বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কোয়ান্টাম মেকানিক্স।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গতিপ্রকৃতি জটিল এবং রহস্যময়। ভালোবাসার সাথে কোয়ান্টাম
মেকানিক্সের বেশ মিল আছে। দুটোর কোনটাকেই সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায় না। ‘কোয়ান্টাম ভালোবাসা’ আলফ্রেড নোবেল ও তিন জন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত
অনুরাগের কাহিনি।
আমরা জানি বিজ্ঞানের
তত্ত্ব সর্বজনীন। কিন্তু প্রেম-ভালবাসা ব্যক্তিনির্ভর, একেক জন একেক ভাবে
প্রতিক্রিয়া করে প্রেমের আহ্বানে। যে বিজ্ঞানীদের আমরা ভিন্গ্রহের মানুষ মনে করি
- তারাও যে প্রেমে পড়েন, ভালোবাসার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন এবং কেউ কেউ ভালোবাসার
অবমাননাও করেন - ‘কোয়ান্টাম
ভালোবাসা’য় সেই কাহিনিই বর্ণিত হয়েছে।
চারজন পৃথিবীবিখ্যাত
বিজ্ঞানী - আলফ্রেড নোবেল, আলবার্ট আইনস্টাইন, পল ডিরাক এবং রিচার্ড ফাইনম্যান। এই
চার জনের প্রথম জন শতাধিক বছর ধরে সর্বসেরা ‘কিং মেকার’। আলফ্রেড নোবেলের সৃষ্ট ‘নোবেল পুরষ্কার’ যিনি পান খ্যাতিতে ‘রাজা’ হয়ে যান তিনি রাতারাতি। বাকি তিন জন নোবেল
পুরষ্কার বিজয়ী বিশ্ববিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। আলবার্ট আইনস্টাইন
আপেক্ষিক তত্ত্বের, পল ডিরাক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের, আর রিচার্ড ফাইনম্যান
ইলেকট্রোডায়নামিক্সের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এঁদের বিজ্ঞান গবেষণায় কিছুটা মিল
থাকলেও ব্যক্তিগত জীবন-দর্শন ও জীবনযাপনে এঁরা প্রত্যেকেই ভিন্ন।
আলফ্রেড নোবেলকে খুবই
মানবতাবাদী মনে করা হয় তাঁর ‘নোবেল
পুরষ্কার’-এর জন্য। কিন্তু মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে এতটাই
একাকী এবং জীবন-বিতৃষ্ণ ছিলেন যে তাঁকে কেউ কখনো হাসতে দেখেননি। চিরকুমার এই
মানুষটিও প্রেমে পড়েছিলেন। কেমন ছিল তাঁর প্রেমের ধরন?
আইনস্টাইন
বলেছিলেন প্রেমে পড়ার জন্য মাধ্যাকর্ষণ দায়ী নয়। হয়তো তাই তিনি প্রেমে পড়েছেন
একাধিকবার। ভালোবেসে যাঁকে বিয়ে করেছিলেন - অন্যপ্রেমের টানে তাঁকেই ত্যাগ করেছেন।
কিন্তু বহু-প্রেমের কারণে সমাজে আইনস্টাইনের গ্রহণযোগ্যতা একটুও কমেনি। বিখ্যাত
পুরুষের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উদারতার সুযোগ আইনস্টাইন পুরোপুরিই
নিয়েছিলেন।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের
অন্যতম জনক পল ডিরাক এমনই গম্ভীর রিজার্ভ মানুষ ছিলেন যে ঘন্টায় হয়তো গড়ে একটা শব্দও
উচ্চারণ করেননি জীবনে। অথচ সেই মানুষটিই প্রেমে পড়েছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের
একজন মানুষের সাথে - যাঁর সাথে বিজ্ঞানের কোন সম্পর্কই ছিল না। একনিষ্ঠভাবে সুখেই
জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি সেই মানুষটার সাথে। কী ছিল তাঁর রহস্য?
বিজ্ঞানীদের মধ্যে
রিচার্ড ফাইনম্যানের মত প্রাণবন্ত মানুষ খুব কমই দেখা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের ‘সুপারহিরো’
ফাইনম্যান। বিজ্ঞানী হিসেবে যেমন ফাইনম্যান অতুলনীয়, প্রেমিক ফাইনম্যানের সাথেও আর
কারো তুলনা চলে না।
বিজ্ঞান বাদ দিলে
বিজ্ঞানীদের জীবনে আলাদা করে অর্থবহ কিছুই থাকে না - তাই কোয়ান্টাম ভালোবাসায়
বিজ্ঞানও আছে বিজ্ঞানীদের ভালোবাসার সাথে সাথে। এই বিজ্ঞানকে ইচ্ছে করেই সহজ করে
বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি যেন ভালোবাসতে কষ্ট না হয়। অবশ্য কষ্টহীন ভালোবাসা বলে
তো কিছু হয় না।
প্রদীপ দেব
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
ডিসেম্বর ২০১৩
নোবেলের বিস্ফোরক ভালোবাসা
আইনস্টাইনের আপেক্ষিক ভালোবাসা
ডিরাকের কোয়ান্টাম ভালোবাসা
ফাইনম্যানের ইলেকট্রোডায়নামিক ভালোবাসা
No comments:
Post a Comment