সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। বুধ আমাদের চাঁদের
চেয়ে সামান্য একটু বড়। বুধের আয়তন চাঁদের আয়তনের চেয়ে সামান্য একটু বেশি। বুধের
ব্যাস চাঁদের ব্যাসের চেয়ে মাত্র শতকরা চল্লিশ ভাগ বেশি। বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের
গ্রহ। বুধ থেকে সূর্যের দূরত্ব ৫৮ মিলিয়ন কিলোমিটার বা পাঁচ কোটি ৮০ লক্ষ
কিলোমিটার। শুধুমাত্র সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় দিগন্তের কাছাকাছি সূর্যের
আশেপাশে বুধকে দেখা যায়। কিন্তু সেই সময় আমাদের দৃষ্টিপথ বাধাগ্রস্ত হলে বুধকে আর
দেখা যায় না। হয়তো এই কারণেই বুধ সম্পর্কে আমরা সাধারণ মানুষ খুব বেশি কিছু জানি না।
অথচ গ্রহগুলোর মধ্যে বুধ অনেক ব্যাপারেই শীর্ষস্থান দখল করে আছে।
সবচেয়ে দ্রুতগামী গ্রহ হলো
বুধ। সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর যেখানে ৩৬৫ দিন লেগে যায় সেখানে
বুধের লাগে মাত্র ৮৮ দিন। অর্থাৎ বুধের এক বছর হলো পৃথিবীর ৮৮ দিনের সমান। কক্ষপথে
বুধের গড় গতি ঘন্টায় এক লক্ষ সত্তর হাজার কিলোমিটার যা পৃথিবীর গতির চেয়ে ১.৫৯ গুণ বেশি।
বুধের কক্ষপথ অর্থাৎ যে
পথে সূর্যের চারপাশে ঘুরে সেই পথ বৃত্তাকার নয়, অনেকটা ডিম্বাকার। এই ডিম্বাকার
পথে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটলেও বুধ কিন্তু নিজের অক্ষের উপর ঘুরে খুব ধীর গতিতে। নিজের
অক্ষের উপর একবার ঘুরতে পৃথিবীর যেখানে লাগে মাত্র চব্বিশ ঘন্টা, সেখানে বুধের
লাগে প্রায় ৫৯ দিন। পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট স্থানে একটি সূর্যোদয় থেকে পরবর্তী
সূর্যোদয় পর্যন্ত মোট যে সময় লাগে সেই সময়কে আমরা এক দিন বলে থাকি। পৃথিবীর
ক্ষেত্রে তা গড়ে ২৪ ঘন্টা। কিন্তু বুধের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা পৃথিবীর নিয়মে
হিসেব করলে অনেক দীর্ঘ হয়ে পড়ে। বুধের কোন একটা জায়গা থেকে সূর্যোদয় দেখার পর আবার
সেই জায়গায় সূর্যোদয় দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১৭৬ দিন। অর্থাৎ বলা চলে
বুধের এক দিন সমান পৃথিবীর ১৭৬ দিন যা বুধের দুই বছরের সমান।
বুধের গড় ঘনত্ব অন্যান্য
গ্রহগুলোর ঘনত্বের চেয়ে বেশি। বুধের তাপমাত্রার পার্থক্যও সবচেয়ে বেশি। বুধের যে
পিঠে সূর্যের আলো পড়ে সে পিঠের তাপমাত্রা +৪৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। আবার সে সময় অন্যপিঠে যেদিকে সূর্যের আলো
পড়ে না সেদিকে তাপমাত্রা নেমে যায় -১৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বুধ গ্রহে এ পর্যন্ত মাত্র
দুটো বৈজ্ঞানিক মিশন পরিচালিত হয়েছে। এই দুটো মিশনের প্রথম মিশন ম্যারিনার-১০ (Mariner-10) নভোযান বুধের পাশ দিয়ে উড়ে যায় তিন বার ১৯৭৪-৭৫ সালে। তারপর দ্বিতীয় মিশন
মেসেঞ্জার (MESSENGER) ২০০৪ সালে পৃথিবী
থেকে যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে বুধের কক্ষপথে পৌঁছায়। বুধের তৃতীয় বৈজ্ঞানিক মিশন
বেপি-কলম্বো'র (BepiColombo) প্রস্তুতি কাজ
চলছে পুরোদমে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালে বেপি-কলম্বোর নভোযান বুধের উদ্দেশ্যে
পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করবে।
বুধের বৈজ্ঞানিক মিশন থেকে
এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে সহজবোধ্য আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে এই বইতে। কিশোর
বিজ্ঞান সিরিজের চতুর্থ বই বুধ। এই সিরিজের আগের তিনটি বই - সূর্য, পৃথিবী, এবং
চাঁদ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আশা করি 'বুধ'ও পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।
প্রদীপ
দেব
pradipdeb2006@gmail.com
মেলবোর্ন,
অস্ট্রেলিয়া
অক্টোবর
২০১৭
No comments:
Post a Comment