মহাবিশ্বের
অগণিত গ্যালাক্সির কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে অতি সাধারণ একটি নক্ষত্র - সূর্য। আর
এই সাধারণ সূর্যের এক অসাধারণ গ্রহ - আমাদের পৃথিবী। প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর
আগে এই পৃথিবীর জন্ম হয়েছে একটি গ্যালাক্সির নক্ষত্র তৈরির কারখানায় নক্ষত্রের
ধুলিকণা (stardust) থেকে। সূর্যের চারপাশে প্রচন্ডবেগে ঘুরতে ঘুরতেই
তৈরি হয়েছে পৃথিবীসহ আরো সব গ্রহ। পৃথিবী এখনো ঘন্টায় এক লাখ আট হাজার কিলোমিটার
বেগে ছুটছে সূর্যের চারপাশে একটি উপবৃত্তাকার পথ ধরে। প্রচন্ড গতির একটি রকেটের
গতিবেগ ঘন্টায় ত্রিশ হাজার কিলোমিটারের মতো। সেই হিসেবে রকেটের গতির তিনগুণ
গতিসম্পন্ন একটা গ্রহ-যানের উপর আমাদের সবকিছু
- আমাদের পৃথিবী।
শুরুতে এই গ্রহ ছিল প্রচন্ড উত্তপ্ত এক
বিশাল অগ্নিপিন্ড। সারাক্ষণ যেখানে আঘাত হানছিলো বিশাল আকৃতির গ্রহাণু (asteroid) আর জ্বলন্ত সব ধুমকেতুর (comet) দল। এদেরই আঘাতে পৃথিবীর একটি অংশ ছিটকে পড়ে
মহাজাগতিক নিয়মে তৈরি হয়েছে পৃথিবীর একমাত্র চাঁদ।
তারপর কেটে গেছে শত কোটি
বছর। পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। অতিকায় ডায়নোসররা দাপিয়ে বেড়িয়েছে পৃথিবীর
এদিকে-ওদিকে। এক সময় এই অতিকায় প্রাণিরা অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর আরো কোটি বছর ধরে
ক্রমাগত বিবর্তনের ফলে মানুষের আবির্ভাব এই পৃথিবীতে। প্রাকৃতিক শক্তির সাথে
সংগ্রাম করতে করতে মানুষ উন্মোচন করছে প্রকৃতির অজানা রহস্য। পৃথিবীর মানুষ
মহাবিশ্বে সভ্যতার চিহ্ন রাখতে শুরু করেছে। ক্রমশ পৃথিবী হয়ে উঠেছে অন্য সব গ্রহ
থেকে আলাদা।
কিন্তু এখনো মাঝে মাঝেই এই
পৃথিবীর ভূমি লন্ডভন্ড হয়ে যায় ভূমিকম্পে, প্রচন্ড প্লাবনে ধুয়ে-মুছে যায়
গ্রাম-নগর। এখনো এই পৃথিবীতে ফুঁসে উঠে আগ্নেয়গিরি। কেন এমন হয়? মানুষ ক্রমশ জানছে
সব। ভূমিকম্পের তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ জেনে গেছে পৃথিবীর কেন্দ্রে কী আছে,
পৃথিবীর গঠন কী রকম। পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার বিশ্লেষণ করে মানুষ জেনে গেছে কীভাবে
সূর্য এত শক্তি পায়, এতো আলো এত তাপ কোত্থেকে আসে সূর্য এবং আরো সব তারার ভেতর। আমাদের পৃথিবীর একটিমাত্র উপগ্রহ -
চাঁদ। মানুষ পৃথিবীর বাইরে গিয়ে সেই চাঁদে পা রেখেছে অনেকবার। একটিমাত্র প্রাকৃতিক
উপগ্রহ হলেও মানুষ মহাকাশে স্থাপন করেছে অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ - যেগুলোকে কাজে
লাগিয়ে মানুষ আজ মকাকাশ নিয়ন্ত্রণ করছে, এবং পাশাপাশি সহজ করে তুলেছে তার দৈনন্দিন
জীবন। আজ পৃথিবীর এক জায়গায় বসে অন্য জায়গায় যোগাযোগ যে কী পরিমাণ সহজ হয়েছে তা
বিশ বছর আগেও ছিল শুধু কল্পনা। এই সবকিছু হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমাগত
সম্প্রসারণের ফলে। কিন্তু আমাদের জানার বাকি আছে এখনো অনেক।
যে গ্রহে আমরা বাস করি সেই পৃথিবী সম্পর্কে
এ-পর্যন্ত জানা তথ্যগুলোকে স্কুল-কলেজের
শিক্ষার্থীদের জন্য সহজভাবে উপস্থাপন করাই এই বই লেখার উদ্দেশ্য। এর আগে প্রকাশিত কিশোর
বিজ্ঞান সিরিজের প্রথম বই "অর্ক ও সূর্যমামা" পাঠক-প্রিয়তা পেয়েছে।
সিরিজের এই দ্বিতীয় বই "পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ"ও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। একটা বিজ্ঞান-মনস্ক
আধুনিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারলে জাতি হিসেবে আমাদের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। সেটা
করার জন্য আমাদের দরকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা। সেই ক্রমাগত বিজ্ঞানচর্চায় এই বই
কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে এই প্রত্যাশায় -
নভেম্বর
২০১৫ প্রদীপ দেব
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া pradipdeb2006@gmail.com
far যা ফারজানা
মহাবিশ্বের কোথায়
আমরা
সূর্য ও তার
গ্রহগুলোর উৎপত্তি
সূর্যের তৃতীয়
গ্রহ
পৃথিবীর শৈশব
চাঁদের জন্ম
পৃথিবীর বায়ুমন্ডল
পৃথিবীর আকাশ নীল
পানি এলো কোথা থেকে
পৃথিবীর গঠন
পৃথিবীর ভেতরের
স্তরগুলো
পৃথিবীর রাসায়নিক
উপাদান
পৃথিবী একটি বিরাট
চুম্বক
মহাদেশ এবং
টেকটোনিক প্লেট
পর্বতমালা কীভাবে
গঠিত হলো
আগ্নেয়গিরি
ভূমিকম্প
প্রাণের কথা
বরফঢাকা পৃথিবী
ডায়নোসর কেন
বিপুপ্ত হলো
বর্তমান পৃথিবী
সময়ের পরিবর্তন
পৃথিবীর দিনরাত্রি
জলবায়ুর পরিবর্তন
অভিকর্ষজ ত্বরণের
পরিবর্তন
পৃথিবীর ভরের
পরিবর্তন
আবহাওয়ার পরিবর্তন
পানিচক্র
জলীয় বাষ্প মেঘ কুয়াশা
বৃষ্টি
বজ্রপাত
টর্নেডো
সাইক্লোন
সমুদ্রের গভীরে
পৃথিবীর সম্পদ
জীবাশ্ম জ্বালানি
ও বিকল্প শক্তি
পৃথিবীর
ভবিষ্যৎ
No comments:
Post a Comment