহাস শিখাতে আসিনি। বেশি বলতে গেলে হাটে হাঁড়ি
ভাঙবে, নিজের গোমর ফাঁস হবে।
পার্কের ভিতর দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমরা বেশ উঁচুতে পাহাড়ি একটা
জায়গায় উঠলাম। এখান থেকে মেলবোর্নের অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। আবার এই এলাকাতেই
শহরের ধনী লোকদের বাস। যাকে বলা যায় অভিজাত বা পশ এরিয়া। অনেক ডলার থাকলে তবে
এখানে বাড়ি কেনা যায়। কত শত হাজার ডলার? কে জানে, মাথায় ঢুকে না। এমনিতে যে কোন
কিছু কিনতে গেলে ডলারকে আমাদের দেশের টাকায় রূপান্তর করে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।
প্রদীপ হাসে। বলে, “টাকায়
কেন হিসেব করবে? এখানে তো মানুষ টাকা রোজগার করে না, ডলার রোজগার করে। এখানে এক
ঘন্টায় যে কোন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ ডলার। তাহলে এক ডলার দিয়ে একটা পাউরুটি কিনতে তাদের গায়ে লাগবে কেন? এখন তুমি যদি এক
ডলারকে বাংলাদেশি টাকায় ৬০ টাকা হিসাব করে চোখ কপালে ওঠাও তাহলে তো কিছুই কিনতে
পারবে না”।
আমি উষ্মা নিয়ে বললাম, “তোদের ধনী দেশে আমরা গরীবরা কিছু কিনে মন পোড়াতে যাব কেন?”
গাড়িতে যাচ্ছি, কথা বলছি।
ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি অপেক্ষা করছে। পাশাপাশি গাড়ি আবার চলতে শুরু করে, চালকরা পরস্পরকে হাই-বাই করছে। অনেক গাড়ির চালকই
দুর্দান্ত সুন্দরী তরুণী। প্রদীপ হাত তুললে তার দুলাভাই ঠাট্টা করে – ‘পাশে বউ
থাকলে এতজনকে হাত তুললে এতদিনে তোর সংসারে ধুন্ধুমার লেগে যেত’।
“সেজন্যই
তো বিয়ে করিনি” – কানফাটা হাসিতে জবাব দেয় সে।
বহুদিন পর এত আনন্দে আছি।
আমরা এক সাথে হলে এই হাসিঠাট্টা আর আড্ডাতেই সময় যায়। হাসি আনন্দের মাতামাতি আর
সেউ সাথে চারপাশের সুন্দর প্রকৃতি আর সুনীল আকাশ দেখে মন মনে মনে গাইছে – ‘আমার
জুড়াল প্রাণ জুড়াল’।
*****
৩
আজকে আমরা যাব ওয়্যারবি রোজ
গার্ডেন দেখতে। তারপর সেখান থেকে কাছে একটি জমিদারবাড়ি
আছে। হেরিটেজ হিসেবে সেটিও দেখতে যাব।
প্রথমেই গোলাপ বাগান। বিশাল এলাকা চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ (নাকি
বৃক্ষ বলব) আকাশের দিকে মুখ বাড়িয়ে আছে। কী যে শোভন সুন্দর। নিচে সবুজ ঘাসের
আস্তরণে দেখে ইচ্ছে করল এখনই শুয়ে পড়ি। হায়! মানুষের সব ইচ্ছে কি পূরণ হয়? কুঁজো
যেমন চিৎ হয়ে শুতে পারে না, মেরুদন্ডের সমস্যার কারণে আমিও তেমনি মাটিতে বসতে পারি
না বহুদিন। বিশাল এই বাগানে কত শত রকমের গোলাপ আছে। কার দিকে তাকাব? কার দিকে
তাকাব? এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়। পাতায় ফুলে বর্ণে পাপড়িতে একেক জাত একেক
রকম। দেখতে দেখতে এক অপরিসীম অবর্ণনীয় আনন্দানুভূতি হল। কোন কোন গাছের বয়স শত
বর্ষেরও বেশি। মনে হয় কাটিং করে করে বাঁচিয়ে রেখেছে। গাছের গোড়ায় পাথরে খোদাই করা
আছে কোন্টি কত সালে পৃথিবীর কোন দেশ থেকে এসেছে।
দেখছি আর দেখছি। কেবলই মনে
হচ্ছে – ‘এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর’। আফসোস হচ্ছে খাতা কলম সঙ্গে নেই। না হলে কিছু গাছের সন
তারিখ বা অন্যান্য তথ্য টুকে রাখা যেত। দেশ থেকে আসার সময় আমার ছাত্র মুহিব আহমেদ
ফোন করে বলেছিল, ‘ম্যাডাম যেখানেই যান নোট রাখবেন’। আমার তরুণ এই ছাত্রটি এরই মধ্যে
ভ্রমণের ওপর দুটো বই লিখেছে। একটি ‘নতুন চোখে আমেরিকা’, অন্যটি
‘মেঘের দেশে পাহাড়ের দেশে’। বইদুটো ভ্রমণ কাহিনি হিসেবে
সুখপাঠ্য এবং তার রসবোধের জন্য আনন্দদায়ক। বইয়ের কোন কোন উক্তি পড়ে আমার মনে হয়েছে
রামগরুড়ের ছানারাও হো হো করে হেসে কূল পাবে না।
যেদিকেই তাকাই মনে হচ্ছে
স্বর্গ উদ্যান। যদিও স্বর্গ দেখিনি, কেমন জানি না। তবু এ উপমাই মনে আসে। আসলে
মানুষ বাস্তবে যা দেখে না তার সাথে তুলনা করে আনন্দ পায়। বিশাল এই রোজগার্ডেনের
তত্ত্বাবধান এবং পরিচর্যা করে স্বেচ্ছাসেবকরা জেনে অবাক হলাম। এত বিশাল বাগান
যেখানে ঢুকতে কোন দর্শনী নেই এবং সেটির তত্ত্বাবধান করছে স্বেচ্ছাসেবকরা। আমরা
হলে? আমি নিজে হলেও? কারণ আমিও তো জাতীয় চরিত্রের বাইরে নই।
থাক স্বর্গে। আছি মর্তের কালিমা ভাবনায় লাগিয়ে লাভ কী! আমাদের
মতো আরও অনেক মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। হাঁটছে। অস্ট্রেলিয়ান যেমন আছে তেমনি
আছে অ্যারাবিয়ান, টার্কিশ, আফ্রিকান, চাইনিজ। কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।
আমি হ্যাংলার মতো দেবশিশুর মত সুন্দর শিশুগুলোর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। এরা
তো গোলাপের চেয়েও সুন্দর। একবার তাকালে ‘চোখ ফেরানো যায় তবু মন ফেরানো যায় না’ এমন অবস্থা। অ্যারাবিয়ান নারীপুরষরাও সুদর্শন। নারীরা আগাগোড়া বোরকা পরা
কিন্তু আনন দৃশ্যমান এবং যথেষ্ট রঞ্জনচর্চিত। অতএব সৌন্দর্য মন কাড়ে। সৌন্দর্য
দর্শন এবং উপভোগের বিষয়ে আমার মতামত হলো ফুল, পাখি, প্রাণী, প্রকৃতির মতো মানুষও
সুন্দর। স্রষ্টা তাদেরও সুন্দর করে গড়েছেন। সুতরাং দেখার জন্য চোখতো টানবেই।
কিন্তু ফুল ছিঁড়ে, পাখি শিকার করে, প্রকৃতি ধ্বংস করে সৌন্দর্য নষ্ট করা যেমন
অপরাধ, তেমনি সুন্দর মানুষকেও নিজের করে পেতে জোর করা, লাঞ্ছিত করাও ভয়ঙ্কর অপরাধ।
এদেশের সৌভাগ্য, এখানে নারীর নিরাপত্তা ও তার ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সবার উপরে। কোন বিষয়ে
তাকে কেউ জোর করতে পারবে না। আর আমাদের দেশে? অ্যাসিড মারো, লাঞ্ছিত করো,
নির্যাতন, ধর্ষণ যা খুশি – ভাবতে মন চায় না। কিন্তু ভাবনা পিছু ছাড়ে না।
সাজিয়া আফরিন নামে ব্র্যাকের এক ডাক্তার নাইট ডিউটি করতে গিয়ে
সম্ভবত ২০১২ সালে ক্লিনিকের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর দ্বারা ধর্ষিত হতে চায়নি
বলে সে পাষন্ডটি তাকে হত্যা করেছিল। এরকম ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে। কষ্ট পাই,
আবার ভুলেও যাই। তবু কোন কোন ঘটনা চিরদিনের জন্য স্মৃতিতে রয়ে যায়। একজন ডাক্তার
গড়তে তার নিজের, পরিবারের যে সাধনা এবং রাষ্ট্রের যে ব্যয় সব মিলিয়ে সে অমূল্য
মানবসম্পদ অথচ তার এমন নির্মম করুণ মৃত্যু সহ্য করা যায় না। সাজিয়া নামের এই
মেয়েটির মৃত্যু স্মরণ করে আমি বহুবার কেঁদেছি। আজও কান্না পায়। কেন আমাদের মেয়েদের
এত কষ্ট। নিজ গৃহ থেকে শুরু করে পথ-ঘাট, মসজিদ-মন্দির কোথাও তারা নিরাপদ নয়। সেই
চর্যাপদের কবি যেমন বলেছেন, ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরি’ – আজও সভ্যতার এই চূড়ান্ত সময়েও নারী তার দেহের
জন্য, সৌন্দর্যের জন্য কিছু রিরংসাযুক্ত পাশবিক মানুষের চোখে শুধুই ভোগ্যবস্তু।
এদেশে এখন সামার বা গ্রীষ্ম হওয়ার কারণে প্রকৃতি সুন্দর এবং
উপভোগ্য কিন্তু গোলাপ যতই সুন্দর হোক নির্দিষ্ট সময়ের পর তাকে আর দেখা যাবে না।
এখন বিকেল পাঁচটা। সূর্য অস্ত যাবে রাত আট কিংবা সাড়ে আটটায় কিন্তু পাঁচটায়
বাগানের ফটকে তালা পড়বে। অগত্যা মোহনীয় এই সৌন্দর্যের দিকে ফিরে তাকাতে তাকাতে বের
হয়ে এলাম। মনে মনে বললাম – আবার একদিন আসব, অবশ্যই আসব। নাহ্, আর যাওয়া হয়নি।
গোলাপ বাগান থেকেই ফিরতে হল। জমিদার বাড়ি দেখা হল না। দেখার
তেমন আগ্রহও ছিল না। এমন মোহনীয় গোলাপের পর আর কিছু কি দেখতে ইচ্ছে করে!
*****
৪
এখানেই আমাদের সাথে পরিচয়
হল রাকা-রনিদের প্রবাসে সবচেয়ে আপনজন ফেরদৌস-তন্বী দম্পতি আর তাদের পরিবারের সবার
সাথে। ফেরদৌসের বাবা-মা আমাদের ক’দিন আগেই এখানে এসেছেন। থাকবেন ছ’মাসের মত। বড়ছেলে ফেরদৌস এখন মেলবোর্নে সেটেল্ড। তার ছোটভাই বাবন মেলবোর্ন
ইউনিভার্সিটিতে এমএস করছে। ওদের সুন্দর দুটি শিশু সন্তান তানিশা আর তাসিন। ভদ্র,
বিনয়ী, সুশিক্ষিত এই পরিবারটিকে প্রথম দেখাতেই ভাল লাগল। তাছাড়া রাকার কাছে তাদের
কথা শুনতে শুনতে কখন যেন তারা আমাদের আপনজন হয়ে গেছে। পরে দেখলাম এখানে তাদের যে
অ্যাসোসিয়েশান তারা সবাই পরস্পরের প্রতি খুবই বন্ধুভাবাপন্ন এবং আপনও বটে। না হয়ে
উপায় কী? প্রবাসে যারা প্রথম যায় সেই ফার্স্ট জেনারেশন স্বদেশ থেকে যে
ভাষা-সংস্কৃতি, আচার-আচরণ সাথে নিয়ে যায় তার প্রভাব কাটিয়ে তারা দেশিয়দের সাথে
মিলতে পারে না। চাকরি বাকরি সূত্রে চেনাপরিচয় হলেও অন্তরঙ্গতা খুব কমই গড়ে ওঠে।
দ্বিতীয় প্রজন্মে সে সমস্যা অনেকটা দূর হয় আর তৃতীয় প্রজন্মের কাছে তো সেই দেশই
নিজের দেশ হয়ে ওঠে। তারপরও যতটুকু দেখলাম তাতে মনে হল আফ্রিকান, পাকিস্তানি,
শ্রীলঙ্কান, ভারতীয় এবং সংখ্যাধিক্যে অজিদের চেয়েও বেশি চীনারা নিজ নিজ গোত্রের
সাথে জোট বেঁধে থাকতে ভালবাসে। তাই খোদ নিউইয়র্কে আছে মাফিয়াদের সুরক্ষিত সিসিলি,
আছে ডন। ভারতে এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে চায়না টাউন। অর্থাৎ মানুষ পৃথিবীর
যেখানেই যাক, নিজদেশ ও সংস্কৃতির লোকদের সাথে যূথবদ্ধ হয়ে থাকতে ভালবাসে।
সপ্তাহ অতিক্রান্ত না হতেই জানতে পারলাম আমরা আসার আগেই
আমাদের দাওয়াতের সূচি তৈরি হয়ে গেছে। প্রায় প্রতি উইকএন্ড অর্থাৎ শুক্রবার রাত
থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত কোন না কোন বাসায় দাওয়াত। মেলবোর্ন শহরের এ মাথা ও মাথা
বাদ নেই। তাহলে মেলবোর্ন ঘুরে দেখবো কখন? এলামতো বেড়াতে। এমনিতে মনে কষ্ট শারীরিক
অসুবিধার জন্য সিডনি, ব্রিসবেন, তাসমানিয়া কোথাও যেতে পারবো না। কারণ এত বেশি
ভ্রমণের ধকল আমার সইবে না। এখানে বেশির ভাগ জায়গা অসমতল পাহাড়ি এলাকা। এসব দেখতে
গেলে হাঁটতে হবে। কিন্তু আমি তো মেরুদন্ডের সমস্যার জন্য বেশিক্ষণ হাঁটতে পারি না।
তাছাড়া এখন সবার কাজকর্ম, শিশুদের স্কুল। অতএব হতাশ হয়ে সেসব বাদ দিতে হল। বুঝলাম
ইচ্ছে থাকলে পঙ্গুও গিরি লঙ্ঘন করতে পারে এ প্রবাদ সর্বাংশে সত্য নয়। ভাবলাম তাহলে
মেলবোর্নই যতটুকু পারি দেখি। আর দাওয়াত খেতে তো যেতেই হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা এই
দূর প্রবাসে কেমন আছে দেখতে হবে না?
প্রথম দিনই ফেরদৌসের বাসায়
বিশাল আয়োজন। ফেরদৌসের স্ত্রী তন্বী পাকা রাঁধুনী। তার সাথে যুক্ত হয়েছেন তার
ততোধিক অভিজ্ঞ শাশুড়ি মিসেস সাজেদা আলম। কত পদের খাবার, কত রকম তার স্বাদ বলে শেষ
করা যাবে না। এখানেই কথায় কথায় জানতে পারলাম সাজেদা আপা ওরফে সাজু আর আমি সতীর্থ।
ষাটের দশকে ফেনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে একই সময়ে লেখাপড়া করেছি আমরা। উনি আমার তিন
বছরের জুনিয়র। দুজনেই স্কুলের অনেককে চিনি। সুতরাং সকল দূরত্ব ঘুচে মুহূর্তে আমরা
পরস্পরের আরো আপন হয়ে গেলাম। মনে হল পৃথিবী সত্যিই গোলাকার।
*****
৫
আজ ছুটির দিন। শনিবার। আমরা ড্যানডিনং যাব। ড্যানডিনং-এর পাহাড় চূড়াকে বলা হয় ‘স্কাই হাই’। ওখানে দাঁড়ালে অনেক দূরের সিটি প্রায় পুরোটাই দেখা
যায়। এছাড়া পাহাড়ের ওপরে বাগান, ভাস্কর্য ইত্যাদিও দর্শনীয় বিষয়। টারনিট শহরের পশ্চিম দিকের এলাকা। আর ড্যানডিনং শহর পেরিয়ে উল্টো দিকে।
ইতোমধ্যে আমার চলাচলের সুবিধার জন্য প্রদীপ একটি হুইল চেয়ার
এনে দিয়েছে। আমাকে বসিয়ে বাসায় সে এবং আমার নাতনী পূর্বা কতক্ষণ ঠেলল আর নাতি
দিব্য আমার কোলে চড়ে ঘুরতে ব্যস্ত হল।
আমরা যথারীতি ফেরদৌস-তন্বী পরিবার একসাথে যাবো। আউটিং-এ গেলে
খাওয়া-দাওয়া সাধারণত সাথে করেই নিয়ে যাওয়া হয়। রেডিমেড খাবার কিনে এনে শুধু ওভেনে
একটু গরম করে বা চুলায় তেলে ভেজে নিলেই হয়। আর শুকনো খাবারতো আছেই।
বেশ সকালেই যাত্রা করলাম আমরা। কারণ যেতেই প্রায় পৌণে
একঘন্টার মতো লাগবে। আমি সাধারণত আমার জামাতা রনির গাড়িতে সামনের সিটে বসি।
পূর্বা-দিব্য-রাকা পেছনে। আর রাকার আব্বু বাবনের গাড়িতে যায়। রাকা এবং তন্বী গাড়ি
চালালেও প্রভিশন পিরিয়ড দেখে হাইওয়েতে চালায় না। এখানে গাড়ি চালানো শিখতেই হয়। না
হলে বাচ্চা স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, বাজার করা, ডাক্তার দেখানো এসব কাজ হেঁটে হেঁটেই
করতে হয়। তাই মেয়েরা এদেশে এলে অতি অবশ্যই ড্রাইভিং শেখে এবং বেশিরভাগ বাসায় দুটো
গাড়ি থাকে।
আমাদের যাত্রা শুরু হল। মেলবোর্নের রাস্তায় বের হলে মন ভাল
হয়ে যায়। একদিকে দূরে নীল আকাশ আর তার বুকে বিচরণশীল সাদা মেঘ, অন্যদিকে উঁচুনিচু
মসৃণ রাস্তা। দূর থেকে দেখি উঁচু সড়ক পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু যখন কাছে
আসি সে রাস্তাই এমন হিসেব কষে করা যে বুঝতেই পারি না কখন পাহাড় পেরিয়ে এলাম।
টারনিট, ট্রুগানিনা আরও কয়েকটি আবাসিক এলাকা পেরিয়ে ওয়েস্টগেট ব্রিজ পার হলে
মেলবোর্ন সিটি। রাস্তার দুপাশে দেখলাম উন্নয়নের কাজ চলছে। রনি বলল, গতবছরও এই
এলাকায় শর্ষে ক্ষেত ছিল। এখন মানুষ বাড়ছে তাই আবাসনের প্রয়োজনে ডেভেলাপিং-এর কাজ
চলছে। দেখলাম বিশাল খনন যন্ত্র দিয়ে মাটির নিচ থেকে বড় বড় পাথর তোলা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর পাথর পাওয়া যায়। বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো সরিয়ে মাটি সমতল
করা হচ্ছে আবাসনের জন্য।
সড়কের দুপাশে গাছপালা, কোথাও বিস্তীর্ণ মাঠ, কোথাও গাছপালায়
ঘেরা মনোরম ঘর-বাড়ি। সবই দেখি, কিন্তু মানুষ কোথায়? মানুষ দেখি না। যা দেখি তা
অঙ্গুলিমেয়। এমনকি বেশির ভাগ গাড়িতে চালক ছাড়া কেউ থাকে না। কোন কোন গাড়িতে
ব্যাকসিটে শিশু থাকলেও বয়স্ক মানুষ চোখে পড়ে না।
রনি বলল, এটা ওয়েস্টগেট ব্রিজ। এটা দিয়েই পশ্চিম দিকের
এলাকাগুলো থেকে শহরে যেতে হয়। সুন্দর সেতু, মনে হয় হাওয়ায় ভেসে চলেছি। মনে পড়ল
আমার এক আত্মীয়া ১৯৭৭ সালে ছেলের কাছে কানাডায় টরেন্টোতে গিয়ে মেয়েকে লিখেছিলেন, “মনে হয় বেহেশতে এসেছি”। এটা শুনে আত্মীয়স্বজন খুব মজা
পেয়েছিল। প্রচুর হাসাহাসিও হয়েছিল। এর মাঝে প্রবহমান কালের ধারায়
বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতিতে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে যা আমাদের আগের মানুষ শুধু
নয়, আমরাও কল্পনা করতে পারিনি। বাংলাদেশও এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। তারপরও এখানকার সিস্টেম দেখে মনে হয় বিশাল জনসংখ্যা আর
দুর্নীতির চরম দাপটে আমরা কত পিছিয়ে আছি। আর আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বস্তিজীবনতো
নরক সমতুল্য। সুতরাং আমি যদিও ভাবছি আকাশে ডানা মেলেছি, ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা’, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের তালগাছটির মতই মন পড়ে থাকে দেশের
মাটিতে।
শহর পেরিয়ে ড্যানডিনং-এর পথে
চলতে শুরু করতেই দেখলাম পাহাড়ি রাস্তা ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। দুপাশে বড় বড় গাছ।
ইউক্যালিপ্টাসের সংখ্যা বেশি। অন্যান্য গাছও আছে। কিন্তু আমার মনে হল আমাদের দেশের
গাছের পাতা যেমন বড় বড় এবং পত্রপুঞ্জে নিবিড়, এখানে ঠিক তেমন নয়। বিশাল বনস্পতিগুলোরও
ছোট ছোট পাতা, শাখা-প্রশাখায় সমৃদ্ধ। কোথাও কোথাও মৃত গাছকেও ভাস্কর্যের আকৃতি
দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে ঘর-বাড়ি-গাড়ি দেখা যাচ্ছে, আবার
পলকে ঝলকে মিলিয়ে যাচ্ছে। যেটুকু দেখছি তাতে স্বপ্ন তৈরি হচ্ছে।
রনিকে বললাম, “এত নির্জন জায়গায় থাকতে এদের ভয় করে না?”
রনি জানাল, “রিয়েল অজিরা পাহাড়ি এলাকায় থাকতেই পছন্দ করে। দেশের আইনে নাগরিকের নিরাপত্তা
ব্যবস্থা এত বেশি যে ভয়ের কোন কারণ নেই। আবাসীদের জন্য মাঝে মাঝে দোকানপাট আছে,
আছে অনাবাসীদের জন্য রিজর্ট। কিন্তু খরচ অনেক বেশি”।
খুব ইচ্ছে হচ্ছিল এরকম জায়গায়
যদি দুটো দিনরাত কাটাতে পারতাম। হায় অর্থ পাতকী অর্থ – তুইই সকল অনর্থের মূল। যে অর্থেই হোক – এই আপ্তবাক্যের কোন বিকল্প নেই।
যাক প্রকৃতি উপভোগ করতে এসেছি
অর্থচিন্তায় মন ছোট করব কেন? আবার দৃশ্য দেখায় মন দিলাম। ডানে না বাঁয়ে কোনদিকে
দেখব? শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম যাওয়ার সময় বাম দিক দেখব। ফেরার সময় ডানে।
পাহাড়ি পথের বাঁক ঘুরে ঘুরে আমরা পৌঁছালাম ড্যানডিনং চূড়া – স্কাই হাইয়ের শীর্ষে। আবহাওয়া সুন্দর হলেও দূরের মেঘ একটু
ঝাপসা। তাই শহর কিছুটা আবছা দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আফসোস করছে। আমার মনে হচ্ছে – ‘দূরের
বাদ্য লাভ কি শুনে মধ্যিখানে বেজায় ফাঁক’। চারপাশে এর সৌন্দর্য, শহরের স্থাপনাগুলো না দেখলে কিইবা আসে
যায়।
আমার কন্যা আমার হুইল চেয়ার ঠেলছে আর বলছে, ‘এখন সামারের শেষ। আপনারা আরো আগে এলে আরও অনেক ভাল লাগত’।
আমি বললাম, ‘তাতে কি আম্মু, আমি যেহেতু আগে দেখিনি এখন এটাই আমার কাছে
অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি কষ্ট পাচ্ছি তোমাকে এবং রনিকে চেয়ার ঠেলতে হচ্ছে দেখে’।
যতই সুন্দর রাস্তা হোক, উপরের দিকে ওঠা তো কষ্টকর। পূর্বা
মাঝে মাঝে ছুটে আসে। সাথে দিব্যও আসে – সেও ঠেলবে অথবা চড়বে।
এখানে পাহাড়চূড়া কিছুটা সমতল মালভূমির মত আর তার পাশেই ঢালু।
সর্বত্রই সবুজ ঘাসের আস্তরণ, তাই কোথাও বসতে কোন দ্বিধা থাকে না। অনেক বড় বড় পুরনো
গাছ। ঘুরতে ঘুরতে একটা কূপ দেখলাম যেটার নাম লেখা আছে ‘উইশিং ওয়েল’। পাশে একটি গাছের গায়ে নোটিশে লেখা আছে- অনেক আগে এক বাবা
তার ছোট্ট ছেলেকে এই পাহাড়ী জঙ্গলে হারিয়ে ফেলে। তারপর অনেক খুঁজে এখানে এই কূপের
কাছে এসে খুঁজে পায়। তাই এখানে এসে কোন কিছু উইশ করতে বলা হয়েছে। আবার ‘অনেক বড় কিছু প্রত্যাশা করো না’ এমন সতর্ক বাণীও আছে। কিছু কিছু পর্যটক দেখলাম দুএকটি কয়েন
ছুঁড়ে ফেলছে কূপের গভীরে। এই অত্যাধুনিক যুগেও মানুষের কত বিচিত্র কুসংস্কার!
আমাদের দেশে হলে এটাকে ঘিরেই হয়তো একদল লোক জুটে যেত যারা ধর্মের নামে কুসংস্কারকে
পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা করতে এবং সেটা হয়ে যেত বংশানুক্রমিক। আমরাও দেখলাম। পুরনো
কূপ প্রায় মজে এসেছে।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একটু নিচু সমতলে নামতেই বিশাল এক কাঠের
চেয়ার। এটার নাম ‘জায়ান্ট চেয়ার’। চেয়ারটি এত বড় যে তিনজন পাশাপাশি
বসা যায়। বাচ্চারা তো আরো বেশি। এখানে বসে দূর অতীতে কেউ একজন নাকি প্রকৃতির শোভা
দেখত। দেখবেই তো। এত সুন্দর প্রকৃতি, উর্ধ্বে নীলাকাশ, চারপাশে পত্র-পুষ্পে শোভিত
বৃক্ষ, দূরে আরো নীলাভ পাহাড়। মেলবোর্নের প্রায় সবদিকেই সমুদ্র যে কারণে সি-বিচ বা
সমুদ্র সৈকতের সংখ্যা অসংখ্য। দেখছি আর ভাবছি আসলেই প্রকৃতির মত সুন্দর আর কিছু কি
আছে!
উচ্চ মাধ্যমিকে আমাদের একটা
ইংরেজি আর্টিকেল ছিল। যেখানে এরকম কিছু উক্তি ছিল। তুমি আড্ডা দাও, বন্ধু সংসর্গে
আনন্দ করো, খেলাধুলা করো, সিনেমা দ্যাখো – একসময় ক্লান্ত হবে। কিন্তু প্রকৃতি তোমাকে কখনও ক্লান্ত করবে না। কারণ সে
প্রতিদিনই নতুন, নবতর। তাই তো প্রতিদিনের সূর্যোদয় সূর্যাস্ত আমাদের কাছে চিরনতুন।
ড্যানডিনং-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে এবার আমাদের
যাত্রা মাঝপথে রডোডেনড্রন বাগানের পথে। ড্যানডিনংকে বাই বাই জানালাম। কিন্তু মনে
অতৃপ্তি রয়ে গেল। পাখির চোখে দেখায় কি মন ভরে!
*****
No comments:
Post a Comment